রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
বাঘরাজা এই দেশে আছে কামদল | বিক্রমে পর্বত কাঁপে সমুদ্রের জল || অপরঞ্চ অসুর দেবতা পরাজয় | শার্দূলের সমুখে পতঙ্গ নাহি রয় || বিস্তর দিবস রাজা দেবতার বরে | হেন বীর কেহ নাই বাঘের সোসরে || পশ্চিমের পথে রহে গৌড় মধুপুর | বাঘের তরাসে প্রাণ করে দুরদুর || এই গড়ে বলবন্ত কামদল বাঘ | ষোল ক্রোশ চৌদিগ এহার মহীভাগ || পার হত্যে নারে রাজা ভৈরবীর নীর | বাঘের সদৃশ কেহ নাহি মহাবীর || এই পথে নাঞি যাব গৌড় শহর | বাঘের তরাসে দাদা অঙ্গে আল্য জ্বর || হাথ দিয়া দেখ মোর জ্বর বড় গায় | পলাইয়া আইস দাদা বাঘ পাছে খায় || পূর্বদিগে পথ আছে ঝোর ঝার খানা | এ পথে গৌড় যাত্যে সভে করে মানা || এ পথ রাখিয়া মোরা ঐপথে যাব | দিনকথ বিলম্বে গৌড় গিয়া পাব || তবে যদিস্যাৎ বাঘ দেখে একবার | চাঁপা কলা বলি পাছে করিব সংহার || এই পথে বিস্তর জঞ্জাল নানা ঠাঁই | এখন এ পথে গৌড় কেহ যায় নাই || দশদিন পশ্চিম পথের বিলম্বন | হাস্যা নাচ্যা যাব তবে গৌড় ভুবন || এত শুনি লাউসেন সবিস্ময়ে মনে | কর্পূরে বলেন কিছু মধুর বচনে || হরিণ মহিষ বাঘ রাজার শিকার | হেন বাঘ কেমনে পাইল অধিকার || বল বল কর্পূর অপূর্ব বাক্য শুনি | সবিশেষ শুনিলে প্রত্যয় পাব জানি || বাঘের তরাসে যাব ডানি বাম দিয়া | তবে কেন মরি ভাই হেত্যার বহিয়া || তবে যদিস্যাৎ হব পরাণে কাতর | কোন্ গুণে হব তবে রাজার চাকর || কেমনে ইনাম পাব ময়না ভুবন | বাঘ সনে অবশ্য করিব সম্ভাষণ || অন্য লোক রাজা ভেটে দিয়ে গুয়াপান | আমি রাজা ভেটিব বাঘের লেজ কান || অবশ্য গোউড়ে হব রাজার চাকর | গতায়ত গৌড় ময়না নিরন্তর || পূর্বকথা এহার শুনাহ এইক্ষণে | শার্দূল হইল রাজা কিসের কারণে || বলবন্ত হৈল কোন্ দেবতার বরে | সেকথা কহিবে ভাই কর্পূর পাতরে || তোমা অগোচর নহে এ সব পুরাণ | আমি জানি কর্পূর পাতর সব জান || সব জান কি জানি পিশাচী উপাসনা | তোমাকে বিস্তর ভাবি দৈবের ঘটনা || একবার বাঘে আমি অবশ্য দেখিব | কেমন হইল রাজা সেকথা শুনিব || এত শুনি কর্পূর পাতর তবে কয় | যেরূপে হইল রাজা শার্দূল-তনয় || আমি সব এহার পূর্বের বাক্য জানি | সেকথা শুনহ দাদা নৃপচূড়ামণি || দেবতার সভা হৈল ইন্দ্রের ভুবন | সারি সারি বিস্তর বসিল দেবগণ || বিধি বিষ্ণু বরুণ বসিল মহেশ্বর | সভামধ্যে নৃত্য করে ইন্দ্রের কুঙর || নাটো কলাধর নাম দ্বিতীয় মদন | সভামধ্যে নিত্য করে দেখে সর্বজন || মাদল মৃদঙ্গ বাজে শঙ্খ করতাল | কালীয় দমনে যেন মদনগোপাল || বিনোদ টালনি চৃড়া গুঞ্জার সহিত | নৌতন বকুলমালা নানা পরীক্ষিত || রনরন উরমাল ঘাঘর ঘন্টা বাজে | কলাধর নাটো নাচে দেবতা সমাজে || ছয় রাগে গীত গায় ছত্রিশ রাগিনী | ঝমঝম ঝুমকি ঝুমকি বাদ্যি শুনি || পঞ্চমুখ গীত গান মহেশ ঠাকুর | যার সনে তান ধরে নারদ তুম্বুর || মদন সভাকে আইল মলয়জ বায় | তান ধরে ভ্রমর কোকিল গীত গায় || বিশেষ আনন্দ গুরু ইন্দ্রের আলয় | ভাল নৃত্য করে নট ইন্দ্রের তনয় || সভামধ্যে বিস্তর পাইল পুরস্কারে | বাখানিল সর্বজন ইন্দ্রের কুমারে || নবীন বয়স গুণমন্ত অতিশয় | বস্ত্র অলঙ্কার ভূষা পাইল মণিচয় || কেহ বলে অল্পকালে এমন বৈভব | বাঘে চড়ি জয়দূর্গা দেখিল তান্ডব || নাট গীতে মোহিত বাঘের পৃষ্ঠে বসি | বাখানিল ইন্দ্রসুতে পঞ্চমীর শশী || রূপে গুণে এমন সংসারে কেবা আছে | কেবা জানে এমন ইন্দ্রের বেটা নাচে || . বাঘজন্ম পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |