কবি মহম্মদ শামসুল আবেদীন-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
ঝরাফুল

বৃন্তের ফুল যদি যায় গো ঝরে ;
নিয়তি বিধানে আছে ফুল কি করে ?
ঝরতে যে হবে তাকে নয় তার ভূল ;
ফুলের কি দোষ বলো যদি ঝরে ফুল |
পূজোর ডালিতে যদি দেয় সেই ফুল ;
দেবতা নিবে না অর্ঘ্য হয়ে যাবে ভূল |
ফেলিয়া দিতে হবে ডালা ভরা ফুল ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
ঝরা ফুলে মালা গেঁথে বাসর সাজায় ;
সেই মালা পড়ে রবে পায়ের ধূলায় |
ঝরা ফুলে মালা গাঁথা হয়ে যাবে ভূল ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
প্রেমের আঙিনা যদি ফুলে ফুলে ছায় ;
সমাজ ঢালিয়া কালি দিবে তার গায় |
সমাজের পায়ে শোভা হবে সেই ফুল ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
রূপ আছে গন্ধ আছে ছড়ায়ে সৌরভ ;
সকলেই চায় তবু নেই কো গৌরব |
বাগান বাড়ীর শোভা এই তার ভূল  ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
পতি ধন বড় ধন মিলে সকলের ;
ঝরা ফুলে নাহি মিলে সে যে বিকেলের |
ঘর চাওয়া হবে না তার হবে ভূল ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
বড় বড় নেতাদের বড় বড় গুণ ;
ঝরা ফুলে রাজনীতি ভোট শত গুণ |
কাজ শেষে ছুঁড়ে দেয় পায়ের যে ধূল ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
নখে ছেঁড়া ফুল যদি হয় তার বধূ ;
ঝরা ফুলে লুটে নেয় যত তার মধু |
মধুকরে মধু পানে নেই কোন ভূল ;
ফুলের কি দোষ বলো কি করে সে ফুল ?
আমাদের মত সব অভাগার ঘরে ;
ঝরা ফুল ঝরে শুধু অভাবের তরে |
সমাজ আর আমরা যত করি ভূল ;
ফুলের কি দোষ বলো ঝরে শুধু ফুল ||

০৮/০৪/২০০৫


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
বর্তমানের কবি

বসন্তের মাঠে মাঠে যখন
চৈতি শ্যামলি রূপের পরশ
পূর্বাকাশে সোনালি লালের স্তর
শিমূল পলাশের গন্ধহীন সৌরভে
দিগন্ত যকন আমোদিত :
এমনি এক শান্ত
এবং সোনা ঝরা সকালে
সাদা ডানায় সোনা রোদের রঙ মেখে
এক ঝাঁক বনের হাঁস
উড়ে গেল ওপারের আকাশে |
শাল বনের নির্জন পথ
শিশিরে ভেজা নরম গালিচায়
তুমি এলে |
অথবা
মৃদু মন্দ সমীরণে যখন আপন মনে
দুলতে থাকে সন্ধ্যা মালতির কুঁড়ি
পশ্চিমাকাশে রক্ত রাগ ছড়িয়ে
সূর্য অস্তমিত ;
গোধূলির ঐ পূণ্য লগ্নে
রক্ত রাঙা ছড়ানো আবীরের মধ্য দিয়ে
ভূবন মোহিনী রূপে
ঝর্ণার ছলে তুমি এলে |
কিন্তু লিখতে পারিনা কবিতা,
পারি না কাল্পনিক ক্যানভাসে
তোমার ছবি আঁকতে |
ঘাম ঝরা দুপুর
গাঁইতি শাবলের ঝণ ঝন
আর্তরব নিপীড়িত শোষিতের
রক্তে রাঙা মাটি |
তারই মাঝে
রেশনের কাঁকরমণি  চালের মত
সুর নেই স্বর নেই কর্কশ ও নিরস
অথচ বাস্তব কবিতা ;
কুলি কামিনের প্রেম বিরহ
যন্ত্রনা বাসনার তুলি দিয়ে আঁকি,
লিখি হতাশা হাহাকার
যা বর্তমানের পঞ্জিকা ;
কারণ আমি বর্তমানের কবি !!   

