কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
সেই মানুষটিকে যে ফসল ফলিয়েছিল
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আন্তোনিও জাসিন্টোর মূল রচনা থেকে অনুবাদ।
মেঘ বসু সম্পাদিত “আবৃত্তির কবিতা কবিতার আবৃত্তি” কাব্য সংকলন, ২০০৯ থেকে।


সেই বিরাট খামারটিতে কোনো বৃষ্টি হয় না
আমার কপালে ঘাম দিয়ে গাছগুলিকে
.                তৃষ্ণা মেটাতে হয়
সেখানে যে কফি ফসে আর চেরীগাছে
.        যে টুকটুকে লাল রঙের বাহার ধরে
তা আমারই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
.        যা জমে কঠিন হয়েছে।
কফিগুলোকে ভাজা হবে, রোদে শুকুতে হবে
.        তারপর গুঁড়ো করতে হবে
যতক্ষণ না তাদের গায়ের রঙ হবে
.        আফ্রিকার কুলির জামার রক্তে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ

যে পাখিরা গান গায়, তাদের জিজ্ঞাসা করো,
যে ঝরনারা নিশ্চিন্ত মনে এদিক ওদিক
.        ছুটোছুটি করছে তাদের
এই মহাদেশের মধ্যকার মানচিত্র থেকে
.        যে বাতাস মর্মরিত হচ্ছে, তাদের---
কে ভোর না হতেই ওঠে ? কে তখন থেকে খেটে মরে ?
কে লাঙল কাঁধে দীর্ঘ রাস্তা কুঁজো হয়ে হাঁটে,
আর কেই বা শস্যের বোঝা বইতে বইতে
.        ক্লান্ত হয় ?
কে বীজ বপন করে আর তার বিনিময়ে
.        যা পায় তা হল ঘৃণা, বাসি রুটি,
পচা মাংসের টুকরো, শতচ্ছিন্ন নোংরা পোশাক
.        কয়েকটা নয়া পয়সা ?
আর এর পরেও কাকে পুরস্কৃত করা হয়
.        চাবুক আর বুটের ঠোক্কোর দিয়ে
.        কে সেই মানুষ ?

কে ওপরওয়ালাকে গাড়ি যন্ত্রপাতি,
.        মেয়েমানুষ কেনার টাকা
আর মোটরের নিচে চাপা পড়ার জন্য
নিগ্রোদের মুণ্ডুগুলি যোগান দেয় ?
কে সাদা আদমিকে বড়লোক করে তোলে
তাকে রাতারাতি ফাঁপিয়ে তোলে,
.                পকেটে টাকা যোগায় ?
.        ---কে সেই মানুষ ?

তাদের জিজ্ঞাসা করো! যে পাখিরা গান গায়,
যে ঝর্ণারা নিশ্চিন্ত মনে এদিক ওদিক
.        ছুটোছুটি করছে
যে বাতাস এই মহাদেশের মধ্যকার
.        মানচিত্র থেকে মর্মরিত হয়,
তারা সকলেই উত্তর দেবে : ---
.        ---ওই কালো রঙের মানুষটা ;
.                যে দিনরাত গাধার খাটুনি খাটছে।
আহা! আমাকে অন্তত ওই তালগাছটার
.        চূড়োয় উঠতে দাও
সেখানে বসে আমি মদ খাবো
তালগাছ থেকে যে মদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে ;
আর মাতলামোর মধ্যে আমি নিশ্চয়ই,
.        ভুলে যাব, ভুলে যাব, ভুলে যাব---
যে আমি একজন কালো রঙের মানুষ,
.        আমার জন্যেই এই সব।

.                     *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
জননী জন্মভূমিশ্চ
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পার্থ ঘোষ ও অনীশ ঘোষ সম্পাদিত “বড়োদের আবৃত্তির কবিতা সমগ্র” কাব্য সংকলন,
২০১২ থেকে।



যিনি চলে গেলেন
তাঁকে ম্লান মুখেই চলে যেতে দিয়েছি ;
সে জন্য আমার ভিতরে কী
কোনো গভীর বেদনা আছে ?

মানুষ নামের এক রকম পাথর,
তাতে আলো পড়ে না
অন্ধকার নড়ে না
কিছুই হয় না . . .

মাঝেমধ্যেই মনে হয়
আয়নার সামনে কেউ দাঁড়ালে
শুধু আয়নাটাই কথা বলে।
কী যে বলে, তা শুনবার মানুষ
আজ আর আমি খুঁজে পাই না।

আমার জন্মভূমি,
আমি অনেক দিন তাঁকে দেখি না
তাঁর কোনো খবর রাখি না।
তিনি কি এখনও কুয়াশার কাঁথা মুড়ি দিয়ে
আগের মতোই নিঃসাড়ে ঘুমিয়ে আছেন ?

আমার ছেলেবেলায়
যেমন তাঁকে দেখেছিলাম,
শীর্ণ দুটি হাত ঘুমের ভেতর কেঁপে কেঁপে উঠছে!

নাকি অনেকক্ষণ ভোর হয়ে গেছে
পাখি ডেকেছে, ফুল ফুটেছে।
তারপর বাঘের মতো এক দুপুর এসে আমার মায়ের
.        পাড়া-জ্বালানো ছোট ছেলেটাকে . . .

তার কোন চিহ্নই আর পাওয়া গেল না,
নদীর এপারে না
ওপারে না।

হয়তো সে আমার নিজের ভাই ছিল না,
কিন্তু তাকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না।
চারদিকে এখন কত ফুল, কত পাখি . . .
হয়তো এভাবেই একদিন দুপুর গড়িয়ে
.        বিকেল আসে!

তারপর সন্ধ্যা নামবে, রাত গভীর হবে---
আমি তখন পাথরের মত ঘুমুবো।

.                     *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
শীত
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
স্বপন পাত্র সম্পাদিত “ছোটোদের আবৃত্তির ছড়া ও কবিতা” কাব্য সংকলন, ২০১৩ থেকে।


পাতা ঝরছে, গাছের পাতা ঝরছে পাতা ঝরছে
আমলকি আম কামরাঙার পাতা
যাদের দাতা বৃক্ষ বলে বুকের মধ্যে জেনেছিলাম
তাদের সকল গেছে, তারা সব হারিয়ে রাস্তার ভিক্ষুক।

এখন দয়া মায়া ভালোবাসা সবই ভিক্ষা করবে
পথে পথে, এখন বুকের রক্ত মুখে উঠবে এখন
পাতা ঝরছে, গাছের পাতা ঝরছে এখন হাত পাতলে
চোখের জল, শুধু চোখের জল।

.                     *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আশ্চর্য ভাতের গন্ধ
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
স্বপন পাত্র সম্পাদিত “ছোটোদের আবৃত্তির ছড়া ও কবিতা” কাব্য সংকলন, ২০১৩ থেকে।


আশ্চর্য ভাতের গন্ধ রাতের আকাশে
কারা যেন আজো ভাত রাঁধে
ভাত বাড়ে ভাত খায়।
আর আমরা সারারাত জেগে থাকি
আশ্চর্য ভাতের গন্ধে।
প্রার্থনায় সারারাত।

.         *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
পাতাঝরা গাছেদের গান
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
অজিত বাইরী সম্পাদিত “দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ লেখকদের ১৫০ বছরের প্রেমের
কবিতা” কাব্য সংকলন, ২০০৪ থেকে।


বিষাদ যেন হলুদ ফুল
পাপড়িতে তার শীতল কুয়শা ;
আকাশে শীত, মাটিতে শীত
বাতাসে কাঁপে শীর্ণ ভালোবাসা।

বিষাদ য়েন প্রেমের গান
শরীরে তার উত্তরের হাওয়া,
আকাশে ঘুম, মাটিতে ঘুম :
‘আর কত দিত তুষারে তরী বাওয়া ?’


বিষাদ যেন সমস্ত রাত একাকী নির্জন
স্বপ্নে পথ হাঁটা!
‘ভুলেই গেছি কবে, কাকে দিয়েছিলাম মন ;
কিছুই আজ পড়ে না মনে।’ . . .

সমস্ত রাত ঝরেছে ফুল। ভালোবাসা! তুমি এখন
কেমন আছো ?

চারদিকে আজ কঠিন অসুখ। ভালোবাসা! তুমি এখন
কেমন আছো ?

.         *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বেকার জীবনের পাঁচালি
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও কালিদাস ভদ্র সম্পাদিত “আবৃত্তির শ্রেষ্ঠ কবিতা” কাব্য সংকলন,
১৮১৫ (২০০৮) থেকে।


কী বা আসে যায় আশ্বিনে যদি আকাশ বিষায় কালো মেঘে
শরতের রোদ মুছে নিয়ে যায় মরা শ্রাবণের মেঘে মেঘে
হেমন্তে যদি বাতাস ফোঁপায় কিংবা পঙ্গপাল আসে
অসময়ে গাঁয়ে খামারে গঞ্জে বস্তিতে বাঁকা শীত হাসে
তাতে আমাদের কতটুকু ক্ষতি, মিতে!
এসো তালি-দেওয়া জুতোজোড়ায় সযত্নে বাঁদি ফিতে।

কী বা আসে যায় বন্দর যদি শ্মশানের ছাই গায়ে মাখে
ঘরে ঘরে মরা শিশুর কান্না ক্ষুধিত মায়েরা মনে রাখে
কাব্যের ফাঁকে ‘নেই নেই’ ঢোকে, জাতকবিদের বাত মারে
কিংবা শিল্পী স্বপ্ন বানায় হাজার শিশুর মরা হাড়ে
আমাদের দিন বদলায় নাকো মিতে!
হাঁ-করা জুতোটা অবাধ্য বড়ো, ভালো করে বাঁধো ফিতে।

কী বা আসে যায় চাংদ যদি ফেরে লজ্জায় ঘরে উঁকি দিয়ে
কড়িকাঠে ঝোলে বিবসনা নারী হবু কবিদের ফাঁকি দিয়ে
কিংবা সাগর ফুলে ফেঁপে ওঠে গর্জায় আর চোখ রাঙায়
উজিরের ঘুম ভাঙে অসময়ে, কোটাল সভয়ে বিদেশ যায়
আমাদের চলা এতেই কি শেষ হয় ?
দাঁতালো পেরেক, তালি-খাওয়া জুতো অনেক কথাই কয়।

.                *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মহাদেবের দুয়ার
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
মহাদেবের দুয়ার কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতা।
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ১” কাব্য
সংকলন (১৯৯২) থেকে।



গাছতলার এই যে মানুষ
উপোস জানে না ;
উপোস জানে না বলে জঠরজ্বালায় তিলে তিলে
‘হা অন্ন হা অন্ন’ বলে
গাছের ছায়ায় তবি দাউদাউ জ্বলে যাচ্ছে।

যদি সে উপোস জানত
তার জন্য প্রতিদিন সোনার থালায়
পরমান্ন আনত সুজাতা

কিন্তু সে সন্ন্যাসী নয়, সাধারণ নির্বোধ মানুষ।



আমি কোনোদিন
শুনিনি বেশ্যার কান্না, দেখিনি দুয়ার দিয়ে
দাগি চোর, খুনি আর জারজ সন্তানদের
বিবর্ণ মুখের আলো

আমি কোনোদিন
তাদের পাপকে চুমা খেয়ে, তাদের পায়ের নীচে মাথা রেখে
হইনি অমল।

আমি কিছুই শিখিনি এ জীবনে শুধু ঈর্ষা ঘৃণা আর
কবির কলহ ছাড়া।


১৮
যারা কথা বলছে তারা বোবা,
যারা শুনছে সকলেই
জন্ম থেকে বধির। অথচ
সভায় মিছিলে তিলধারণের ঠাঁই নেই।

যারা উপস্থিত তারা বহুদিন মৃত
কিন্তু সকলেই হাততালি দিচ্ছে
কী জন্য এবং কাকে একজনও জানে না।


২৮
অনন্ত কাকের মেলা চারিদিকে
আর সব পাখি যদি
ফুরিয়ে গিয়েছে ;
আকাশে কেবল ধোঁয়া, ধুলো, কার্বন
আর দিনরাত ঘোলাটে ডানার শব্দ,
ক্ষুধার চিত্কার।


৩৭
একটি নষ্ট পচা ফলের জন্য
ভিক্ষুকেরা সবাই হাত বাড়ায়,
‘আমাকে দাও, আমাকে দাও আমাকে’ . . .
যেন আগুন লেগেছে ওই পাড়ায়।

ফলটি ছুঁড়ে দিতেই বাঁধল দাঙ্গা
ভিক্ষুকদের খুনোখুনি থামায় কে।

.                *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
তিন পাহাড়ের স্বপ্ন
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও কালিদাস ভদ্র সম্পাদিত “আবৃত্তির শ্রেষ্ঠ কবিতা” কাব্য সংকলন,
১৮১৫ (২০০৮) থেকে।


সাঁওতাল মেয়েদের গান।

পাহাড়িয়া মধুপুর, মেঠো ধূলিপথ
দিনশেষে বৈকালি মিষ্টি শপথ ;
‘মোহনিয়া বন্ধু রে! আমি বালিকা
তোরই লাগি গান গাই, গাঁথি মালিকা।’

‘আজও সন্ধ্যার শেষে খালি বিছানা ;
আমি শোব, পাশে মোর কেউ শোবে না---
তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না।’ . . .

সুরে সুরে হাওয়া তার মিষ্টি বুলায় ;
সাঁওতাল মেয়ে-ক’টি দৃষ্টি ভুলায়

দিন শেষ---ধুধু মাঠ---ধুধু মেঠো পথ
সাঁওতাল মেয়ে ক’টি ছড়াল শপথ!
হাওয়ায় হাওয়ার মতো তাদের শপথ।



( ধীরে মাদল )
আয় মিতেনি, আজ রাতে
চাঁদকুড়ানো মাঝ রাতে
আবছা আলোর কান্নাতে
মখ রেখে তুই ঝরনা ধারে আয়
আয় জোয়ানের মন-জ্বালা
নাচ দিয়ে সই, গাঁথ মালা---
চুমুর গেলাস মদ ঢালা
দে ছুঁড়ে দে, তিন পাহাড়ের গায়ে।

( জোরে মাদল )
আহা মাদল, মাতাল মাদল বাজছে তোরই জন্যে লো!
খুশির হাওয়া, পাগলা হাওয়া গান দিল রাজকন্যে লো!
আয়, কাছে আয়, মন দে লো!



চোখ কেন তোর কাঁপছে মেয়ে
বুক কেন তোর দুলছে ?
গাল দুখানি লালচে, শরীর
সাপের মতোই ফুলছে ?
.                কাকে মারবি ছোবল লো ?
.                কোন্ ছেলে তোর কী করল।
মাদল ভেবে কেউ কি তোকে
আজকে বাজাল ?
ফুল দিয়ে নয়, ফাগ ছড়িয়ে
বিকেল সাজাল ?
.                কেমন দিবি সাজা রে ?
.                আর যাবি না পাহাড়ে!



এত গান আকাশে
এত গান বাতাসে।
.                সাঁওতাল মেয়েটির টিপ কপালে
.                ছেলেটি পেছন তবু নিল কী-বলে ?
.                রাঙা ফুল মেয়েটির খোঁপায় জ্বলে
.                ছেলেটি বাজাল বাঁশি তবু কী-বলে ?
এত মদ আকাশে
এত মদ বাতাসে।
.                নেশা যেন ধরে যায় ছেলেটির বাঁশিতে
.                মনে হয় দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে
.                তবে চাঁদ সরে যাও, যাও তা হলে . . .
.                ‘ও ছেলে পেছন তুই নিলি কী-বলে ?’

.                ‘পথ ভুলে গেছি মেয়ে খিলখিল হাসিতে
.                শোন্ , কোনো দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে।’
এত আলো আকাশে
এত আলো বাতাসে!

.                       *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মে-দিনের স্বপ্ন
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচনা ১৩ এপ্রিল ১৯৮৫
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও অতীন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত “মে-দিনের কবিতা” কাব্য
সংকলন (মে ১৯৮৬) থেকে।


ঘুম থেকে জেগে ওঠার ক্লান্তি
অথবা আনন্দ . . . . . . . . .
জীবনের অভিজ্ঞতা কত রকম হয়।

মানুষে মানুষে এত তফাৎ, আবার কখন
সত্যবানের কাঁধে মাথা রেখে সাবিত্রীর
.                                মিছিলে পথ হাঁটা---

রাস্তাঘাট ক্রমে আগুন।

ঘুমের মধ্যে তখন আমি পাশ ফিরছি,

.                                স্বপ্ন দেখছি,
মে-দিন। তারপর এক সময় সম্পূর্ণ ঘুমটাই
.                                ভেঙে যায়।

রাস্তাঘাট এখন আগুন, কিন্তু তাতে মানুষের
সামনে হাঁটার কোনও বিরাম নেই॥

.                       *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মে-দিন : একটি স্বপ্ন
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচনা মে-দিন ১৯৮৫। সংশোধিত ৫ জুলাই ১৯৮৫।
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও অতীন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত “মে-দিনের কবিতা” কাব্য
সংকলন (মে ১৯৮৬) থেকে।


আজ মে-দিন
আমি বিছানায় শুয়ে একবার এপাশ একবার ওপাশ করছি
এক সময় পেয়ালা ক’রে চা এলো আর প্লেটে ক’রে বিস্কুট
ঐ সঙ্গে খবরের কাগজ, আজকাল মে-দিনের মিছিলে
.                                                        নাকি ভীড় হয় না

তাই নিয়ে সাংবাদিকদের দুঃখ . . .

চার লাইনেই মে-দিনের খবর শেষ,
তারপর রাজীব গান্ধী, ফুটবল, বিজেপি, পাঞ্জাব,
.                                                কংগ্রেস আর সিংহল
পড়তে পড়তে আবার আমি ঘুমিয়ে পড়লাম
যখন জাগলাম, তখন সকাল দশটা বেজে গেছে

স্ত্রী এসে বললেন : ‘এখন তোমাকে কি খেতে দেবো ?
এতক্ষণ ঘুমোলে, পেটে তো কিছু দিতে হবে!
.                                                ডিমসেদ্ধ আর টোস্ট আছে।
তাই খাবে ?’

বললাম ‘দাও’। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম
‘বড় রাস্তা দিয়ে কোনও মিছিল যায় নি ?’

তিনি বললেন : ‘বেলা যায় একটা জ্বলন্ত উনুনের সঙ্গে লড়াই ক’রে।
তবে না তোমাদের পেটের আগুন নিভবে!
কোথা দিয়ে কখন কার মিছিল যাচ্ছে
কি ক’রে তার খবর রাখি বল ?
চোখ থাকে উনুনে
আর কান থাকে বাজার থেকে কী এলো আর কী এলো না
.                                                ---সেই দিকে।’

বললাম : ‘আমি কিন্তু শুনেছি আধো ঘুমের মধ্যেই,
ওরা মে-দিনের ধ্বনি দিচ্ছে!’

.                       *******************
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*