সৈয়দ আলাওল-এর কবিতা
কন্যাবিদায়   
কবি সৈয়দ আলাওল  
এই পদটি ১৯৯১ সালে প্রকাশিত, সুকুমার সেন সম্পাদিত "বাংলা কবিতা সমুচ্চয়" প্রথম
খণ্ড, ৮২-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। কবির "পদ্মাবতী" কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।

পদ্মাবতী সব সখীগণ আনাইল |
গমনের কাল যদি নিকট হইল ||
কন্যাঘরে সিংহলের রমণী আসিয়া |
কান্দিতে লাগিল সব শোকাকুলী হৈয়া ||
একে একে গলে ধরি কান্দে বরবালা |
সকল ছাড়িয়া আমি যাইব একেলা ||
ছাড়িল নাইয়র ঘর বান্ধব সমাজ |
একেশ্বরী হৈয়া চলিল ভিন্ন রাজ ||
তোমরা সবারে কোনমতে পাশরিব |
স্মরণ হইলে মনে জ্বলিয়া মরিব ||
শুন প্রাণসখি আমি চলি যাব যথা |
তথা গেলে পুনি ফিরি না আসিব এথা ||
যেই দিন লাগি সখি মনে ছিল ভীত |
সেই দিন আসি আজি হইল উপস্থিত ||
ছত্রশালা বৃন্দাবন কেলি-সরোবর |
প্রাণপ্রিয়া সখীগণ প্রাণের দোসর ||
একদিনে ছাড়িল সিংহল করিলাম |
বিধিবশে হৈল মোর দূরদেশ বাস ||
পরদেশী হৈল বলি দয়া ছাড়িহ |
অবশ্য বারেক মোরে স্মরণ করিহ ||
তুমি সব ভাগ্যবতী রহিলা স্বদেশে |
মোর মনে রহিলেক এ জনম ক্লেশে ||
আশীর্ব্বাদ আমারে করিহ এক মনে |    
সদত পিরীতি যেন থাকে স্বামী মনে ||                                    
সূচীতে . . .    
আজন্ম বিচ্ছেদে দুঃখ দিলেক গোঁসাই |
ছাড়িল সিংহল দ্বীপ আর দেখা নাই ||
যেই কিছু ধিকাধিক বলিল যখনে |
দুখিনীরে ক্ষেমা কর না রাখিহ মনে ||
যার সনে যখনে করিল বোলাবোল |
দুখিনী স্মরিত মনে হইল বিকল ||
পদ্মাবতী কান্দনে কান্দয় সখীগণ |
সজল নয়ানে বলে বিনয় বচন ||
তোমা হৈতে বান্ধব নাহিক কোনজন |
যাহারে দেখিলে হয় দুঃখ বিস্মরণ ||
শিশুকালে তোমা সঙ্গে ছিল নানা সুখ |
একদিন কিঞ্চিৎ না পাইল মনে দুখ ||
স্মরিতে তোমার নেহা আমরা মরিব |
দৈবের নিবন্ধ আছে কিরূপ করিব ||
সদত গোপত আখি তোমাকে দেখিব |
ভ্রমেও আমরা মনে ভরম না হৈব ||
এই মতে অন্যে-অন্যে কান্দিতে কান্দিতে |
নৃপ গৃহে আইল তবে মাও বোলাইতে ||

.        ************************                                                   
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
কুটিল কবরী কুসুম মাঝে
ভণিতা আলাওল
কবি আলাওল
১৯৬০ সালে প্রকাশিত, জায়সীর “পদ্মাবত” কাব্যের মহাকবি সৈয়দ আলাওল রচিত  
বঙ্গানুবাদ “পদ্মাবতী”-র, দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত সম্পাদিত গ্রন্থের ২৭৪-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে। এটি কবির পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থে, পদ্মাবতীর রূপচর্চা খণ্ডে আলাউদ্দীনের
কাছে রাঘবচেতন কৃত রূপবর্ণনা উপলক্ষে একাবলী ছন্দের, পদের মূল পুথির পাঠ।

॥ গীত রাগ শ্রী গান্ধার॥

কুটীল কবরি কুষুম শাজ।
তারক মণ্ডলে জলধর মাজ॥
ষুব শশী দুহ শিন্দুর ভাল।
বেরি বিধন্তুদ অলকা জাল॥
শোন্দরি কামিনি কাম বিমোহে।        
খঞ্জন গঞ্জন নয়ানে ছোহে॥ ধুয়া॥
মদন ধনুক ভুরু বিভঙ্গ।
অপাঙ্গ ইঙ্গিত বান রঙ্গ॥
নাশা খগপতি নহে শমতুল।
ষুরঙ্গ অধর বন্দুলি ফুল॥
দশন মুকুতা বিযুলি হাশ।
অমিয়া বরিখে মধুর ভাস॥
উরূজ কটীন হেম কঠোর।
হেরি মুনি জন মন বিভোর॥
হরি করি দুহু কুম্ভ কটী নিতম্ব।
রাজ হংসী জিনি গতি বিলম্ব॥
কবি আলাঅলে মধুর গাএ।
মাগন কবিকিত্তি রহু শদাএ॥

ই পদটি সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত “সাহিত্য” পত্রিকার পৌষ ১৩২১ বঙ্গাব্দ  
সংখ্যায় (ডিসেম্বর ১৯১৪ খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত অনাথবন্ধু দেবের “বঙ্গীয় মুসলমান ও বঙ্গ-
সাহিত্য” প্রবন্ধে, ৭২৮-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে। এটি কবি আলাওলের “পদ্মাবতী”  
কাব্যগ্রন্থের পদ।

কুটিল কবরী কুসুম মাঝে।            তারকা-মণ্ডলে জলদ সাজে॥
শশীকলা প্রায় সিন্দুর ভালে।          বেড়ি বিধুমুখ অলক জালে॥
সুন্দরী কামিনী কাম বিমোহে।        খঞ্জন-গঞ্জন নয়নে চাহে॥
মদন ধনুক ভুরু-বিভঙ্গে।              অপাঙ্গ ইঙ্গিত বাণ তরঙ্গে॥
নাসা খগপতি নহে সমতুল।           সুরঙ্গ অধর বাঁধুলী ফুল॥
দশন মুকুতা বিজলি হাসি।            অমিয় বরিষে আঁধার নাশি॥
উরজ কঠিন হেম কঠোর।             হেরি মুনিজন মন বিভোর॥
হরি করি-কুম্ভ কটি নিতম্ব।            রাজহংস জিনি গতি বিলম্ব॥
কবি আলাওল মধু গায়।               আপন আরতি রহুক অদায়॥

.                      ************************      
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
বসন্তে নাগর বরনাগরী বিলাসে
ভণিতা হীন আলাওল
কবি আলাওল
১৯৬০ সালে প্রকাশিত, জায়সীর “পদ্মাবত” কাব্যের মহাকবি সৈয়দ আলাওল রচিত, বঙ্গানুবাদ “পদ্মাবতী”-
র, দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত সম্পাদিত গ্রন্থের ২০৭-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। এখানে কবির
পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থে, “ষট ঋতু বর্ণনা” খণ্ডের পদের দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদিত পাঠ।

॥ গীত বসন্ত রাগ॥

বসন্তে নাগর বরনাগরী বিলাসে।
বরবালা মুখ ইন্দু                    স্রবে সুধা বিন্দু বিন্দু
মৃদুমন্দ ললিত অধর মধুহাসে॥
প্রফুল্লিত কুসুম                             মধুব্রত ঝহ্কৃত
হুঙ্কৃত পরভৃত কুজিত রাবে।
মলয়া সমীর                           সুসৌরভে সুশীতল
বিলুলিত পতি অতি রসভাবে॥
পল্লবিত বনস্পতি                        কুটজ তমালদ্রুম
মুকুলিত চূতলতা কোরক জালে।
যুবজনহৃদয়                             আনন্দ পরিপুঞ্জিত
লবঙ্গ মল্লিকা মালতীমালে॥
মধু সেনাপতি সঙ্গে                        মদন মেদিনীপতি
বাহিনী কোরক নবপল্লব পুরিত।
নবদণ্ড কেশর                            চামর শির সবের
ভুবনবিজয়ী চিত্ত যুবক শাসিত॥
চৌদিগে যুবতিকুল                       মাঝে সুনায়ব বব
নৃত্যগীত অতিশয় আনন্দ বিভোরে।
শ্রমযুত শরীর                          বিশ্রীমিতাশ্রয় ভাবে
অতিরসে রমণী লুলিত পতি উরে॥
কুহু করতাল বংশী                             কাসব মণ্ডল
সমধুর ললিত উপাঙ্গ আওয়াজে।
তানত থোনত ধিয়া                  ধিতা তাথি থেই থিয়া
জিকু কুসি সুমি কিবা যত পাখোয়াজে॥
মধু মনসিজ মদে                        নৃত্যকলা বিশারদে
তৃষিত নয়ন অঙ্গ আলিঙ্গন চুম্বে।
সুবেশ নিকর ভাবে                     রস ভাব অলসিত
বিরমই রমণী উরজ অবলম্বে॥
আনন্দ সায়রে মনো-                       হরিত যন্ত্র গীত
তালে করপদ দোলিত রতি নটরঙ্গে।
কুচ কুম্ভ গ্রহি করে                        চুম্বিল নাগর বরে
মজিত উগিত রস উদধি তরঙ্গে॥
রসিক নায়র মণি                        শ্রীযুত মাগন গুণী
মধুঋতু কলাধীর রতিরস বাসে।
হীন আলাওলে কহ                        সতত বসন্ত সুখ
যার রমণী বসতি পতি পাশে॥

সম্পাদকের মন্তব্য -
আলাএলের এই নিজস্ব বসন্ত গীতটি বিভিন্ন পুঁথিতে বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন পাঠ থেকে মোটামুটি একটা শুদ্ধরূপ দেওয়া গেল। পদটির ভাষা
ভঙ্গীতে জয়দেবের বসন্ত বর্ণনাপদের প্রভাব সক্ষণীয়।

ই পদটি জায়সীর “পদ্মাবত” কাব্যের মহাকবি সৈয়দ আলাওল রচিত, বঙ্গানুবাদের, অংশ বিশেষ,
দীনেশচন্দ্র সেনের "বঙ্গভাষা ও সাহিত্য" গ্রন্থের (৬ষ্ঠ সংস্করণ) নবম
অধ্যায়ের ৪৯৬-পৃষ্ঠায়
আংশিক
এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

বসন্তে নাগরবর
নাগরী বিলাসে।
বরবালা মুখ ইন্দু
, স্রবে সুধা বিন্দু, মৃদুমন্দ অধরে ললিত মধু হাসে॥
প্রফুল্লিত কুসুম
, মধুব্রত ঝঙ্কৃ, হুঙ্কৃত পরভৃত কুঞ্জে  রতরাসে
মলয়সমীর
, সুসৌরভ সুশীতল বিলোলিত পতি অতি রসভাষে
প্রফুল্লিত বনস্পতি, কুটিল তমালদ্রুম, মুকুলিত চূতলতা কোরক-জালে।
যুবজন
হৃদয়, আনন্দ পরিপুরি, রঙ্গমল্লিকামালতীমালে॥

.               ************************                
.                                                                                  
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
শেখ মহম্মদ যতি যখনে রচিলা পুঁথি
ভণিতা হীন আলাওল
কবি আলাওল
১৯৬০ সালে প্রকাশিত, জায়সীর “পদ্মাবত” কাব্যের মহাকবি সৈয়দ আলাওল রচিত, বঙ্গানুবাদ
“পদ্মাবতী”-র,  দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত সম্পাদিত গ্রন্থের ২৫-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।
এখানে কবির পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থে, “কাহিনী সূত্র” পদের দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদিত পাঠ।