.                                        ১২ ই শ্রাবণ ১৩৯৯

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
তুমি এলে তাই


তুমি এলে তাই প্রিয়া
.        সুগন্ধ বাতাসে ;
তাই বুঝি এতো তারা
.        হাসে তার আকাশে |
কোকিলার কুহু কুহু
.        ঝর্ণার কলতান  ;
মিলে মিশে স্বরলিপি
.        এক সাথে গায় গান |
এক মুঠো রৌদ্দুর
.        সোনালি বর্ণ ;
ঝিকি মিকি করে পাতা
.        যেন খাঁটি স্বর্ণ |
কচু পাতে সকালে
.        শিশিরের বিন্দু ;
বিকরিত মোতি যেন
.        সিঞ্চনে সিন্ধু |
ডালে ডালে ফুল গুলি
.        ছড়ায়ে সৌরভ ;
দুলে দুলে জপে মালা
.        এ তাদের গৌরব |
তার থেকে সমীরণ
.        নিয়ে আসে বারতা ;
পদচুমে দিয়ে যায়
.        প্রিয়া তুমি এলে তা |
হৃদয়ের কোণে কোণে
.        সুরেদের গুঞ্জণ ;
খেয়ালের আলাপে
.        নেচে নেচে ফিরে মন |
রামধনু রঙে রাঙি
.        হৃদয়ের আঙিনা ;
কুঁড়ি থেকে ফোটে ফুল
.        সুরভিত আঙিনা |
নেচে নেচে ফিরে যেথা
.        রিম ঝিম বৃষ্টি ;
প্রেম ময় সাগরে
.        লাগে বড় মিষ্টি |
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে
.        চলে যাই স্বর্গ ;
যেথা শুধু প্রেম আছে
.        যা মোর গর্ব |
কানে বাজে মাদলের
.        মাতোয়ালী দুম দুম ;
বাঁশরীর বিলাপে
.        মুদে আঁখি নাহি ঘুম |
সূরা আর সাকী মিলে
.        সুরে সুরে একাকার ;
তুমি এলে তাই প্রিয়া
.        হৃদ আজ বেকারার ||

.                            ১৪ই শ্রাবণ ১৪০৪,  ইং ৩০-০৭-১৯৯৭

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
প্রার্থনা

হৃদয়ের সব কালো মুছে দাও প্রভূ ;
জ্বেলে দাও সব আলো নাহি ডরি কভু |
সোজা পথে চলি যেন হয় না কো ভূল ;
সব ভালো দিয়ে গড়ি পাথেয় মাশুল |
সকালের সমিরণ বহে যেন মনে ;
ঝরে যেন ঝরণার নেচে ফেরা বনে |
সলিল সমাধি হয় সব অহংকার ;
নত শিরে করি নতি করে পারাপার |
এ জগতে সকলেই কেহ নহে কার ;
আমি যেন হতে পারি প্রিয় সবাকার |
দুঃস্থ দুঃখী জনে দিয়ে ভালোবাসা ;
হাতে হাত ধরে চলি মিটে যেন আশা |
হতে নাহি চাহি প্রভূ নেতা ও মহান ;
ছোট হয়ে করি সেবা করো মোরে দান |
তোমার করুণা হতে দাও প্রভূ আলো ;
মোর হৃদে তাই দিয়ে দ্বীপ গুলো জ্বালো |
শেষের শিয়রে যেন জ্বলে অনির্বান ;
পাই যেন তোম দেখা করো মোরে দান ||

