বিপ্লবের পঞ্জিকা যাদের হাতে
তারাই একাদশী আর অমাবস্যার অজুহাতে
বিপ্লবের সব আয়োজনকে বন্ধ রাখছে বারবার |
অথচ গঙ্গাজলে স্নান করা পুণ্যার্থীর মত
লক্ষ লক্ষ দরিদ্র নির্বাক আমরা
বিড় বিড় করে প্রতিশ্রুতির মন্ত্র জপছি |
একটা মসনদের ইট ভাঙতে স্ত্রীর কথা ভাবি
একটা সিম্দুকের ধন কাড়তে পুত্রের কথা ভাবি |
একটা প্রচন্ড প্রলয় ভাবতে নিজের
. বাঁচার কথা ভাবি |
আমরা জানোয়ার বলেই
আমরা এখনও ভাববার সময় পেলাম না
যে আমরা নিয়তই পশুর খাঁচায় বন্ধ
একালের নিষ্পেষণের বড় হাতিয়ার,
আমাদের অস্থি নিয়ে কত অত্যাচার |
. অর্বাচীন স্তাবকের দলে
আমরা মিছিলের সাথীরা পথভ্রষ্ট
. রাখালের পাল
কে আছে এগিয়ে এসে ধরো এই হাল |
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
কবি প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর কবিতা
|
. হিন্দুস্থান আজাদ হয়েছে অনেককাল
. আমি বলি, তুমি বল পৃথিবীও বলছে তিরিশ বছর |
. হিন্দস্থানের গণতন্ত্র মহান এবং সুন্দর,
. আমি বলি, তুমি বল পৃথিবীও বলছে তিরিশ বছর |
. হিন্দুস্থানের মানচিত্রে উন্নয়নের চিহ্ন অনেক----
. আমি বলি, তুমি বল, পৃথিবীও বলছে বছর বছর |
তবুও গ্রাম থেকে শহর
. অসংখ্য উদ্বৃত্ত মানুষের স্রোত “নাই নাই” ধ্বনি
. মাথা গোঁজাতো দুরে থাক মৃত্যুর পর সৎকারের
. কাজের জন্য সামান্য জমি---- এও দুর্মূল্য হ’ল |
চাকরী তো বিরাট সম্মান---
. জানোয়ারের থেকে যে মানুষের আলাদা একটা নাম
. সেই অনুভূতিই কি আছে ফুটপাতের মানুষগুলোর ?
আইনের বি জুড়ে আছে অপরাধে পরিণাম |
. তবুও উৎকোচের দরজায় সবার নিত্য যাতায়াত |
. আজ যার জন্ম হ’ল
. তার ভবিষ্যৎ শুরু হ’ল হতাশার মধ্যাহ্ন দিয়ে |
. অথচ আমরা কি চেয়েছিলাম ?
. তাই আজাদ এসেছে, কিন্তু আজাদির মধুভান্ড কোথায় ?
শোষণ লাঞ্ছনা, বঞ্চনার প্রাসাদে জর্জরিত যারা তাদের জন্য----
. শুধু তাদের জন্য
. কেউ কি পার না সেই মধুভান্ড খুঁজে বের করতে ?
এই নির্লজ্জ সভ্যতার দরবারে
. এশিয়ার এই গাঙ্গেয় প্রান্তরে, যমুনা বিপাশার তীরে
. অন্তত একবার, আর একবার শুনি সেই গান,
. “কদম কদম বাঢ়ায়ে যা, খুশী সে গীত গায়ে যা |”
একটি বারের জন্যও সিঙ্গাপুর ইম্ফলের মত
. আজাদ হিন্দের মিছিলের স্রোত বয়ে যাক |
অকস্মাৎ মেঘনাদের মত
প্রচন্ড যুদ্ধের মেঘে সহসা হারাই
আমাদের সহিষ্ণু হৃদয়ের সঞ্চিত বিশ্বাস,
এবং সেই অঙ্গে একই সঙ্গে
সধবার পূণিমার কিছু অভিলাষ |
আকাশ, তারা, নদী, পর্বত ও সমুদ্র দেখে
. পৃথিবীকে জেনেছি নিজের কাছে,
. ঈশ্বরকে শুধু মেনেছি----
. তারপর থেকেই দেখেছি
. মানা ও না মানার খেলায়
. প্রকৃতির চেতনের উদ্দাম নাচন
. এই বুঝি ছিঁড়ে যায় কালের বন্ধন |
আমাদের গর্বোদ্ধত দারিদ্র্যের অহংকার
বার বার দিয়েছে আমাদের কয়েদির কারাগার |
তবুও সওয়ালের জাল থেকে বাঁচতে চাই,
সামান্য লুকিয়ে রাখা সম্ভ্রম
না বেঁচেও বাঁচার গুপ্ত রহস্য
আর না পেয়েও আবার অভিনয়
প্রকাশ করতে এখনও শঙ্কিত |
তাই প্রতি বিচারেই বাঁচতে চাই
আমরা এই দশকের আসামীরা |
কিন্তু বাঁচতে আমাদের দেয় না কেউ,
আমাদের ভয়ংকর অহংকারী বিবেক
আর তোমাদের চোখের দারুণ সন্দেহ
আমাদের তিলে তিলে হত্যা করে,
কারাগারের ভেতরে বাইরে
সর্বত্র অন্ধকারের পাহাড়ে মুখ বুজে থাকি |
ভেতরের চার দেওয়ালের মধ্যে সান্ত্রীর উৎপাত-----
বাইরের আলোয় মন্ত্রীর কশাঘাত
আর আদালতের ভেতরে হাকিমের আর্তনাদ |
. এ সবকে কর্ণপাত না করে
আমরা বিবেকহীন, বর্ণ গন্ধহীন
সাগরতলার কোনো এক জীবাশ্মের মত
চিরস্থায়ী অন্ধকূপে
. নিঃশব্দে শেষ হয়ে যাই |
তবুও নিস্কৃতির জন্য
. কারাগার থেকে পালা করে বের হই,
. প্রত্যহ তার পরেই গ্রেপ্তার
কারাগারটাই আমাধের সর্বনাশা মায়া,
. আলোতে অন্ধকারে
সেখানে আমাদের নিস্কৃতির পরেও
আমাদের ছায়ারা খেলা করে |
কারাগারেও আমরা এক এক সভ্যতার উপহার,-----
হাজার ক্ষুদিরামের প্রতিবাদের ভাষা
ছারপোকার চেয়েও
. সভ্যতার দুর্দম দানবগুলো
গ্রামে গঞ্জে নারীবক্ষে সুধা পান করে
. অবাধে, অসংযমে |
. অত্যাচারের প্রথম নিয়মে
বাস্তুহারার ঘরে অধিকার দাবী করে
. এ যুগের সীমাহীন বাস্তুর মালিক |
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
ঋত্বিকবাবু বেঁচে তাকলে
তবুও যাহোক ‘যুক্তি তক্কোর’ পরে একটা কোন “গপ্পের”
নায়িকা হিসেবে আমার আক্রান্ত যৌবনের
সায়াহ্নে একবার আশ্রয় পেতাম |
এখন ত বোঝার উপরে বোঝা হয়ে-----
সরকার, প্রজাতন্ত্র আর সংবিধানের
কঠোর শাসনে শেষ উচ্ছিষ্ট আমি |
. কি জানি তবুও তো শেষ সর্বনাশের
জন্য সামান্য শিকার বাস্তুহারা,
ইছামতী থেকে গঙ্গোত্রীর নৌকোর মাঝি
আমার দিন ও রাতের হাসিকান্না জুড়ে |
ক্ষমতার সিংহাসনের লাল নীল রাজাদের
বিকৃত মগজটাকে সুস্থ হ’তে সময় চাই প্রচুর,
শাসন শোষণ আর স্বজনপোষণের পর
যদি একটু অবসর, সেই মুহূর্তে আমাদের
অবহেলিত ইতিহাসের পাতা হবে খোলা
ততক্ষণে বুড়ি-গঙ্গার মেয়ের শাঁখা ভাঙ্গার পালা
ইছামতীর তীরে মৃতদেহে নানারকম মেলা
আর ষোড়শী অষ্টাদশী যত আমাদের মেয়ে
ব্যবসার সবচেয়ে ভাল আনাজের মত বাজার গেছে ছেয়ে |
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
ভাতে হ্যাংলা ভেবে
র দেখতে চাই
.
র মত সুস্বাদু মাংসের জন্য
ন করে দিই ওদেরকে |
.
স্মৃতি
বার প্রতিশ্রুতি
. বেশ্যালয়ে লক্ষ
. জন্মের মত
সত্বের কারাগারে
র করে রাখে |
শেষ রাতের সাক্ষী হয়ে
. ধর্ষণ করছে |
প্রদাহ
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী
ক্তি
আমাদের আজাদ করো
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী
. সত্তরের দশক ত শেষ হয়ে এল
ঝিমিয়ে পড়া ময়দান আর ক্লান্ত রাজপথ অবসন্ন,
সব কথা, আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি ছলনার চেয়ে
. আরও ভয়ঙ্কর,.
লড়াইয়ের জন্য যেটুকু রক্তপাত, তার মূল্যেই বিপ্লবীর
. হ’ল অবসর |
যতই শোনা যাক মৃত্যুর ডাক----
কোথাও কিছু করার উদ্যোগ নিয়মের
গণতন্ত্রের ধারাপাতের নামতা পড়েই চ
“এই মধ্যাহ্নে অনাবশ্যক হৈ-চৈ অথবা বিশৃঙ্খলা
তিরিশ বছরের স্বাধীনতার ফসল------
. কালো টাকা, সাদা টাকা, নির্বাচন,
সি.আর.পি গ্রামের বিদ্যুৎ, সাগরতলার
পার্লামেন্ট, বিধানসভা, পঞ্চায়েত আর
একটা পরিচ্ছন্ন একজিবিশনের প্যান্ডেলে
গণতন্ত্রের বিশ্বজোড়া কেতাবের সবচেয়ে
. ভাল মন্দ, খ্যাত অখ্যাত সব নে
নেই শুধু কোন তথ্য, কোন পাঁজি, গোত্র
.
ডান, বাম বা মধ্যর মতবাদের জালে এ
. ধরতে গেলেই গণতন্ত্রের কাঁচ ভে
কারা প্রাচীর ভাঙ্গতে
নির্ভীক পদধ্বনি
রীর নিয়মের পাঠশালার
পন্ডিতের হৃৎপিন্ডে কাঁপন ধরাক |
কারাগার ভেঙ্গে দিক-----
সিয়ে দিক মিথ্যের এই প্রাসাদ |
প্রভাতে আর অনাহারের মধ্যাহ্নে
ক্ষায় কোটি মানুষ |
কবার এসো |
ঈশ্বর, পৃথিবী, মৃত্যু
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী
অথচ আমরা সামান্য আ
. অসামান্য ভালবা
. ও বিধ্বস্ত কয়েক
. নিত্যকালের কা
. নির্বাণোম্মুখ কাল
. অমর কিছুর প্রত্যা
ফুলের গন্ধে মৌমাছির
নক্ষত্রের আলো আমাদে
মন্দিরের বিগ্রহ কোন
. শুধু অন
. এই লগ্নে
মৃত্যুর আগেই সব ক্ষমা
প্রস্থানের পরে হোক সা
আমাদের প্রত্যেকের ভা
এক এক তাজমহলের
ঈশ্বর পৃথিবী ও ভালবা
গঙ্গায় এসেছে জোয়ার-------
মন্দিরেতে আরতির খু
তবুও আকাশের সাদা
প্রান্তরের সোনালি সবু
চিরন্তন ভালবাসার স
. তাই এখনো
জোয়ারের ধ্বনিকে ছাপিয়ে দেবালয়ে শঙ্খ ঘন্টা ধ্বনি |
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
আমরা আসামী
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী
বাস্তুহারার উপন্যাস
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী
স্রোত থাকতেও ভাসতে
দূরম্ত বরষার ঢেউ যখন
তখন ও কামাখ্যার মন্দি
আত্মহত্যার চেয়েও নাকি
শেষ প্রতীক্ষা ভাল |
মিলনসাগরের থেকে নেওয়া কবিতা
সতের বছরের স্মৃতিতে
অষ্টাদশে শেয়ালদা থেকে
যন্ত্রচালিত পুতুলের মত
বাঁচার স্বাধিকারে প্রমত্ত |
আমি সংকোচের সীমানা
কলোনীর শেষ সম্বল হারি
. “লা