যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
|
. ( ছোট স্টেশন )
ধকা ধাঁই ধকা ধাঁই,
এখানে থামিতে নাই |
ঝকা ঝকা ঝাঁকি ঝাঁকি,
অমন করুণ আঁখি !
কেমনে সে দিল ফাঁকি ?
আর তারে পাব নাকি !
ধক্ ধক্ ধক্কা,
সব কিরে ফক্কা !
হুটোহুটি ছুটোছুটি
কাশী আর মক্কা ;-----
কে জানে কাহার তরে
কোথা জাগে ধাক্কা ?
. ( পুলের উপর )
ঘস্ ------গড়্ গুড়্ গুম্,
গুড়ু গুড়ু গুড়ু গুম,
বর্ষার মর্ সুম্
নদীজলে বড় ধুম্ ,
গড়ু গুম্ গড়ু গুম্,
ঝাঁপ দিয়ে পড়লুম্ ,
সে অতলে ডুবলুম,
গুম্ গুম্ ঘুম্ ঘুম্,
নদীতলে নির্ ঝুম্
নিরঝুম্ চিরঘুম,-----
. ( পুল পার )
গুড়ু গুম্ -----ঘচ্চো
ঘচ ঘচ ঘচ্চো
ওখানে কি কোচ্চো ?
বাঁধা পথে গচ্ছ !
ঘচাঘচ্ ঘত্তোর,
লোহা-বাঁধা পথ তোর ;
কি সাত কি সত্তোর,
মাঝে মাঝে দোত্তোর,-------
প্রলাপ সে মত্তর |
উঁচু নিচু গর্তর
পথ নয় পথ তোর ;------
লোহা-বাঁধা পথ তোর,
লোহা-বাঁধা পথ তোর !
. ( পয়েন্টস্-ক্রসিং )
ঘচাঘচ্ ঘটা ঘাঁই,
সে পথে ত আর নাই |
পেরেছি গো, পেরেছি গো,
সে পথটা ছেড়েছি গো |
ঘ্যস্ ঘ্যস্ ঘ্যস্ ঘ্যস্ |
কি আরাম ব্যস্ ব্যস্ |
পায়ে মোর পথ বশ,
হাতে বাঁধা হাত-যশ,
ঘ্যস্ ঘ্যস্ --- ঘট্ কা,
ফের লাগে খট্ কা !
কি বলছে ? দোত্তোর----
লোহা-বাঁধা পথ তোর,
লোহা-বাঁধা পথ তোর !
ঘটাঘর্ ঘেস্ ঘাস্
দিতে পার ঘুস-ঘাস ?
মাপ হতে পারে ফাঁস !
ঘস্ ঘস্ ধক্কো,
কিসের কি দুঃখ ?
বিচার ত সূক্ষ্ণ ;
পেতে পার মোক্ষও,
ঘস্ ঘস্ ঘস্ ঘস্
কি আরাম ব্যস্ ব্যস্ !
. ( দূরে সিগ্ ন্যাল্ ডাউন )
ঘস্ ঘস্ ঘচ্চান,
দূরে দ্যায় হাতছান্ !
কেমনে দিগন্তে
কে পেরেছে জান্ তে ?
আগুবারি আন্ তে
এই পথ-শ্রান্তে
লাগে হাতছান্ তে !
ঘস্ ঘস্ ঘশ্রাম্,
হোথা চির বিশ্রাম ?
. ( ছোট স্টেশন )
ঘেটা ঘ্যঁয়্ ঘেটা ঘ্যঁয়্,
হেথা নয় হেথা নয় |
ঘায় ঘায় গোটা গোটা,
হায় হায় কোথা কোথা !
ঘরর্সা ঘেঁই তো---
আমার সে এইত !
ঘেটা ঘ্যঁয়্ ঘেটা ঘ্যঁয়্ |
হেথা নয় হেথা নয় |
ঝকা ঝকা ঝন্ ঝন্
ওগো একি বন্ধন ?
চিরসাথী ক্রন্দন !
ঝকা ঝকা ঝাঁক্কি,
আগাগোড়া ফাঁক্কি,
ঝাঁক্ কই ঝাঁক্ কই,
এ পথের ফাঁক কই ?
হা হা হা হা ---ঘত্তোর-----
লোহা-বাঁধা পথ তোর,
লোহা-বাঁধা পথ তোর |
ধা তিন্ তা তিন্ তা,
কিসের বা চিন্তা ?
ঝকাঝকি বকাবকি
কেটে যাবে দিনটা |
ধকা ধাঁই ধাত্রি-----
ছেয়ে আসে রাত্রি !
. ( আপ ট্রেন পাস্ করে )
ওকি ওই সম্মুখে
ধেয়ে আসে মোর বুকে
খুন মাখি লাল-আঁখি
আন্ -পথ যাত্রী !
ঘচা ঘচ্ ঘ্যাঁচ্চ
হাঁচি পড়ে হ্যাঁচ্চ-----
ঘরদ্বার চারধার
ভেঙ্গে চুরে দুর্ দার্ ----
ধূমকেতু দুর্বার
কোথা ছুটে যাচ্চ ?
সুনীল করুণ আঁখি
দেখ্ তে কি পাচ্চ ?
এ প্রলয়ে এ আঁধারে
ওগো কোথা যাচ্চ ?
. ( পুলের উপর )
গুড়ু গম্ গুড়ু গম্
গুড়ু গুড়ু গম্ গম্
নিশীথিনী চম্ চম্,
উপরে জমাট মেঘ
নিচে নদী দুর্দম্
গড়ে ভাঙ্গে হর্দম,
তড়িৎ চাবুকে ছোটে
ঝঞ্ঝা তুরঙ্গম,
বারি ঝরে ঝম্ ঝম্ ,
পৃথ্বীটা ঘেঁটে গোটা
পায়ে ছেনে কর্দম,
গুড়ু গম্ গুড়ু গম্,
. ( পুল পার )
গুড়ু গম্ -----ঘচ্চুই-----
কোথা নেই কিচ্ছুই !
গগন ভরিয়া তারা
বাগান ভরিয়া জুঁই !
. ( দূরে লাল সিগ্ ন্যাল )
তবুও দিগন্তে
আমারি কি পন্থে,
কে ওই রাঙায় আঁখি
কটমট দন্তে ?
কস্ কস্ কট্ কট্,
আর যাওয়া দুর্ঘট |
প্রান্তর প্রান্তর
অন্ধ তেপান্তর !
ঘুৎকার ফুৎকার
মিছামিছি চিত্কার !
ছুটাছুটি নিষ্কাম,
ওরে মূঢ় থাম্ থাম্
পথে খাসা প্রাপ্তি
সহসা সমাপ্তি !
. ( সিগ্ ন্যাল ডাউন )
না না না না চল্ চল্
শুধু ছল শুধু ছল !
ঘ্যস্ ঘাঁই ঘ্যস্ ঘাঁই
আর নাই আর নাই,
ভয় নাই বাধা নাই,
থির আঁখে ওই ডাকে
সবুজের রোশ্ নাই,
আর আপ্ সোস্ নাই |
. ( থামিবার পূর্বে স্টেশনে প্রবেশ )
নিরাপৎ-বৈরাগ্য করিলে আত্মার সন্ধান
. হয়ত হইতে খুশি !
রক্ষের দেশে সে প্রথা ছিল না, কেন মোরে কর দুষী ?
দুর্দিনে শুধু আশ্রয় নহে, মিতা বলে কোল দিল,
সমর-সাগরে অপরিচিতের তরণী সমর্পিল !
. সেই পুরুষোত্তমে
দেখনি তোমরা, তাই ভাব আমি পড়েছিনু মোহে ভ্রমে |
ঘরের খবর রঘুবরে যদি সব কয়ে দিয়ে থাকি,-----
মোরে দুষ বৃথা---দেখনি তোমরা সে দুটি কমল আঁখি |
লাথিমারা পদে পূজি নাই, তাই কহ বিশ্বাসহন্তা ?
জানা ত ছিল না অহিংস হয়ে লাথি শুধিবার পন্থা |
. কহ যে দেশদ্রোহী,-----
মাটি, জল, বায়ু, পশু, পাখি, নর, বল কারে দেশ কহি ?
মাটিটাই যদি দেশ তোমাদের---লঙ্কা ত আজও আছে ;
রাক্ষসকুলে তবু আমি আছি, রঘুকুলে কেবা বাঁচে ?
চিরজীবী আমি, ত্রেতা হতে হেথা দেখিতেছি বসে বসে,
কত বিষফল ফলাল মানব এই মাটি চষে চষে !
. না বুঝে মাটিরই ফাঁকি
মাটির ঘটের সমুখে রাঘব উপাড়িতে গেল আঁখি !
সেই হতে লোক গড়ি নব নব দেবতা সে মাটি নিয়ে
যুগে যুগে প্রাণ দিল বলিদান মাটির মাদক পিয়ে |
. লয়ে এই মৃত্তিকা
কত মহাবীর স্বহস্তে ভালে পরিল মৃত্যুটীকা !
মোহিনী মাটির অতুলন স্নেহ তিল তিল হয়ে জমা
কত না সুন্দ উপসুন্দের রচিল তিলোত্তমা !
এ যুগের চোখে পুরানো মাটির নব মায়া পুনঃ লাগে,
সে যুগের সেই মৃন্ময়ী আজ চিন্ময়ী হয়ে জাগে |
. আজি এ মাটির প্রেমে
দিকে দিকে জাতি মরণ-সাগরে স্রোতে স্রোতে আসে নেমে |
তারি আহ্বানে ডালি ভরে আনে ধন প্রাণ মান দেহ ;
বুকের শোণিতে শোধে তারা, হায়, এ মরা মাটির স্নেহ |
ত্রেতায় যে পূজা পেয়েছিল প্রজা, দ্বাপরে যা রাজা পায়,
কলিতে কঠিন মূক মৃত্তিকা সেই পূজা ফিরে চায় |
স্বর্গ হতেও গরীয়সী কিনা স্বদেশ জন্মভূমি,
স্বর্গ ত নাই, কেমনে যাচাই করিবে সে কথা তুমি ?
. এও বড় বিস্ময়-------
গরীয়সী ফেলে দলে দলে দলে স্বর্গে না গেলে নয় !
. মাটি যদি হত মাতা----
তর্পিতে তায় লাগিত কি লাখো পুত্রের কাঁচা মাথা ?
মৃৎ-রূপে-রূপে মা রাজে স্বরূপে,----শুনে এই রূপকথা
দেখিলাম আমি যুগে যুগে নর সহে নব নব ব্যথা |
রক্তপিপাসা ভক্ত সাজিয়া পূজে মৃন্মহামায়া,
স্বার্থ-প্রদীপে পুরোহিত করে আরতি আপন ছায়া |
. মিছে, ওরে সব মিছে,-----
মাটির প্রেমের হেমকুরঙ্গ বনে বনে ছুটাইছে |
আমি চিরজীবী, যুগে যুগে ভাই মিটানু অনেক সাধ,
ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষ, জানি সকলেরই স্বাদ |
এই বুকে আমি ধরিয়াছি সেই পরমব্রহ্ম রামে,
রাজ্য করেছি মন্দোদরীরে লইয়া আপন বামে |
রাজসূয়ে দেখি ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের খ্যাতি,----
মরণ-দুয়ারে হেরেছি তাহার পথ-কুক্কুর সাথী !
কোথা সে লঙ্কা, কোথা অযোধ্যা, ইন্দ্রপ্রস্থ ধাম ?
কোথা সীতারাম, কৃষ্ণার্জুন ? সবই এক পরিণাম !
. চারিদিকে ভাঙে সাগরের বুকে
. তরঙ্গ কি ভীষণ |
. মাঝে শুধু জ্বলে রাবণের চিতা-----
. চিরজীবী বিভীষণ |
. ******************
. সূচিতে...
মাংসের লেশ নাই, হাড়গোড় শুকনো |
. ঝাঁ ঝাঁ করে দিক রে
. রোদে ফাটে টিক্ রে,
ঠনকি টন্ কো মাটি কোপ উঠে ঠিকরে |
. হাত্তোর ভগবান !
. দিলি কি কঠিন প্রাণ,
কাঁকুরে এ কড়া ঢ্যালা তারও চেয়ে কড়া জান !
. ঠিক রোদে খাটি রে
. কত মাটি কাটি রে,
না জানি সে কত বড় যারে দেবো মাটি রে |
. ----এই-----থুড়ি, চোপ চোপ |
. হেঁই মারো মারো কোপ ;
. কারো ‘পরে নেই কোপ,
. শুধু কোদালের কোপ !
. আয় দাদা আগিয়ে,
. ঝুড়ি ধর বাগিয়ে,
তাতাপোড়া দেহখানা দিসনেকো রাগিয়ে |
. জোয়ান রে হেঁইয়া !
. ভ্যালা মোর ভেইয়া !
. আমি কাটি কপাকপ্,
. তুই তোল্ টপাটপ্,
. মেলে দুটো পাঁজরা,----
মাজাদোলা ছুট্ পায়ে ফেলে আয় ঝপাঝপ |
.
.
.
.
.
.
.
.
.
প্রাণটাকে যত কষি, ধড় করে ঝিন ঝিন !
. ওকি, ওরে মেষ্টা !
. পেল বুঝি তেষ্টা ?
তোদের কষ্ট মেটে তারই ত এ চেষ্টা |
. এবারের বৈশাখ
. পিপাসাটা চেপে রাখ ;
. প্রাণপণ কুঁদলে
. এ দিঘিটা খুদ্ লে
. নাগাৎ শ্রাবণ ভাই,
. জলের কি ভাবনাই ?
. যত জলকষ্ট
. একেবারে নষ্ট ;
তুই যদি না থাকিস ---- তোরই সে অদৃষ্ট !
. দফাদার মামা গো !
. মাটি না এ ঝামা গো ?
যাই হোক রফামত তোর মুখ থামাবো |
সবই জানো বাপধন ! খেটে সারদিনটে,
রোজগার দু’আনার, খেতে পেট তিনটে |
তারও এক আধ্ লা !-----
. দাঁড়িয়ে সে বাদ্ লা ?
ছেলেটা ? বালাই গেছে, তুই ভাই কোদ্ লা |
. এই ছোঁড়া সুখলাল !
. কোন্ দুখে মুখ লাল ?
মোড়লের পো বলে কি কম করে দেবে গাল ?
. ওই মোলো ছুঁড়িটা,-----
. ছুঁড়িটা না বুড়িটা ?-----
নাহক্ হুঁচুটে পড়ে ভাঙে নয়া ঝুড়িটা |
কি কর রহিম চাচা এই বুড়ো বয়সে !
লুকিয়ে চৌকো চাঁচা ! ধর্মে কি সয় সে ?
আচ্ছা, বলত চাচা, এত যারে ডাকলে----
. সে বিধি মেহেরবান
. হিঁদু না মোছলমান ?
পোড়াব না গোর দেবো দেহখানি রাখলে ?
দূর হোক----- মাটি কাটো, কেবা জানে কিসে কি,-----
যতই ঘুলিয়ে দাও, তেলে জলে মিশে কি ?
খেতে পাও নাই পাও শুধু চল কুপিয়ে,
বুড়ি বেটি মাটিটাকে আগাগোড়া চুপিয়ে ;
মায়াবিনী শয়তানী চির বহুরূপী এ !
কার ধন দ্যায় হরি’ কারে চুপি চুপি এ !
. মারো এরে কুপিয়ে |-----
বুকে বুঝি মুখ বয়ে খুন ঝরে টুপিয়ে !
. চল্ চল্ কুপিয়ে !
কেবা শোনে কার কথা ? কাঁদিসনে ফুঁপিয়ে ;
কোপের উপর কোপ ফ্যাল্ ঝুপঝপিয়ে !
কোদালের মুখ হতে নে-রে চাপ লুফিয়ে,
. চল মাটি কুপিয়ে ;-----
চৌকার চারকোণ ঠিক মাপ-জুপিয়ে |
খুন ঝরে টুপিয়ে রে, জোল্ দি রে জোল্ দি,
ওই দ্যাখ্ চৌকোর চারদিকে গল্ দি |
আমার চৌকো মেপে পাবে কেউ ফাঁক কি ?
বুকে তার সাক্ষাৎ শিবরূপী সাক্ষী |
. হেঁই চল্ কুপিয়ে,
শক্ত বেহায়া মাটি রক্তেতে ছুপিয়ে |
. খাল ধরে বুকে রে !
. খুন ঝরে মুখে রে !
. বনে ডাকে বনের বাঘা আগা-গোড়া ডোরা ;
. হাঁতাল-ঝোপে ময়াল সাপে ধরে ‘দাঁতাল বোরা’ |
. চরের পাখি হঠাৎ ডাকি ঘুরে উড়ে যায় |
. সাঁতার কেটে কুমির উঠে জোচ্ছনা পোহায় |
. চম্ কে চেযে থম্ কে দাঁড়ায় ভীতু হরিণ-দল,----
. দুড়-দুড়িয়ে ছুটে পালায় কাঁপিয়ে জঙ্গল |
. চাঁদের ঝোঁকে জোয়ার ঢোকে সোঁদর গাঙে গাঙে,----
. ভাঙ্গন-মুখে সুন্দরী গাছ কেঁপে কেঁপে ভাঙে |
. দখিন হাওয়ায় জোয়ার লাগে জংলা গাছের তল্-----
. তটের বুকে ঢেউ-এর সুখে তল্-তলাতল্-তল্ |
হেথা, পাপিয়া পিক্ কাঁদায় না দিক চাঁদনি আকাশ ভরে,
. সাগর-কূলে আগড় খুলে দখিন হাওয়াই ঘোরে |
. সাগর-পারের স্বপন এনে গাঙে সে ভুলায় ;
. গাঙ্-কপোতীর সাথে সাথে সোঁতে ভেসে যায় |
. দখিন হাওয়া, দখিন হাওয়া, মাতাল হয়েছে রে !
. পালের তরীর আঁচল ধরি গাঙে গাঙে ফেরে |
. কাঁচা বনের সবুজ কাঁচল টানে দখিন হাওয়া ;----
.` পিয়ার পিঠের এলোকেশে আমার তনু ছাওয়া |
. দেশের শেষে সুন্দরবন রে, দখিন হাওয়ার দেশ,-----
. চোখে মুখে ঝাপট লাগে পিয়ার এলোকেশ |
. সুন্দরবনের খোলা চরে নাচে খঞ্জন পাখি,
. সোনারই পিঞ্জরে নাচে দুটি পোষা আঁখি |
. এদেশের মৌমাছি কেবল পদ্মমধুই খায়,-----
. পিয়াসী আমারে পিয়া অধর পিয়ায় |
. লোলুপ দিঠি পিয়ার মুখে উড়ে পাকে-পাক,-----
. পদ্মবনের মৌমাছি বা পদ্মে বাঁধে চাক |
. সুন্দরবনে বাস গো বন্ধু, সুন্দরবনবাসী,
. নোনাপানি ঠেকিয়ে মোরা এক ফসলের চাষী |
. মিছে আমায় ডাকো বন্ধু , মিছে ফিরে ডাকো,
. তার চেয়ে ভাই তুমিই মোদের অতিথ হইয়ে থাকো |
. তোমার সাথে বাইনু প্রাতে গাইনু কাঁদন-গান,
. টানা পথের বাঁকে বাঁকে ছিল ভাঁটার টান |
. মোহানাতে দেখি---একি উজান বহে বারি !
. সাধে কি হইনু রে বন্ধু সুন্দরবনচারী !
. ফিরিতে কোয়োনা গো আর, ফিরে যেওনাকো ;
. দুখের বন্ধু সুখের ভাগী অথিত হইয়ে থাকো |
. থেকে যেও, দেখে যেও ভাদর অমা-রাতে ;----
. ----ষাঁড়াষাঁড়ির বানে সাগর গাঙে যখন মাতে----
. আমি দাঁড়ে পিয়া হালে, থাকবে না আর কেউ,
এই সুন্দরী কাঠের নায়ে কাটবো কালাপানির ঢেউ !
. কহি আজ---ওগো বন্ধু শোনো,-----
হোথা কি দেখিছ চেয়ে ?
উঠে কি দিগন্ত বেয়ে
. সন্ধ্যার মতন ছায়া কোন ?
নয় ত ও সন্ধ্যা নয়,
হয়ত মোদেরি ভয়
. দিক্ পারে রচে অন্ধকার |
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখা মেলি
তব গান ছায়া ফেলি
. যুগান্ত হতেছে না ত পার ?
হয়ত তোমারি ছন্দে
বাঁধিতে নূপুরবন্ধে
. দলে দলে অপ্সরীরা নামে,-----
তাদেরি রঙিন্ বাসে
মায়াসন্ধ্যা উড়ে আসে
. তাদেরি কাজল কেশদামে |
হয়ত তোমারি পাশে
দূতমেঘ ফিরে আসে
. বহি তব প্রিয়ারই বারতা |
হয়ত বা এত কালে
কালের উদাস ভালে
. তব সুরে ঘনাইল ব্যথা |
আমরা নিচের পাখি,
এ পাখা বিধির ফাঁকি,
. আকাশের সংবাদ না পাই,
ঘটিছে যা লোকে লোকে
ছায়া পড়ে তব চোখে,
. তাই বন্ধু তোমারে শুধাই----
দিক হতে ঘুরে দিক
তুমি কি জেনেছ ঠিক
. এ জীবন নহে মরাচিকা ?
মরুব্যোমে প্রাণঝড়ে
তবে কেন ছিঁড়ে পড়ে
. উড়ে-লাগা আকস্মিকী শিখা ?
জ্বলে নেভে দীপমালা,
তা লয়ে সাজায়ে ডালা
. আদিত্যপিন্ডের আরাত্রিকে,
শূন্যমুখে বাষ্পাম্বরা
বারংবার ঘুরে ধরা
. বিধিবদ্ধ আহ্নিকে বার্ষিকে |
এই পূজারতি মাঝে
এ দীপ লাগে যে কাজে
. তাহে বন্ধু না পাই সান্ত্বনা,
যত জ্বলি মনে হয়
জ্বালার এ অপব্যয়,
. কেবলই ত আপনা-বঞ্চনা |
অমৃত যাহার গান,
সেও যদি ম্রিয়মাণ,
. তবে বন্ধু কার মুখে চাই ?
তোমারও জয়ন্তী দিন
নহে পরাজয়-হীন,
. তবে আর কার জয় গাই ?
জানি বন্ধু জানি জানি,------
তোমার কন্ঠের বাণী
. বিশ্বজনে রেখেছে ভুলায়ে,
ক্ষিতির কুসুম-মালে
ব্যোমকেশ-জটাজালে
. তুমি বন্ধু দিয়েছ দুলায়ে |
জানি ওগো জানি ফের
জরাতুর বসন্তের
. তুমি এসে ফিরালে যৌবন,
অশ্রুক্লিন্ন অন্ধরাতে
আষাঢ়ের আঁখিপাতে
. নামাইলে নবীন ক্রন্দন |
হেন রবি প্রাণময়,
তারি রাত্রি অনুদয় !
. জড়পিন্ড ডুবিবে উঠিবে ?
মূঢ় বিহঙ্গম দল
নিত্য করি কোলাহল
. চিরদিন তাহারে বন্দিবে ?
এই অভিমানে মোরা,
শঙ্কা লয়ে বুকজোড়া,
. মোদের রবির গাহি জয় |
জগতে ত কত ভ্রম,
কত হয় ব্যতিক্রম,
. এ-সন্ধ্যা কি না হলেই নয় ?
ভবিষ্য নিশার পাখি
আকাশ বাতাস ছাঁকি
. তব গীতে কন্ঠ ভরি লবে ;
যে কন্ঠ গাহিছে গান
তাহে জযয়মাল্য দান,
. হেন ভাগ্য তাদের না হবে |
সেই অহঙ্কারে আজ
ভুলিয়া আসন্ন লাজ
. আমরা সাঁঝের পাখি তব
“জয়তু প্রসন্ন রবি,
পাখির প্রাণের কবি |”
. ক্ষীণ কন্ঠ ঊর্ধ্বে তুলি কব |
এ পঞ্জরে রক্তমাখা
যে পাখি ঝাপটে পাখা
. বন্ধন-বেদনে অবিরাম,
ছিন্ন তার ওষ্ঠপুটে
যে গান কাঁদিয়া উঠে
. সেই গানে করে সে প্রণাম |
রেলঘুম
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
ভাই নিয়ে এল হরণ করিয়া পরে
প্রজার মাঝারে কামুক রাজার চ
. চুপ করে যদি দে
বল তবে আজ, তোমাদের মতে
লঙ্কেশ্বরে শঙ্কা না করে করেছিনু
যুগে যুগে তাই রটাও কি ভাই মো
পার হয়ে এল প্রবল বৈরী সাগরে
লঙ্কার দশা ভাবিয়া পড়িনু ভাই-
. মরণ-দম্ভে মাতি
সবার সমুখে সভায় বসিয়া সে ভা
আমি তাহা সহি নাই ;-----
তোমরা কি চাও খ্রিস্ট নিমাই হবে
আর কোন পথে সে অপমানের না
গিয়েছিনু বটে রামের নিকটে শুধি
রাজার খাতিরে হজম করিয়া সে
বিভীষণ
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
. আয় আয়
. বেলা বয়ে
দারুণ আকালে হায়,
রিলিফ্ নেমেছে ভাই
. বেঁধে নে বেঁ
. পাক-দেওয়া
কাঁধে তুলে নে রে ভা
দেখো দেখো মতি মি
ওদিকে হতেছে বাঁধা
এদিকে হতেছে খোদা
. তিন আনা
. ভুখা পেটে
. দলে দলে লে
কে বলে কঠিন মাটি
. ঘরে ব
. চলেছিলি ন
না হয় কোদালহাতে
. খাট্ তবে
ডোঙা পেট কোঙা কো
যা বলি তা বলি ভাই,
ফেমিন্ -রিলিফ্
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
মাটির কঠিন টানে শির
ঝিন্ ঝিন্ ঝিন্ ঝিন্ -----
কড়া রোদে খামকা কে
. ডুবলো কি চা
পুবকোণে দু’কোদাল এখ
কোদাল কি হাতে নেই ?
মাটিটুকু দাঁতে কাটি এ মো
নখে দাঁতে মাটি কাটি, ভ
মাটিকাটা প্রাণ আজ মাটি
কাঁদিসনে খোকাধন, ভাবি
আজ ত কেটেছি মাটি পু
বুকে পিঠে মাটি চাপে
হক্ মাটি মাপ দিতে প্রাণ
মাপদার ! মাপ দাও ও
নয়নজলের আমি নিমক
. প্রেমের লাগি দেশ ছেড়েছি,
. প্রিয়ার সাথে বেঁধেছি ভাই সু
. সুন্দরবনে বাস আমাদের, সু
. ভেড়ি বেঁধে নোনাপানি ঠেকা
. সুন্দরবনের চর গো, বন্ধু, নু
. তারি মাঝে মিঠে পানি সক
. ‘গেঁয়ো’র খুঁটি, ‘বাণী’র রুয়ো,
. উলুখড়ের ছাউনি চালে, উলু
. তারি তলে কেঁপে জ্বলে পিয়া
. বনে জ্বলে বুনো আগুন কালা-
. পিয়া করে আমার তরে শনি
. ‘সুন্দ্ রী’ গাছে মাচান বেঁধে
. দখিনহাওয়ায় নেবে জ্বলে দূ
সুন্দরবনের গান
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
রবিপ্রণাম
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
দিবা হয়ে আসে আবসান ;
উঠে বৈকালিকী স্তবগান |
কলকন্ঠ তুলে বনপাখি ?
ও- রবি দিবে না কভু ফাঁকি ?
আমাদের সে রবি যে নয় ;
ডুবিলে ত হবে না উদয় |