তোমার পায়ের কাছে স্বপ্ন ছিল জলস্রোত ছিল, নক্ষত্র নিবিড় মৌন ছিল। আর গতি ছুল গতিহীনতার দিকে ; সময় মঞ্জরী। তোমার পায়ের নীচে থেকে যেন সৃষ্টির সূচনা আমি হাত রেখেছিলাম সেখানে শান্তির নিটোল বৃন্ত মুখ রেখে আমি নক্ষত্রপুঞ্জের সুগন্ধি নিলাম, সখি। মন্দিরে বিগ্রহ যদি কথা বলে, যদি দৈববাণী হয় অথবা সঙ্গীত যদি রক্ত মাংসের দেহ পায় আমি বিস্মিত হবো না। জানি না তোমার চেয়ে বড় আর কি রহস্য আছে ? তোমার পায়ের নীচে আমাকে অরণ্য হতে হবে সেখানে আমার মুক্তি, স্বভাবের স্বাভাবিকতায়। আমি তো ছিলাম পাথরে ছড়ানো বীজ, আলো হাওয়া যাকে দীর্ণ করে পল্লবের স্থির চরিত্র দেয় নি তাই মনে হতো ধ্রুব হল চোরাবালি, আর্তনাদ তবু দেখ আমার চোখের মণি জলস্রোতে ফুল আর দুই হাত তুলে নিল আরতির দীপাধার তোমার পায়ের নীচে বৃক্ষ হলে জাবনের নাম হবে শস্য, সমারোহ।
আমার স্থবির ঘুমে কী করে যে শিখাময় অগ্নি থেকে লাফিয়ে উঠলে, প্রেমিকা আমার, যার চিতা সাজিয়েছি নিজে শিল্পের মতন, যাকে অগ্নিলোকে দান করে বলেছি নীরবে বিকশিত হতে থাকো অপর্যাপ্ত বেদনা আমার।
তুমি কি আমার মধ্যে সুন্দর ক্ষতের মতে লুকিয়েছিলে বাক্যহীন, স্বপ্নহীন, স্মৃতিহীন ? ব্রিজেরওপর থেকে দেখা খসে পড়া নক্ষত্রের মতো অস্তিত্বের দিব্য ভাষ্য হয়ে ?
যে দিন চোখের নীচে খুন হল নদী, আজও মনে পড়ে আর্তনাদের সঙ্গে জড়াড়ি করা তোমার আর্তিএ শূন্যতাকে আঁকড়ে ছিল পিঙ্গল আঁধার ভয়ঙ্কর করে।
সমস্ত বিদায় বুঝি প্রশ্ন রেখে যায় : তা হলে কোথায় আমি ? চতুর্মাত্রিক বিশ্বের দেশকাল দাপিয়ে বেড়ায় সিংহ বহ্নিমান সসীমের নিষ্ফল অসীমে সমস্ত ‘কেন’-র বুঝি উত্তর মেলে না।
শুধু দেকে যাও শক্তিময় আকাশ ধরে আছে নক্ষত্রের প্রদীপ্ত ভাঁড়ার দ্যাখো ওই দীর্ঘ বৃক্ষ শূন্যতায় সমুজ্জ্বল আনন্দ এখন আদিম হাওয়ার নাচে প্রেমিকের কামনার লুব্ধক নক্ষত্র সে যে ফোটন ঝর্ণা আলোর-তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে রামধনু হয়।
এই তবে বৈশ্বিক মূর্চ্ছনা ? বুকের কোমল দ্বীপ ? নির্জন গোলাপ ? প্রেমিকা আমার, জাহরণে তুমি প্রেম হয়ে গেলে।
ভয় ও উদ্বেগের কালিমাড়া মুখের ওপর তোমার পাঁচটি আঙুল পাঁচটি নদী, পাঁচটি গোলাপের কান্না।
বিদ্যুতের অভিযান যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু আমার স্বপ্ন এখন যাকে কাঁটাঝোপ গলা টিপে মেরেছে।
বাঁচার টানে আমার মুখের আদল বহুবার বদলে গেলেও আমি কখনও এত শূন্যতা দেখিনি, এত সাপ আর দুর্গন্ধ।
ঠাকমার মুখে শোনা রূপকথার ঘ্রাণ এখন বন্দীর চোখে তার প্রেমিকার মুখের মতো রোমাঞ্চকর যন্ত্রণা।
ঘূর্ণিঝড় সব বাতিঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে বলে দুই বাহু জীবনের দিকে বাড়ানো ছাড়া আত্মরক্ষার আর পথ নেই।
সব নকশা যখন নীরক্ত বুদ্ধির প্রতিজ্ঞা তখন আমি মূর্ত কিছু নির্মাণের কথা বলি। আমি বলি : . ১. জীবনের জন্য ব্যূহ তৈরি করো . ২. মরণের জন্য ব্যূহ তৈরি করো . ৩. প্রেমের জন্য ব্যূহ তৈরি করো
হৃত গৌরবের বিবর্ণ দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে আমার স্বর বারবার আমার বুকেই ফিরে আসে, বারবার আমাকেই জাগায়।
যারা চক্রান্ত ক’রে জীবনকে কলঙ্কিত করে তারা ঘৃণ্য, ঠিক সমান ঘৃণ্য তারাও যারা ভুলিয়ে ফাঁদের ফাঁস পরায়।
এখানে প্রতারণার সমৃদ্ধ রৌরবে সময় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে। তা হোক, তবু পাত্র ভরে নিতে হবে রেণুর মদে, হ্যাভারসাকে ভরে নিতে হবে উদ্ভিদের অভিজ্ঞতা, রৌদ্রের গন্ধ। কারণ মাটিতে পা দেওয়ার চেয়ে আর কী গভীর রহস্য কোথায় আছে ?
অপদেবকার নখে মুখের মাংস উঠে গেলেও আমার অন্ধকার দিগন্তের ওপার থেকে শূন্যতে পাই রিক্ত সরাইখানায় ডাকছে তিতির।
বুদ্ধির নীরক্ত প্রতিজ্ঞা সরিয়ে আমি বলি : . ১. জীবনের জন্য ব্যূহ তৈরি করো . ২. মরণের জন্য ব্যূহ তৈরি করো . ৩. প্রেমের জন্য ব্যূহ তৈরি করো