.                                              ০৩/০৩/২০০৫


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
ভালো লাগে

প্রেয়সীর সাথে ভাদরেও ভালো
.        প্রিয়তমের চুম্বন ;
পড়শি-বৌ যদি ট্যারা চোখে হাসে
.        বধূর মুখে চন্দন |
তেল আদা নুনে ছোলা ভাজা মুড়ি
.        পেয়াজ লঙ্কা তাতে ;
বড় ভালো লাগে বউয়ের ঠেঙ্গানো
.        যদি তিন বন্ধু থাকে |
কিল চড় লাথি ভালো লাগে যদি
.        ষোড়শি সুন্দরী হয় ;
ছুরি চালিয়েও মৃদু যদি হাসে
.        তবে নেই কোন ভয় |
সহ পাঠিনীর প্রেম চিঠি নিতে
.        ঠেঙ্গানি খাওয়া ভালো ;
যদি প্রফেসর অথবা নেতার
.        তনয়া হয় কালো |
বধূ ভালো লাগে গোধূলি বেলায়
.        পশ্চিমাকাশে যবে লাল ;
লাল পেড়ে শাড়ী বড় এক টিপ
.        জড়ানো ঘোমটা ঢাল |
পা দুটি গুটান এলো কেশে বসে
.        যদি চাহনি উদাস ;
ভর দিয়ে হাতে জানালার পাশে
.        বা ছাদে বসে লয় শ্বাস |
আরো ভালো লাগে বধূ যবে হয়
.        দুগ্ধ দানে রতা ;
পা দুটি ছড়ান আলুথালু বেস
.        চাহনি শিশুরে সদা |
যদি কোন নারী কাঁচা তেতুল নুনে
.        রসনা যতনে রত ;
জিভে আসে জল তবু নিরুপায়
.        করি রসনা সংযত |
পরের আলোতে মুখ টিপে হাসি
.        নিজের আঘাতে লাগে ;
আমার দশটি সেই মত হয়
.        অপরের ভালো লাগে ||

.                          ইং ০৮/০৩/২০০৫, ২৪ শে ফাল্গুণ ১৪১১


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
সেই  ‘মা’কে

অসহায় এক শিশু
হাত পা নেড়ে চেয়ে থাকে
তার মায়ের দিকে ;
ট্যাঁ ট্যাঁ কাঁদতে থাকে খিদের জ্বালায় ;
জন্ম গ্রহণ করেই সে চিনতে পারে
তার মা কে |
যে মায়ের গর্ভে দশ মাস দশ দিন থেকে
লাথি ঘুষি মেরে , রক্ত চুষে
পূর্ণাঙ্গ শিশু রূপে
কঠিন যন্ত্রণা দিয়ে
জন্ম লয় একদিন |
সেই মা যন্ত্রণা উপেক্ষা করে
রক্ত শোধন কোষ থেকে আগত,
পুঞ্জিভূত দুগ্ধ পান করায়
পরম মমতা ভরে |
সেই মা ব্যাথা বেদনার পৃথিবীতে
ঘর পরিবার, কর্তব্য অধিকারে
নিয়োজিত থেকে,
স্ব  স্ব কর্মে লিপ্ত থেকে,
পরম আদরে অসহায় শিশুর
পরিচর্য্যায় দিনাতিপাত করে |
যেই মা শিশুকে আলো দেখায়,
বলতে শেখায়, চলতে শেখায়,
চেনায় নতুন পৃথিবীকে |
নিজের সমস্ত রক্ত কণিকায়
গঠিত শিশুকে প্রাণের স্পর্শ দিয়ে,
মমতা দিয়ে,  স্নেহ দিয়ে
উজার করা ভালোবাসা দিয়ে
গড়ে তোলে পূর্ণাঙ্গ মানুষ রূপে |
সেই মাকে কেমন করে
ভূলতে পারি ?
কেমন  করে ভূলে যায় কেউ
এই ধরণীর ধূলোয়
নিজের শক্তি ফিরে পেয়ে ?
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের মাঝে ডুব দিয়ে
সেই সন্তান চিনতে পারেনা
কেমন করে ; তার সেই মাকে ?
তবুও অভিশাপ নয়
ক্ষমা রয় তাঁর হৃদয়ে ;
কোটি কোটি প্রণাম আমার
.        সেই “মা” কে ||

.                             ২৫ শে আষাঢ় ১৪১২ ইং, ১০-০৭-২০০৫

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
যদি হয় দেখা

যদি হয় দেখা শিউলির বনে
.        শিউলি ফুলের থোকা ;
মালা গেঁথে আমি তোময় পড়াব
.        সাজাব তোমার খোঁপা |
গোধূলি  বেলায় যদি হয় দেখা
.        পড়াব তোমায় টিপ ;
লাল রঙ ছানি আলতা পড়াব
.         ধূসর মেঘের ক্লিপ |
গোলাপের বনে যদি হয় দেখা
.        পাপড়ি ছাড়িয়ে নিব ;
তোমার পাপড়ি রাঙিয়ে আমার
.        ঠোঁটের পরশ দিব |
শত গোলাপের নির্যাস  কোরে
.        ছড়াব তোমার গায় ;
হাজার ফুলের বাসর সাজাব
.        গোলাপি ফুলের নায় |
জোছনার রাতে যদি হয় দেখা
.        জোছনা আনিব ছানি ;
মুখ চন্দ্রিমায় দিয়ে দিব ফোঁটা
.        দুধে আলতায় আনি |
হরিণী  নয়নে কাজল পড়াব
.        রাতে যদি হয় দেখা ;
কাহারো নজর লাগে না যেন
.        চিবুকে পড়াব রেখা |
ঈশানের মেঘ উঠবে যখন
.        আকাশ জুড়ে যে বেশ ;
যদি হয় দেখা বেঁধে দিব আমি
.        মেঘের বরণ কেশ |
রজনী গন্ধা বেলফুল দিয়ে
.        গাঁথিয়া পড়াব হার ;
ফুলের বাগানে যদি হয় দেখা
.        হবে মোর অভিসার |
ভোরের আলোয় স্নিগ্ধ সকাল
.        সূর্য উঠবে লাল ;
লাল পেড়ে শাড়ী তোমায় পড়াব
.        যদি হয় দেখা কাল |
মিষ্টি আলোয় স্নান করাব
.        সাগর সৈকতে বসে ;
সাগরের ঢেউ গান যে শোনাবে
.        ভোরের বাতাসে এসে |
পূর্ণিমা রাতে কৌমুদি হাসে
.        দেখব তেমন হাসি ;
দোয়েল পাপিয়া শিষ দিয়ে যায়
.        শুন্ ব তেমন বাঁশি |
ঝর্ণা যেমন ছন্দে নাচে
.        উন্মুক্ত বসন ধারা ;
যদি হয় দেখা পূর্ণিমা রাতে
.        মুক্ত মিলনে হারা |
তাই বসে আছি তোমা পানে চেয়ে
.        কখন পাব যে দেখা ;
মোহিনী ভূবনে মধুচন্দ্রিমায়
.        কভূ যদি হয় দেখা ||

.                                 ১৮ই চৈত্র, ইং ০১-০৪-২০০৫

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
খুঁজেছি তোমায়


খুঁজেছি তোমায় সাগরে জাহাজে
.        নদী পাহাড়ের গায় ;
মরু  প্রান্তরে  মরুদ্যানের
.        খেজুর গাছের ছায় |
খুঁজেছি তোমায় সুন্দর বনে
.        সুদূর আফ্রিকায় ;
মাউন্ট আবু  এভারেষ্ট- ও
.        লাল পাথরের গাঁয় |
খুঁজেছি তোমায় সাগর সৈকতে
.        ফ্রান্স,  আমেরিকায় ;
রাতের প্যারিসে  ককটেল ক্লাবে
.        সবুজ বাঙলা গাঁয় |
খুঁজেছি তোমায় চীনের প্রাচীরে
.        ব-দ্বীপের মোহনায় ;
সূর্য স্নানরতা পরীদের মাঝে
.        গোপীনির যমুনায় |
গঙ্গার ঘাটে   ইডেনের মাঠে
.        মনুমেন্টের  চূড়ায় ;
লন্ডন তটে,   বেলুড়ের মঠে
.        আমি খুঁজেছি তোমায় |
খুঁজেছি তোমায় ইউরোপ জুড়ে
.        কোথাও পাইনি দেখা :
সুমেরু কুমেরু  গ্রীনল্যান্ডে
.        ধরার বিষুবরেখা ||
খুঁজেছি তোমায় পালিকা বাজারে
.        শাহী লাল কেল্লায় ;
জামা মসজিদে  মিনারে মিনারে
.        তোমার ছোট্ট গাঁয় |
খুঁজেছি তোমায় মুঘল গার্ডেনে
.        আবু ধাবি কানাডায় ;
তাজমহল ও আগ্রা দূর্গে
.        সোনালি বনানী ছায় |
খুঁজেছি তোমায় ব্রিটেন প্যালেসে,
.        কুতুব মিনার গায় ;
শাহী মহলের ইতিহাস লেখা
.        লাল পাথরের গায় |
খুঁজেছি তোমায় হাজার দুয়ারে
.        আলেয়ার কান্নায় ;
লুত্ফুন্নেসা বেগম কবরে
.        সিরাজের বাঙলায় |
খুঁজেছি তোমায় প্রাচীন মিশরে
.        পিরামিডের গায় ;
যুগের মিছিলে কলকাতা রোডে
.        সকাল সন্ধ্যা ধায় |
খুঁজেছি তোমায় ত্রিভূবন ঘুরে
.        কোথাও পাইনি দেখা ;
আমার মাঝেই লুকিয়ে ছিলে
.        হৃদয়ে রয়েছে লেখা  

.                             ১৩ই চৈত্র ১৪১১, ইং ২৭-০৩-২০০৫

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
তুমি ছিলে তাই

তুমি ছিলে তাই অশনি সংকেত
.        আসেনি আমার ঘরে ;
সুনামির চোটে ভাসিয়া যাইনি
.        যাইনি আমরা মরে |
তুমি ছিলে তাই ভূমিকম্পে
.        ঘরটি যায়নি ধ্বসে,
গোধরা কান্ডে, গুজরাট কান্ডে,
.        রয়েছি সুহালে বসে |
তুমি ছিলে তাই বাগদাদে বসে
.        বোমার আঘাত খাইনি ;
মার্কিন সেনা খুঁচিয়ে  খুঁচিয়ে
.        বেয়নেটে ঘা মারেনি |
কাবুলে কাবুলে ভূতের নাচন
.        নাচেনি আমার ঘরে ;
ঘরের আব্রু ঘরেই ছিলো
.        সেনারা নেয়নি কেড়ে |
তুমি ছিলে তাই শিয়া সুন্নির
.        লড়াইতে মরিনি কেউ ;
তামিল নাড়ুতে আন্দামান দ্বীপে
.        আসেনি বিশাল ঢেউ |
তুমি ছিলে তাই কারগিল যুদ্ধে
.        আমরা গিয়েছি বেঁচে ;
হাজার কফিন কিনেছে জর্জ
.        বীর সেনাদের বেচে |
তুমি ছিলে তাই পুড়িয়া যাইনি
.        ধ্বংস ট্রেড সেন্টার ;
ইতিহাস বলে এই যে প্রথম
.        আমেরিকা খেলো মার  |
মার্কিনের কালা তাই এতো জ্বালা
.        ঘটনা ভয়ঙ্কর ;
কালা দিবস এগার তারিখ
.        মাস সেপ্টেম্বর |
ইতিহাসের কালো  পাতায় রবে
.        কলঙ্ক বদনাম ;
দেশের সংসদ আতঙ্কবাদী
.        উড়াবে সংবিধান |
তুমি ছিলে তাই বন্দুকের গুলি
.        লাগেনি আমার গায় ;
আতঙ্কবাদী মেরে শহীদ জোয়ান
.        অমর শহীদ হায় |
তুমি ছিলে তাই চিনতে পারেনি
.        ইজরায়েলি সৈনিক ;
ফিলিস্তিনি বলে বন্দি করেনি
.        ছিলাম যে নির্ভিক |
পোয্য পুত্র ঐ ইজরায়েল
.        আমেরিকার কাফন ;
ঢাকবে সেদিন যেমন দেয়নি
.        আরাফাতের দাফন |
তুমি ছিলে তাই আজও হয়নি
.        চাওয়া তোমার কাছে ;
হৃদয় থেকে আমার আমিতে
.        তুমি চলে যাও পাছে |
তুমি ছিলে তাই বলাও হয় নি
.        তুমি যে কী, কে তোমার;
তুমি যে আত্মা, আমার জীবন
.        আমার অহংকার ||

.                                  ০৯/০৪/২০০৫, ২৬ শে চৈত্র


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
শাহ্ লা ( মৃগনয়না )

শাহ্ লার হাসি ভূবন মোহিনী
.        হরণ করে যে মন :
ঠোঁট জোড়া তাই আলগায় রয়
.        চঞ্চলা রয় তন্ |
মৃগ নাভি তাই খোশবু ছড়ায়
.        গভীর বনেতে রয় ;
ছোট্ট কপালে পল্লব ছায়
.        মৃগ নয়না যে চায় |
কাজল কালিতে রূপ রেখা টানা
.        ঘন কালো তার বল্ :
শ্বেত পদ্মে যেন কালো ভ্রমর
.        করছে যে কল্ কল্ |
বৈশাখ মাসে শ্রাবণ আসিলে
.        যদি না ঝরে গো জল ;
হরিণের চোখে কাজল কালিতে
.        করে শুধু টল্ টল্  |
হাতের কাঁকণ কব্জি জোড়ায়
.        রিনি রিনি রিনি বাজে ;
কোমল তরুণী চঞ্চল রয়
.        তাহার সকল কাজে |
গোলাপের কলি পাপড়ি জোড়ায়
.        আসে যবে শিহরণ ;
কলি থেকে যেন প্রস্ফুটিত এক
.        পূর্ণ গোলাপি তন্ |
দুই নয়নের মাঝখানে সদা
.        করে তার ঢিপ ঢিপ্ |
সবুজ ফুলের জড়ানো আঁচলে
.        মাথাটি যখন রয় ;
মৃগ নয়নার আনত নয়নে
.        অপরূপ শোভা ছায় |
তন্বী শ্যামার কোমল তনুতে
.        নির্মল বায়ু বয় ;
যেন পবিত্র অপ্সরী এক
.        তপোমনে তন্ময় |
হাসির আঁচলে নয়নাভিরাম
.        ফুলকলি যবে এলো ;
মোহময়ী রাতে ঝরে ছিল যেন
.        ঝরণার সেই আলো |
অপরূপা শোভে শোভিত ছিল যে
.        আকাশের তারা দিয়ে ;
গগনে গগনে নেচে ছিল পরী
.        শাহ্ লাকে তারা নিয়ে |
তাইতো তন্বী কোমল তনুতে
.        আজও হয় শিহরণ ;
কবে হবে শুভ মৃগনয়নার
.        পরশ ও দরশন ||

.                                ১৯ শে মাঘ,১৪১৫, ইং ০২-০২-২০০৭

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
অভিষেক

দিল্লীর মসনদে অভিষেক হবে ;
প্রজাগণ জনে জনে জমায়েত সবে |
বসরার গোলাপে ফুলদানি সাজা ;
সূরা আর সাকী নিয়ে বসে ভাবী রাজা |
জাপানী গালিচায় ঢাকা রয় মেঝে ;
সুরের লহরী বয় ঊর্বশীর নাচে |
ঝাড়বাতি আলো ঝলমল দরবার ;
দেউলিয়া দেউড়িতে শুধু অন্ধকার |
অভিষেক লাগি যেই যুবরাজ সাজে ;
নাহি নাহি  ধ্বনি উঠে প্রজাদের মাঝে |
রাম কহে আমি রাজা আমি পুঁজিপতি ;
আমার অন্নে পালে করো সবে নতি |
শ্যাম কহে নাহি নাহি আমি রাজা হব ;
গ্রামে গ্রামে সোনা দিয়ে ঘর মুড়ে দেব |
যদু মধু উঁচু বলে আমি গরীব পিতা ;
সবে চায় রাজা হতে নহে কেউ শ্রোতা |
ঢুলু ঢুলু আঁখি নিয়ে রয় যুবরাজ ;
ঠোঁট দুই কেঁপে উঠে বাক্য নাই আজ |
নেতা নাহি মানে সবে একি এক কান্ড ;
জননেতা জনে জনে করে সব ভন্ড |
রাম শ্যাম যদু মধু করে হাতাহাতি ;
অভিষেক লয়ে সবে বিবাদে রয় মাতি |
দল বদ্ধ মৌমাছি পান করে মধু ;
কুকুরের ভাগ্যে রয় এঁটো কাঁটা শুধু |
কোথা হতে এলো বীর সৈনিক মাড়োয়ান ;
এসে লাগায় বক্সিং আর বোমাপাত ;
রাম শ্যাম যদু মধু কুপোকাত |
সবে হাসে মনে দেখে অপরের দশা ;
বিদেশীর চরণে দিয়ে তার মাথা |
মসনদ ছেড়ে যুবরাজ কহে “বেশ
এসো বীর মাড়োয়ান অভিষেক করি শেষ “ |


.                                                  ১৭ই চৈত্র, ১৩৯৩


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
কান্না যাদের সাথী

বর্ষায় অমাণিশার একটা রাত
.        কালো গভীর কালো
সাত দিন ধরে একটানা বৃষ্টি
.        চলছে তো চলছেই
.        বন্ধের নাম নেই ;
বাউরি পাড়ার আঁটো সাঁটো গলি
.        এক হাঁটু কাঁদা,
নিশুতি নিঝুম পথ নির্জন |
মাঝে মাঝে কুকুরের কান্না
.        বুকের হাপড়ে
আর একটু শীতল
.        স্রোত বয়ে দিচ্ছে |
রাত তখন দশটা
একজন মদ্যপ
.        পড়ছে উঠছে ;
কর্দমাক্ত শরীর টাকে
.        টেনে হিচড়ে চলছে
মুখে তার সম্রাটের ভাষণ |
টিমটিমে আলো আঁধারিতে
.        কুঁই কুঁই করছে
তিনটে ছোট ছোট মেয়ে ;
কোলের টা মুখ লাগিয়ে
সাত মাসের পেটেরটা
না খেতে পেয়ে
.        বার বার মোচড় দিচ্ছে |
মাঝে মাঝে ককিয়ে উঠছে
যার সাত কূলে কেউ নেই
এদিক ওদিক দুদিকে |
সম্রাটের কুঁড়ের মহলে
জলে কাদায় মাখামাখি
তারই একপাশে চারটি প্রাণ ;
নড়ে চড়ে বসল সম্রাটের আগমনে |
“রান্না হয়নি” ?
চুলের মুঠি ধরে দে দুমাদুম,
চক্ষু রক্তাভ
পেটের পাঁজরে লাথি
বউটা ব্যাথায় গড়াগড়ি |
সম্রাটের নেই ভ্রক্ষেপ
আধভেজা বিছানায় পড়েই ঘুম,
রাত চলল---
একদিন, তিনদিন, কতদিন
.        একই ধারায় |
বৃষ্টি থেমে গেছে,
.        এক ঝকঝকে সকালে
সকলে দেখল পাশের পুকুরে
বউটার লাশ উপুর হয়ে ভাসছে ;
এলো পুলিশ, নেতা অভিনেতা
.        চলল ভাষণ,
লাশ গেল মর্গে, মদ্যপ জেলে ;
তারপর চুপচাপ,
শান্তিতে গেল সকলে নিজের ঘরে |
কেউ তাকাল না
.        তিনটে মেয়ের দিকে
.        কান্না যাদের সাথী ;
.        ভিক্ষে যাদের পথ ;
.        আর নিশুতি রাত !
.        বৃষ্টি এলো ঝম ঝমিয়ে !

