কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

৭৭
একটি রুমাল আমি পাই নাই কোনদিন খুঁজে
মহিলা-যাত্রীদের কামরায় খুঁজতে উঠেছি
কখনো গিয়েছি ট্রামে কলুটোলা নার্স-কোয়ার্টারে
খুঁজেছি অনেক আমি মানসের বোনের সহিত |
ছাত্রী-নিবাসের কাছে প্রতিদিনই ঘুরতে গিয়াছ্
এমনই মারাত্মক রুমালের স্বার্থে, বিপর্যয়ে
কখনো পড়েছি আমি, কাটিয়ে উঠেছি ফের, তবু
গিয়েছি দোকান হতে দোকানির নিভৃতির কোণে |
বহুদিন বাদে কালই খবর পেয়েছি মধ্যরাতে
ও-প্রান্তে রুমাল শুরু করিয়াছে খুঁজিতে আমায়
পথে নামিয়াছে কিংবা উড়িয়াছে খবর পাই নাই
হায়, ওর খোঁজা হবে মানুষের সাহায্য ব্যতীত |
আমি পুরস্কার ঘুড়ি ফানুশ কতই উড়ায়েছি—
রুমালের কাছাকাছি ঘুরিয়াছি আমিও অনেক |

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

৭৯
কমলালেবুর মতো আরো একজন খুঁজেছিলো
আমারে বোঝাবে—তারও দূর-হতে-আনা ব্যবসায়,
পারে কি ভজাতে ? শেষে বলে গেলো, আসবে প্রতি সনে
কাশ্মীর গড়িয়ে দিলো এইভাবে পশমের বল |
মনোহরণের মাঝে শারীরিক সমর্পণও আছে
মনের শরীরও কিছু কম নয় !  বেশ্যাবৃত্তি শুধু
শরীর ও রক্ত দিয়ে খালাসের ব্যাপার বলেই
প্রচারিত হতে থাকে – একইভাবে প্রচারিত হয়
গোধূলির আলোকগুলি, মর্মের চামরীগাইগুলি
অটুট রমণী দেখে একইভাবে রসপাত ঘটে
মেধায় চলে না অঙ্গ-সঞ্চালন কিংবা মুষ্ট্যাঘাত
নির্যাতন চলে জোর মুখশ্রীরে মুখোশ বানাতে
পাংশু ও কর্কশ নখে ছেঁড়া যায় শালের মাফলার
মাফলার হৃদয় নয়, ভারি নয়, ভারি নয়, বিবরণহীন |

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

৮৫
সাবলীলভাবে আমি ভালোবাসা বাসিব তোমারে,
দুটি হাত ধ’রে কথা যেন কর্ণেরে উন্মুখ
করে, মুখে বোধময় হাসি ও তামাশা একযোগে
উপস্থিত হয় যেন, আঁখির পলক যেন পড়ে,
তুমি তো বাদলে নাই কিংবা বাষ্পহীন কোনো ঘরে,
আছো হে আছোই তুমি স্মরণীয় মাধবীলতায়
অন্য কোনোখানে নাই, যবে আছো আমার সম্মুখে
সাবলীলভাবে আমি রহস্যের অননুবর্তিনী |
ভুলে যাও বিকালের আলোগুলি, চামরীগাইগুলি
ভুলে যাও আমাদের সনাক্ত প্রেয়সী, ও সম্বার—
ও সম্বার ভুলে যাও সেই পুরাতন পাখাগুলি
উড়োজাহাজের মতো ঘোড়াগুলি, হাওদায় মাহুত
সব কিছু ভুলে যাও, ও সম্বার ভুলো না আমারে
সাবলীলভাবে আমি সকলেরে বাসিয়াছি ভালো |

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

৯৫
শব্দ গুলিসুতো, তাকে সীমাবদ্ধ আকাশে ভাসতে
আমার পেট্ কাটি চাই, কিংবা কাঁথা, মায়াভরা পাড়
সংসারে গেরস্ত-মেজে জুড়ে থাকবে মাটির উপরে—
এরই নাম ভালোবাসা, এরই নাম চড়ুই মুখর
কাঁচা কিছু মানুষের বেঁচে থাকা –ইটে, খোড়োঘরে :
সামর্থ্য বাসনা মিশে এ এক মায়াবী ছেলেখেলা !
তোমরা, যারা বড়ো, তারা শ্রুতি বন্ধ ক’রে থাকো দূরে
আমি ভালোবাসবো, জানি গাছে ফুল ফোটানো দুষ্কর
খর জল মূল খায়, জানি শাদা পিঁপড়ের ফুরফুরে
শত্রুতা ; অবশ্য জানি, শব্দ কতো আদর্শ নির্ভর—
শব্দ কোলজোড়া ছেলে-হাসে কাঁদে, হিসি করে বুকে
খুচরো ক’রে দেয় টাকা এবং সোনালি সম্বিৎ
তাকে করে তামা, গায়ে জামা নেই, নুঙ্কু নতমুখ—
এ-ভাবে শব্দকে জানি, একদিন তারও মৃত্যু হবে !

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

৯৬
ঠিক কী কারণে গেলো বোঝা ভার, কিন্তু গিয়েছে সে
জলের সাঁতারে তেল কিংবা বলা ভালো সে গন্ধের
ভিতরের তীব্র, তাই বয়ে গেছে ভার, কিন্তু গিয়েছে সে |
তাকে তো চিনতো না কেউ, আমরাও অস্পষ্টভাবে জানি
তবু তারই জন্য সব আগোছালো গুচ্ছে সাবধানি
মায়ার অঞ্জনকাঠি, কাঁথা ও কল্পনা ক্রমে মেশে—
ঠিক কী কারণে গেলো বোঝা ভার, কিন্তু গিয়েছে সে |
একমুঠি স্পষ্ট মাংস, ঠাণ্ডা-হিম যেমন প্রকৃতি
পাংশু ও নিশ্চেতন, তেমনি সে, মৃত্যুর লাঞ্ছিত
সদাগর কিংবা যেন আমারই মুখের অনুকৃতি !
ভুলে যাবো, ভাড়াটে যেমন ভোলে পরাশ্রয়, পেলে
অবশ্য নতুন, শুধু মাঝে মাঝে অযুক্তি-কল্লোলে
ভেসে উঠবে মাংস, মুখ নিদ্রাতুর, বিষণ্ণ, করুণ ||

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর