রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
তুমি আমি দুজনে ধর্মের পূজা দিব | যুগে যুগে রাজা পাত্র অমর হইব || লাউসেন মহাবীর হইল অমর | সেই ইবে রাজা হব গৌড়ের উপর || ধর্মপূজা করি রাজা হৈল মঘবান | যুধিষ্ঠির স্বর্গ গেল সুবর্ণ বিমান || বার যুগ মরুত করিল ঘরভরা | চাঁপাইর বনে আছে পুরান দেহারা || ঊত্কল অমরাবতী হরিশ্চন্দ্র রাজা | জ্যেষ্ঠপুত্র বলিদানে দিল আদ্যপূজা || রাজ্যের সহিত সেই গেল স্বর্গবাস | দশ বার আদ্যপূজা দিল কৃত্তিবাস || বিশেষ পরশুরাম হইল অমর | রাজ্যের সহিত রাজা ধর্মপূজা কর || পাত্রের বচন শুনি বলে গৌড়েশ্বর | ধর্মের দেহারা তুল পরম সুন্দর || সুবর্ণ দেহারা দেহ দক্ষিণ চাতরে | শহর সহিত যেন ধর্মপূজা করে || দশ লক্ষ দনে তুল পুরট দেহারা | সমুখ দুয়ারে দেহ রতনের ঝারা || যতনে দেউল তুল রতন মিশাল | শিখিপাখা চামরে ছাইবে চারিচাল || মাণিকের ঝারা দিবে চূড়ার উপর | এইরূপে শহরে ধর্মের তুল ঘর || দশ লক্ষ তঙ্ক কড়ি তুমি গিয়া লেহ | অভিমত ধর্মের দেহারা ঘর দেহ || এত শুনি বলে পাত্র বিনয় বচন | কিবা হেতু খরচ করিবে এই ধন || দেহারা তুলিব দেশে বেগার ধরিয়া | খরচ করিব ধন কিসের লাগিয়া || শহর ভিতর গিয়া ধরিব বেগার | এখনি তুলিব ঘর পঞ্চাশ হাজার || অবতার কলিযুগে তুমি কর্ণদাতা | অনেক যতনে আছে রাজদন্ড ছাতা || ধন বিলাইতে শুন্য হইল ভান্ডার | চামর চন্দন শঙ্খ ফণিমণি হার || তুলা মেঘ মকরে সকল দিলে দান | দিনে সাত লক্ষ লাগে শুনিতে পুরাণ || বচন বলিতে তুমি মনে বড় সচ | নাঞি জান প্রতিদিন এ সব খরচ || সাধিব ধর্মের পূজা ভৈরবীর কূল | বেগার ধরিয়া দেশে তুলিব দেউল || কেন ধন খরচ করিবে এই হেতু | কত ধনে রামরাজা জলে বান্ধে সেতু || আজ্ঞা দিলে আপনি অনেক কার্য হয় | তবে কেন জৈমুনি ভান্ডারে ধনব্যয় || ধর্মের দেহারা হেতু রাজা দিল সায় | অনাদ্যমঙ্গল দ্বিজ রূপরাম গায় || দক্ষিণ শহরে পাত্র দিল দরশন | হেথায় সাজিব বলে ধর্মের গাজন || শহর কোটাল ইন্দা আনে ডাক দিয়া | মহাপাত্র বলে ভাই শুন মন দিয়া || ঘর প্রতি দুজন কোদাল একখান | বিশাশয় বেগার আনিবে বিদ্যমান || বলিবারে বচন বিলম্ব নাঞি সয় | অবশ্য তুলিব আজি ধর্মের আলয় || হুকুম পাইল দড় শহর কোটাল | নগরে পড়িল ঢেঁড়ি বিষম জঞ্জাল || শিঙ্গা কাড়া টমক নিশান ঘনে ঘন | পাকি আর পিয়াদা সাজিল বহু জন || বর্লীদ বেপারী ধরে পথিক হাটিলা | তেলি তাঁতি কুম্ভকার কৈবর্ত গুয়ালা || বর্ণিক বারুই কলু রজক নাপিত | ধাওাধাই শহরে জঞ্জাল মহাভীত || তেঁতুল্যা বাগদি মেট্যা মাজি অবসান | সামাই কামিল্যা শুঁড়ি কান্যা কড়া পান || গায়ের বসনে বান্ধে বাক্য নাঞি শুনে | ব্রাহ্মণ সজ্জন যত লুকাইল কোণে || ধরাধরি বেগারে সঘনে ঘাড়ধাকা | বান্ধিয়া ঐমনি রাখে বাক্যে হঞা বাঁকা || ঘরে ঘরে শহরে পড়িল ডাকাডাকি | রাজার হুকুম দড় কার বাপে রাখি || নাঞি মানে গোহারি বচন সবিনয় | চারি দন্ড ধরিল বেগারি বিশাশয় || কোদাল কুঠার করে কলসী বরণ | পাত্রের সমুখে গিয়া দিল দরশন || বেগারি দেখিয়া বলে গৌড়ের পাতর | আজ্ঞা দিল হেথায় ধর্মের তুল ঘর || শুভক্ষণ পাইয়া ঘরের ভিত গড়ে | অবনী কলসজলে কেহ কাদা করে || পরিমাণ প্রাচীর তুলিল চারি পাট | আজ্ঞা পায়্যা ছুতার বসাল্য ঝালকাট || অলক্ষিতে প্রাচীর তুলিল পঞ্চদিনে | আড়াকাষ্ঠ কামিল্যা তুলিল শুভক্ষণে || বেগারি সকল খাটে গায়ে উড়ে খড়ি | সন্ধ্যাকালে সভাকার পায়ে দেই দড়ি || পাঁচগন্ডা কড়ি চালু অর্ধসের রোজ | বিহান বিকালে বড় বেগারের খোঁজ || বেগারি সকল খাটে ধর্মের গাজনে | পরম আনন্দ হৈল সভাকার মনে || বিশাশয় কামিল্যা ধর্মের ঘরে খাটে | যতেক গজাল গড়ে জোড় লাগে কাঠে || কোনাচি বসাল্য থুনি জোড়া সোমরণ | চারি চাল পরিসর করিল গঠন || বাঁশের ছিটনি জউ হিঙ্গুল হর্তাল | বসন মউর পাখে ছায়্যা তুলে চাল || অতি মনোহর ঘর হৈল দশদিনে | সমুখে আলম চান্দা চামর বসনে || কনক রজত মাঝ্যা সুন্দর জগধি | চারিদিগে বনমালা অদ্ভুত অবধি || ঐমনি সকল পূজা দিব এইখানে | বসুমতী জাহ্নবী বসিব বিদ্যমানে || সুবর্ণের ঘর সব করে ঝলমল | চালে চালে চৌদিগে চামর গঙ্গাজল || . ****************** . অঘোরবাদল পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |