কবি কামিনী দেবীর কবিতা
*
দয়া
কবি শ্রীমতী কামিনী দেবী

দয়াশীল ব্যবহার, হয় যে প্রকার,
বলিতে বাসনা করে সতত আমার।
দয়ার সুযোগ্য পাত্র এই পাঁচ জন,
দুঃখী, তাপী, রোগী, মূর্খ, পাপপরায়ণ।
উন্নত করিতে ইচ্ছা, যদি হয় দেশ,
জ্ঞন বিতরণে যত্ন, করহ অশেষ।
দয়াবান হয়ে কর, জ্ঞান বিতরণ,
দানের প্রধান হয়, বিদ্যা মহাধন।
যে কিছু উন্নতি-শীল, হইয়াছে দেশ,
দয়াশীল ব্যক্তিদের উদ্যোগে অশেষ।
নানাস্থানে বিদ্যালয় হয়েছে স্থাপন।
নর নারী করিতেছে, বিদ্যা উপার্জ্জন।
রোগ উপষম হেতু ঔষধ সৃজন,
যাহাতে শরীর সুস্থ জুড়ায় জীবন।
বিদ্যালয় স্থাপনেতে বহু ফলোদয়,
বিদ্যালয় সহ স্থাপ, ভেষজ আলয়।
প্রতি জনপদে স্থাপ, বামা-বিদ্যালয়,
সম সুখ অধিকারী, সবে যাতে হয়।
সকলেই হয় সেই পিতার সন্তান,
সকলের প্রতি তাঁর করুণা সমানষ
অতএব ভাতৃগণ হয়ে একমত,
সবাকার হিত কাজে, সবে হও রত।
দেশের উন্নতি ইচ্ছা, যদি হয় মনে,
বিদ্যালয় সংস্থাপিত কর, স্থানে স্থানে।
অধিকাংশ স্থানে ইহা হইয়াছে বটে,
কত জন আছে কিন্তু অজ্ঞান সঙ্কটে।
কত লোক মূর্খ হয়ে, পশুমত রয়,
উপদেশ পাবে কোথা বিনা বিদ্যালয়?
কতলোক রোগে পঙ্গু, জড়াকারে রয়,
ঔষধ বিহনে সবে, জীবন হারায়।
অতএব বন্ধুগণ! স্থির করি মন,
ভাবিয়া দেখ না দুঃখে, আছে কতজন?
সমাজে বক্তৃতা কর, উপকার হেতু,
মানিবে কে বাক্যাবলী, বিনা জ্ঞান সেতু?
বঙ্গদেশ আমাদের, গৃহের স্বরূপ,
স্বগৃহের শ্রীতে কভু হওনা বিরূপ।
শ্রীবৃদ্ধি করিতে কল্প, করিলে নিশ্চয়
প্রতিস্থানে স্থাপ তরে, নানা বিদ্যালয়।
বিদ্যা বিনা নাহি হয়, জ্ঞানের উদয়,
জ্ঞান বিনা উপদেশ, বিফলেতে যায়।
সকলের মনে হলে জ্ঞানের উদয়,
সহজে সফল হবে সকল বিষয়।

.        *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ধন
কবি শ্রীমতী কামিনী দেবী

কেন মন অকারণ কর ধন ধন।
জান না যে সঙ্গে নাহি যাবে সেই ধন?
ভয়ঙ্কর মৃত্যু আসি গ্রাসিবে যখন।
কোথা রবে অট্টালিকা কোথা রবে ধন॥
ধনী লোক ধনে মত্ত দিবানিশি রয়।
পাপ কর্ম্ম করে সদা সঙ্কাকুল নয়॥
ধনী লোক মনে কভু সুখ নাহি পায়।
সর্ব্বদা উতলা মন পাছে ধন যায়॥
ধনী লোক করে আরো ধনের কামনা।
কিছুতে না পূর্ণ হয় মনের বাসনা॥
ধনে করে ধনী লোক কত অহঙ্কার।
মম তুল্য এজগতে কেবা আছে আর॥
ধর্ম্মের যে ভাব সেই কিছু নাহি জানে।
সৃষ্টিস্থিতিকর্ত্তা যিনি তাঁরে নাহি মানে॥
ধনে হয় ধর্ম্মনাশ শুন বলি মন।
অতেব ধনে কিছু নাহি প্রয়োজন।
ভাব সেই নিত্যধন যাতে হবে পার।
ওরে মন! ধন জন কিছু নহে সার॥

.        *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরিশ্রম
কবি শ্রীমতী কামিনী দেবী

শ্রম কর যদি তুমি চাও নিজ সুখ,
অলস হইলে পরে পাবে বড় দুখ ;
শ্রম বিনা ধন নাহি হয় উপার্জ্জন,
কত দুঃখ পায় সেই নাহি যার ধন ;
শ্রম করে শস্য লাভ করে কৃষিগণ,
তাহাতে আমরা করি জীবন ধারণ ;
মুকুতা রচিত যত বিবিধ ভূষণ,
উদ্যানের ফল ফুল সুন্দর কেমন ;
কাশ্মিরের শাল হয় কিবা মনোহর,
নৃপতি প্রাসাদ দেখ কত শোভাকর ;
মানব দেহের সার বিদ্যা মহাধন,
চমত্কার অট্টালিকা স্তম্ভ সুশোভন ;
অন্ন বস্ত্র আদি আর নানা অলঙ্কার,
ইহারা শ্রমের সাক্ষ্য দিতেছে অপার।
প্রয়োজন থালা ঘটি বাটী অতিশয় ;
বিনা পরিশ্রমে উহা কদাচ না হয় ;
শ্রমবলে ইংরাজেরা এদেশে আসিয়া,
আমাদের মাতৃভূমি নিয়েছে কাড়িয়া ;
শ্রমশীল বণিকেরা চড়ি জাহাজেতে,
নানাবিধ বস্তু আনে নানাদেশ হতে ;
যে কুশল হয় তাতে দেশের অশেষ,
না পারি বর্ণিতে তাহা করিয়া বিশেষ।
পরিশ্রমে শরীরের বৃদ্ধি হয় বল,
শ্রমহীন দেহ যায় হইয়া বিকল ;
বলা নাহি যায় এতে হয় যত সুখ,
অতএব শ্রমে কেহ হওনা বিমুখ॥

দেখ সবে মৌমাছিরা শ্রম করে কত,
সারাদিন ফুলে ফুলে ভ্রমে অবিরত ;
প্রভাতেতে গিয়ে তারা ফুলের বাগানে,
ফুলের উপরে বসে গুন গুন গানে ;
এক পুষ্প হতে বসে অন্য পুষ্পোপরে,
যদবধি ভানু থাকে গগন উপরে ;
এইরূপে সবে তারা ভ্রমে সারা দিন,
তথাপিও পরিশ্রমে নাহি হয় ক্ষীণ ;
সবে মিলে করে বাসা নামে মধুক্রম,
মানবের সাধ্যাতীত অতি মনোরম ;
মন দিয়া দেখ সবে মক্ষিকার কাজ,
ইহাতে কি তোমাদের নাহি হয় লাজ ;
ক্ষুদ্র প্রাণী মক্ষী হতে উপদেশ লও,
কেন সবে মিছামিছি সময় কাটাও?

.        *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর