কবি দেবেশ ঠাকুরের কবিতা
রাজা
কবি দেবেশ ঠাকুর

রাজা রুষ্ট হলে
ক্রোধে মার্কা মারেন
'খুনি' তকমা দিয়ে
নীতির ধার না ধারেন!
রাজা তুষ্ট হলে
দামি রত্ন মেলে
তাই বুদ্ধিজীবী
বড়ো বাধ্য ছেলে
রাজা শিষ্ট হলে
দেশ স্বর্ণপ্রসূ
প্রেমে বাধ্য হবে
যত বন্য পশু
রাজা দুষ্ট হলে
দেশ অনুর্বরা
তাকে সরানো গেলে
দেশ মধুক্ষরা।

.  ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চম্পাকলি
কবি দেবেশ ঠাকুর

চাঁপাদাসীর হাঁস চাপা পড়েছে বাসের তলায়।শোকটাকে বুকে চেপে
চাঁপার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে কিছুমাত্র অসুবিধা হত না।সমস্যা
হল উদ্ধব মন্ডলের আগমন ও প্রেরনায়।
চাঁপাদাসীর সিধেল চোর স্বামী লোটন দাস।তিন নম্বর সংসারটি
অধুনা রানাঘাট কিংবা বনগাঁয়। চাঁপার শরীরটি এমত পর্বে যা কেজি
খানেক বাড়লে হত মোটা। কমলে রোগা। মাচার কচি লাউজালির
উপমা প্রসাদাৎ উদ্ধব মণ্ডল পরোপকারের নেশায় চাঁপাকে বলে,
‘ডিম্ববতী হাঁস চাপা পড়ল বাসের তলায় আর তুই চুপ করে বসে
আছিস!’
‘কি করব! হাঁস কী আর ফিরবে!’ বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে,যে যায়
সে আর ফেরেনা মণ্ডল মশাই’।
‘হাঁস ফিরবে।দশগুণ হয়ে ফিরবে’। বলেই মণ্ডল মেঝেতে কাঠ
কয়লা দিয়ে হিসেব কষে দেয় , হাঁসের দাম চল্লিশ টাকা, বছরে গড়ে
পনেরটি করে ডিম দিলে এবং হাঁসটি দশ বছর বাঁচলে এবং ডিমের

চল্লিশ, একুনে দুশো পঁয়ষট্টি।’
’হাঁস কি দশ বছর বাঁচত?’
‘চাপাপড়া হাঁস দশ কেন পঞ্চাশ বছরও বাঁচতে পারত।
‘ চাঁপার চোখ চকচক করে ওঠে।বাসের মালিক হানিফ মোল্লাকে
ধরে উদ্ধভ ‘দুশো পঁয়ষট্টি, ছাড়ো’। হানিফ বলে, ‘সাক্ষীসাবুদ এবং
ওপরওলাদের যথাবিধি নির্দেশ না এলে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়’। বলা
বাহুল্য,সাক্ষী জোগাড় করতে উদ্ধবের সমস্যা হয় না। পাগলা জগাইকে
ধরলে স্বতঃপ্রণোদিত সাড়ে সাতজন সাক্ষী জুটে যায়। ও হ্যাঁ , বলতে ভুলে
গেছি এই উপকারের জন্য চাঁপাকে এক পয়সা খরচ করতে হয় না,শুধু
একটি পাপড়ি ছাড়া।

থানার ছোটবাবু সমীপে হাজির হয় চাপা।সাড়ে সাতজন সাক্ষী
এবং আইনি মারপ্যাঁচ-মারা দরখাস্ত সহযোগে উদ্ধব মণ্ডল, ‘টু দা ইয়ংবাবু
অফ কেষ্টপুর থানা।সাবজেকটঃ দ্য ডিমান্ড অফ রুপিজ ফাইভ হান্ড্রেড
থার্টি ওনলি অন দ্য রান-ওয়ে ডাক অফ পুর চাঁপারানী দাসী – এটসেট্রা-
এটসেট্রা’।

হানিফের প্রত্যাখ্যানে দুশো পঁয়ষট্টি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। থানার
ছোটবাবু দু-দিন একান্তে চাঁপার নালিশ শুনলেন এবং বললেন, ‘তুমি
পঞ্চায়েতে যাও । আমি স্ট্রংলি রেকমেন্ড করে দিচ্ছি – আর হ্যাঁ , দাবি যখন
করছ , সাক্ষী যখন হাতে , তখন হাঁস কেন , কেটে লিখে দাও ছাগল। ডিমান্ড
করো ন’শো টাকা’। বলা বাহুল্য, এই পরোপকারী ছোটবাবুকে উপঢৌকন
দিতে চাঁপার আর একটি পাপড়ি খসে পড়ে।

পঞ্চায়েত প্রধানমশাই চাঁপাকে একান্তে পরামর্শ দেন,
‘হানিফমোল্লা সমিতি সভাপতির ভাইরা- ভাই। আমি স্ট্রংলি ফরোয়ার্ড করে
দিচ্ছি। কাজ হবেই। তবে ছাগল কেটে বাছুর লিখে দাও। সাক্ষী যখন আছে
বাছুরই বা কেন? দুগ্ধবতী গাই লেখো। দ্য কাউ হুইচ ইউসড টু গিভ ফাইভ
কিলোজ অফ মিল্ক পার ডে। ডিমান্ড করো হাজার চারেক টাকা’। এবং
এই পরোপকারের জন্য চাঁপাকে আর একটি পাপড়ি খসাতে হয়।

চাঁপা ভাবে, পরের রেকমেন্ডেশনে গাইটি হয়ত হাতি হবে।
ততদিনে সব পাপড়ি খসে চাঁপা হয়ে যাবে কাচপোকার টিপ। তাই অনেক
বছর পর একটি রক্ষাকবচের কথা মনে পড়ে।

লোটন দাস।

.         ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঈশা, বিয়ে বাড়িতে
কবি দেবেশ ঠাকুর

কালকে যখন গিয়েছিলি অনন্যাদের বিয়ে বাড়ি, শরীরটাকে জড়িয়ে ছিল আগুনরঙা
ঢাকাই শাড়ি। তাঁত বা তসর হতেও পারে – অত শত শুধোই কাকে। আমি
শুধুই দেখে গেলাম শাড়ির আড়াল আগুনটাকে। মিলি, রানি, সুদেষ্ণারা বারান্দাতে
ঠাণ্ডা হিমে মজে যাচ্ছে প নি প চ-য় জমে যাচ্ছে আইসক্রিমে।আদেখলার উঠোন
জুড়ে একমাত্র আগুনলতা, মধু- রঙের ফুলকি থেকেই দাবানলের আসন্নতা।
তুই কি আমায় চিনলি নাকি উপেক্ষাতে এড়িয়ে গেলি? ভাবলি একি উটকো
আপদ অনাহুত গগন তেলি।বন্ধুগুলোর ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেলি অযাচিত।
অন্য সবার খোঁজ খবরে দায়িত্ববোধ প্রশ্নাতীত। খাওয়ার শেষে দাঁতের ফাঁকে
একটুখানি হারের কুচি খাওয়ার আরাম ভুলিয়ে দিল, ফ্রায়েড রাইস, মাংস, লুচি।
প্রথম বারই বললি তখন, “টুথপিক চাই ? আনতে হবে” ?
টুথপিক আর আগুনকে কে মেলায় বিয়ের এই উৎসবে।
দেশলাই এর এক কাঠি পেলে খুঁচিয়ে তুলি কুচিটাকে। কে না জানে
কাঠির মাথায় বারুদ হয়েই আগুন থাকে।

.                    ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কামদুনি
কবি দেবেশ ঠাকুর

মেয়েটি কলেজের ছাত্রী
মেয়েটি পথ হাঁটে রোজদিন
মেয়েটির মা বাপ আনপড়
অপুষ্টি উপবাসে সঙ্গিন।
মেয়েটি লেখাপড়া শিখবেই
অদূরে নগরের মায়াডাক
যে নগর জেগে আছে রেনেসাঁস
এ গাঁয়ে বীণাপাণি ঘুম যাক।

মেয়েটি কলেজের ছাত্রী
দুচোখে স্বপনের ইমারত
আরো সে পড়বে, পড়বেই
পড়াবে, পড়বে সে যুগপৎ।
যে আলোক চিনে দেয় অক্ষর
সে আলোয় মেয়েটিকে ধর্ষণ
ছিলোনা সংজ্ঞায় , আঘাতে
সেদিন মেঘ - ভাঙা বর্ষণ।

মেয়েকে চিরে জরা রাক্ষস
পশুও এর চেয়ে দয়াময়
এ কোন রাত্রির কথা ভাস
সময় বোঝে কি এ সংশয়!
এবার দাম আর দস্তুর
কিশোরী নিলামের পাটাতে
এবার লাশ নিয়ে মেধা-বাদ
কে কাকে পথে নেবে হাঁটাতে!

ও কবি ও গায়ক আঁকিয়ে
মোমবাতি জ্বালো সুতো পাকিয়ে।

.              ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দামিনী
কবি দেবেশ ঠাকুর

মেয়েটির নাম কি ছিল দামিনী সাহসিনী?
বাড়ি কোথায়? দিল্লি নাকি কোলকাতাতে?
তাঞ্জাভোরে পার্ক স্ট্রিটে না বারাসাতে?
তার নাম কি শর্মিলা- সেই মনিপুরে?
নাকি তারই নাম ভারতবর্ষ ।
ভারতবর্ষ নাকি ভারতবর্ষণ
ইচ্ছে মতো যাকে ধর্ষণ করা যায়!

সেই দামিনীর জন্য আমার পদ্য আঁকা
সেই দামিনীর জন্য স্বদেশ ফুঁসছে রাগে
এক একখানি মোমবাতিটির দাবানলে
এক এক ফোঁটা রক্ত বুকে ছিটকে লাগে
সীতার মতো আর কতদিন পুড়বে নারী
ধরনী কি দ্বিধায় ফেটে কাঁদবে সয়ে
সতীর মতো দক্ষশালায় পুড়বে না আর
অসুর নাশন করবে কবে দুর্গা হয়ে

এই মেয়েটা যাস কোথারে সন্ধ্যেবেলা
কলেজ, অফিস, স্কুল, থিয়েটার, বর্ষবরণ
জানিস নাকি সব নগরী জল জঙ্গল
স্বাধীন ভারত রুখতে পারে লজ্জাহরণ
ছেলের জন্য বিল গেট্‌স আর স্তিভ জোবস তো
তোর জন্য মনু আছেন পরাশর ও
কে বাঁচবে? কে বাঁচাবে? স্বাধীন ভারত
চার দেওয়ালেই তোমার স্বদেশ চরাচর ও

কেন বেরোয় দামিনীরা বোরখা ছেড়ে
কেন ভাঙে দামিনীরা মনুর বাঁধন
তোদের জন্য ভিন্ন রুচির জীব বিজ্ঞান
স্বভাবতই বলাৎকারের অসুর সাধন

তাও মেয়েটার বাঁচার জন্য ব্যাকুল আশা
হাজার কষ্টে বলল ' আমি বাঁচব মাগো '
লক্ষ প্রদীপ জ্বলল তবু নিবল প্রদীপ
ঘুমিয়ো না আর দামিনী জাগো জাগো...

.              ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দৃশ্যপটে আত্মলিপি
সাত
কবি দেবেশ ঠাকুর

একটি নারীকে আমি ভয় করি আজও
মিথ্যে বলে তৎক্ষণাৎ বুঝি ভালোমত
চোখের চাহনি বলছে, ধরা পড়ে গেছি-
জেলের ফাঁসজাল ছিঁড়ে মাছ-মিথ্যে পালাবে কোথায়

তার সামনে পঞ্চাশেও মাথা নিচু রাখি
জানি কী তিরস্কার করবে কখন,
শক্ত শক্ত কথা বলবে,
হয়তো কিছুই না বলে তার ঠোঁট হবে স্থির
তর্জনির নখ দিয়ে চিরে ফেলবে অক্ষরমালা
হে ঈশ্বর, আর কতদিন ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে,
এই এক রমণীর কাছে, পরাধীন, পরাভূত হয়ে!
দেরি করে ফিরলে আজকেও শুনি,
মাঝরাতে বাড়ি ফিরছো? বাড়ি না হোটেল?
আমি হয়তো বলবার চেষ্টায় যুক্তি আনি,
এখন দশটা বাজে-এমন কি রাত!
তোমরা খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়লে না কেন?
-কেন তা পারিনি বুঝলে তুমিই তো...
তাকে ভয় করি। তবুও প্রত্যেকদিন অস্ফুটে বলি,
চাই না, মা, স্বাধীনতা,
তোমার শাসন নিয়ে নরজন্ম সার্থক করি
চিরকাল-

.              ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দেখাশোনা
দেবেশ ঠাকুর

‘নাম কী?’
‘পারমিতা’।
‘পড়াশোনা করতে করতে ছেড়ে দিলে কেন?’
‘বাবার ক্ষমতা ছিল না আর।দাদাদের পড়াতে গিয়ে’-
‘হুঁ, চুলটা খোলো একবার, গোছাটা টেনে দেখব’।
‘আঃ’-
‘মুখটা এত চ্যাটচেটে কেন?পার্লারে যাও না? ফেসিয়াল করো না? ব্লিচ করো না?’
‘না’।
‘গায়ের রঙ তো বেশ ময়লা। তোমার বাবা চিঠিতে লিখেছিলেন শ্যামোজ্ব্ল’।
‘মেয়ের বাপেরা বোধহয় কালো রঙ চেনে না’।
‘জলের উপর পা দাও।এবার একটু সামনে হাঁটো।পায়ের পাতার ছাপ দেখব।
এবার হাতটা বাড়াও। আঙুলে ফাঁক কেন?জোড়া করো। উল্টোদিক দেখি।
সেলাই জানো?’
‘জানি’।
‘হেম সেলাই আর ক্রশ সেলাই এর তফাৎ কি?’
‘হেম সেলাই-এ-‘
‘মেগাবাইট মানে কি?
একপলা তেল দিয়ে ধোকার ডালনা রাঁধতে পারবে?
গীতা পড়েছ?
‘ইষ্টিকুটুম’ দেখো?
‘গড অফ স্মল থিঙস কার লেখা?’
‘কুলের আচার করতে জানো?’
‘শাহরুখ-ঋত্বিক-আমির কার মধ্যে বেশি ম্যানলিনেস?
বাচ্চার কাশি হলে একসপেকটোরেন্ট না বাসক-তুলসির রস কোনটা দেবে?’
‘নায়াগ্রা জলপ্রপাত কোথায় আবস্থিত?’
‘ফুজিয়ামাটা আসলে কি?’
‘- একটা আগ্নেয়গিরির নাম।আগে মাঝে মাঝে জাগত।গনগনে লাভা বেরিয়ে আসত। এখন
আর জাগেনা’।

এই নিয়ে আমার আটানব্বইটা কনে দেখা বিকেল সন্ধ্যে হয়ে গেল।কালো রাত আলোর
সকাল হয়ে ফিরে আসে।কালো রঙ কিন্তু সকাল হলে আরো কালো হয়ে যায়। সব স্কুলে
হাফইয়ারলি অ্যানুয়াল আছে।আর আমার আছে উইকলি টেস্ট।

.              ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কালীপুজোয় কি দীপাবলি প্রাসঙ্গিক?
দেবেশ ঠাকুর

সেই মেয়েটা আলোর চাইতে আঁধার বেশি ভালবাসে
অনেক বেশি স্বস্তি সে পায় যখন ঘন রাত্রি আসে।
রাত্রির আবার সুপারলেটিভ অমাবস্যা-অমানিশি-
যে আঁধারে মরলো ডুবে বামুনপাড়ার ক্ষমাপিসি।
আঁধারে যে ডুবতে জানে তার কাছে ভোর অর্থবহ
অ্যালকেমিটা তারই জানা আর সকলের কী দুঃসহ!
এই মেয়েটার কালো গায়ে রাত্রি আসে কৃষ্ণকলি
তার চরণে তাই তো শিবের মান অভিমান জলাঞ্জলি।
রাত্রি মানে ভয়টা কীসের সকাল ভোরের পূর্বকথা
নিজের সঙ্গে নিজে লড়ার অসীম সাহস অদম্যতা।
এই মেয়েটা রাত্রে আসে ন্যাংটা হয়ে, উলঙ্গিনী
অমাবস্যায় তার শরীরের জ্যামিতিকে ক্যামনে চিনি!
রাত্রি বলেই কালো মেয়ের অন্ধকারে মিশে থাকা
দেহের কালো রাতের কালোয় হারিয়ে যাবার দিশে ঢাকা।
কোন সাহসে আমরা ঘরে জ্বালাই আলোর দীপাবলি
ন্যাংটা মেয়ে লজ্জা পাবে দেখে আলোর কুসুমকলি।
সব মেয়েরি আঁধার ভাল যারা যারা নিরাবরণ
নিবিয়ে দিও আলোকমালা, আঁধার পথেই অবতরণ।

.                  ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দাঁও
দেবেশ ঠাকুর

পল্টু আজ একখানা দাঁও যা মেরেছি,
চল তোদের আজ রেস্তরাঁয় খাওয়াবো
এই দেখ পকেটে কতগুলো নোট

চুরি করেছি? ধ্যাৎ একেবারে সলিড ইনকাম,
কোথায় পেলাম?কে দিলো? - সব বুদ্ধি ভাই,
একটু মস্তিষ্ক ব্যাস-

আরে ওই যে বুড়িটা,
দিনরাত কেঁদে বেড়াচ্ছে রাস্তায়, নদীর চড়ায় ,খেলার মাঠে-
‘মন্টু রে, ফিরে আয় ,ফিরে আয় মানিক আমার’-
ইতিহাসটা পেলাম সিধু জ্যাঠার কাছে।
ঘুঁটে বেচে দিন চালাতো বুড়ি।
একদিন একমাত্র সন্তান মন্টুকে নিয়ে গেছে গাজনের মেলা দেখতে
হাল ফ্যাশনের এক পসারির কাছে
দম দেওয়া কলের গাড়ি দেখে মন্টু জেদ ধরেছে ,
ওই রকম গাড়ি ওরও একটা চাই
বুড়ির আঁচলে গণ্ডা চার সিকি আধুলি ,
জেদাজেদিতে কষে ছেলের গালে মারলে চড়
ব্যাস, অভিমানী ছেলে ভিড়ে গেল হারিয়ে
এত বছরেও অভিমান ভেঙে একদিনের জন্যেও আসেনি
বুড়ি ছেলেকে খোঁজে জনসমুদ্রে , বালিয়াড়িতে, মেলায় মেলায়
খুঁজতে খুঁজতে মাথা গেছে বিগড়ে – প্রায় ষোলটা বছর
কেঁদে কেঁদে চোখ হয়েছে অন্ধ
গলায় জোর নেই, শুধু নৈঃশব্দ- ‘মন্টু, ফিরে আয়-ফিরে আয় বাপ’-

আমি সব জেনে বুঝে সন্ধ্যে বেলা বেড়ার ধারে গলা চেপে ডাকলাম ‘মা’-
ব্যাস, তাতেই কাত-
বুড়ি চমকে উঠল ‘কে’!
‘মা আমি মন্টু’-

মন্টু,বাপ আমার মানিক, ফিরে এলি!’
মুখে গালে হাত বুলিয়ে সে কী কান্না,
আমার যে কি  অস্বস্তি হচ্ছিল মাইরি-
তারপরে ঝোঁপ বুঝে মারলাম কোপ,
‘মা, মেলায় আমায় দম দেওয়া গাড়ি কিনে দাওনি
এবারেও যদি না দাও-আবার কিন্তু-‘
হাঁ হাঁ করে উঠে গিয়ে লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে বুড়ি এনে দিলে
ওর এই ষোল বছরের সঞ্চয়
ষোল বছরের স্বপ্ন- মন্টুর সাধ-

কী-কেমন জিতেছি বল! আজ বুড়ির টাকায়
আমরা রেস্তোরাঁয় খাব মাটন চপ,ঘুগনি, কাটলেট মজাসে

-কিন্তু সুস্বাদু খাবার গুলো আজ এতো
নোনতা কেন রে-

.                  ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ছাপ্পা
দেবেশ ঠাকুর

বেশ তো দাদা গুছিয়ে নিয়ে
ছাপ্পা দিলেন নষ্ট মেয়ে বলে
তোমাদেরই সমাজ বাবু
তোমরাই তো তফাৎ করো ছেলেমেয়ে,মেয়েছেলের
নাক সিঁটকে রুমাল চেপে
রাস্তা পেরোও – মনে হবে মহাপোভু ছি চৈতন্য
ভাজা মাছটি উল্টে খাবেন
কি ভাবে তা জানেন নাতো এমন সাধু-
যখন তখন যে যার গায়ে ছাপ্পা মারো
লষ্টা মেয়ে-পচা শশা-চালকুমড়ো –এঁটোকাটা-
বললে হবে, বাবুমশাই, খরচা আছে- খরচা আছে-
খারাপ বলে মার্কা মেরে ইচ্ছেমত ভোগ করা যায়!
আমার দেশের সকল মেয়েই দ্রৌপদী কি! পাঁচভাতারি!
তোমরা তখন শিখণ্ডী আর বৃহন্নলা,
বুদ্ধিজীবী মন্ত্রী নেতার প্যাঁচ –পয়জার ছলাকলা,
বেশ লাগে না ,কেচ্ছা ঘাঁটতে
টিভি খুলে কাগজ খুলে বেশ লাগে না পাঁক ঘাঁটতে!
বলাৎকারের খবর পেলেই –সরাৎ সরাৎ করছে নোলা
চারজন না পাঁচটা ছিলো – শেষের জনা তুমিই নাকি!
কেচ্ছা যত বিকোয় দাদা, তত বিকোয় বিদেশী তেল
ল্যাটা মাছের মতই পিছল আমার দেশের গণতন্ত্র
ধরি ধরি মনে করি- এই ভাসছে ,এই ডুবলো
ধর্ষক আর ধর্ষিতাকে বলতে হবে কে কার ভোটার
দুদিন ধরে চ্যানেল গরম তার পরেতে ঠাণ্ডা ঘরে
মণিপুরের ন্যাংটা মিছিল দেখেও তোরা শিখলি নারে!
সাদা কাপড় পড়ে দাদা কাদা দেবার আগে
ও পুরুষ, ও মুর্গা
একবার দেখো মায়ের মুখ,
আর একবার মা দুর্গা।

.         ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*