কবি মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই তা আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
*.
টাপোরি

আমি যে-কিনা পালটিমারা তিতিরের ছররা-খাওয়া আকাশে
জলে-ডোবা ফানুসপেট মোষের সিং থেকে জন্মেছিলুম
অলসচোখ দুপুরে পুঁতি-ঝলমলে নিমগাছটার তলায়
থাবা তুলতুলে আদর খাচ্ছিলুম ভুরু-ফুরফুরে শ্যামাঙ্গী গৌরীর
হাতখোঁপায় গোঁজা বৃষ্টির কাছে নতশির স্বর্ণচাঁপার কোলে

আমি যে-কিনা গ্রীল বসানো সকাল মেঠো দিগন্তে দাঁড়িয়ে
মাঁড়ানো ঘাসের পদচিহ্ন আঁকা শোকাচ্ছন্ন রোদের সোঁদাভূমিতে
শেষ গড়াগড়ির বিছানায় কাঠকীটের রাতঘ্যাঙোর শুনেছি
ভাবছিলুম উদ্দেশ্য প্রণোদিত হলেই খারাপ হতে যাবে কেন রে
পদ অলঙ্কৃত-করা গতরের ঘামে কি খাটুনির লবণকলা নেই

আমি যে-কিনা ডাহুককে জিজ্ঞেস করেছি প্রজাপতির ডানায় কি স্বাদ পাস
কানপটিতে খুরধ্বনি সেঁটে চিপকো খেলার তেজবরে কনের আদলে
জাহাজ-এড়ানো লাইটহাউসের আলোয় এক করাতদেঁতো হাঙর
যামিনী রায়ের আঁকা স্তনের কেরাণির সঙ্গে মহাকরণের খাঁচালিফ্ টে
হেঁকেছিলাম আরোহী-ফেলা পুংঘোড়ার লাগামছেঁড়া হ্রেষা

আমি যে-কিনা উচ্চিংরেরে স্বরলিপিতে গাওয়া ফুসফাসুরের গানে
বেড়াজালের হাজার যোনি মেলে ধরে রেখেছি   ইল্ শেঝাঁকের বর্ণালী
স্বদেশি আন্দোলনের লাশঝোলা স্মৃতির গাবগাছের পাশের ঝোপে
শুয়োপোকায় কুঁড়ে খাওয়া লেবুপাতার পারফিউমড কিনার বরাবর
পাথরকুচি কারখানা-মালিকের ঘাড়কামানো পাহাড় থেকে উড়ছি


.                        *************************           
কলকাতা
১ মার্চ ১৯৯০
.                                                                        
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
শূণ্য-গর্ভ

বাতাসবোনা ঘাসখেতে কানের লতিতে ধুলো মেখে
.              আমাকে ঘিরে যখন কেইটেশিশুরা নাচতে আরম্ভ করেছে
খসখসে অন্ধকারে উদোম তর্জনী তুলে
.              দেখলুম বৃষ্টির ফিসফিসানির মাঝে সূর্যওঠার রিনরিন বাজনা
এমন মৃদু রাইফেলের ফুটোয় দ্যাখা চারচৌকো জগত্সংসার
.              তাকে ঘিরে রেখেছে কাঁটার মুকুট পরা স্লোগানসিক্ত পাঁচিল


ওই বাগান এগিয়ে এসে আমায় আপ্যায়ন করার পর
.              ঘাসে ঘাসে পড়ে আছে কেউটে মা-বাপের নাচের নূপুর
আর কেউটে গৃহিনী বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন
.              আসল চাইলে তাও খুলে দেখাতে পারি


তাকিয়ে তাকিয়ে যে নারীর কৌমার্য নষ্ট করে দিয়েছিলুম
.              তারই মোচড়ানো হাতের অযৌন আলিঙ্গনে চোখে পড়ল
কাঁকড়ার আলোতরল বুকে আমার ঠিকুজির ছককাটা আছে
.              যা চুমুচিকন ঠোঁটে চেটে নিয়েছিলেন কেউটে গৃহবধূ


মেনুছাপানো শ্রাদ্ধবাসরের হাসিখুশি শোকে
.               নিজের গা থেকে ছায়া চেটে নিলে বাজারের ব্যামোকুকুর
আর তখনই বিস্কুটের গুঁড়ো-ছড়ানো মানচিত্রে
.               এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাচ্ছিল পিঁপড়ের সার     


.                        *************************           
আহমেদনগর
১১ অক্টোবর ১৯৯৭
.                                                                     
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
আমার জিগরি দোস্ত ফ্যাটুল চিঠিপাধ্যায়

দোষ-নির্দোষের মাঝে আটক আমার জিগরি দোস্ত ফ্যাটুল চিঠিপাধ্যায়
ওর হাঙরহাসি মুখ ভেঙচে বাছুরের চামড়ায় বাঁধানো ভাগবতে
হাত রেখে শপথ করেছিল যে, ফাঁকা চেয়ারগুলোয় যে-অদৃশ্য লোকেরা
বসে থাকে তাদের বলবে : "সময় ব্যাটাই বন্ধু সেজে ভয় দেখায়"

কাঠঠোকরার বাসার ফুটোয় ঝড়ের ঢভে চোখ রেখে বাঁশি বাজাচ্ছিল ফ্যাটুল
বেচারা বগলে ঘামের কাতুকুতু ছাড়া জীবনে আর কোনো আহ্লাদ ছিল না

ভালোবাসার লোকজন একে একে হাপিশ হবার পর নিয়তির তাড়া খেয়ে
ইতিহাসেই আছে উত্তোরণ জেনে বাদুররা যখন মাথা ঘিরে ঠাঠা হাসছে
নিজের কুকুরকানে শুনলো : "সময়ের মতন মানহানিকর বজ্জাত কেউ নেই"
যে-লোকই পাশে শুয়ে শ্বাস নিয়েছে সে-ই দেখি অসৎবাজ বেরিয়েছে

গ্রন্থকীটের পরাগমাখা রূপোলি আঙুল বুলিয়ে ভেবেছে শব্দই স্রেফ সার্বভৌম
বাদবাকি লোকেরা কান্না ফুরোবার অপেক্ষায় শবখাটের বাহক
বেচারা জানত না অর্কিড শব্দটা গ্রিক অর্কিস মানে অণ্ডকোষ থেকে এসেচে
তাই জগত্টাকে চিরকাল দেখেছে ছড়ানো নারকোলের মরচেপড়া চোখ মেলে     


.                        *************************           
আহমেদনগর
১১ অক্টোবর ১৯৯৭
.                                                                       
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা

আমি তো বলতে গেলে দাঁতনখের চাষ ছেড়ে সাজলুম প্লাইকাঠের নেতা
ছদ্মবেশ ধরলে দেখি আসল চেহারাখানা বেরিয়ে পড়ে রে
স্ববিরোধিতা ছাড়া কি আর অন্য কোনো মৌলিক কাজ আছে ? বল!

আমি তো বলতে গেলে জরাজীর্ণ আকাশজুড়ে    ঢিল্ লা-চিল বুড়ো
ভান করার ভান করি আর তা জীবন নামে চালাই
সাঁতারু-খেলানো জলে নৌকার ছইয়ে জীবন পেতেছি

আমি তো বলতে গেলে পাষাণ-রিদয় পাথর ভেঙে দেখি
বালি-ঝুরঝুর চাইনি মেলে কাছিম খেকো বেতোরুগির দল
জলে-ডোবা পাঙাশ মেয়ের ঠোঁটে ডানাউড়া হাসি খুঁজছে

আমি তো বলতে গেলে ঘৃতাহুতির ভ্যাজাল ধোঁয়ায় কেঁদে
সত্য বানাই মৃত্যু বানাই হুর্ধ-অধ গোলচক্কর বানাই
সাপটা ছিল নিজের গর্তে হাত ঢুকিয়ে তাকেও তো ভুল বোঝাই  


.                        *************************           
কলকাতা
২৭ নভেম্বর ১৯৯৯
.                                                                       
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
ঘুসপইঠি

আমি এমনকী ব্রিটিশদের টুকরোটাকরা-ঠাসা অতীত ঝেড়ে
অন্ধ-স্কুলের দেয়ালে লেখা গুটিকয় তালঠুকুয়া জ্ঞানের স্লোগান
হাতড়ে দেখি আরে ক্ষীরের সিঙাড়ার হালুয়ায় পুর-দেয়া কানামাছি
চাঁদবণিক প্রায়ভেট লিমিটেড নামে বিশ্বায়নের পার্লার খুলেছে

আমি এমনকী কোকিলটাকে বলেছি তোর নাম যে কোকিল তা কি জানিস
কইমাছও তো জানে যেবাজারে ল্যাংটোপোদে ও দুরুদুরু বুক কইমাছ
ভুষিমালের প্রতীক নিয়ে করবিটা কী নতুন বলতে কিস্ সু বাকি নেই রে

আমি এমনকী শালবনের রিমিক্স নাচের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে
খাঁজকাটা রোদ্দুরের ডালেডালে অক্ষয় বয়স্ক চিল রেখেছি দফায়-দফায়
যাতে একটানা ডেকে-ডেকে রাতটাকে বাড়াতে পারে কুকুর সমাবেশ

আমি এমনকী মানব-সন্তানদের হিসিভেজা মপসসলি ইসটিশনে
মাগিপিয়াসী নিত্যযাত্রীদের আত্মা-মেরামতের নাইটশিফ্ট কারখানায়
মানুষ কাকে বলে জানতে আয়নাভাঙা টুকড়োর মুখগুলো ওজন করাতে গিয়ে
টের পেলুম সত্যকে জানতে হলে ভাষার বাইরে লাইন দিতে হবে রে  


.                        *************************           
কলকাতা
২৫ নভেম্বর ১৯৯৮
.                                                                       
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
ক্যডারমঙ্গল

আমি ভাবলুম বুঝি উপায় নেই বলে প্রেমে পড়তে হল
ফলে ঝড় উঠলে কে সামলাবে মগডাল না শেকড় বল দিকি

আমি ভাবলুম মেঘের কি আর দশবিশ কিলো ওজন নেই
যে কেষ্টুবিষ্টুর মড়া না পচলে শবযাত্রায় শোক হবে না

আমি ভাবলুম বুঝি দুপুর থেকে বাজবিদ্যুৎ ঝুলে আছে আকাশময়
তাই স্বপ্নের যৌনতায় মুখহীন যুবতীদের ডলফিন-দেহ ভীড়

আমি ভাবলুম বুঝি নরক অনেকটা মধ্য কলকাতার মতন
নারী-রহিত পুরুষ আর পুরুষ-রহিত নারী বিছানায় সংলাপ বেচে

আমি ভাবুলম বুঝি মাথার মাথার মধ্যে যখন কাঠের সিড়ি-চড়ার শব্দ
চাষিরা বুটজুতো পায়ে উট-হাঁকিয়ে লাঙল দিচ্ছে মরিচিকায়

আমি ভাবলুম বুঝি রাস্তার মালিক তো অবরোধের পাইকার
তলপেটের মহড়াটা ঢেঁকুরের না ডুকরে-কাঁদা খিদের কী এল-গেল

আমি ভাবলুম বুঝি রাঁঢ়বাজারে শততম প্রেমিকের আবির্ভাব হল
অথচ ফুলের টবে মাটি নেই শেকড়ে-শেকড়ে ছয়লাপ সংসার


.                        *************************           
কলকাতা
মার্চ ১৯৯৯
.                                                                       
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার
(এই কবিতাটি অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত এবং নিম্ন আদালতে দণ্ডিত হয়েছিল | উচ্চ আদালতে এই রায়
নাকচ হয়ে যায়, ২৬ জুলাই ১৯৬৭
)

ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী কোর্বো কোথায় যাব ওঃ কিছুই ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তর্মুজ-আঙরাখার ভেতরে চলে যেতে দাও
চুর্মার অন্ধকারে জাফ্রান মশারির আলুলায়িত ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পার্ছিনা, অজস্র কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি যানি শুভা, যোনি মেসে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন ?
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবর্ষ ঈশ্বরের পোঁদে চুমু খেতুম
কিন্তু কিছুই ভালো লাগে না আমার কিছুই ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মুত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উত্সব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোল্কাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু আমাকে নিয়ে কী কোর্বো বুঝতে পার্ছিনা
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্থতা
যোনিকেশরে কাঁচের টুকরোর মতো ঘামের সুস্থতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পার্ছিনা কী জন্য আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমার পূর্বপুরুষ লম্পট সাবর্ণ চৌধুরীদের কথা আমি ভাবছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোর্তে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার ঘুমোতে দাও আমাকে
জন্মমুহুর্তের তীব্রচ্ছটা সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি য়ুটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাততাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারি শুক্র থেক জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা অন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওর্ফে আমি হতে পার্তুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমি কি পেশাদার ভালোলোক হতুম মৃত ভায়ের
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতিচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও
পুনরায় সবুজ তোশকের উপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি-করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পার্ছিনা
তুল্কালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান করে দোব
কবিতার জন্য আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই
শুভা
আমাকে তোমরা ল্যাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত অসংযমে প্রবেশ কোর্তে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁ পেচেছাপে বয়ে যাইনি
কেন আমি রজঃস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায়
অথচ আমার নিচে চিত আধবোজা অবস্থায়
আরাম গ্রহণকারিনী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হিংস্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে   
আমি মরে যাব
ওঃ এ সমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামার শুকিয়ে যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌন-পর্চুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মার্মুখী আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার অপ্রতিষ্ঠ খেয়োখেয়ি

.                      *************************           


হাংরি বুলেটিন
১৯৬৪
.                                                                       
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর   
*.
রবীন্দ্রনাথের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা

আজ দেখি এলুমিনিয়াম বাক্সে গোছ করা আমারই মড়া
অর্ধেক পাঁজর পুড়ে গেছে রাবার জ্বালানো আঁচে
আমাকে ক্ষমা করো
মানুষের মগজ নষ্ট হোক আমার
আমার নখ-দাঁত নষ্ট হয়ে যাক
হাতির আঁদুয়া দিয়ে বেঁধে রাখো আমায়
দেখতে চাই রক্তের ভেতর হাঙর আফানি দেয় কি না
লাথি লেগে ভাতের থালার ওপর জলের গ্লাস উলটে পড়ুক
আমাকে ক্ষমা করো
সন্তানের আত্ম-মৈথুন করা হাতে মুখাগ্নি
উলুঘাস-বুনোটের শেকড়ের পাশে পোকাদের নিঃশব্দ সঙ্গম
এতদিন এদের মুখে থুতু ছিটিয়ে দিতে পারি নি
ধানকাটা নিয়ে এবছর অনেক লাশ পড়ে গেল
বাইসন শিকারের জন্য বেত্লার জঙ্গলে আমাদের চিত্কার
হরিণের মাংস কাটা হয়েছিল কোদাল দিয়ে
আমার ছেলে-মেয়েরা খরগোশের চোখ উপড়ে
.                                 খেলা করছিল বেত্লার দুর্গে
এলুমিনিয়াম বাক্সে আমার লাশ বাঁচিয়ে তুলতে চাইছি
আমাকে ক্ষমা করুন |

.              *************************           


হাংরি বুলেটিন
২৫ বৈশাখ ১৩৭৩
.                                                                       
কবির সূচির পাতায়


মিলনসাগর