কবি পরেশ ধরের - জন্ম কলকাতায়। পিতা যামিনীকান্ত ধর ও মাতা তুলসীরানি দেবী। ঠাকুরদা
রজনীকান্ত ধরের আদি নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার বিক্রমপুর অন্তর্গত কাননীসার গ্রামে।

কবি কলকাতার গরানহাটার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে পাশ করে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক
হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম.এ. পাশ করেন। তিনি যাদবপুর বিদ্যাপীঠে ইংরেজীর
শিক্ষক ছিলেন। পরে শিল্প-সাহিত্যচর্চায় পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন।  

বাড়ীতে সঙ্গীতের পরিবেশ ছিল। পিতা ভাল তবলা বাজাতেন। তিনি ঢাকার বিখ্যাত তবলা বাদক প্রসন্ন
ওস্তাদের ছাত্র ছিলেন। কাকা ভাল সরোদ বাজাতেন। তিনি বিখ্যাত সরোদ-বাদক আলাউদ্দীন খাঁ সাহেবের
ছাত্র ছিলেন। কাকার সরোদ শিক্ষার দিনগুলিতে তিনিও গিয়ে কাকার সঙ্গীত-শিক্ষার ঘরে বসে থাকতেন
এবং সেই সুর তিনি বাঁশীতে তোলবার চেষ্টা করতেন। এভাবেই তাঁর বাঁশী শেখা হয়। রাগ-রাগিনী শেখেন
জোড়াবাগানের রামকানাই ভট্টাচার্যের কাছে। কলেজে পড়তে পড়তেই তিনি আকাশবাণী কসকাতা থেকে
বাঁশী বাজানোর অনুষ্ঠান পেতে শুরু করেন।

পরিবারের রীতি মেনেই ১৯৪৪ সালে কলকাতার নিমতলার এক বনেদী পরিবারের কন্যার সাথে তাঁর বিয়ে
হয়।

১৯৪৬ সালের শেষ দিকে, এক বন্ধুর সাথে গণনাট্য সংঘের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে
লিল চৌধুরী সম্প্রদায়ের
গান শুনে মুগ্ধ হয়ে পরেশ ধর নিজেই গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। মতাদর্শের ফারাকের জন্য ১৯৫০ সালে তিনি
গণনাট্য সংঘ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। সে সময়ের গণনাট্য সংঘের প্রচলিত গণসঙ্গীতের কথা, সুর ও
উপস্থাপনার পদ্ধতির সঙ্গে তাঁর মতের মিল হচ্ছিল না।  

নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না হলেও পশ্চিমবঙ্গ গণ-সংস্কৃতি পরিষদ ও বিপ্লবী লেখক শিল্পী
বুদ্ধিজীবী সংঘের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং এম.সি.সি.-র (মাওইস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার )
রাজনীতির অনুবর্তী ছিলেন। নকশালবাড়ী আন্দোলন তাঁকে নাড়া দিয়েছিল। তাঁর মতে তাঁর নিজস্ব
রাজনৈতিক চেতনা, স্পষ্ট রূপ নিয়েছিল সত্তরের দশকে।

যে কোনো গানের উপর ক্লিক করলে সেই গানটি আপনার কমপিউটরে ডাউনলোড হয়ে বাজতে শুরু করবে।

তাঁর “শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি” ও  “ঝিকিমিকি জল নদী টলোমল” গান দুটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নিজে
পছন্দ করে রেকর্ড করছিলেন, যা সর্বকালের জনপ্রিয় বাংলা গানের তালিকায় স্থান পাবে, একথা নিশ্চিত।
বেচু দত্ত গেয়েছিলেন “
কারখানা কলে খাটি দলে দলে”, “ওরে ও মাঝি রাঙা স্বপন দেশে যাব”, “ওরে ও নতুন
দিনের পাখী” ও "ঘুম ভেঙে যায়"। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারী বেতার  কর্তৃপক্ষের (আকাশবাণী)
আপত্তিতে, গ্রামোফোন কোম্পানি, “কারখানা কলে” গানটির সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে, গানটির বিক্রী বন্ধ করে
দেয়। তাঁর রচিত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বাণী ঘোষাল, সুপ্রীতি ঘোষও। এ ছাড়া
কবি রাজেশ দত্তর সৌজন্যে
পাওয়া পরেশ ধরের গানের মধ্যে রয়েছে ক্যালকাটা ইউথ কয়ারের গাওয়া “
প্রাণে প্রাণ মিল করে দাও” ও
গণবিষাণের গাওয়া “
এমন রাত্রি নেই যা প্রভাত হয় না”। আমরা কৃতজ্ঞ কবি রাজেশ দত্তর কাছে কারণ
আমাদের সাইটে কবি পরেশ ধরের রচিত সব কটি গানই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে আমাদের
দিয়েছেন।

যে কোনো গানের উপর ক্লিক করলে সেই গানটি আপনার কমপিউটরে ডাউনলোড হয়ে বাজতে শুরু করবে।

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে  “অসংখ্য বাসুদেবের পদধ্বনি”,  “আমি রোজ যে দেখি আমার
মাকে”,  “এক গুচ্ছ গণসঙ্গীত” (৩ খণ্ডে)। সব কটি বইই উত্তর ২৪ পরগণার, দণ্ডীরহাটের (বসিরহাট),
“চিন্তাধারা” প্রকাশনি থেকে ৮০র দশকে প্রকাশ করা হয়েছিল। এছাড়া তাঁর লেখা যাত্রাপালা  “তাজমহলের
কান্না”, তাঁরই সঙ্গীত পরিচালনায়, বিখ্যাত নাট্যাকার শান্তিগোপাল অভিনীত করেছিলেন। পরেশ ধর প্রায়
দুশো গণসঙ্গীত রচনা করেছেন। তাঁর তিনটি গীতিনাট্য "দুর্ভিক্ষের পাঁচালী", "শান্তি তরজা" এবং "ভোট রঙ্গ",
আমাদের সাইটে তোলা সম্ভব হয়েছে
কবি অশোক চট্টোপাধ্যায় , কবি বিপুল চক্রবর্তী এবং কবি রাজেশ
দত্তর সহযোগিতায়।

এক সময়, গণনাট্য সংঘের দক্ষিণ কলকাতার শাখায় গান শেখাতেন
সলিল চৌধুরী এবং উত্তর কলকাতার
শাখায় গান শেখাতেন পরেশ ধর।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের “মাউন্টব্যাটেনের মঙ্গলকাব্য” গানটি তাঁর মতে একটি
অনবদ্য সৃষ্টি।

আমরা
মিলনসাগরে তাঁর কবিতা তুলতে পেরে আনন্দিত |

কবি পরেশ ধরের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


উত্স :  “সমাজতন্ত্র কোন সংকটে পড়েনি”, পরেশ ধরের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারের পুনর্মুদ্রণ, “সাংস্কৃতিক
.          সময়” পত্রিকা, সম্পাদক অশোক চট্টোপাধ্যায়, এপ্রিল ২০০২।
.          শ্যামল গুহ, পরেশ ধরের সন্ধানে, ২০০২।



আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     



এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০১৫
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৪.৮.২০১৬

...
setstats