॥ রাগ লাচারী দীর্ঘ ছন্দ॥

শেখ মহম্মদ যতি                        যখনে রচিলা পুঁথি
সংখ্যা১ সপ্ত বিংশ নব শত।
চিতাওর গড়েশ্বর                           রত্নসেন নৃপবর
শুক মুখে শুনিয়া মহত॥
যোগী হৈয়া নরাধিপ                     চলিল সিংহল দ্বীপ
ষোলশত কুমার সঙ্গতি।
লঙ্ঘি বনখণ্ড বাট                          উত্তরিলা সিন্ধুঘাট
নৌকা দিলা নৃপ গজপতি॥
সিংহল দ্বীপেতে গিয়া                 নানাবিধ দুঃখ পাইয়া
বহু যত্নে পাইল পদ্মাবতী।
সাগরে পাইয়া ক্লেশ                     আসি চিতাওর দেশ
কৈল বহু উত্সব আনন্দ।
রাঘব চেতন গুণি                        অবিমর্ষি কহি বাণী
প্রতিপদে দেখাইল চান্দ॥
তত্ত্ব জানি নৃপবর                     তাকে কৈলা দেশান্তর
যাইতে হৈল কন্যা দরশন।
বহুল আদর মনে                         করের কঙ্কণ দানে
পরিতুষি পাঠাল ব্রাহ্মণ॥
সোলতান আলাউদ্দিন                    দিল্লীশ্বর জগজিন
প্রচণ্ড প্রতাপ ছত্রধর।
পণ্ডিত ব্রাহ্মণ তথা                     কহিল কন্যার কথা
শুনি হরষিত নৃপবর॥
শ্রীজা নামে বিপ্রবর                     পাঠাইল রাজ্যেশ্বর
কন্যা মাগি রত্নসেন স্থানে।
পদ্মাবতী না পাইয়া                  শ্রীজা আইল পলটিয়া
শুনি সাহা ক্রোধ হৈল মনে॥
বহুল মাতঙ্গ বাজী                        চতুরঙ্গ দল সাজি
গেলা চিতাওর মারিবারে।
দ্বাদশ বত্সর রণ                        তথা ছিল অখণ্ডন
রত্নসেন ধরিল প্রকারে॥
দিল্লীশ্বর পাটে আইল                  নৃপ কারাগারে থুইল
তাড়না করিল নানা ভাতি।
গৌরা বাদিলা নাম                       ছিল রত্নসেন ঠাম
মুক্ত কৈল কপত যুকতি॥
চিতাওর দেশে আসি                বঞ্চিলেক সুখে নিশি
পদ্মাবতী সঙ্গে করি রঙ্গ।
দেওপাল নৃপ কথা                     পদ্মাবতী মুখে তথা
শুনি নৃপমন হৈল ভঙ্গ॥
সর্বারম্ভে তথা গিয়া                   দেওপাল সংহারিয়া
যুদ্ধক্ষত আইলা নৃপতি।
সপ্তম দিবসান্তর২                        মৈল রত্নসেন বর
দুই রাণী সঙ্গে হৈলা সতী॥
পুনি সাজি দিল্লীশ্বর                     আসি চিতাওর গড়
চিতাধূম দেখিলা বিদিত।
সতী গতি পদ্মাবতী                    শুনি সাহা মহামতি
মনে হৈল পরম দুঃখিত॥
চিতাওর ইসলাম করি                দিল্লীশ্বর গেলা ফিরি
পুস্তকের এই বিবরণ।
মহাদেবী পাত্রবর                      নানা গুণে বিদ্যাধর
শ্রীযুত ঠাকুর মাগন॥
তাহান আরতি ভাবি                   হীন আলাওল কবি
রচিলেক সরস পয়ার।
সুর শশী বায়ু জল                      যত দিন ক্ষিতিতল
নাম কীর্তি রহুক সংসার॥

শব্দার্থ টীকা -
শেখ মহম্মদ যতি - মালিক মুহম্মদ জায়সী। ইনি ছিলেন সুফি সাধক।
১ - সংখ্যা সপ্তবিংশ নবশত - ৯২৭ হিজরী। কিন্তু জায়সীর গ্রন্থ ৯২৭
হিজরীতে নয়,  ৯৪৭ হিজরীতে রচিত হয়েছিল বলে পদ্মাবৎ কাব্যের
নিম্নলিখিত পংক্তি থেকে জানা যায়---
সন নব সৈ সৈঁতালিস অহা।
কথা আরম্ভ বৈন কবি কখা॥
রত্নসেন - চিতোরের রাজা টডের ইতিহাসে ইনি ভীমসিংহ নামে পরিচিত।
নাগমতী - চিতোররাজ রত্নসেনের প্রথমা পত্নী।
রাঘব চেতন - রত্নসেনের সভাপণ্ডিত।
প্রতিপদে. . .চান্দ - প্রতিপদ তিথিতে দ্বিতীয়ার চাঁদ দেখিয়েছিল।
আলাউদ্দিন - দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী। ১৩০৩ খ্রীষ্টাব্দে
তিনি চিতোর আক্রমণ করেন।
জগজিন - জগজ্জয়ী
শ্রীজা - সুলতানের দূত। জায়সীতে এর নাম সরজা।
গৌরা বাদিলা - রত্নসেনের সেনাপতি।
দেওপাল - চিতোরের পার্শবর্তী রাজ্য কুম্ভলনের হিন্দুরাজা দেবপাল।
২ - সপ্তম দিবসান্তর - সাতদিন পর। শহীদুল্লাহের পাঠে সপ্ত মাস অন্তর।
চিতাওর ইসলাম করি - আলাউদ্দিন চিতোর জয় করে আপন পুত্র
খিজির খাঁর নামানুয়ায়ী এর নতুন নামকরণ করেন খিজিরাবাদ।
পদ্মাবৎ কাব্যের শেষে জায়সীও চিতোরের ইসলাম রাজ্যে পরিণত
হবার কথা লিখেছেন।


.               ************************                 
.                                                                                  
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
দীনবন্ধু! কর পরিত্রাণ
ভণিতা আলাওল
কবি আলাওল
এই পদটি “সাহিত্য-সংহিতা” পত্রিকার শ্রাবণ ১৩০৮ বঙ্গাব্দের সংখ্যায় প্রকাশিত (১৯০১
খৃষ্টাব্দ), মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের “অপ্রকাশিত প্রাচীন পদাবলী” প্রবন্ধের
২৩৯-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রযেছে।

॥ গীত - ভাটীয়াল॥

দীনবন্ধু! কর পরিত্রাণ,
তুমি বিনে দুর্গতির গতি নাহি আন॥ ধ্রু
ভুলিয়া সংসার-রসে তোমা পাসরিলুম।
অনুরূপ প্রতিফল হাতে হাতে পাইলুম॥
না চাহি পরম পদ চাহিলুম সম্পদ।
নিজ দোষে সঙ্গে সহ্গে ভ্রমএ আপদ॥
চন্দন ত্যজিয়া যেন মক্ষিকা পূরীষে।
উড়িয়া পড়এ আসি চিত্তের হরিষে॥
অখনে শরণ লৈলুম ক্ষম অপরাধ।
তুমি বিনে মনে ত নাহিক আন সাধ॥
হীন আলাওলে কহে মুক্তি পাইবা যবে।
মম্মুখে কপট নাশি ভজ দড় ভাবে॥

.               ************************                 
.                                                                                  
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
আড় আঁখি বক্র দৃষ্টি ক্রমে ক্রমে হয়
ভণিতা নেই
কবি আলাওল
ফারসি “ছয়ফুল মুল্লুক ও বদিউজ্জমাল” কাব্যের মহাকবি সৈয়দ আলাওল রচিত,
বঙ্গানুবাদের, অংশ বিশেষ, দীনেশচন্দ্র সেনের "বঙ্গভাষা ও সাহিত্য" গ্রন্থের (৬ষ্ঠ
সংস্করণ) নবম অধ্যায়ের ৪৯৬-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

বয়ঃসন্ধির বর্ণনা

আড় আঁখি বক্র দৃষ্টি ক্রমে ক্রমে হয়।
ক্ষণে ক্ষণে লাজে তনু আসি সঞ্চরয়॥
চোর রূপে অনঙ্গ অঙ্গেতে উপজয়।
বিরহ বেদনা ক্ষণে ক্ষণে মনে হয়॥
অনঙ্গ সঞ্চার অঙ্গে রঙ্গ ভঙ্গ সঙ্গে।
আমোদিত পদ্মগন্ধ পদ্মিনীর অঙ্গে॥
*        *        *        *        *
অভেদ আছয়ে দুই কমলের কলি।
না জানি পরশে কোন্ ভাগ্যবন্ত অলি॥

.               ************************                 
.                                                                                  
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর