সৈয়দ আলাওল-এর বৈষ্ণব পদাবলী |
সইগণ বড়ি অপরূপ সাজে ভণিতা শ্রীআলাওল কবি আলাওল এই পদটি ১৩১১ বঙ্গাব্দে (১৯০৭ সালে) প্রকাশিত, ব্রজসুন্দর সান্যাল সম্পাদিত “মুসলমান বৈষ্ণব কবি” ৩য় খণ্ড, ৩-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। ॥ কল্যাণ॥ সইগণ, বড়ি অপরূপ সাজে। একি অপছরী১, তেজি সুরপুরী, আয়ল ভুবন মাঝে॥ ধু। শিরেত সিন্দুর, নয়ানে কাজল, বড়ি অপরূপ রঙ্গ। রাহু দিবাকর, কুহু সুন্দর, তিন ভেল একহি সঙ্গ॥ অরুণ বরণ, যুগল নয়ান, কাজল লজ্জিত ভেলা। কনক কমল, উপরে ভ্রমর, খঞ্জনে করএ খেলা॥ সর্ব্বক্ষণ হেন, জিতেন্দ্রিয়(?) গমন, করি-অরি জিনি মাঝ। কেয়ূর কঙ্কণ, কিঙ্কিণী নূপুর, সঘন করএ গাজ২॥ @@@@ গুরুর কিঙ্কর, শুন সব মতিমান। নূতন যৌবন, কামিনী মোহন, শ্রীআলাওলে ভাণ॥৩ ১। অপছরী - অপ্সরা। ২। গাজ - গর্জ্জন বা নিক্কণ। @ - অপাঠ্য অক্ষর। ৩। ভণে শ্রীআলাওল খান --- পাঠান্তর। . ************************ . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ননদিনী রস বিনোদিনী ভণিতা আলাওল কবি আলাওল / আলওয়াল এই পদটি ১৩১১ বঙ্গাব্দে (১৯০৭ সালে) প্রকাশিত, ব্রজসুন্দর সান্যাল সম্পাদিত “মুসলমান বৈষ্ণব কবি” ৩য় খণ্ড, ১-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। ॥ তুড়ী (মতান্তরে ভৈরব রাগ)॥ ননদিনী রস-বিনোদিনী, ও তোর কুবোল সহিতাম্ নারি। ধু। ঘরের ঘরিণী, জগত-মোহিনী, প্রত্যুষে যমুনাএ গেলি। বেলা অবশেষ, নিশি পরবেশ, কিসে বিলম্ব করিলি? প্রত্যুষে বেহানে, কমল দেখিয়া, পুষ্প তুলিবারে গেলুম্। বেলা উদনে, কমল মুদনে, ভোমরা দংশনে মৈলুম্॥ কমল কণ্টকে, বিষম সঙ্কটে, করের কঙ্কণ গেল। কঙ্কণ হেরিতে, ডুব দিতে দিতে, দিন অবশেষ ভেল॥ শীষের১ সিন্দুর, নয়ানের কাজল, সব ভাসি গেল জলে। হের দেখ মোর, অঙ্গ জর জর, দারুণি পদ্মের নালে॥ কুলের কামিনী, কুলের নিছনি, কুলে নাই তোর সীমা। আরতি মাগনে, আলাওলে ভণে, জগত মোহিনী রামা॥ ১। শীষের - শীর্ষের, মস্তকের বা সিঁথার। এই পদটি সচ্চিদানন্দ ভট্টাচার্য সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ সংখ্যায় (নভেম্বর ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত কনক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “বঙ্গের মুসলমান বৈষ্ণব-কবি” প্রবন্ধে, ৬৬৪-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। “ননদিনী রসবিনোদিনী ও তোর কুবোল সহিতাম নারি॥ ধ্রু॥ ঘরের ঘরণী জগত মোহিনী প্রত্যুষে যমুনায় গেলি। বেলা অবশেষ নিশি পরবেশ কিসে বিলম্ব করিলি॥” “প্রত্যুষে বেহানে কমল দেখিয়া পুষ্প তুলিবারে গেলুম। বেলা উদনে কমল মুদনে ভোমরা দংশনে মৈলুম॥ কমল-কণ্টকে বিষম সঙ্কটে করের কঙ্কণ গেল। কঙ্কণ হেরিতে ডুব দিতে দিতে দিন অবশেষ ভেল॥ সীথের সিন্দুর নয়নের কাজল সব ভাসি গেল জলে। হের দেখ মোর অঙ্গ জরজর দারুণি পদ্মের নালে॥” এই কলিটি এই প্রবন্ধে বাদ পড়েছে . . . আরতি মাগনে আলাওল ভণে জগৎ-মোহিনী বামা॥ এই পদটি ১৯৪০ সালে প্রকাশিত, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস ও অন্যান্য বৈষ্ণব মহাজন গীতিকা”, ১১৪-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। ননদিনী রস-বিনোদিনী, ও তোর কুবোল সহিতাম নারি॥ ধ্রু॥ “ঘরের ঘরণী জগত-মোহিনী প্রত্যূষে যমুনাএ গেলি। বেলা অবশেষ, নিশি পরবেশ,--- কিসে বিলম্ব করিলি?” “প্রত্যুষে বেহানে, কমল দেখিয়া, পুষ্প তুলিবারে গেলুম। বেলা উদনে কমল মুদনে ভ্রমর-দংশনে ১ মৈলুম॥ কমল-কণ্টকে বিষম সঙ্কটে করের কঙ্কণ গেল। কঙ্কণ হেরিতে ডুব দিতে দিতে দিন অবশেষ ভেল॥ সীথের সিন্দূর নয়নের-কাজল সব ভাসি গেল জলে। হের দেখ মোর অঙ্গ জরজর দারুণি পদ্মের নালে॥” কুলের কামিনী ফুলের নিছনি, কুলে নাহিক সীমা। আরতি মাগনে আলওয়াল ভণে২ জগৎ-মোহিনী বামা॥ পাদটীকা - ১। রাধা অভিসারে গিয়া বাড়ীতে ফিরিয়াছেন ; তাঁহার ননদিনী কুটিলার প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজের অঙ্গের অভিসার-লক্ষণ ব্যাখ্যা করিয়া গোপন করিতেছেন। ২। মাগন ঠাকুরের আজ্ঞায় আলওয়াল কবি বলিতেছেন। এই পদটি ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত, যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য্য সম্পাদিত “বাঙ্গালার বৈষ্ণব-ভাবাপন্ন মুসলমান কবি”, ৪৫-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। ॥ তুড়ী (মতান্তরে ভৈরব রাগ)॥ অভিসার ॥ ননদিনী রস-বিনোদিনী, ও তোর কুবোল সহিতাম নারি। ধু। ঘরের ঘরিণী, জগত-মোহিনী, প্রত্যুষে যমুনাএ গেলি। বেলা অবশেষ, নিশি পরবেশ, কিসে বিলম্ব করিলি? প্রত্যুষে বেহানে, কমল দেখিয়া, পুষ্প তুলিবারে গেলুম। বেলা উদনে কমল মুদনে, ভোমরা দংশনে মৈলুম্॥ কমল কণ্টকে, বিষম সঙ্কটে, করের কঙ্কণ গেল। কঙ্কণ হেরিতে, ডুব দিতে দিতে, দিন অবশেষ ভেল॥ শীষের সিন্দুর, নয়ানের কাজল, সব ভাসি গেল জলে। হের দেখ মোর, অঙ্গ জর জর, দারুণি পদ্মের নালে॥ কুলের কামিনী, কুলের নিছনি, কুলে নাই তোর সীমা। আরতি মাগনে, আলাওলে ভণে, জগত-মোহিনী রামা॥ এই পদটি ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত, আবদুল কাদির ও রেজাউল করীম সম্পাদিত, “কাব্য-মালঞ্চ” সংকলনের ২৫-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ বিলম্বিতা॥ ননদিনী রস-বিনোদিনী। ও তোর কু-বোল সহিতে নারি॥ ধ্রু। ঘরের ঘরিণী, জগৎ-মোহিনী, প্রত্যুষে যমুনায় গেলি। বেলা অবশেষ, নিশি পরবেশ, কিসে বিলম্ব করিলি॥ প্রত্যুষে জাগিয়া, কমল দেখিয়া, পুষ্প তুলিবারে গেলুম। বেলা উদনে, কমল মুদনে, ভ্রমর দংশনে মৈলুম॥ কমল-কণ্টকে, বিষম সঙ্কটে, করের কঙ্কণ গেল। কঙ্কণ হেরিতে, ডুব দিতে দিতে, দিন অবশেষ ভেল॥ সিঁথির সিন্দুর, নয়নের কাজল সব ভাসি’ গেল জলে। হেরি’ দেখ মোর, অঙ্গ জরজর, দারুণ পদ্মের নালে॥ কুলের কামিনী, ফুলের নিছনি, কুলে নাহি তোর সীমা। আরতি মাগনে, আলাওলে ভণে, জগৎমোহিনী বামা॥ এই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী, ১০৯৮-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। অভিসার ॥ তুড়ী ( মতান্তরে ভৈরব রাগ )॥ ননদিনী রস-বিনোদিনী ও তোর কুবোল সহিতে নারি আমি ॥ ধ্রু ॥ ( ননদিনী ) ঘরের ঘরণী জগত মোহিনী প্রত্যুষে যমুনাএ গেলি। বেলা অবশেষ নিশি পরবেশ কিসে বিলম্ব করিলি॥ ( শ্রীরাধা ) প্রত্যুষে বেহানে কমল দেখিয়া পুষ্প তুলিবারে গেলাম। বেলা উদনে কমল মুদনে ভোমরা দংশনে মৈলাম॥ কমল কণ্টকে বিষম সঙ্কটে করের কঙ্কণ গেল। কঙ্কণ উখটিতে ডুব দিতে দিতে দিন অবশেষ ভেল॥ শীর্ষের সিন্দুর নয়ানের কাজল সব ভাসি গেল জলে। হের দেখ মোর অঙ্গ জর জর দারুণি পদ্মের নালে॥ কুলের কামিনী কুলের নিছনি কুলে নাই তোর সীমা। আরতি মাগনে আলাওলে ভণে জগত মোহিনী রামা॥ ১ ॥ . ************************ . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
আলি কহ মুঝে মিলায়স কাম ওলো কাহে মুঝে মিলনের কাম কে মিলাইবে কে মিলাইবো ভণিতা হীন আলাওল কবি আলাওল এই পদটি ১৩১১ বঙ্গাব্দে (১৯০৭ সালে) প্রকাশিত, ব্রজসুন্দর সান্যাল সম্পাদিত “মুসলমান বৈষ্ণব কবি” ৩য় খণ্ড, ৪-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। ॥ কল্যাণ॥ আলি১ কহ (কিহে?) মুঝে মিলায়স কাম? ঘঠে (তে) না রহে প্রাণ! ধু। না জানি কি হৈল, কি দিআ কি কৈল, না জানি ললাটে আছে কি। বিনি দোষে কালা, দিলা এথ জ্বালা, এ না দুঃখে প্রাণ যায় তেজি॥ অবিরত পোড়ে মন, কালা মোরে নিদারুণ, ভুলিয়া রহিলা ভিন্ন দেশ। বিরহের বন, মদন দাহন, তনু ক্ষীণ প্রাণি (মোর) শেষ॥ চন্দন আগর২, শীতল মন্দির, কিছু না লাগএ মন রঙ্গে। হীন আলাওলে ভণে, ঐ দুঃখ রহিল মনে, কানাইয়া দেখ তোর সঙ্গে॥ ১। আলি - সখি। ২। আগর - অগুরু। এই পদটি ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত, আবদুল কাদির ও রেজাউল করীম সম্পাদিত, “কাব্য-মালঞ্চ” সংকলনের ২৬-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ বিরহ-রহস্য॥ ওলো কাহে মুঝে মিলনের কাম ঘরেতে না রহে প্রাণ। ধ্রু। কি জানি কি হৈল কি দিয়া কি রৈল না জানি নসিবে আছে কী। বিনা দোষে কালা দিলা এত জ্বালা এ দুঃখে প্রাণ মাত্র ত্যাজি॥ অবিরত পোড়ে মন কালা মোরে নিদারুণ ভুলিয়া রহিল ভিন্ন দেশ। বিরহ-বেদন মদন-দাহন তনু ক্ষীণ, প্রাণি অবশেষ॥ চন্দন আগুরু শীতল মন্দির কিছু না লাগয় পোড়া অঙ্গে। হীন আলাওলে ভণে এই দুঃখ রৈল মনে কানাইয়া দেখোঁ তোর সঙ্গে॥ এই পদটি ১৩১১ বঙ্গাব্দে (১৯০৭ সালে) প্রকাশিত, ব্রজসুন্দর সান্যাল সম্পাদিত “মুসলমান বৈষ্ণব কবি” ৩য় খণ্ড, ৫-পৃষ্ঠায়, পাঠান্তরে কবি “আমান”-এর ভণিতায় এইরূপে প্রচলিত পাওয়া গিয়েছে। ॥ কল্যাণ॥ কে মিলাইবে, কে মিলাইবো, কে মিলাবে কান? ঘঠে রে না রহে পরাণ! ধু। না জানি কি হৈল, কি দিআ কি কৈল, কি জানি করমে (আছে?) কি। কি না দোষে কালা, দিলা এথ জ্বালা, প্রাণি লৈয়া যাএ তেজি॥ কি জানি এমন, কালা নিদারুণ, ভুলি রহল দূর দেশ। অনঙ্গ বেদন, মদন দহন, তনু ছাড়ি প্রাণ শেষ॥ এই চান্দ চন্দন, শীতল মঙ্গল, আন ন ভাবিয়ে অঙ্গ। হীন আমানে ভণে, এ তিন ভুবনে, দেখ কানাই তোহ্মার সঙ্গ॥ ১। আলি - সখি। ২। আগর - অগুরু। . ************************ . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
কি দেখিলাম যমুনার ঘাটে লো নাগর কানাই রে ভণিতা হীন আলাওল কবি আলাওল এই পদটি ১৩১১ বঙ্গাব্দে (১৯০৭ সালে) প্রকাশিত, ব্রজসুন্দর সান্যাল সম্পাদিত “মুসলমান বৈষ্ণব কবি” ৩য় খণ্ড, ৬-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। ॥ গুর্জ্জরী ভাটীয়াল॥ কি দেখিলাম যমুনার ঘাটে লো নাগর কানাই রে, শ্যাম, কি দেখিলাম যমুনার ঘাটে? ধু। দক্ষিণে নাচএ ভুরু, সঘনে কম্পএ উরু, পাপিনী সাপিনী হৈল বাম। আভাবে পড়িল বাধা, মুই কলঙ্কিণী রাধা, না জানি কি হয় পরিণাম॥ মুই যদি জানিতুম্ বাটে, কানাইয়া যমুনার ঘাটে, ত’১ কেনে ভরিতে আইলুম্ জল। কৈয়াছিল গুরুজনে, সে কথা না ছিল মনে, পাইলাম তার প্রতিফল॥ জঙ্গম মেঘের আড়ে, যুগল খঞ্জন নাচে, তা দেখিয়া পড়ি গেলুম্ ভোলে। হেন কভু না দেখিছি, লোক মুখে না শুনিছি, হেন পক্ষী আছএ গোকুলে॥ বংশী বটের তলে, ছায়া নাহি সুশোভিত, তাতে বসিতে না লয় মন। অরুণ কিরণ তাপে, মু’খানি শুকাই যাবে, ক্ষুধাএ আঁখি অরুণ বরণ॥ কহে হীন আলাওলে, কেনে আইলুম্ তরুতলে, নয়ানে নয়ানে হৈল দেখা। এক ধারা পন্থখানি, দুই ধারা হইতে নারি, শ্যাম গায়ে লাগিয়াছে ধাকা২॥ ১। ত’ - তবে। ২। ধাকা - ধাক্কা। . ************************ . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
হা হা রে বন্ধুর বাঁশী বিষম ফাঁসি ভণিতা হীন আলাওল কবি আলাওল এই পদটি ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত, আবদুল কাদির ও রেজাউল করীম সম্পাদিত, “কাব্য-মালঞ্চ” সংকলনের ২৫-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ মুরলী সঙ্কেত॥ হা হা রে বন্ধুর বাঁশী, বিষম ফাঁসি, লাগিয়া রৈল রাধার গলে॥ ধ্রু। বন্ধুর বাঁশী চিত্ত-চোর লাগাইয়া প্রেম-ডোর যুবতীর মন ধরি টানে। কুলবধু কুল-হিয়া হরি নিল বাঁশী দিয়া প্রাণ নিল, বুঝি অনুমানে॥ তুই বন্ধুর কঠিন হিয়া, অনলেতে কাষ্ঠ দিয়া ছাই হই জ্বলিয়া পুড়িয়া। কহে হীন আলাওলে জল ঢাল সে অনলে, নিবাও অনল প্রেম-রস দিয়া॥ . ************************ . সূচীতে . . . মিলনসাগর |