কবিয়াল রাম বসুর কবিগান
(উত্স - শ্রী কমলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, শাক্ত-পদ সাহিত্য ও শাক্ত-পদাবলী চয়ন)  


গিরি হে, তোমায় বিনয় করি আনিতে গৌরী,
.                       যাও হে একবার কালাসপুরে |
শিবকে পূজিবে বিল্বদলে, সচন্দন আর গঙ্গাজলে,
.                                 ভুলবে ভোলার মন |
অমনি সদয় হবেন সদানন্দ, আসিতে দিবেন
.                                       হারা তারাধন |
এনো কার্ত্তিক গণপতি, লক্ষ্মী সরস্বতী, ভগবতী
.                                 এনো মস্তকে কোরে |
জামাই যদি আসেন, এনো সমাদর কোরে |

শুনি পুরাণ চণ্ডিতে, পূর্ব-জন্মেতে উমা ছিলো
.                         দক্ষের মেয়ে, প্রসূতির মেয়ে,
শিব-নিন্দা শুনে, সেই অভিমানে,
.                           প্রাণ ত্যজিলেন দক্ষালয়ে |
আমি সেইটে করি ভয়, ঝি জামাই আনতে হয়,
এসো কৈলাসবাসীদের সব নিমন্ত্রণ কোরে |
নিশি সুপ্রভাতে, শুভ ষষ্ঠিতে শুভক্ষণ সময় ---
কোরে সংকল্প, ষষ্ঠির কল্পনা, কোরলেন হিমালয় ||
বলে পাষাণকে রাণী, সবিনয় বাণী,
আনতে যাও ঈশানী, মেয়ে দুঃখিনীর মেয়ে!
আমি দেখেছি স্বপন, যেন উমাধন
.                       আশা-পথ রয়েছেন চেয়ে ||
আছে কন্যা সন্তান যার, দেখতে হয় আনতে হয়,
সদাই দয়ামায়া ভাবতে হয়রে অন্তরে |
কোরবো চণ্ডীর বোধন বিল্বমূলে |
দণ্ডিগণ পড়বে চণ্ডী, পাবো চণ্ডী চণ্ডীর ফলে |
ঘটে চণ্ডী, পটে চণ্ডী, স্থানে স্থানে মঙ্গল চণ্ডী,
.                             চণ্ডীর কল্যাণে!
পাবো চণ্ডীর ফলাফল, হবে না বিফল,
.                  আসবেন মঙ্গল চণ্ডী সুমঙ্গলে ||
কন্যার মায়াছলে, ত্রিজগৎ ভোলে,
দেখলে আনন্দ হয়, নিরানন্দ যায় সদানন্দের মন ভুলালে |
শিবের নয়নের তারা ত্রৈলক্য-তারা |
দুঃখ-পসরা ত্রিনয়নী শিব-মোহিনী, গৌরীর আজ্ঞাকারী শিব |
নামে তরে' জীব, ভবতারণী ভবানী ||
আমার এমন ঝি-জামাই, জন্মে জন্মে যন পাই,
সদাই পূজা করি আমার মানস অন্তরে ||


.            ************************                                             
সূচিতে ফেরত


মিলনসাগর
(উত্স - শ্রী কমলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, শাক্ত-পদ সাহিত্য ও শাক্ত-পদাবলী চয়ন)  


[পাগল ও ভিখারী জামাতার খেদে এবং কন্যার বিরহ-বিচ্ছেদে মেনকার মর্মজ্বালা ]

গৌরী কোলে কোরে নগেন্দ্র-রাণী করুণ বচনে কয়,---
উমা-মা আমার সুবর্ণ-লতা শ্মশানবাসী মৃত্যুঞ্জয় |
মরি জামাতার খেদে, তোমার বিচ্ছেদে, প্রাণ কাঁদে দিবানিশি |
আমি অচল নারী, চলিতে নারি, পারি না যে দেখে আসি |
আছি জীবন্মৃতা হোয়ে আশাপথ চেয়ে, তোমায় না হেরিয়ে নয়ন ঝরে |
কও দেখি উমা, কেমন ছিলে মা, ভিখারী হরের ঘরে ?
জানি নিজে সে পাগল, কিছু নাই সম্বল, ঘরে ঘরে বেড়ায় ভিক্ষা কোরে |
শুনে জামাতার দুখ্ খেদে বুক বিদরে
তুমি ইন্দুবদনী, কুরঙ্গ-নয়নী, কণক-বরণী তারা ||
জানি জামাতার গুণ, কপালে আগুন, শিরে জটা, বাকল পরা |
আমি লোকমুখে শুনি, ফেলেদিয়ে মণি, ফণী ধ'রে অঙ্গে ভূষণ করে |
মরি ছি! ছি! ছি! একি ক'বার কথা, শুনে লাজে মরে যাই,
তোমা হেন গৌরী, দিয়েছেন গিরি, ভুজঙ্গেতে যার ভয় নাই,
.                                               মাখে অঙ্গেতে ছাই |
তুমি সর্বমঙ্গলা, অকূলের ভেলা, কূলে এনে দিতে পারো |
দেখে খেদে ফাটে বুক, তোমার এতো দুখ্ , সে দুখ্ ঘুচাতে নারো |
তুমি বাজার বালিকা, মায়ের প্রাণাধিকা, ভাগ্যেতে মা হলি শিব-দারা |
মরি দুঃখেতে শঙ্করী শঙ্কর ভিখারী, উপজীব্য ভিক্ষা করা |
সদা বলি মা গিরিকে, আনোগে গৌরীকে, কত কষ্ট উমার কৈলাসপুরে |


.                  ************************                                                   
সূচিতে ফেরত


মিলনসাগর
(উত্স - শ্রী সুকুমার সেন, বাংলা কবিতা সমুচয় )  


এতো ভৃঙ্গ নয়, ত্রিভঙ্গ বুঝি এসেছে শ্রীমতীর কুঞ্জে
গুণ গুণ স্বরে কেন অলি শ্রীরাধার পদে গুঞ্জে |
কৃষ্ণ বই কে আর আনতে পারে সই শ্রীরাধার বাসকুঞ্জে |
.          জানি শ্রীমুখে বলেছেন শ্রীকান্ত,
.          সীতাযোগ মধ্যে, তিনি ঋতুর মধ্যে বসন্ত,
.          আর পতঙ্গেরই মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ ভৃঙ্গরাজ
.                      নইলে ও কেন ও রস ভুঞ্জে ||


.                  ************************                                                   
সূচিতে ফেরত




মিলনসাগর
(উত্স - রমেশচন্দ্র মজুমদার, বাংলা দেশের ইতিহাস )  


ওগো চিনেছি চিনেছি চরণ দেখে ঐ বটে সে কালিয়ে
.           চরণে চাঁদ ছাঁদ আছে দীপ্ত হয়ে
সে চরণ ভজে ব্রজেতে আমায় ডাকে কলঙ্কিনী বোলিয়ে |
.           ভূবনমোহন না দেখি এমন ঐ বই
.           রূপ কি অপরূপ আ মরি সই
কুলে শীলে কালি দিয়েছি আমি
.           কালরূপ নয়নে হেরিয়ে |


.                  ************************                                               
সূচিতে ফেরত




মিলনসাগর
(উত্স - ডঃ শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র পাল, প্রাচীন কবিওয়ালার গান )  


পোড়া প্রেম প্রেম কোরে তোর্ পোড়ায়্
আমার জন্মটা গেল |
যতদিন হয়েছে মিলন্ ,
একদিন্ নাই তার্ কান্না বারণ্ ,
পোড়া শিবের দশা যমন্ ,
তাই আমারে হোলো ||
ভেবে ভেবে হৃদয়ের মধু হৃদে শুখালো |
আর্ তো দৃষ্টি পোড়ায়্ পুড়্তে পারি নে |
সোনার বর্ণ ছিল, কালি হোলো,
চোখের মাথা খেয়ে চেয়ে দেখিস নে ||
অনল্ নেবালে নিবে না সদাই উঠে জ্বলিয়ে,
বুঝি তোমা হতে প্রেমের সাধ্ ফুরালো ||

অনেকে তো অনেক্ পীরিত করে,
এমন দশা বলো কার |
কর্ম্মভোগের যেমন্ কপাল্ আমার্ ,
এমন খুঁজে মেলা ভার ||
অস্থি ভাজা ভাজা হোলো প্রেমের দায়
ভেবে তোর গুণাগুণ মনের আগুন্
জ্বলছে যেন রাবণেরি চিতা প্রায় ||
কেবল ঘরে দিলে দেখা, করিস মুখ বাঁকা,
গিয়ে আর্ আর্ লোকের কাছে থাকিস ভালো |


.         ************************                                                      
সূচিতে ফেরত




মিলনসাগর
(উত্স - ডঃ শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র পাল, প্রাচীন কবিওয়ালার গান )  


আমি প্রেম্ কোরে কি এত জ্বালা সই!
কেউ বলে না ভাল, কলঙ্কিনী বই ||
আমি তো কখনো কারো, মন্দকারী নই,
তবে কেন বলে গো লোক
কুলকলঙ্কিনী এলো ঐ ||

যে দেখে আমারে, সেই করে লাঞ্ছন ;
প্রাণ জুড়াবে কোথা স্থান নাই এমন,
ঘরে পরে করে গঞ্জনা
আমি মরমেতে মরে যাই ||


.         ************************                                                      
সূচিতে ফেরত




মিলনসাগর