এই জীবন্ত নাটকের নাট্যশালায় কেউ হাহা হিহি হাসছে, এই ঘুরন্ত মঞ্চের অন্তরালে চোখের জলে কেউ ভাসছে || রূপকথা নয় তবু রূপকথা মনে হয়, আছে কত কাহিনির লজ্জা----- কেউ রাজা হবু আর কেউ গবু মন্ত্রী, চকমকি বাহারের সজ্জা | হাসি আর কান্নার, হৈ চৈ হল্লার একটানা সুর ভেসে আসছে || এই কানামাছি জীবনের ভোজবাজি নাটকের নায়ক আর নায়িকার গল্প---- হায়, চোখ বাঁধা রয় কারও চোখ থেকে অন্ধ---- শোন সব কাহিনী সেই অল্প | কেউ আলাদিন সেজে হায় যত সুখ মন চায় সবটুকু তার খুঁজে পাচ্ছে, কেউ আলিবাবা হয়ে ভাই হিজিবিজি রাস্তায় সারাদিন ঘুরপাক খাচ্ছে | এত ব্যথা পেয়ে মন তবু কেন অকারণ মনকে ফের ভালোবাসছে ||
সরস্বতি বিদ্যেবতী তোমায় দিলাম খোলা চিঠি একটু দয়া কর মাগো বুদ্ধি যেন হয় এসব কথা লিখছি তোমায় নালিশ করে নয় |
শুনলে তোমার দুঃখ হবে মাগো কোন দেশেতে ধান বেশী হয় কোন দেশেতে গম মনে আমার থাকে নাযে কোথায় হনুলুলু ভূগোল দেখে তাই মনে হয় বুক-ঢিপ ঢিপ যম দোষ বলো কার পরীক্ষাতে যদি করি ভয় এসব কথা লিখছি তোমায় নালিশ করে নয় |
সত্যি কথা বলছি তোমায় মা-গো গুরুমশাই যখন- তখন কানটা ধরেন এসে বলেন, পাজী হাডু-ডু-ডু ,কেবল খেলা খেলা অঙ্ক ভূগোল ইংরাজীতে গোল্লা খাবি শেষে
শুনলে তোমার দুঃখ হবে মা-গো অঙ্ক মাথায় ঢোকে নাযে নতুন ধারাপাত কিলো মিলো হেক্টো-ডেকা ধাক্কা খেয়ে শেষে লিটার মিটার গ্রাম দিয়ে সব ধুলোয় কুপোকাত ছোট, মাথায় কত ধরে তাইতো লাগে ভয় এসব কথা লিখছি তোমায় নালিশ করে নয় |
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সুর ও শিল্পী - ভূপেন হাজারিকা
আমি এক যাযাবর পৃথিবী আমারে আপন করেছে ভুলেছি নিজের ঘর আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভলগার রূপ দেখেছি অটোয়ার থেকে অষ্ট্রিয়া হয়ে প্যারিসের ধুলো মেখেছি | আমি ইলোরার থেকে রং নিয়ে দূরে শিকাগো সহরে গিয়েছি গালিবের ‘শের’ তাসখন্দের মিনারে বসে শুনেছি | মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কির কথা বলেছি বারে বারে আমি পথের টানেই পথকে করেছি ঘর || বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন আমার রয়েছে পণ, রঙের খনি যেখানে দেখেছি রাঙিয়ে নিয়েছি মন | আমি দেখেছি অনেক গোলাপ বকুল ফুটে আছে থরে থরে, আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা ঝরে গেছে অনাদরে, প্রেমহীন ভালবাসা দেশে দেশে ভেঙেছে সুখের ঘর | পথের মানুষ আপন হয়েছে, আপন হয়েছে পর, তাই আমি যাযাবর ||
মূল রচনা ও সুর - ভূপেন হাজারিকা বাংলা রূপান্তর - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পী - ভূপেন হাজারিকা
( শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানের সংকলন “গঙ্গা আমার মা পদ্মা আমার মা” বইটিতে এই গানটি নেই। গানটি এভাবেই আমরা সংগ্রহ করেছি অন্যখান থেকে। তাই আমরা সঠিক জানাতে পারছি না যে গানটি আসলে কার রচনা, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের না ভূপেন হাজারিকার। )