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
ভাবতে অবাক লাগে

আমাদের ধরা ফলে ফুলে ভরা
.                      নতুন জীবনে জাগে,
নতুন প্রজন্ম তুমি তাতে নেই
.                      ভাবতে অবাক লাগে |
বড়বাজার ও শিয়ালদহে
.                      জ্যাম আজকে হয়নি,
মনুমেন্ট মাঠে কলকাতা পথে
.                      মিছিল আজ যায়নি |
ধর্মতলায় অধর্ম হয়নি
.                      গুন্ডা মারেনি রাগে,
সোনাগাছিতে গণিকা ছিল না
.                        ভাবতে অবাক লাগে |
আমেরিকা সৈন্য পেরে তার ঘরে
.                        অর্থে পড়েছে টান,
ব্রিটেন তাদের সঙ্গ ছেড়েছে
.                      থাকে না বুশের মান |
পুলিশ আজকে লয় না ঘুস
.                       বদমাস সব ভাগে,
শহরে কোথাও হয়নি যে খুন
.                       ভাবতে অবাক লাগে |
অট্টালিকায় সাজানো বাগান
.                       মোবাইল নাই ঘরে,
মোটর গাড়িতে সোনিয়া গান্ধী
.                       পাকিস্থান থেকে ফেরে |
কোকিল আজকে গায়নি যে গান
.                       বসন্ত অনুরাগে,
মধুকর মধু করেনি যে পান
.                       ভাবতে অবাক লাগে |
ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন
.                       এক রাষ্ট্র গড়েছে,
ভ্রাতৃ প্রেমের অবাধ মিলন
.                       নজির তারা রেখেছে |
গুজরাত আজ গলায় মিলেছে
.                        ভাই ভাই অনুরাগে,
মোদির ইস্তাফা কংগ্রেস রাজ
.                       ভাবতে অবাক লাগে |
রাশিয়া প্যারিসে উলঙ্গ নৃত্য
.                        সূর্য স্নান করেনি,
মুম্বাই শটে জামা ঢাকা ছিল
.                        নারী হরণ হয়নি |
পশ্চিমী ছোঁয়া মুম্বাই ক্লাবে
.                        পূবের হাওয়া লাগে,
ধ্রুপদ ঠুংরি নৃত্য করে যে
.                        ভাবতে অবাক লাগে |
ভারতের সাথে পাকিস্তান মিশে
.                        একাকার হয়ে যাবে,
একই প্রেমের গাহি জয়গান
.                        ভারতবর্ষ হয়ে রবে |
দাঙ্গা ফ্যাসাদ শেষ হয়ে যাবে
.                        মানুষের নেতা জাগে,
গুন্ডানীতির রাজনীতি শেষ
.                        ভাবতে অবাক লাগে |
বিশাল আকাশ আমাদের ছাদ
.                        পৃথিবী একটি ঘর,
তার মাঝে মোরা বসবাস করি
.                         যত নারী আর নর |
আজও বেনিয়া পাপীরে তাড়াতে
.                         নেতাজী রক্ত মাগে,
স্বাধীন ভারত গড়বে আবার
.                        ভাবতে অবাক লাগে !!

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
মুখোশের অন্তরালে

ভাবের প্রকাশে প্রতিভার উদয়
সমাজে স্বীকৃতি’   যশ প্রতিষ্ঠা
অর্থ, মান, সভ্যতার বিজয় |
.          স্বর্ণ শিখরে
.          অকাতরে
ধাপে ধাপে সৃজিত পদের আলয় ||
দেশে দেশান্তরে, পৃথিবী জনপদ
আভূমি কুর্ণিশে ব্যস্ত
দর্শনে হুটোপুটি উপেক্ষা বিপদ |
.        পর্দার আড়ালে
.        নাচ মহলে
সুরের তালে নাচে উর্বশী, সুরার অবয়ব ||
জনতার আদালতে যদি পড়ে ধরা
.        কুন্ঠা নেই ছদ্মবেশে
গেরুয়া অথবা রাজনীতির পোষাকে তাঁরা,
.        একই ভাবে
.        পোষাকি স্বভাবে
অজয়, অক্ষয় রয়, সঙ্গেব রয় সুরা ||
অহমিকা নাশে, অহিংসা যার বাণী
তাঁরই হিংসার  দাবানলে জ্বলে
প্রতিটি জনপদ, মুখোশে শূলপাণী |
.        নিকটে তাঁর
.        বিংশ সভ্যতার
উলঙ্গ নৃত্যেরত, শোষিতের রক্তের রাঙি ||
নাশ বিদেশী শিক্ষা, সমাজ, সংস্কার
সেজে কুলীন বাঙালী, খাও মত্স্য ভাত
নেংটী প’রে মূর্খ বাঙালী কর সুশিক্ষা পরিহার |
.        আইন যাঁর
.        শিক্ষা তাঁর
মিনিস্কার্ট পরিহীতা মেমেদের অবারিত দ্বার ||
ভিখারীর ঝুলি ছিনতাই, ভাইয়ের কোপে ভাই হারালে
.        জাতি ধর্ম শ্রেণী বিদ্বেষে
.        মজুরে মালিকে দ্বন্দ্বের বীজ রোয়ালে |
.                জেন সু -----নিশ্চয়
.                বিষে বিষক্ষয়
.        হাসেন প্রতিভাবান মুখোশের অন্তরালে ||



.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর