যদিও মেঘ চাই কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র বিষ্ণু দে সম্পাদিত “এ কালের কবিতা” কাব্য-সংকলনে ( জানুয়ারী ১৯৬৩ ) প্রকাশিত |
হয়তো আকাশে শুধুই মেঘ চরাই, কখনো বৃষ্টি কখনো আলো ছড়াই . অথবা রং চড়াই | . তবুও ভেবো না ভেবো না . যার যা খাজনা দেবো না ; খেতের ফসল আমিও কেটেছি . শূন্য নয় মরাই |
যদিও বাঁধন না মেনে হই উধাও, গরল যেমন তেমন চাখি সুধাও, . কিংবা যা-কিছু দাও | . তবুও ভেবো না ভেবো না, . মেলায় মুজরো নেবো না ; দল-ছাড়া ব’লে বদলেছি কি না . ও-কথা মিছে শুধাও || . *************************** . সূচীতে . . .
পোলের ওপর ৫ই মাঘ কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র যামিনীমোহন কর সম্পাদিত “মাসিক বসুমতী” পত্রিকার মাঘ ১৩৫২ ( ফেব্রুয়ারী ১৯৪৬ ) সংখ্যায় প্রকাশিত |
নদীর ওপর সকালবেলায় কুয়াসা যত বারই দেখিনা, মন কেমন কেঁপে ওঠে | জাহাজ ষ্টীমার জেটি ক্রেন আর বিরাট যত কারখানা, নদীর ওপর হুমড়ে-পড়া আকাশ-কাটা শহর মনে হয়, এই গেল মুছে, জল-মাখান তুলির টানে কাঁচা ছবির মত |
কি আছে সেই ছবির তলায়, -- একেবারে শাদা ভাবীকালের কোন ভাবুকের দিশাহারা রঙ্—না—লাগা ভাবনা, মন বুঝি তা টের পেয়েছে একটু |
আমার ছায়া পড়ল না আজ . রোদ-লুকোন ভোরে নতুন পোলের গায়ে ; এই আনন্দে তবু হ’লাম পার, পাঁচুই মাঘের ঝাপ্ সা তারিখ . ময়লা কাচের মত, আমার বুকের হাই লেগে’ ও একটুখানি হবে পরিস্কার, আরেক অবাক্ নতুন ছবির জন্যে | . *************************** . সূচীতে . . .
সূর্য্য-বীজ কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র যামিনীমোহন কর সম্পাদিত “মাসিক বসুমতী” পত্রিকার মাঘ ১৩৫৪ ( ফেব্রুয়ারী ১৯৪৮ ) সংখ্যায় প্রকাশিত |
শতাব্দী যায় গড়িয়ে ----সময়-সমুদ্রের সামান্য একটা ঢেউ | হে কালের অধীশ্বর অন্য মনে তুমি কি থাক ভুলে ?
পৃথিবী আবর্ত্তিত অন্ধ নিয়তির চক্রে | মানুষের ইতিহাস হিংসার বিষে ফেনিল |
ক্ষুব্ধ যারা, লুব্ধ যারা, মাংসগন্ধে মুগ্ধ যারা একান্ত আত্মার দৃষ্টিহারা, শ্মশানের প্রান্তচর আর্বজনা-কুণ্ড ঘিরে, বীভত্স চীত্কারে’ নির্লজ্জ হিংসায় তারা, হানাহানি করে,-- ‘মানুষ জন্তুর হুহুঙ্কার’ দিকে দিকে বেজে ওঠে | তুমি কি তখনও নির্লিপ্ত নির্বিকার ?
মন বলে, ---না |
যুগে যুগে তুমি পাঠাও তোমার দূত ---সূর্য্যাংশের অনির্ব্বান প্রাণ-শিখা | দেশে দেশে হৃদয়ে হৃদয়ে সমস্ত দীপ যখন নির্ব্বাপিত, মৃত্যুর তমিস্রায় সমস্ত পৃথিবী যখন নিমগ্ন, অকম্পিত সে শিখা তখনও জ্বলে পরম দুঃসাহসে, অন্ধ রাত্রির সমস্ত বিভীষিকাময় ভ্রূকুটীর বিরুদ্ধে . দাঁড়ায় একা ; বলে,--এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃখিবীর ধূলি |
এই শিখা বার বার আমাদেরই মাঝে জন্ম নেয়, ধন্য করে এই ধরণীর ধুলি-মলিন শতাব্দী |
যে আধারে সে শিখা মূর্ত্ত হয়ে ওঠে, সে আধার যায় ভেঙে ; তবু সে শিখা ত’ হারিয়ে যাবার নয় |
আকাশের তারায় আর একটু অপরূপ দীপ্তি সে শিখা রেখে যায়, পৃথিবীর শ্যামলতায় বুলিয়ে দিয়ে যায় আর এক অনির্ব্বচনীয় স্নিগ্ধতা, আকাশের নীলিমা তার কাছে পায় রহস্য-নিবিড় আর এক মহিমা |
দেশে দেশে মানব-সত্যের যে সংশপ্তক বাহিনী আজও সাজছে নিঃশব্দে চরম সংগ্রামের জন্যে, যুগে যুগে যারা সাজবে, তাদের মশালে সেই শিখারই আলো, তাদের পতাকায় তারই অম্লান দীপ্তি | কত শতাব্দীর ঢেউ সময়ের সমুদ্রে হবে লীন, মানুষের ইতিহাস কত আত্মঘাতী মূঢ়তায় পথ হারাবে ; তবু হে কালের অধীশ্বর হতাশ আমরা হব-না |
এই অকিঞ্চন পৃথিবীর মৃত্তিকায় যে সূর্য্য-বীজ তুমি রোপণ করো তা ব্যর্থ হবার নয় | মোহাচ্ছন্ন বর্ত্তমানের সমস্ত কুজ্ ঝটিকা অতিক্রম করে’ সুদূর যুগান্তে তার সঙ্কেত প্রসারিত ; মানবতার গভীর উত্স-মূলে অক্ষয় তার প্রেরণা |
হে মহাকাল, তোমার অনন্ত পারাবারে আমরা ক্ষণিকের বুদ্ বুদ্, তবু সেই সূর্য্য-শিখা যে আমাদের মাঝে প্রতিফলিত হয়, এই আমাদের গৌরব | . *************************** . সূচীতে . . .
আরো এক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র আবু সয়ীদ আইয়ুব সম্পাদিত পঁচিশ বছরের কবিতা কাব্য-সংকলনে (১৯৪৬)প্রকাশিত |
আরো একজন আছে নাম যার ধরি না কখনো ; মনে পড়ে যায় শুধু কাজ সেরে ক্ষেত ও খামারে, ঘাম মুছে এক হাতে জীবনের বেড়াটার ধারে এসে দাঁড়াই যখন ; শুনি তার নিঃশ্বাসেতে উথলায় রাতের আঁধার, শিহরায় অরণ্য গহন |
এ-বেড়া হবো না পার ; ঘরে ফিরে গিয়ে ফের হেঁসেলের গন্ধ নিয়ে বুকে আলো জ্বেলে মেলাব হিসেব ; যার কাছে যত দেওয়া-নেওয়া, পাণ্ডা ও পুলিশ আর চালের আড়ত, অতীত ও বর্তমান, দূর ভবিষ্যৎ |
সব বোঝাপড়া শেষে তবু জানি কি রহিল ফাঁকি, বিনিদ্র রজনী ধরি রক্তাক্ত হৃদয় তাই গনিবে একাকী | . *************************** . সূচীতে . . .
আমরা কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সরল দে, এখলাসউদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত “পরিচয়” পত্রিকার ভাদ্র- আশ্বিন ১৩৭৮(সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৭১ ) সংখ্যায় প্রকাশিত |
আমরা শুধু চেঁচিয়ে গলা ফাটাই . তোমরা কথা বলবে জনান্তিকে | মিছিল হয়ে লক্ষ পায়ে হাঁটি, . তোমরা যাতে পাও সে নিভৃতিকে | যে সাধনায় কুণ্ডলিনী জাগে . অমারাতে আমরা তারই শব | ঝাঁঝরা বুকের আসন পেতেই কাল . ভাবী যুগের ধেয়ায় মহোত্সব |
বাঙলাদেশ আর আমরা ভিয়েৎনাম, . আমরা যেথায় যত বিস্ফোরণ ছিন্নমস্তা এই শতাব্দী শুধু . জাগছে বুকে আরেক উত্তরণ |
ঝলমলানো ইতিহাসের পাতা . একদা যা খুলবে ভাবীকাল, আমরা তারি বাতিল পাণ্ডুলিপি . কালির ছোপে এবং রক্তে লাল | . *************************** . সূচীতে . . .
পঁচিশে বৈশাখ কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উত্সর্গিত, চিরঞ্জিৎ দে ও শ্যামাপ্রসাদ সরকার সম্পাদিত প্রণাম নাও সংকলনের কবিতা, বৈশাখ ১৩৬৮ ( মে ১৯৬১ ) |
বলেছিলে, --‘নাই বা মনে রাখলে --- সে কথা যে মিথ্যে তা’ত জানতে ! মনে কেন, মর্মে আছ, গহন গভীর হৃদয় হ’তে . ছড়িয়ে আছ শেষ চেতনা-প্রান্তে আছ প্রাণের পরম ক্ষুধায়, নয়ন শ্রবণ ভরা সুধায়, এই জীবনের প্রতি পাতায় . নিত্য তোমার সই থাকে | দিয়েছ সুর দিলে ভাষা আকাশলোভী বিরাট আশা | প্রণাম লহ মুগ্ধ মনের . আজ পঁচিশে বৈশাখে | . *************************** . সূচীতে . . .