কবি মিতা সাহার কবিতা
*
প্রাণের গান
কবি মিতা সাহা

আমার সব গান কবিতা লাগে,
কবিতা মানেই অব্যক্ত কিছু কথা।
সে কথা যখন সুরের উপর পা ফেলে হাটে,
কখনো ছন্দে কখনও বা বেপরোয়া,
প্রতিটি শিরায় শিরায় শিহরণ জাগে।
আমার কিছু কিছু গান গদ্য লাগে...
শুধু ভাবের বিস্তার তারপর পাগল করা প্রেম,
সব শেষে বিচ্ছেদের ঝালার ঝঙ্কার।
সঙ্গীত মানেই জীবনের দোসর....
সঙ্গীত মানেই অবচেতনের চেতনা...
সঙ্গীত মানেই বুক ভরা নিশ্বাস,
অফুরান ভালবাসা।

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
ছেড়ে দেওয়া
কবি মিতা সাহা

ছেড়ে দেওয়া অনেক সহজ হত,
যদি হাতটা না বাড়িয়ে রাখতে।
ভুলে যাওয়া আরও সহজ হত,
যদি মনে করিয়ে না দিতে।
তবুও বুকের পাঁজর আলগা করে
তোমায় মুক্ত করলাম।
অল্প কিছু রাত আর কিছু দিন
গচ্ছিত রেখে গেলে আমার কাছে
সে কোন পূর্ণিমা রাতে
চাঁদের মালা পড়িয়েছিলে গলায়.......
কবে কোন ভোরে
সূর্য-টিপ লাগিয়েছিলে আমার কপালে........
সেই সব রাত আর দিন
ঝিকমিক  মনে ওড়ে।
ফিরতে চাইছ কি তুমি?
ফেরাতে চাই কি আমি?
ভাঙা বুকে আর জোড় নেই।
কেমন করে রাখবো জড়িয়ে ?
সে মনে আর নেশা নেই
যে বুঁদ হয়ে থাকবো তোমায় ঘিরে।
তোমার উপহার সেই রাত আর দিন
আমার একমাত্র সম্বল হয়ে থাক।।

.           *********************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
ফুরায় নি দেখা
কবি মিতা সাহা

পালটে পালটে অনেকবার তোমায় দেখেছি
সামনের দিক থেকে আবার পিছন থেকে।
দূর থেকে আরও কাছ থেকে -
আলোতে ,অন্ধকারে-
যত দেখেছি বদলে গেছ তুমি।
তপস্বিনীর চোখেও হ্যালোজেনের আলোর রোশনাই;
আমার বুক কেঁপে উঠেছে,
আরও বেশী দেখার ভয়ে।
নিজের কল্পনায় তোমার একটি ছবি এঁকেছি
ছবির চারিধারে দিব্যলোক।
সে ছবিতে ধ্যানমগ্ন যোগিনী তুমি
মানুষের ছোট ছোট লোভ ,ঈর্ষা, ঘৃণা নেই।
তুমি আমার কল্পনা হয়ে থাকো
সত্যান্বেষী হবার আমার সাধ নেই।
মুগ্ধ হয়ে যেন তোমায় দেখি
পরম পাওয়া আর তৃপ্তির অনুভূতিতে।
সবাই ভুল বুঝুক
এ মননে তুমি কেবলই সাধিকা অন্য কিছু নয়।

.           *********************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
শিল্পী
কবি মিতা সাহা

প্রথম গান শেখা মায়ের কাছে
শুদ্ধ স্বরে অভ্যাস তৈরি রাগ বিলাবল্‌
সঙ্গীতের হাত ধরে ঈশ্বরের সাধনা
ভোর রাতে নাদ স্বরে ঔম্‌ তারপরে খোলা গলায় পঞ্চম॥

মেয়টি স্বপ্ন দেখে প্রতি রাতে
পরমেশ্বরের সামনে তার সমর্পণ
সুর তালের অপূর্ব সঙ্গম
মীরাবাঈয়ের মত সাধনায় মগ্ন॥

একটু বদলে গেল ছবি
হ্যালোজেন আলোর ফোকাস পড়লো মুখে
উদ্দাম শ্রোতার উল্লাস
সহরে গ্রামে বাঁশ বাঁধা স্টেজে শরীরের দোল॥

মেয়েটি গান বেচে নামী দামী
সাথে লাবণ্য দেয় উপরি
দর হাঁকাবার জন্য রাখা আছে সেক্রেটারি
চার্টবাস্টারে শিল্পী সামনের সারির॥

কোথাও একটা ছোট্ট ভুল হয়ে গেছে
পরমেশ্বরের আকৃতির উপরে মানুষের বিনোদন
এটা সত্যি ঈশ্বর আছেন প্রতিটি মানুষের অন্তরে
শুধু তারা যারা সঠিক দাম দিতে পারে?

.           *********************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
যদি চারুলতা
কবি মিতা সাহা

যদি নষ্টনীড়ের চারুলতা  বেহালা বাজাতো
ঐ নিস্তব্ধ দুপুরে  কি মিয়া কি টোড়ী বেজে উঠত?
কে জানে কেন আজও মনে হয়
আমরা কেউ তাকে ঠিক বুঝতে পারিনি।

চারুলতা যদি নিষিদ্ধ পল্লীর বাইজী হত
হীরের নাকছাবি আর গায়ে আতর মেখে
সেকি এমন কবিতা লিখতে পারতো?
নাকি আজকের নামী গায়িকা চারু দেবী হয়ে আসর মাত করতো?

চারুলতা যদি খাল ধারের বস্তীর লক্ষ্মীর মা হত
তবে কি দুপুরে জানালার খিড়কী খুলে ঘুমের হাই তুলত?
সে তখন দুপুরের কালো পোড়া কড়াই মেজে
একটু জিরিয়ে বৌদিদের বাড়ী বাসন মাজতে যেত।

চারুলতা আমার কাছে বিস্ময়
চারুলতা আমার চোখে নারীত্বের  পূর্ণতা
চারুলতাই নারীর আত্মাভিমানের উৎস
আমার ভিতরের গভীরে চারুলতারা বাস করে।

.           *********************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর