ভেবে ভেবে রাত্রিদিন ভেঙ্গে গেছে বুক আশাবাদী কাব্যে নেই ভাষা, চিন্তা করে বিদ্রোহ-ঘোষণা ! আমি যদি মরে যাই আচম্বিত-মৃত্যুর আঘাতে কতটুকু ক্ষতি কার ? শুধু এক অনাথ-সংসার মিশে যাবে নিরাশ্রিত অগণিত অনাথের ভিড়ে ! যদি সূর্য নিবে যায় দু’ চোখের দিবা--দ্বিপ্রহরের পথ যদি থেমে যায় কালের যাত্রায় অসমাপ্ত আকাঙ্খার মাঝে আচম্বিত-অন্ধকারে প্রলয়ের শঙ্খ যদি বাজে বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু ক্ষতি ? কে কা’র খবর রাখে জনতার সমুদ্র-কল্লোলে |
যে সন্তান বাবা ব’লে ডাকে আদরে জড়ায় কন্ঠ আমারি সৃষ্টির শতদল ঝরে যাবে পিষ্ট হবে এ নিষ্ঠুর সমাজের বুকে, দয়ার কাঙাল হ’য়ে নেবে ভিক্ষাব্রত কিম্বা চুরী সমাজের বৈষম্যের নিত্য পদাঘাতে | আদরিণী শ্রেয়সী আমার দাসীত্বের অপমানে দগ্ধে দগ্ধে পুড়ে হবে ছাই নারীমেধযজ্ঞভূমি ধনবাদী ক্রুর-মৃত্তিকায় আমার মৃত্যুর অভিশাপে ; কন্যা হবে দেহপণ্যা লম্পটের ক্ষুধার ইন্ধন আমি যদি মরে যাই আমি যদি থেমে যাই প্রগতির জয়যাত্রাপথে !
হে আকাশ, হে পৃথিবী, শত দুঃখের শত নিরাশায় দারিদ্রে ব্যাধিতে নির্যাতন আমি যেন বেঁচে থাকি ক্ষমাহীন প্রহরীর মতো সংসারে সমাজের দেশের দশের প্রয়োজনে ! আমি যেন যোগাই ইন্ধন চেতনার অগ্নিকুন্ডে, আমি যেন দিতে পারি স্নেহ-প্রেম-শ্রদ্ধার সম্মান !
মুখোশ কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ রচনা ২৬শে মার্চ ১৯৪০। শ্রাবণ ১৩৬৩ বা আগস্ট ১৯৫৬ তে প্রকাশিত কবির “উদাত্ত ভারত” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। এই কবিতাটির জন্য অনুরোধ করেছেন কবি রাজেশ দত্ত। তাঁর ফেসবুক পাতা https://www.facebook.com/rationalistrajesh । YouTube-এ এই কবিতাটির, কাজী সব্যসাচীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনতে এখানে ক্লিক করুন...
মুখোশের যাদুকর মুখ নেই তবু কথা বলে হাত নেই সম্পদ বিশাল যাদুমন্ত্রে ধরে রাখে, বিনাপায়ে হেঁটে যায় পায় যদি বাধামুক্ত পথ জঠরে জটিল মনোরথ অহোরাত্র জ্বেলে রাখে রাবণের চিতা! দুরন্ত ক্ষুধায় লুব্ধ বিশাল জগত কখন যে গিলে খাবে বলা অসম্ভব অতিকায় মুখোশের হাঁয়ে। মুখোশের আধিপত্যে সুরক্ষিত সোনার পাহাড় ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি।
মুখোশের রঙ্গালয়ে যারা আজো পায়নি টিকিট অনাহূত উপেক্ষিত অনিমন্ত্রিত অনন্ত অর্বুদ হস্তপদ খালি মুখে খোলাখুলি কথা বলে যারা নিরন্ন নির্জীব পাকস্থলী, সোনার পাহাড় যারা গড়েছিল ঘামো রক্তে নোনাঅশ্রুজলে এ সমাজ এ সভ্যতা এ নগরীপথ নিষিদ্ধ যাদের কাছে।
খোলা মুখ খোলা বুক, খোলা মন বৈভব উল্লাসে তা’রা আসে---দলে দলে আসে কেঁপে ওঠে রঙ্গশালা ভেঙে পড়ে নিষিদ্ধ তোরণ! শুয়োরের চামড়া ঢাকা খসে পড়ে সভ্যতার ক্লীব অঙ্গরাখা, পরাক্রান্ত মিছিলের দুরন্ত দুর্জয় পদাঘাতে রাজপথে গড়ায় মুখোশ।