কবি শৈল চক্রবর্তীর কবিতা
তর্কনিধি
কবি শৈল চক্রবর্তী

তর্কনিধি দাওয়ায় বসে পড়ায় আছেন মগ্ন
বাড়িটি তাঁর কাঠ বিচালির ঈষৎ ছিল ভগ্ন
গ্রামের পাশে নদীর জলে গিন্নী গেছেন ঘাটে,
বিদ্যেভরা তর্কনিধি মগ্ন আছেন পাঠে
আপন মনে চক্ষু বোলান ব্যাকরণের পাতায়
বর্ণ থেকে সন্ধি ছেড়ে শব্দরূপেক মাথায়।
ভাষায় কত বর্ণচোরা শব্দ ঢোকে নিত্য
দেখলে পরে তর্কনিধির হাড় জ্বলে আর পিত্ত।
নিরেট যারা লিখছে তারা জানছে কি তার অর্থ ?
মূর্খ যারা কথার ভুলে অর্থ করে ব্যর্থ।
শুদ্ধাশুদ্ধের শ্রাদ্ধ করে বানান করে ভুল
সমাস নিয়ে সমস্যাটা হচ্ছে তাহার মূল।
মানছে কে আর ব্যাকরণের বিধান কড়াক্রান্তি
উচ্চারণে তাই ত আসে শুদ্ধভাষার ভ্রান্তি।
তর্কনিধি নস্য টিপে নাকটে করেন বন্ধ
এমন সময় লাফিয়ে এলো ভজু হন্তদন্ত।
বললে, “ওগো গুরুমশাই হলো সর্বনাশ।”
তর্কনিধি বলেন “প্রাণে জাগছে ভীষণ ত্রাস।”
ভজু বলে, “ মাঠান বুঝি যায় কুমীরের পেটে।”
তর্কনিধি বিষম রেগে চশমাটারে এঁটে---
বলে ওঠেন, “হতভাগা করলি চক্ষুস্থির।
কুমির কুমির করিস কেন, ওটা যে কুম্ভীর!”

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চলতে জানো ?
কবি শৈল চক্রবর্তী

ছি ছি তোরা নাবালক কত আর বলব
বকে বকে কতা আর সাথে সাথে চলব!
এইতো সেদিন এক টুপি-আঁটা ফক্কর---
আনমনে চলছিল খেল এক ঠোক্কর।

ঠোক্কর বড় জোর ইটে নয় রাবিশে
খেয়ে এক ডিগবাজি খেল যেন খাবি সে।
কত হয় হরদম পথে ঘাটে নিত্যি,
দমাদম পড়ছেই দমে যায় চিত্তি
পথ দেখে দেখে চল্ চোখ চেয়ে চলবি---
জোরে যাও ছুটে যাও ধীরে পা’টি ফেলবি!

ঢিল ঢেলা কত আছে পড়ে আছে ময়লা
কাচভাঙা আলপিন হতে পারে শেওলা।
লেবু কী কলার ছোবা যাই হোক যেও না
যাই হোক বাপু হে কুপোকাত হোয়ো না।

উটমুখো হয়ে যারা গটাগট্ চলে যায়
তালকানা তাহারাই হোঁচটেতে থেঁতলায়।
ঊর্ধ্বে যাহাই থাক চাও  জোর এক আনা
ডাইনে বাঁয়েতে মোট চোখ রাখ তিন আনা।
পিছনে দু’পাই ধরো বাকি সব সামনে
এরকম নজরে চলো খুশি য্যামনে।

কট্ কট্ করে চাও চলবে না আড়চোখ।
চুলচেরা ও হিসেব শোনে যদি সব লোক---
আছাড়ের ইতিহাস ফাঁকা হবে পাতা হো
বেমালুম উপে যাবে পতনের গাথা হে।
থেমে যাবে ঢিপঢাপ পতনের ঝাঁপতাল
গত হবে ধুপধাপ পতনের দিনকাল।

আইডিন, ব্যান্ডেজ ফিরে যাবে ভোল্ রে ?
হা-হা দ্যুম্ একি হল---হাত ধরে তোল্ রে।

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
setstats
আঁকতে পারো ভুতে?
কবি শৈল চক্রবর্তী
কবিতা এবং উপরের অলঙ্করণ যামিনীমোহন কর সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার
ফাল্গুন ১৩৫১ (ফেব্রুয়ারী ১৯৪৫) সংখ্যা থেকে নেওয়া। অলঙ্করণ কবির নিজের করা।

আমরা কেবল এই পাতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নিয়েছি।



খ্যাঁস্ খ্যাস্ কাগজেতে টানলে কি ছবি হয়?
দেখে যাক বেরসিক ছবি আঁকা কারে কয়।
কালি আর রং তুলি ধরা বেশ শক্ত,
কালি মেখে ভুত সাজে যারা ছবি ভক্ত।

ভক্তেরা হরদম ঘযে কেন রবারে
পটুয়ার কাজ কি এ? বোঝাবো তা সবারে।
দিন-রাত কসরৎ দিন-রাত ভাবনা
হয়রাণ হয়ে ভাবি খাবো কি না খাবো না।

সাধনায় সিদ্ধি বলে শুধু বোকারা
সিদ্ধির সরবৎ খায় বুড়ো খোকারা।
দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদে খাবি খায় শকুনি
ছাতে বসে ছবি আঁকি, খাই খাব বকুনি।

বিদ্ঘুটে বাতাসের ছম্ ছম্ আওয়াজে
খাঁ খাঁ করে মাঠখানা মেতে যাই রেওয়াজে।
খ্যাস্ করে টেনে যাই মশগুল আবেশে
বদ্ভুত চরে যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে আকাশে।

এঁকে ফেলি অদ্ভুত লিকলিকে চেহারা।
পাঁকাটির খাঁচা নিয়ে ওড়ে যেন বেহারা।
তার পর অদ্ভুতে এঁকে ফেলি পোঁচড়ে
অদ্ভুত ভুত নয়, মুড়ি খায় কোঁচড়ে।

কিম্ভুত হেসে ফেলে তবু চোখে জল তার
বিচ্ছিরি মুখখানা তেঁতো খেয়ে পলতার।
লোম্বুত লোমে ভরা কাঁদ কাঁদ চাহনি
এঁকেছি তা হুবহু, দেখেছ কি দ্যাখনি?

মোম্ভুত মোলায়েম পিছলেই সরে সে
ব্যাঙাচির ভক্ত ল্যাজ দিয়ে ধরে সে।
রোম্ভুত বোম্ বলে বোমা যেন ফাটালে
হেঁচে হেঁচে নাজেহাল, খুসী হয় কাঁটালে।

আরও কত ভুতেদের ছবি আঁকি কাগজে
কিনবে কি খান দুই? ঢুকবে কি মগজে?

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভুলের সাজা
কবি শৈল চক্রবর্তী
কবিতা এবং অলঙ্করণ যামিনীমোহন কর সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার
ফাল্গুন ১৩৫১ (ফেব্রুয়ারী ১৯৪৫) সংখ্যা থেকে নেওয়া। অলঙ্করণ কবির নিজের করা।
আমরা কেবল এই পাতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নিয়েছি।


ভুল যদি করে কেউ ভুল তারে বলে না
বড় বড় ভুল অত দিনে-রাতে ঘটে না।
ডালনায় নুণ দিতে ভোলে বটে রাঁধুনি
টাকা দিতে ভুলে কেউ কাঁদে নাকে-কাঁদুনী।

বর্ষায় ক’টা নদী ক’টা গাছ চায়নায়
এ রকম ছোট ভুল হিসাবে কি ধরা যায়?
আকবর ছিল বোকা চেঙ্গীস্ সাধু লোক
বুদ্ধের দাড়ী নিয়ে ভুল করে কত লোক।
গাছে উঠে একদিন পাকা জাম পাড়িতে
এক পাটি স্যাণ্ডাল ফেলে গেনু বাড়ীতে।
ভূগোলের পড়া দিতে এঁকে দিনু বৃত্ত
ত্রিভুজেরা বাহু তুলে করে যেন নৃত্য।
বটাইএর খাতাখানা দেখেছ কি অম্নি
মাস্টার চটে মটে লিখে দিল শূন্যি।
ভুল বটে হয় তার ভুলো তার নাম তাই
জাঁদরেল মামা তার দিছলো কি মারটাই।
সেই মামা একদিন কামানোর চেষ্টায়
নাপিতের আড্ডায় ঢুকলো সে শেষটায়।
ক্ষুর ধরে প্যাঁচ প্যাঁচ চটপটে নাপিতে
চেঁচে দিল দাড়ীখানা দেখিতে না দেখিতে।
*
হাত পেতে দাম চায় চেয়ে থাকে কেউ বা
পকেটেতে হাত দিয়ে মামা কাটে জিহ্বা।
“ভুল ক’রে জামাটা ছেড়ে আসি ব়্যাকেতে
পকেটেতে আছে তার টাকা মনি-ব্যাগেতে।
ছেড়ে দাও এক ছুটে এনে দিই দামটা।
জুচ্চুরি নয় এটা---হ’ল বদনামটা।”
“তাহা নয় তাহা নয়” হেঁকে কয় নাপিতে
গুণ্ডার রাজা যেন লাগিল সে কাঁপিতে।
“যাবে কোথা বাপু হে খালি ট্যাঁক বাজায়ে
থাকো হেথা তত দিন দাড়ী যাক গজায়ে।”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মামা ছিল সেথা আট্ কা
তিন দিন পরে ফেরে দাড়ী নিয়ে টাট্ কা।
এর পর কোন দিন ভুল তার হয়নি
জামা ছেড়ে কোন দিন কামাতেও যায়নি।

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর