কবি প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান ও কবিতা
ওভাবে নয় এভাবে চলো
রূপান্তর - প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
চেরবান্দারাজুর কবিতা অবলম্বনে গীতিরূপান্তর
ডিসেম্বর --১৯৯৪


ওভাবে নয় এভাবে চলো
চোখ রাখো ঐ জোয়ার ভাঁটায়
বন্ধ কোরোনা তোলো পাল তোলো
না হলে ডুববে সাগর তলায়

ওভাবে নয়, এভাবে চলো
চোখ রাখো ঐ ঢেউয়ের ধোঁয়ায়
বন্ধ কোরো না, খোলো চোখ খোলো
এগোয় তরণী হালের দোলায়

ওভাবে নয় এভাবে চলো
দেশের কন্ঠে পড়েছে ফাঁস
সর্বনাশের তীরে নিয়ে যেতে
দেখো আজ কারা ধরেছে রাশ

ওভাবে নয় এভাবে চলো
যেন পরিণাম মৃত্যুই হবে
চড়াই উৎরাই যদি ভাঙছোই
চলো চলো জীবনেরই পথে তবে

ওভাবে নয় এভাবে চলো
নিজেকে কখনো ভেবো না একা
আন্দোলনেতে দুলতে দুলতে
পেয়ে যাবে কত বন্ধুর দেখা

ওভাবে নয় এভাবে চলো
সময়ের ঢেউয়ে নতুন হাওয়া
শোনো আগামীরই আশার আলোয়
স্বপ্নের সুরে ভৈরবী গাওয়া

ওভাবে নয় এভাবে চলো
পান করো মানবতার সুধায়
ভালোবাসা আর সাম্যের গানে
প্রাণে প্রাণ যেন মিলেমিশে যায় |

.               *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
লং মার্চের গান হয়ে ওঠার গান
রচনা -- প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
জানুয়ারী ---১৯৯৫


.            লং মার্চের গান হয়ে ওঠার গান

চলতে চলতে গেয়ে ওঠা, গাইতে গাইতে চলা,
কেমন ছিল সে দিনগুলো ?  কি করে যায় বলা ?
মাও সে তুঙের কবিতাকে কোন কমলেশ সেন
জানতাম না কবে কখন তর্জমা করলেন |
পড়তে পড়তে কেঁপে উঠি, দু চোখ ভরা জল
বুকের মধ্যে দ্রিদিম দ্রিদিম ভয় ভাঙা মাদল
বাজছে যেন আকাশ জুড়ে মেঘের গুরুগুরু,
কথার শেষ হতে না হতেই সুরের হল শুরু |
রাইটার্সের বাঁ পাশেতেই পুরোনো সেই চার্চ
সে দিন থেকেই শুরু হত আমার লঙ মার্চ
হাত দুলিয়ে বুক ফুলিয়ে আর উঁচিয়ে মাথা
ভয় ঘুচিয়ে চলছি গেয়ে লঙ মার্চের গাথা
ফুটপাথেতেই বাজার হাজার বাধা তো থাকবেই
রাস্তায় ট্রাম, রিকশ, ঠেলা, বাধার অন্ত নেই
দুপা এগোই, এক পা পিছোই, চলছি নির্বকার
কিসের ভয়, সহসী মন লাফিয়ে হই পার |
হঠাৎ কখন বৃষ্টি নামতো গেরিলা কায়দায়
মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনা, পথেও হাঁটা দায়
ছাতা কোথায় ?  রুমাল মাথায় ভিজতে ভিজতে চলি
বাঁ-দিকেতে রইল পড়ে ছাতাওয়ালা গলি
সাঁকো তো নেই টাটুর বুকে হাঁটু অবদি জল
অচল গাড়িগুলোর কাঁকে হাটছি অবিচল |
কাঁপছে গলা, গাইছি তবু, থামায় সাধ্যি কার
সাহসী মন লালফৌজের, লাফিয়ে হই পার |

অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা, অনেক দীর্ঘশ্বাস
অনেক প্রাণের আত্মদানের দীর্ঘ ইতিহাস
পেরিয়ে এলাম, থেমেই গেলাম ?  গান ত নয় থামার ----
থাক না হাজার অযুত বাধা, লাফিয়ে হই পার |

.               *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
হাওয়ার হাত মরা ডালে
গীতিরূপান্তর ও সুর --- প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া

হাওয়ার হাত মরা ডালে
ফুটিয়ে তুলছে লাল সাদা ফুল |
হাওয়ার হাত ফুটিয়ে তুলছে
জন্মান্ধের চোখে খরবিদ্যুৎ |

হাওয়ার হাত উড়িয়ে নেয়
শুকনো পাতা আর যত জঞ্জাল |
হাওয়ার হাত মুছিয়ে দেয়
অশ্রু ঘাম আর রক্তের দাগ |
যন্ত্র যখন ভেঙে পড়ে
তখন হাওয়ার হাত দেখে উঠে দাঁড়াই
সটান দৃপ্ত শঙ্কাহীন |
হাওয়ার হাত যখন আমার হাত ধরে
তখন বুঝি ঠিক এসেছে দিন |
যুদ্ধ ঘোষণার এসেছে দিন |

.               *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মায়ের জাত বোনের জাত
কথা - প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা-- ৮ মার্চ, ১৯৯৫


মায়ের জাত বোনের জাত
প্রিয়ের জাত ঝিয়ের জাত
মেয়েছেলে মেয়েমানুষ
.           ও সব বুলি থাক
ওদের মানুষ বলে ভাবছে কারা
.                 সেটাই দেখা যাক |
আহা নয়, উহু নয়
অশ্রু মুহুর্মুহু নয়
.           ও সব তোলা থাক
ওদের যন্ত্রণাটা বুঝছে কারা
.           সেটাই বোঝা যাক
নারী ত বেচারী নয়
দয়ার ভিখারী নয়
পড়তে যেমন জানে তেমন লড়তে জানে নারী
থাকবে কারা তাদের পাশে
.           জানাটা দরকারী

.               *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
এশিয়াড---’৮২
কথা -- প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা -- নভেম্বর ১৯৮২

.                এশিয়াড----’৮২
দেশের লোকে শুকিয়ে মরুক, দেশ এগিয়ে চলেছে
দেশের লোকে যাকগে চুলোয়,  দেশ এগিয়ে চলছে |

রাজধানীতে এবার জব্বর খেলার আসর বসেছে
জাঁকজমক দেখাতে রাণী সাদা হাতি পুষেছে |
দেশের-----

খানদানী রাজধানী এবার নতুন সাজে সেজেছে
দেশ জুড়ে লেগেছে মোচ্ছব, ঢাকের বাদ্যি বেজেছে |

ভিখিরিরা রইল জেলে বুলডোজারে ঝোপড়া সাফ,
সায়েব বলে ‘বিউটিফুল’ আর গরীব বলে ‘বাপরে বাপ’ |

লাখ লাখ বেকার ভুখা মানুষ শুনতে লাগে এক ঘেঁয়ে
রঙ তামাসা কাকে বলে ড্যাবডেবিয়ে দেখ্ চেয়ে |

কে বলে বিদেশীর চোখে মোদের দেশের নাই সম্মান
শুনছ, সবাই বলছে সাব্বাস, এবার তো জুড়োলো প্রাণ ?

চাষীর জমি জবরদখল, এশিয়াড ভিলেজ বসেছে
হক্কের পাওনা চাইতে কিষান বুড়ো আঙুল চুষেছে |

ইন্দ্রপ্রস্থ গড়তে মজদুর মরণের সাথে যুঝেছে
কঠিন শ্রমের বিকল্প নাই হাড়ে হাড়ে বুঝেছে

ভারী ওজন তুলতে মরে রাজস্থানের মীরা বাঈ
আরো কত মরল এমন, বাবুদের খাতায় হিসাব নাই |

কত মজদুর হাড়গোড় ভেঙে গ্রামে ফিরে এসেছে |
ক্ষতিপূরণ ?  সে আবার কি ?     কন্ট্রাক্টরে হেসেছে |

খোলা মাঠে, নালার ধারে মজদুরগুলোর দিন কাটে,
জল কথাও নেই, তেষ্টা পেলে ডোবার সবুজ জল চাটে |

সবচে’ কম মজুরীর কথা  আইনের বইয়ে রয়েছে
সেই মজুরী চাইতে মজদুর পুলিশের লাঠি খেয়েছে |

( বাঘা ) কারবারী আর আমলা মিলে পুকুরচুরি করেছে,
তেলা মাথা তেলে জবজব ভুঁড়োর ভুঁড়ি বেড়েছে |

( আহা ) এমন আনন্দের দিনে তুলোনা বেসুরো তান
দেখো দেশের ভাবমূর্তি কভু যেন হয়না ম্লান |

( ভাবো ) কত বড়ো লাভ হল এই এশিয়াডের শিক্ষাতে
নওজোআনের মাতন এবার বইবে দেখো ঠিক খাতে |

খেলার কথায় মাতোরে ভাই, তাতেই নেশা তাতেই প্রাণ
ভুখা গরীবের বোবা কান্নায় কক্ষনো পেতোনা কান |
খেরারই ময়দানে মাতো খুব কষে দাও হাততালি
লড়াইয়ের ময়দানে গেলেই তোমার জন্যে জেল খালি |

সরকারের করো জয়জয়াকার, নাচো সবাই হাত তুলে
সবার আগে দেশের সম্মান, তুচ্ছ ব্যাপার যাও ভুলে |

.                     *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
পথের ধারে খোকা ঘুমায়, ঘুমায় খোকা ঘুমায় রে
কথা -- প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা -১৯শে অক্টোবর, ১৯৮৪

পথের ধারে খোকা ঘুমায়, ঘুমায় খোকা ঘুমায় রে
কোথায় মাগো, ভরিয়ে দিবি মুখখানি তার চুমায় রে ---
খোকা ঘুমায়, খোকা ঘুমায়, ঘুমায় খোকা ঘুমায় রে |
রক্ত পলাশ খোকার বুকে যে ফুল সবার প্রাণ রাঙায়
ভাঙেনা ঘুম খোকার চোখে যে ঘুম সবার ঘুম ভাঙায়
.                             যে ঘুম সবার ঘুম ভাঙায়

.                     *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ঝিরঝিরে বৃষ্টিধারা আষাঢ়ের একদিনে
কথা -- প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা -- ২২ জুলাই, ১৯৮৫
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে


ঝিরঝিরে বৃষ্টিধারা আষাঢ়ের একদিনে
শ্মশানে আগুন দেখি আগুন নিল চিনে |
আগুন ডাকে আয়রে বীরেন, তুই ত আমার ভাই---
হাজার মানুষ দেখুক কেমন দুই-এ মিশে যাই |
.       তুই  প্রতিবাদের রাঙা আগুন,
.             ভয়ের শেকল-ভাঙা আগুন,
.             ভালোবাসার আগুন যে তুই ---
.             তুলনা তোর নাই :
যে আগুনে ফুটপাতে মা ফোটায় গরম ভাত
যে আগুন জ্বেলে গরীব মানুষ কাটায় শীতের রাত,
সেই আগুন বরণ করতে আগুন বাড়িয়ে দেয় হাত
আগুন হ’ল আগুনময় জয় আগুনের জয়,
তার আলোয় পড়ি জন্মভূমির বর্ণপরিচয় |

.                     *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের প্রয়াণে
কথা ও সুর - প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
প্রথম দু লাইনের সুরে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ‘আমরা তো ভুলি নাই  শহীদ’ গানের
আদল আছে  |
রচনা-- ২৭শে নভেম্বর ১৯৮৭

.               হেমাঙ্গ বিশ্বাসের প্রয়াণে

আমরা কি ভুলিব তোমায় ?  ভুলতে পারিনা
তোমার গানের সুরে করি যে আজ তোমার বন্দনা |
.                                 তোমায় ভুলতে পারিনা |
সুর্মা নদীর গাঙচিল তুমি শূন্যে দাও উড়াল
( আঁধার ) উজান গাঙ বাইয়া চল ঢেউ উথাল পাথাল
( আবার ) নিঃস্বজনের অশ্রুতে পাই তোমার ঠিকানা |
তোমার গানের সুরে ----
সংগ্রামের অনলে শুদ্ধ তোমার সোনার প্রাণ
মাটির রসে ভেজা সুরে গাও মানুষের গান |
তোমার স্তব্ধ হইল বুকের হাপর, গান ত থামে না |
তোমার গানের সুরে ----
হয় জনজাগরণ
চলে আমরণ রণ
মানুষ হয় রে আগুয়ান
কন্ঠে হেমাঙ্গের গান |
বন্দী আন্ধার জেলখানায়
মজদুর বন্ধ কারখানায়
খেতের আধমরা কিষাণ
গায় হেমাঙ্গের গান |
বুকে রাখি এ প্রত্যয়
হবে মানুষের জয়,
আছে যতদিন শ্বাস
সাথী হেমাঙ্গ বিশ্বাস |

.        *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহি পরমস্তপঃ
কথা ও সুর -- প্রতুল মুখো পাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
নাটক-- কেনারাম বেচারাম


পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহি পরমস্তপঃ
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতাঃ |
পিতা জনক পিতা পালক পিতা শিক্ষক পিতা রক্ষক
তবু পিতা বৃদ্ধ হলে ভাবি ওকে ফেলব কোথা,
যদি থাকে টাকাকড়ি তবেই বাপকে তোয়াজ করি
যে বাপের নেই কানাকড়ি তার কপালে ছেঁড়া কাঁথা |
পিতা হলেন নিরুদ্দিষ্ট, কি করি সবই অদৃষ্ট
সিন্দুকের চাবিটি পেলেই ভুলতে পারি মনের ব্যথা |
যেন তেন প্রকারেণ সম্পত্তিটি মেলে যেন
সব কিছুতেই ভেজাল যখন ভেজাল বাপে ক্ষতি কোথা |
কেনারাম বেচারাম পালা শুরু হবে এই বেলা
দর্শকজনে প্রণাম জানাই, শেষ হল গোড়াকার কথা |

.                      *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
জয় যম জয় যম
কথা ও সুর -- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
নাটক -- নরক গুলজার
রচনা-- ১৯৭৮


জয় যম জয় যম
জয় যম জয় যম
ঘোড়ই যাবে নরকে
আচ্ছা করে ধর ওকে
ব্যাটা বড় ধান্দাবাজ
দণ্ড দেবেন ধর্মরাজ |
ব্যাটা বড় শয়তান
শাস্তি দেবেন ভগবান |
ব্যাটা বড় পাজি
নরকে যাবে আজই---
শালা বড় ভারি
চলল যমের বাড়ি |

.        *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর