চঞ্চলকুমার চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।     অথ সঙ বিধান      
২।     
দম্ভ   
৩।     
রাজকুমার      
৪।     
পলাতক       

      

 
*
অথ সঙ বিধান

যা আগে থেকেই ছেঁড়া
আঠা দাও টিসু করো জুড়বে না |
যা আগে থেকেই ছেঁড়া
তা দিয়ে ঘুড়ি উড়বে না |

যে সঙ তার গায়েই তো রঙ
আঁকাবাঁকা লতা কাটা, পাতা পাতা,
কত রঙ বেরঙ ঢেমনা ঢঙ---
সে বলে আজ পরব জামা |

যেখানে শুধুই ধূ ধূ কাশ
বাতাসে শব্দ তিতির তিতির ;
সেখানেই দেখ কত না ফিকির
তোমার জন্যে  আছোলা বাঁশ |

সবই তো বাঁধা শক্ত গেরোয়
তবুও কেন এত ভয়
ঝুলপো, গুঁফো, দামড়া গোঙায়ঃ
লাগে তাক, না লাগে তুক |

অভদ্রা বর্ষাকাল
হরিণী চাটে বাঘের ঘাল |
হে ভারতী, তোরেই কই
সময গুণে সবই সই ||


.                     ****************                                                    
উপরে


মিলনসাগর
*
দম্ভ             

এ কথা সবাই  জানে দম্ভ আছে মনে,
ওতপ্রোত শিরে শিরে | নিয়তই তাই
আয়োজন প্রহরের বৃথা অন্বেষণে
নির্বীজিত জীবনের ব্যর্থতা জানাই |
মনে হয় সময়ের  অন্তিম প্রয়াণে
মননের অভিযানে শবযাত্রী কোনো ;
দূর সম্ভবনা যত বারে বারে হানে---
বুঝি বা কালের পিছে বহিল এখনো |
তবু এই নিরক্ষর পত্র বর্ণহীন,
শূন্য প্রাসাদেই রহে পান্ডু শ্বেতকায় |
নির্গুণ ক্লীবের মৈত্রী প্রজননে ক্ষীণ,
প্রাক্তন বিস্মৃতিতলে কখন পালায় |
দেখি বসে ধায় কাল মহা আড়ম্বরে |
সুকৃতের নেই দায়,  মরি চরাচরে |



.            ****************                                                              
উপরে


মিলনসাগর
*
রাজকুমার

হে রাজকুমার ! উজ্জ্বল খর নভে
রাজ্যশাসন ও দিগ্বিজয়ের কালে
কেঁপেছে নগর অম্বুনিনাদী রবে,
মুন্ডনিপাত করেছো তালবেতালে |

রূপসীরা কত তব অলক্ত-পদে
বশীকরণের মায়াবী মন্ত্র প’ড়ে
সঁপেছে তোমাকে রতি-সুখ-সার মদে |
নারীমেদ-ভারে প্রাসাদ উঠেছে গ’ড়ে |

রমণীমোহন নবনীকান্ত, যেন
গোধূলি-লালিমা পড়েছে অধরে মুখে ;
রাজকবি যত বিরচি’ নান্দী, হেন
মণিকুট্টিম কাঁপায়েছে সুর-সুখে |

জানি না সে কোন রজনীর অবসানে---
(অমাত্যদের ষড়যন্ত্রের বিষে )
বারেক ফিরায়ে হৃত রাজ্যের পানে
অশ্বখুরের ধূলায় গিয়েছো মিশে |

হাত-বদলের ঘটা সে কী নির্মম !
নূতন পতাকা উড়েছে প্রাসাদচূড়ে !
ঋঞ্ঝাতাড়িত চ্যুত পত্রের সম
স্মরণ তোমার কখন গিয়েছে উড়ে |

তারপর এ কী ! বিধির অপার ছলে
দেখি যে তোমার তরণী বোঝাই ঘাটে |
টাকার দাপটে হরেক রকম কলে
জনগণমন উদ্বায়ু যত কাটে |

জলবায়ু মাটি আবার তোমার হাতে |
জনসম্পদে করো কোম্পানি ঠেসে |
শেয়ার-বাজার ‘তেজিমন্দি’র সাথে
গড়াগড়ি যায় তোমার পায়েতে এসে |


কত ভাবে ভোল দেখালে কুমার তবে |
মূলতুবি করো বেসাত গায়ের জোরে !
রচি’ ব্যুহজাল গোয়েন্দা ল’য়ে ভবে
রেখেছো ঘিরিয়া সুচির দুর্গ- ‘পরে |

আজ অবশেষে জনগণে মিশি নেতা |
এসেমব্লি হল জমাট করো কি সাধে?
ক্রেতা-বিক্রেতা তুমিই তাদের সেথা |
রক্তের দাগ ঢাকবে আর্তনাদে |


.              ****************                                                            
উপরে


মিলনসাগর
*
পলাতক

জীবনের মধ্যপথে যাত্রাকালে বিষণ্ণ শরীরে
দিশাহারা হয়ে যাই বিপদসঙ্কুল বনপথে ;
পঙ্কিল নগর ছাড়ি হেথা এই অরণ্যের ভীড়ে
ঊর্ধ্বগ যাত্রায় যতি আরবার টানি কোনোমতে |

আবৃত্ত আমার চক্ষু ; ইন্দ্রিয়ের স্লথ আবেদনে
স্বপ্ন ও জাগ্রত কাল উভয়েই ছায়াতপ সম
যুগপৎ সম্মুখেতে ভেসে যায় ৎকিবা অকারণে |
প্রাক্তন ও বর্তমান আমার কাছে সমান নির্মম |

দেখেছি নগরচূড়ে দূর হ'তে সন্ধ্যার প্রাসাদে
কারাগার, হাসপাতাল, বেশ্যালয়, আরো কি নরক
উদ্গতির নিরুপায়ে নিরঙ্কুশ প্রবল প্রমাদে
ছড়ার নগর ঘিরে সরীসৃপ অসংখ্য সড়ক |

অথবা গণিকা-বক্ষে কৃত্রিম সুগন্ধে বা চুম্বনে
লাভ করি সে নরকে নিরুপাখ্য অজ-পরমায়ু ;
উষ্ণ শরীরের ঘ্রাণে স্বপ্নে দেখি সমুদ্র স্বননে
সোনার তরীরে বুঝি নিয়ে আসে দক্ষিণের বায়ু ;

সেই মন প্রভাতেই পুনরায় কেটেছে দ্বিধায় |
শূণ্য দেহ, অনুতপ্ত, ইন্দ্রিয়ের পরম নির্বাণ |
তারাখচিত রাত্রি তবু ডাকে মর-অলকায়
দুর্মর অভ্যাসে দেহ বিনির্মোক দিবা-অবসানে |

ক্ষণিক বিরতি কালে দৃশ্যপট দেখি দ্বিখণ্ডিত |
লোল দৃষ্টি, হত জানু, চিত্ত তাই নির্বেদে বিহ্বল |
পৃথিবীর কণাটুকু এ জীবনে নয় বিজড়িত |
স্বৈরাচারী ভঙ্গুপ্রাণ নিরাশ্রয়ে কাঁপে পদতল |

---ঐ তো পাহাড়চূড়া, ঐটুকু পার হয়ে গেলে---
আনন্দের উত্স সেথা, নির্লিপ্ত যে গ্রহদের টানে ;
মহামৌনে চিরগুপ্ত, ভাষা তার অন্যদিকে মেলে |
তাহারে দেখিব যারে চিত্ত চাহে, চক্ষু নাহি জানে |

প্রাক্তন পাপের ভারে আজও বুঝি হবে পরাজয় |
ভ্রান্তিশেষে চেতনাও যাত্রাপথে নিতান্ত অক্ষম ;
অনির্দিষ্ট পদচিহ্ন সম্মুখেতে এনেছে সংশয় |
সুমেরুর চূড়ে দেখি অনুদ্দেশ্য মৃত্যুর আগম |


.              ****************                                                            
উপরে


মিলনসাগর