ক্যান্ডি ক্রাশ কবি দেবব্রত সান্যাল “নিজের খেয়াল খুব রাখছি” কাব্যগ্রন্থ থেকে
যদি ডাকতে না চাও ডেকোনা, না কবিতায়, না চিঠিতে, না ইশারায়। আজকাল তো রিক্সার পিছেই লেখা থাকে, "ভুলে যাবে জানি"। নানান পূজো পার্বন ফুরিয়ে কলকাতা শহরে এখন তো নিমন্ত্রণের সিজন চলছে, তাছাড়া তো নিয়ম করে আছেই লাউড স্পীকারে ভেসে আসা প্রার্থনায় বসার ডাক, শনিবার চারটেতে ব্রিগেডে জনসভায় দলে দলে যোগ দেবার ডাক, শতকরা চল্লিশ ভাগ ছাড়ে কাপড় কেনার সুবর্ণ সুযোগ পথের দুপাশে সাজানো ভোগ্য উপভোগের হাতছানি।
মাসখানেক আগে ফেসবুকে হঠাত করে বন্ধু হবার আমন্ত্রণ! হে নিভৃত প্রানের বন্ধু, আমাদের সম্পর্ক তা হলে কি অন্য কিছু ছিল? স্বামী সন্তানের সাথে তোমার সুখী ছবিটা, ছেচল্লিশ জনের সাথে আমাকেও ট্যাগ করা, বুড়ো আঙ্গুল উঁচিয়ে লাইক করা বা "সুখী পরিবার" গোছের কিছু মন্তব্য সেঁটে দেওয়া, সেটাই বোধহয় প্রার্থিত ছিল? এখন আমন্ত্রণ বলতে, শুধু ক্যান্ডি ক্রাশ খেলার? এ তোমার কেমন আমন্ত্রণ, এ তোমার কেমন খেলা?
রক্ত পরীক্ষা কবি দেবব্রত সান্যাল “নিজের খেয়াল খুব রাখছি” কাব্যগ্রন্থ থেকে
আবেদনটি ঠিক কবিদের জন্য নয়, আপনার যারা দেশটা কে চালান বা দেশটা চলছে বলে দাবী করেন আজ আমি আপনাদের সাহায্য প্রার্থী। আমার জীবনের আরো সমাধান না হওয়া সমস্যার মতই আমার সামনে সারি সারি টেস্ট টিউবে রক্তের নমুনা সাজানো আছে। মাফ করবেন, আমি জানি আপনারা রক্ত পরীক্ষক নন, রক্তের গ্রুপ বের করতে আমার বেশী সময় লাগেনি। সে ভেদাভেদটা বিজ্ঞানই করে রেখেছে। আমার সমস্যা হলো কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছিনা , কোনটা কার রক্ত? হিন্দুর, মুসলমানের, খ্রিস্টান, জৈন না পার্সীর? রক্তাল্পতা তো দেশের শিরায় শিরায়। তাই রক্তের নিস্প্রভ লালিমা দেখে কি আর বুঝবো? অনেকেই তো আছেন শুনি যারা বেছে বেছে রক্ত ঝরান। তলোয়ারে লেগে থাকে কোনো বিশেষ ধর্মের কারোর রক্ত! তাদের কে বলছি , আমাকে মানবিকতার পরীক্ষাতে ফেল করা থেকে বাঁচান। হিন্দুর রক্তের সাথে মুসলমানের রক্তের তফাতটা বুঝতে একটু সাহায্য করুন। আর যদি নিশ্চিত করে তফাতটা না ধরতে পারেন তবে অহেতুক এই রক্তপাত বন্ধ করুন। . ************************* . সূচিতে . . .
শীত আর বৌদির বোন কবি দেবব্রত সান্যাল “নিজের খেয়াল খুব রাখছি” কাব্যগ্রন্থ থেকে
এবারের শীত টা আমার বউদির বোনের মত, আঁচলের বাতাস, পারফিউমের হালকা সুবাস, চুড়ির টুং টাং, হাসি মাখা গানের কলি, সব আমার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, আমার চেতনা ছূঁয়ে যায়, কিন্তু সে টা কেন ঘটলো না, যা গল্প উপন্যাসে বার বার পড়েছি?
মাঘ পেরোতে চললো, কিন্তু সোয়েটারের নাপথালিনের গন্ধ পারফিউমে ঢাকা পরলো না, চা চুমুক দিতে দিতেই জুড়িয়ে গেল না, আগুন জ্বেলে আলু পোড়া খাওয়া হলো না।
বৌদির বোনের বিয়ের কার্ডটা হাতে ভাবছি, এ শীতে গ্লিসারিন সাবানটা না কিনলেও চলত। . ************************* . সূচিতে . . .
আমার একটা নাম ছিল কবি দেবব্রত সান্যাল “নিজের খেয়াল খুব রাখছি” কাব্যগ্রন্থ থেকে
যারা আমাকে এখনো পার্ক স্ট্রিট কান্ডের নিগৃহীতা বলে উল্লেখ করেন, সেই সব আইন বাঁচানো, সংস্কৃতিপ্রিয় দেশবাসী দের জানাই, আমার একটা নাম ছিল। কার দেয়া জানা নেই, কিন্তু নামটা আমার বেশ পছন্দের। সেই রাতের পর সব কিছুর সাথে আমার নামটাও হারিয়ে গেল । আমকে সবাই জানলো ধর্ষিতা বা একটু ভদ্র করে নিগৃহীতা বলে। আমার নাম সুজেত জর্ডন, যদি কঠিন লাগে। তবে ছোটো করে সুজি। সেই ঘটনার পর পুলিশের উপহাস, চরিত্রের দিকে উঠে আসা আঙ্গুলগুলোর দিকে তাকানোর মত অবস্থা আমার ছিলনা। শারীরিক পরীক্ষার টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নিজেকে একতাল মাংস ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছিল না। আমার সব ওলট পালট হয়ে যাওয়া মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না যে আমার জ্ঞান হারা শরীরটাকে নিয়ে সেই অমানুষগুলো কি কি করেছিল যে আমাকে এতো যন্ত্রণা পেতে হয়েছে। নড়তে পারছিলাম না, এই সাঁইত্রিশ বছর বয়েসে বাবার কাঁধে ভর দিয়ে বাথরুম যেতে হয়েছে। যারা কবিতা লেখেন তাদের বলি, আপনাদের সোনার কলমে আমার নামটা উঠে এলো না। আমার নিজের কথা, নিজের নাম শেষমেষ আমাকেই লিখতে হলো। আপনারা আজ আমার শেষ যাত্রার আয়োজনে ব্যস্ত , হয়ত আমাকে একটু ভালো ভাবে বিদায় দিতে চান , শুধু ভুলে যাবেন না, যার সব ব্যথার আজ অবসান হলো , তার নাম কোনো ধর্ষিতা বা নিগৃহীতা নয়। আমি সুজেত জর্ডন, মনে থাকবে তো ? . ************************* . সূচিতে . . .