সুকুমার রায়ের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই তা আপনার সামনে চলে আসবে।   www.milansagar.com
১।    দাঁড়ের কবিতা           
২।
   খাই খাই                 
৩।
   নিরুপায়                 
৪।
   পড়ার হিসাব             
৫।
   আবোল তাবোল         
৬।
   গোঁফ চুরি                
৭।
   কুমড়োপটাশ             
৮।
   শব্দকল্পদ্রুম               
৯।
   হাত গণনা                
১০।  
গন্ধ বিচার                
      
           
দাঁড়ের কবিতা

চুপ কর্ শোন্ শোন্, বেয়াকুফ হোস্ নে
ঠেকে গেছি বাপ্ রে কি ভয়ানক প্রশ্নে!
ভেবে ভেবে লিখে লিখে বসে বসে দাঁড়েতে
ঝি
ম্ ঝিম্ন্ টন্ ব্যথা করে হাড়েতে।
এক ছিল দাঁড়ি মাঝি--- দাড়ি তার মস্ত,
দাড়ি দিয়ে দাঁড়ি তার দাঁড়ে খালি ঘষ্ত।
সেই দাঁড়ে একদিন
দাঁড়কাক দাঁড়াল,
কাঁকড়ার দাঁড়া দিয়ে দাঁড়ি তারে তাড়াল।
কাক বলে রেগেমেগে, ``বাড়াবাড়ি ঐতো!
না দাঁড়াই দাঁড়ে তবু দাঁড়কাক হই তো?
ভারি তোর দাঁড়িগিরি, শোন্ বলি তবে রে---
দাঁড় বিনা তুই ব্যাটা দাঁড়ি হোস্ কবে রে?
পাখা হলে `পাখি' হয় ব্যাকরণ বিশেষে---
কাঁকড়ার দাঁড়া আছে, দাঁড়ি নয় কিসে সে?
দ্বারে বসে দারোয়ান, তারে যদি 'দ্বারী' কয়,
দাঁড়ে-বসা যত পাখি সব তবে দাঁড়ি হয়!
দূর দূর! ছাই দাঁড়ি! দাড়ি নিয়ে পাড়ি দে!''
দাঁড়ি বলে, "বাস্ বাস্! ঐখেনে দাঁড়ি দে।''

**********
*
গন্ধ বিচার

সিংহাসনে বস্ ল রাজা বাজল কাঁসর ঘণ্টা,
ছট্ ফটিযে উঠল কেঁপে মন্ত্রীবুড়োর মনটা।
বল্ লে রাজা, "মন্ত্রী তোমার জামায় কেন গন্ধ?''
মন্ত্রী বলে, "এসেন্স দিছি--- গন্ধ তো নয় মন্দ!''
রাজা বলেন, "মন্দ ভালো দেখুক শুঁকে বদ্যি,''
বদ্যি বলে, "আমার নাকে বেজায় হল সর্দি।''
রাজা হাঁকেন, "বোলাও তবে--- রাম নারায়ণ পাত্র।''
পাত্র বলে, "নস্যি নিলাম এক্ষনি এইমাত্র---
নস্যি দিয়ে বন্ধ যে নাক গন্ধ কোথায় ঢুকবে?''
রাজা বলেন, "কোটাল তবে এগিয়ে এস, শুঁকবে।''
কোটাল বলে, "পান খেয়েছি মশলা তাহে কর্পূর,
গন্ধে তারি মুণ্ড আমার এক্কেবারে ভরপুর।''
রাজা বলেন, "আসুক তবে শের পালোয়ান ভীমসিং,''
ভীম বলে "আজ কচ্ছে আমার সমস্ত গা ঝিম্ ঝিম্।
রাত্রে আমার বোখার হল বলছি হুজুর ঠিক বাৎ,''
ব'লেই শুল রাজসভাতে চক্ষু বুজে চিৎ পাত।
রাজার শালা চন্দ্রকেতু তারেই ধ'রে শেষটা,
বল্ল রাজা, "তুমিই নাহয় কর না ভাই চেষ্টা।''
চন্দ্র বলেন, "মারতে চাও তো ডাকাও নাকো জল্লাদ,
গন্ধ শুঁকে মরতে হবে এ আবার কি আহ্লাদ?''
ছিল হাজির বৃদ্ধ নাজির বয়সটি তার নব্বই,
ভাবল মনে, 'ভয় কেন আর, একদিন তো মরবই-'
সাহস ক'রে বল্ লে বুড়ো, "মিথ্যে সবাই বকছিস,
শুঁকতে পারি হুকুম পেলে এবং পেলে বক্ শিশ্।''
রাজা বলেন, "হাজার টাকা ইনাম পাবে সদ্য'',
তাই না শুনে উত্সাহেতে উঠল বুড়ো মদ্দ।
জামার পরে নাক ঠেকিয়ে- শুঁকল কত গন্ধ,
রইল অটল দেখল লোকে বিস্ময়ে বাক্ বন্ধ।
রাজ্যে হল জয় জয়কার বাজল কাঁসর ঢক্কা,
বাপ রে কি তেজ বুড়োর হাড়ে পায় না সে যে অক্কা?


****************
হাত গণনা

ও পাড়ার নন্দ গোঁসাই, আমাদের নন্দ খুড়ো,
স্বভাবেতে সরল সোজা অমায়িক শান্ত বুড়ো।
ছিল না তার অসুখবিসুখ, ছিল যে সে মনের সুখে,
দেখা যেত সদাই তারে হুঁকোহাতে হাস্যমুখে।
হঠাৎ কি তার খেয়াল হল, চল্ল সে তার হাত দেখাতে-
ফিরে এল শুকনো সরু, ঠকাঠক্ কাঁপছে দাঁতে!
শুধালে সে কয় না কথা, আকাশেতে রয় সে চেয়ে,
মাঝে মাঝে শিউরে ওঠে, পড়ে জল চক্ষু বেয়ে।
শুনে লোক দৌড়ে এল, ছুটে এলেন বদ্যিমশাই,
সবাই বলে, 'কাঁদছ কেন? কি হয়েছে নন্দগোঁসাই?'

খুড়ো বলে, 'বলব কি আর, হাতে আমার পষ্ট লেখা
আমার ঘাড়ে আছেন শনি, ফাঁড়ায় ভরা আয়ুর রেখা।
এতদিন যায় নি জানা ফিরছি কত গ্রহের ফেরে-
হঠাৎ আমার প্রাণটা গেলে তখন আমায় রাখবে কে রে?
ষাটটা বছর পার হয়েছি বাপদাদাদের পুণ্যফলে-
ওরে তোদের নন্দখুড়ো এবার বুঝি পটোল তোলে।
কবে যে কি ঘটবে বিপদ কিছু হায় যায় না বলা-'
এই ব'লে সে উঠল কেঁদে ছেড়ে ভীষণ উচ্চ গলা।
দেখে এলাম আজ সকালে গিয়ে ওদের পাড়ার মুখো,
বুড়ো আছে নেই কো হাসি, হাতে তার নেই কো হুঁকো।


**************
শব্দকল্পদ্রুম

ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম্ দ্রাম্, শুনে লাগে খট্ কা-
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পট্ কা!
শাঁই শাঁই পন্ পন্, ভয়ে কান্ বন্ধ-
ওই বুঝি ছুটে যায় সে-ফুলের গন্ধ?
হুড়মুড় ধুপ্ ধাপ্- ওকি শুনি ভাই রে!
দেখ্ ছ না হিম পড়ে- যেও নাকো বাইরে।
চুপ চুপ ঐ শোন্! ঝুপ্ ঝাপ্ ঝ-পাস!
চাঁদ বুঝি ডুবে গেল?- গব্ গব্ গ-বাস!
খ্যাঁশ্ খ্যাঁশ্ ঘ্যাঁচ্ ঘ্যাঁচ্, রাত কাটে ওই রে!
দুড় দাড়্ চুরমার- ঘুম ভাঙে কই রে!
ঘর্ ঘর্ ভন্ ভন্ ঘোরে কত চিন্তা!
কত মন নাচে শোন্- ধেই ধেই ধিন্ তা!
ঠুং ঠাং ঢং ঢং, কত ব্যথা বাজে রে-
ফট্ ফট্ বুক ফাটে তাই মাঝে মাঝে রে!
হৈ হৈ মার্ মার্ `বাপ্ বাপ্' চিত্কার-
মালকোঁচা মারে বুঝি? সরে পড়্ এইবার।


***************
কুমড়োপটাশ

(যদি) কুমড়োপটাশ নাচে    
খবরদার এসো না কেউ আস্তাবলের কাছে,
চাইবে নাকো ডাইনে বাঁয়ে চাইবে নাকো পাছে,
চার পা তুলে থাকবে ঝুলে হট্টমূলার গাছে!

(যদি) কুমড়োপটাশ কাঁদে
খবরদার! খবরদার! বসবে না কেউ ছাদে,
উপুড় হয়ে মাচায় শুয়ে লেপ কম্বল কাঁধে,
বেহাগ সুরে গাইবে খালি `রাধে কৃষ্ণ রাধে'!

(যদি) কুমড়োপটাশ হাসে
থাকবে খাড়া একটি ঠ্যাঙে রান্নাঘরের পাশে,
ঝাপ্সা গলায় ফার্সি কবে নিশ্বাসে ফিস্ফাসে,
তিনটি বেলায় উপোশ করে থাকবে শুয়ে ঘাসে!

(যদি) কুমড়োপটাশ ছোটে
সবাই যেন তড়বড়িয়ে জানলা বেয়ে ওঠে,
হুঁকোর জলে আলতা গুলে লাগায় গালে ঠোঁটে,
ভুলেও যেন আকাশ পানে তাকায় না কেউ মোটে!

(যদি) কুমড়োপটাশ ডাকে
সবাই যেন শাম্ লা এঁটে গামলা চড়ে থাকে,
ছেঁচকি শাকের ঘন্ট বেটে মাথায় মলম মাখে,
শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা ঘষতে থাকে নাকে!

তুচ্ছ ভেবে এ-সব কথা করছে যারা হেলা,
কুমড়োপটাশ জানতে পেলে বুঝবে তখন ঠেলা।
দেখবে তখন কোন কথাটি কেমন করে ফলে,
আমায় তখন দোষ দিও না, আগেই রাখি বলে।

***********
গোঁফ চুরি

হেড আফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জান্ত?
দিব্যি ছিলেন খোসমেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা বসে ঝিম্ ঝিমিয়ে হটাৎ গেলেন ক্ষেপে!
আঁত্কে উঠে হাত-পা ছুঁড়ে চোখটি ক'রে গোল!
হটাত্ বলেন, "গেলুম গেলুম, আমায় ধ'রে তোল!''
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউ-বা হাঁকে পুলিশ,
কেউ-বা বলে, "কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস।''
ব্যস্ত সবাই এদিক-ওদিক করছে ঘোরাঘুরি---
বাবু হাঁকেন, "ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি!''
গোঁফ হারানো! আজব কথা! তাও কি হয় সত্যি?
গোঁফ জোড়া তো তেমনি আছে, কমে নি এক রত্তি।
সবাই তাঁরে বুঝিয়ে বলে, সামনে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয় নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না।

রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
"কারো কথার ধার ধারি নে, সব ব্যাটাকেই চিনি।
"নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়লা,
"এমন গোঁফ তো রাখত জানি শ্যামবাবুদের গয়লা।
"এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই''-
এই না বলে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায়।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়---
"কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায়।
"আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর
"গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর।
"ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধরে খুব নাচি,
"মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধরে কোদাল দিয়ে চাঁচি।
"গোঁফকে বলে তোমার আমার - গোঁফ কি কারো কেনা?
"গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।''

*******
আবোল তাবোল

আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর,
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।

আয় ক্ষ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে-
আয়রে তবে ভুলের ভবে
অসম্ভবের ছন্দেতে॥

************
পড়ার হিসাব

ফিরল সবাই ইস্কুলেতে সাঙ্গ হল ছুটি-
আবার চলে বই বগলে সবাই গুটি গুটি।
পড়ার পরে কার কি রকম মনটি ছিল এবার,
সময় এল এখন তারই হিসেবখানা দেবার।
কেউ পড়েছেন পড়ার পুঁথি, কেউ পড়েছেন গল্প,
কেউ পড়েছেন হদ্দমতন, কেউ পড়েছেন অল্প।
কেউ-বা তেড়ে গড়গড়িয়ে মুখস্থ কয় ঝাড়া,
কেউ-বা কেবল কাঁচুমাচু মোটে না দেয় সাড়া।
গুরুমশাই এসেই ক্লাসে বলেন, `ওরে গদাই,
এবার কিছু পড়লি? নাকি খেলতি কেবল সদাই?'
গদাই ভয়ে চোখ পাকিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে শেষে
বল্লে, 'এবার পড়ার ঠেলা বেজায় সর্বনেশে-
মামার বাড়ি যেম্নি যাওয়া অম্নি গাছে চড়া,
এক্কেবারে অম্নি ধপাস্- পড়ার মতো পড়া!'

********
নিরুপায়

বসি বছরের পয়লা তারিখে
মনের খাতায় রাখিলাম লিখে-
`সহজে উদরে ঢুকিবে যেটুক,
সেইটুকু খাব, হব না পেটুক।'
মাস দুই যেতে খাতা খুলে দেখি,
এরি মাঝে মন লিখিয়াছে এ কি!
লিখিয়াছে,`যদি নেমন্তন্নে
কেঁদে ওঠে প্রাণ লুচির জন্যে,
উচিত কি হবে কাঁদানো তাহারে?
কিংবা যখন বিপুল আহারে,
তেড়ে দেয় পাতে পোলাও কালিয়া
পায়েস অথবা রাবড়ি ঢালিয়া-
তখন কি করি, আমি নিরুপায়!
তাড়াতে না পারি, বলি আয়, আয়,
ঢুকে আয় মুখে দুয়ার ঠেলিয়া
উদার রয়েছি উদর মেলিয়া!'

*********  
খাই খাই

খাই খাই করো কেন, এসো বসো আহারে---
খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে।
যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে,
জড় করে আনি সব--- থাক সেই আশাতে।
ডাল ভাত তরকারি ফল-মূল শস্য,
আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য,
রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি,
ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি,
আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে---
খুঁজে পেতে আনি খেতে--- নয় বড়ো সিধে সে!
জল খায়, দুধ খায়, খায় যত পানীয়,
জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিয়ো।
ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা,
জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা।

ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ),
বার্মার `ঙাপ্পি'তে বাপ্ রে কি গন্ধ!
মান্দ্রাজী ঝাল খেলে জ্বলে যায় কণ্ঠ,
জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘণ্ট!
আরশুলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা,
কত কি যে খায় লোকে নাহি তার কিনারা।
দেখে শুনে চেয়ে খাও, যেটা চায় রসনা;
তা না হলে কলা খাও- চটো কেন? বসো না-
সবে হল খাওয়া শুরু, শোনো শোনো আরো খায়-
সুদ খায় মহাজনে, ঘুষ খায় দারোগায়।
বাবু যান হাওয়া খেতে চড়ে জুড়ি-গাড়িতে,
খাসা দেখ `খাপ্ খায়' চাপ্ কানে দাড়িতে।
তেলে জলে `মিশ খায়', শুনেছ তা কেও কি?
যুদ্ধে যে গুলি খায় গুলিখোর সেও কি?
ডিঙি চড়ে স্রোতে প'ড়ে পাক খায় জেলেরা,
ভয় পেয়ে খাবি খায় পাঠশালে ছেলেরা;
বেত খেয়ে কাঁদে কেউ, কেউ শুধু গালি খায়,
কেউ খায় থতমত- তাও লিখি তালিকায়।
ভিখারিটা তাড়া খায়, ভিখ্ নাহি পায় রে-
`দিন আনে দিন খায়' কত লোক হায় রে।
হোঁচটের চোট্ খেয়ে খোকা ধরে কান্না
মা বলেন চুমু খেয়ে, `সেরে গেছে, আর না।'
ধমক বকুনি খেয়ে নয় যারা বাধ্য
কিলচড় লাথি ঘুঁষি হয় তার খাদ্য।
জুতো খায় গুঁতো খায়, চাবুক যে খায় রে,
তবু যদি নুন খায় সেও গুণ গায় রে।
গরমে বাতাস খাই, শীতে খাই হিম্ সিম্,
পিছলে আছাড় খেয়ে মাথা করে ঝিম্ ঝিম্।

কত যে মোচড় খায় বেহালার কানটা,
কানমলা খেলে তবে খোলে তার গানটা।
টোল খায় ঘটি বাটি, দোল খায় খোকারা,
ঘাব্ড়িয়ে ঘোল খায় পদে পদে বোকারা।
আকাশেতে কাৎ হ'য়ে গোঁৎ খায় ঘুড়িটা,
পালোয়ান খায় দেখ ডিগ্ বাজি কুড়িটা।
ফুটবলে ঠেলা খাই, ভিড়ে খাই ধাক্কা,
কাশীতে প্রসাদ খেয়ে সাধু হই পাক্কা।
কথা শোনো, মাথা খাও, রোদ্দুরে যেও না-
আর যাহা খাও বাপু বিষমটি খেয়ো না।
`ফেল্' ক'রে মুখ খেয়ে কেঁদেছিলে সেবারে,
আদা-নুন খেয়ে লাগো পাশ করো এবারে।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ো নাকো; যেয়ো নাকো ভড়্কে,
খাওয়াদাওয়া শেষ হলে বসে খাও খড়্ কে।
এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা-
খাও তবে কচুপোড়া খাও তবে ঘণ্টা।

********