কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
এমন একটা পৃথিবী চাই
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন
অজিত পাণ্ডে


এমন একটা পৃথিবী চাই
মায়ের আঁচলের মতো
আর যেন ঐ আঁচল জুড়ে
গান থাকে
যখন শিশুদের ঘুম পায়।
যেন অনেকক্ষণ
শিশুরা শান্তিতে ঘুমোয়
যখন তারা ঘুম থেকে জেগে উঠবে
যেন তাদের জন্য
মায়েদের বুক খোলা থাকে।

এমন একটা পৃথিবী চাই ---
শুকনে কাঠের মতো মায়েদের
শরীরে কান্না নিয়ে নয়
বুকভর্তি অফুরন্ত ভালোবাসার
শস্য নিয়ে।

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কালনাগিনী পদ্মা রে
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন হাবুল দাস।


চকালনাগিনী পদ্মা রে
নীল কমলের মা
তোর ছোবলের আদর রে
ভীষণ যন্ত্রণা।

ও কালো মেঘ, বজ্র রে
মাদল বাজাও কে ?
ঘর ভাসল, পথ ভাসল
পদ্মা নেচেছে।

সর্বনাশী পদ্মা রে
তুই কি আমার মা ?
চোখের জলে বুক ভেসে যায়
নাচ তো থামে না।

একা আমি নীলকমল
মেঘ আমার কে ?
বজ্র আমার কে ?
তুই-মা আমার কে ?
তোদের জন্য ভাই আমার
এদেশ ছেড়েছে।

.         *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হোক পোড়া বাসি ভেজাল-মেশানো রুটি
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন হাবুল দাস।


হোক পোড়া বাসি ভেজাল-মেশানো রুটি
তবু তো জঠরে বহ্নি নেভানো খাঁটি
এ এক মন্ত্র ; রুটি দাও, রুটি দাও!
বদলে বন্ধু, যা ইচ্ছে নিয়ে যাও!
সমরখন্দ বা বোখারা তুচ্ছ কথা
হেসে দিতে পারি স্বদেশের স্বাধীনতা।
শুধু দুইবেলা দু-টুকরো পোড়া রুটি
পাই যদি তবে সূর্যেরও আগে উঠি।
ঝোড়ো সাগরের ঝুটি ধরে দিই নাড়া
উপড়িয়ে আনি কারাকোরমের চূড়া।
হৃদয়, বিষাদ, চেতনা তুচ্ছ গণি
রুটি পেলে দিই প্রিয়ার চোখের মণি।

.         *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আয় কালবৈশেখী হাওয়া, উড়িয়ে নে
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
গীতিরূপান্তর প্রতুল মুখোপাধ্যায়। এই গানটিতে অন্য একটি সুর দিয়েছেন বিনয় চক্রবর্তী।
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।


আয় কালবৈশেখী হাওয়া, উড়িয়ে নে
শুকনো আবর্জনা, ধুলো, মৃত্যু অপমান।
আন বুকে স্পর্ধা আনকণ্ঠে জীবনের গান
বোবা অন্ধ আমার স্বদেশ।

আয় কালবৈশেখী হাওয়া আন ঝড় আন
বুকের ভেতর, ভারতবর্ষ দেখি অন্যভাবে
শপথে আলোকে,
ভারতবর্ষ দেখি অন্যবভাবে।
কে আর অনন্ত কান্না পুষে রাখে, পুড়ে যায় শোকে।
চারিদিকে নবজন্ম, দেশে দেশে শঙ্খ বাজে,
দিকে দিকে শোনা যায় মানুষের গান।

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ন্যাংটো ছেলে আকাশে হাত বাড়ায়
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন হাবুল দাস।


ন্যাংটো ছেলে আকাশে হাত বাড়ায়।
যদিও তার খিদেয় পুড়ছে গা
ফুটপাথে আজ লেগেছে জোছনা---
চাঁদ হেসে তার কপালে চুমু খায়।

লুকিয়ে মোছেন চোখের জল, মা।

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
পাহাড় পাহাড় পাহাড় রে
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন
বিপুল চক্রবর্তী


পাহাড় পাহাড় পাহাড় রে
পাথর সমুদ্দুর
রাত ফুরোলেই বাহার রে
মুখ ভরা রোদ্দুর।

পাহাড় পাহাড় পাহাড় রে
পাশাবতীর ঘর
রাত ফুরালেই বাহার রে
বুক ভরা ঈশ্বর।

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ইনি বলেন, মানুষ হ
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।

এই গানটিতে সুর দিয়েছেন
বিপুল চক্রবর্তী


ইনি বলেন : মানুষ হ
উনি বলেন : মানুষ হ
সবাই বলেন : মানুষ হ

কিন্তু কাকে বলেন তারা
মানুষকেই তো
মানুষ যদি, মানুষ ছাড়া
আর কি হতো ওই শিশুরা

বাবতে ভীষণ ভয় লাগে
ওদের জন্য ভয় লাগে
ঐ শিশুরা
মানুষ দেখলে হাত বাড়ায়
ওরা কি কেউ মানুষ না!

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হাট্টিমা টিম্ টিম্
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন
বিপুল চক্রবর্তী


হাট্টিমা টিম্ টিম্
তারা সভায় পাড়ে জিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমা টিম্ টিম্।

ভোর না হ’তেই কাকের ডিম
বলছে বকের ডিমকে---
ভোট দিও না হাট্টিমাকে
ভোট দাও টিমটিমকে।

ভোট দিও না হাতিকে
ভোট দিও তার নাতিকে
ভোট দিও না গাধাকে
ভোট দিও তার দাদাকে।

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘর ফুটপাথ আহার বাতাস
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন অমিত রায়।


ঘর ফুটপাথ আহার বাতাস
ন্যাংটো ছেলেটা দেখছে---দেখছে---
দেখছে আকাশ।
সেখানে এখন টেক্কা সাহেব বিবি গোলাম
রাজ্যের তাস---
করছে সবাই চাঁদ সূর্য তারাদের চাষ
সবাই চাইছে রাজত্ব
সবাই লিখছে দারুণ গল্প
সে শুধু ফুটপাথের ন্যাংটো ছেলে
তাই তার বুদ্ধি অল্প
দূর থেকে তাই দেখছে দৃশ্য
দেখছে, এবং দিচ্ছে সাবাশ!

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হাতি হাতি হাতি রাজ্যপালের নাতি
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” কাব্য সংকলন (অক্টোবর ১৯৯০) থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছেন হাবুল দাস।


হাতি হাতি হাতি
আমার আদ্যিকালের সাথী
কাছে গেলে এখন ছোঁড়ো জোড়া পায়ের লাথি,
কারণ তুমি রামরাজ্যের রাষ্ট্রপতির নাতি।
হাতি হাতি হাতি
তিনটে নফর সাতটা দাসী মাথায় ধরে ছাতি।
পাড়ায় পাড়ায় রইল না কেউ বংশে দিতে বাতি ;
পোলাও খেয়ে বাড়ছো তুমি, খাদ্যমন্ত্রীর নাতি।

হাতি হাতি হাতি
রাজ্যপালের নাতি . . .।

.              *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*