কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
যত গালি পাড়িলেক চান্দ অধিকারী | পুস্তক বাহুল্য ভয়ে লিখিতে না পারি || চম্পক নগরে পদ্মার পূজা হইল দূর | ছয় পুত্র লইয়া আছে রাজ্যের ঠাকুর || সেই হইতে চান্দর সনে পদ্মার হইল বাদ | নাগরথে গেলা দেবী পেয়ে অবসাদ || নিজ ঘরে গেলা দেবী বিষাদ ভরিয়া | এর লাগি সোনেকার স্থির নহে হিয়া || বিজয় গুপ্ত বলে সাধু তুমি বড় খল | যেমন করিলা কর্ম পাবে তার ফল || সোনেকা ক্রন্দন করে দুঃখ লাগে বড়ি | এই কালে বল ভাই সরস লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৩
আমারে মারিলা লাথি তাহা নাহি নিন্দি |
ভাঙ্গিলা মনসার ঘট তার লাগি কান্দি ||
ভাঙ্গা ঘট সরা সোনাই নেতে জড়াইয়া |
কান্দে সোনেকা রাণী বিষাদ ভরিয়া ||
ভাঙ্গিলা মনসার ঘট করি অবহেলা |
ছয় পুত্র নিবে মোর দিয়া এক ছলা ||
একে পদ্মার সনে তোমার বিসম্বাদ |
তাহাতে হইল মোর দারুণ প্রমাদ ||
হেন মনে সোনেকা যে করয়ে ক্রন্দন |
নাগরথে পদ্মাবতী বিষাদিত মন ||
প্রত্যক্ষ শিবের কন্যা দেবী বিষহরি |
ডাকিয়া আনিল নেতা রজক কুমারী ||
বুদ্ধি বল নেতা মোরে কেমনে যুয়ায় |
ফল দিব আমি চান্দরে কোন উপায় ||
নেতা বলে পদ্মাবতী দুঃখ অবসান |
গুপ্ত এক কথা কহি কর অবধান ||
বিলম্ব না কর পদ্মা হও আগুসার |
কাটিয়া নন্দন বাড়ি কর ছারখার ||
এই কথা শুনিয়া তবে হাসেন বিষহরি |
ভাল বুদ্ধি দিল নেতা রজক কুমারী ||
নেতা বলে শুন দেবী আমার উত্তর |
এইক্ষণে যাও তুমি শিবের গোচর ||
শুনিয়া পদ্মাবতী না করিল আন |
নাগরথে গেলা মহাদেবের স্থান ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
২
শিশুকালে দিল বিধি পাইনু অমূল্য নিধি তাহা সাধু ভাঙ্গিয়া ফেলিল | হেন দেবী বিষহরি নিরবধি সেবা করি ছয় পুত্র তাহাতে হইল || দারুণ সাধু ভাঙ্গে তারে আর না রহিব ঘরে পদ্মার উদ্দেশ্যে যাব বনে | কান্দি বিষাদিত মন যাউক বাড়ি ধন জন প্রাণ দিব পদ্মার চরণে || মনসা হইল বৈরী আমি যেন আগে মরি ধন ও পুত্র থাকুক কুশলে | পদ্মাবতীর দরশনে সানন্দে বিজয় ভণে সবাকারে রাখ মা মঙ্গলে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৪
প্রথমে তোমার ঠাঁই পূজা খাইবার চাই আপনি হইলা ব্রাহ্মণ | আপন স্থাপিত ঘর রাখালে পাইলে বর পূজিল যে লাটিক চন্ডাল || হাসান হোসেন কাজি তাহাতে হইল বাজি বন্দী রাখে যতেক রাখাল | তাহার দর্প চুর করি সবংশে তাহারে মারি পুনঃ তার জীয়াইলাম সকল || ভয় পাইয়া মনে পূজে কাজি আপনে মনোরথ কাজি কুতূহল || ( যেবা যেথায় শুনে পূজে হইয়া একমনে মনোরথে কাজি কুতূহল | ) সোনেকা চান্দর ধরণী তাহার বিচিত্র বাড়ি হরষিতে গেলাম তাহার ঘর | পূজে নানা উপাচারে বর দিলাম তাহার তরে তুষ্ট হইলআমার অন্তর || চান্দ বেটা দুরাচার অতি করে অহঙ্কার মোরে মন্দ বলিল বিস্তর || ধরিয়া হেতালবাড়ি ষট গোটা চুর করি মোর নামে কাঁপে থর থর || সোনেকারে মন্দ বলে মোর পূজা মানা করে চান্দ হেন কেন হইল বৈরী | যেবা মোর পূজা করে তাহারে আনিয়া মারে মোরে বলে লঘুজাতি কাণী | নিবেদিলাম তোর পায় হেন মোর মনে লয় চান্দর মুই লই পরানি || শিব বলেন পদ্মা শুন বিবাদে নাহিক গুণ চান্দরে মারিতে না পারিবা | বিজয় গুপ্ত বলে সার হেন বোল না বল আর চান্দ পূজিলে তোমার পূজা হবা ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৫
শিব বলে শুন অপূর্ব কাহিনী |
চান্দরে মারিতে না বল হেন বাণী ||
চান্দ যদি তোমা পূজা করে এক চিতে |
তবে সে তোমার পূজা হবে পৃথিবীতে ||
নেতারে দিয়াছি আমি তোমার হিত করে |
সেই যেবা বলে তাহা করিও অন্তরে ||
এত শুনি পদ্মাবতী প্রনাম করিল |
নাগরথে চরি পদ্মা আপন ঘরে গেল ||
নেতা নেতা বলি পদ্মা ডাকিল তখন
একত্রে বসিয়া কহে যত বিবরণ ||
যতেক কহিলেন কথা দেব মহেশ্বর |
সকল বলিল দেবী নেতার গোচর ||
শুনিয়া নেতা বলেন শুন বিষহরি |
প্রথমে কাটিব মোরা চান্দর গুয়াবাড়ি ||
একে একে সকল তার করিব নিপাত |
ভয় পাইয়া পূজিবে তোমা যোড় করি হাত ||
উনকোটি নাগ পদ্মা আনিল ডাকিয়া |
গুয়াবাড়ি কাটিতে যায় হরষিত হইয়া ||
( কাটিতে নন্দনবাড়ি গেলেন কোপ করি |
নরসিংহ কাটারি হাতে লইল বিষহরি ||
কাটিতে নন্দনবাড়ি শিবের কুমারী |
হরিষে চলিলা দেবী নাগরথে চড়ি || )
সংবাদে নাগগণ আসিয়া ত্বরিত |
হস্তযোড়ে মনসারে করয়ে প্রণিপাত ||
কি কারণে আমা সবে করেছ স্মরণ |
কোন কার্য করিব মাতা কহত এখন ||
পদ্মা বলে পুত্রগণ কি কহিব তোমাতে |
চান্দর বাড়ি গেলাম আমি পূজা খাইতে ||
ভক্তিভাবে সোনা দিল ফুল আর পানি |
চান্দ মোর ঘট ভাঙ্গে আর বলে কাণী ||
চান্দর অপমান আর সহিতে না পারি |
আজ কাটিব যাইয়া চান্দর গুয়াবাড়ি ||
শুনিয়া নাগগণ হরষিত মনে |
নাগরথ সাজাইয়া পদ্মা চলিল তখনে ||
নাগিণী লক্ষণ পদ্মা নাগের জটাজুট |
নাগ আভারণে পরে নাগের মুকুট ||
নেতারে সঙ্গতি করি চলে বিষহরি |
এই কালে বল ভাই সরস লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৭
হেন মতে নন্দনবাড়ি করিল ছারখার |
বাগানি জানায় গিয়া চান্দর গোচর ||
এ কথা শুনিয়া চান্দ কোপে কাঁপে অতি |
হেতালবাড়ি কান্ধে লইয়া স্থির নহে মতি ||
ধনা ধনা বলি চান্দ ঘন ডাক ছাড়ে |
আথেব্যাথে নন্দনবাড়ি ধাইয়া গেল লড়ে ||
কোপে গালি পাড়ে চান্দ দন্ত কড়মড় |
প্রাণ লইয়া পদ্মাবতী উঠি দিল লড় ||
চান্দর হাতে হেতালবাড়ি দুর্জয় প্রতাপ |
তাহারে দেখিয়া পলাইল তক্ষক সাপ ||
মহাদেবের কন্যা হেন বলে বার বার |
লুকাইয়া করে কাণী ধামনা ভাতার ||
লাগ পাইলে তোর কহিতে থুইতাম কথা |
হেতালবাড়ি দিয়া ভাঙ্গিতাম মাথা ||
নন্দন বন হইল দুঃখ লাগে বড়ি |
সংবাদ পাড়িল গাইন বলরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৮
কান্ধেতে হেতালবাড়ি বিপরীত ডাক ছাড়ি আজ তার ঘটাব প্রমাদ | বিরচিলাম ঘন ঘন যে কাটে নন্দন বন লাগ পাইলে করিতাম বধ || মোর গুয়া কাটিবারে কাহার সাহস ধরে যত করে লঘুজাতি কাণী || কি কব দুঃখের কথা খাইব ঊহার মাথা একেবারে বধিব পরানি | আমি পূজি শূলপাণি লাগ পাইলে লঘুকাণী আমি ওরে নাহিক ডরাই | ধরিয়া হেতালবাড়ি কাঁদয়ে নিশ্বাস ছাড়ি ইহার অধিক দুঃখ নাই || উপাড়িল গাছের মূল শুকাইল সকল ফুল কাণী বেটী পলাইল ডরে | না শুনি কোকিলের রাও চারিদিকে ফিরি চাও অনাহারে ছাও গাছে মরে || চান্দ বলে থাক থাক না পাইলাম কাণীর লাগ শুনিয়া কৌতুক সর্বজন | পদ্মাবতী দরশনে সানন্দে বিজয় ভণে যাহার সদয় নারায়ণ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
শঙ্কুরে মারিতে আগে করহ উপায় |
শঙ্কুরে মারিলে আর নাহিক সংশয় ||
এতেক বলিয়া রহিলা দুইজন |
গুয়াবাড়ি কাটা পালা এইখানে সোসর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
১ ( নামেতে বিজয় সাধু চম্পক নগর | তার ঘরে হইল জন্ম চান্দ সদাগর ||
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৯
চান্দ বলে ধনা তুই শীঘ্র গতি চল |
শঙ্কুর গাড়রী মোর মিত্র আছে বল ||
তাহার ঠাঁই বল গিয়া এই সব কথা |
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
গুয়াবাড়ি কাটা পালা
৬
|
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|