![]() |
ক্রমেই হচ্ছে একা ভক্তিপ্রসাদ মাকড়, চৈতন্যপুর, পূর্ব মেদিনীপুর কংগ্রেস দল এখন বারুদ-- বিহীন আতশবাজি নামের জোরেই চায় খাটাতে ক্যারিশ্মা-কারসাজি || ওল্ড মডেলের দুলকি চালে চালিয়ে আপনাকে বর্ষাবিহীন মেঘে ভুলায় ব্যাঙ ছাড়া আর কাকে || ঘায় চুঁয়ে যায় প্রবল খরায় চৌচির মাঠ ফেটে চায় সে তখন মরুভূমির ওপর দিয়ে যেতে || সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম চলছে ফাটাফাটি প্রাতর্ভ্রমণ সারছে তখন দূরে সে এলাকাটি || করার আছে অনেক কিছুই লাগাচ্ছে না হাত গণ্ডি টেনে তার মধ্যেই কাটাচ্ছে দিন রাত || বুঝছে না সে এমনি এমনি যায় না কভু টেকা গুটিয়ে থেকে যাচ্ছে হয়ে ক্রমে ক্রমে একা || ******************** এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' এর ২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০০৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল | . অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত . সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত |
সিঙ্গুর সুকান্ত দে, কলকাতা অঘ্রানের দিন শেষ, দিন শেষ সোনালী ফসলের | এখন ধানের জমি বুট আর বুলেটের, এখন ধানের জমি পুলিশ আর পশুদের | বেরাবেরি, বাজেমেলিয়ার গ্রামে আর নবীন দাস, গৌরহরি ধান কাটতে আসবে না | মাঠ হইতে উহাদের অবসর ঘোষিত হইয়াছে | উহারা এখন আসন্ন শিল্পায়নের শরিক | বিষন্ন মেঠো ইঁদুর তাকায়ে থাকে আকাশের পানে, মাটির গভীরে রাশি রাশি সোনালী ফসলের ভাঁড়ার শূণ্য আজি | কালি প্রাতে ভিখু আর পাঁচি ফিরে যাবে খালি হাতে, খালি পেটে দিয়ে যাবে বিধাতারে গালি | উচ্চিংড়ে আর গুবড়ে পোকার যন্ত্রণার দিন শেষ, ন্যাংটা পুটো চাষার ছেলে, গর্তে জল ঢালিয়া উচ্চিংড়ে আর গুবড়ে ধরিয়া দেশলাই খাপে ভরিবে না | উহারা মনের আনন্দে কারখানার ফাঁকা জমিতে উড়িয়া বেড়াইবে | উহাদের জীবন কৃষি হইতে শিল্পে উন্নীত হইবে | উহারাও আগামী শিল্পায়নের শরিক | হেমন্তের জ্যোত্স্নায় নিশির শিশির ধুয়ে দেয় সোনালী ফসল | টপ্ টপ্ ঝরে পড়ে জল ভিজে ওঠে মাটি ঘাস আর রাতজাগা পাখিদের ডানা | লক্ষ্মীপেঁচা ধেয়ে যায় মেঠো ইঁদুরের পানে, ইঁদুর লুকায় পড়ে ধানের জঙ্গল আর মাটির গভীরে | ঋতু বৈচিত্রের নিয়ম মানিয়া আবার হেমন্ত আসিবে | কিন্তু মেঠো ইঁদুর রাত জাগা পাখি আর ঝিঁ ঝিঁ পোকা থাকিবে না | থাকিবে না ধানের গন্ধ মাখা শিশির | থাকিবে শুধু পুঁজির লক্ষ্মী ! লক্ষ্মী পেঁচা | কারখানার মিনারে বসিয়া অন্ধকারে চোখ পাল্টাইয়া সে খোঁজ করিবে হেমন্ত, হেমন্তের শিশির, মেঠো ইঁদুর আর সোনালী ফসল | গংগাফড়িং হারিয়ে গেছে হারিয়ে গেছে নীল কণ্ঠ | খাসের ভেড়িতে লাল পতাকা বাজছে দেখো শিল্পায়নের শঙ্খ | আকাশে উড়ছে চিল মাটিতে শকুন | রক্ত লেগেছে ধানে মাটিতে তাপসীর খুন | নবান্ন তো নূতন ধানের গন্ধ নবান্ন তো শিল্প | মোটর গাড়ি চড়বে চাষা শিল্পায়নই বিকল্প | বহু বছর বাদে, নবীন বালক প্রপিতামহের হাত ধরিয়া কারখানার প্রান্তে আসিয়া দাঁড়াইবে | বৃদ্ধ বলিবেন --- এই সেই সোনা- আবাদী জমি, এখানে সোনা ফলিত | বালক বিস্ময়ে বলিয়া উঠিবে --- এতো শুধু ইট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গল, ভাঙ্গা চিমনি আর লোহালক্কড়ের স্থবির শব, শিয়াল ও বিষধর সরীসৃপের আবাসভূমি | বৃদ্ধ বলিবেন --- বিদায়, বিদায় প্রিয় আবাদভূমি | বালক বলিল --- টাটা, টাটা | ******************** এই কবিতাটি পশ্চিমবঙ্গ ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সমিতির মুখপত্র 'ভূমিবার্তা' পত্রিকার নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৬ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে | . অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত . সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত |