কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
মহাপ্রভু
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

প্রেমের জোয়ারে জগত মাতালে
ধর্ম রচিলে সবার জন্য
কৃষ্ণাবতার  হয়ে এলে
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য।

আসবে তুমি বলেছিলে
যখন ধর্ম হবে বিপন্ন
তাই হয়ে এলে  ঘরের ছেলে
নদের নিমাই  তুমি অনন্য।
জগাই মাধাই গিয়েছে তরিয়া
জগতে তোমার জন্য।

যখন বেরোলে ঘরটি ছাড়িয়া
জলেতে ভরিল জননীর হিয়া
বিরহে কাঁদিল বিষ্ণুপ্রিয়া
পাপী তাপী হল ধন্য।

জাতের নামেতে মানুষ যখন করেছিল হানাহানি
সবার মাঝারে বিলায়েছ প্রেম বুকেতে লয়েছ টানি।
হিংসা ভুলালে হরিবোল দিলে অবতার তুমি মানি
প্রয়োজন হলে ধরার মাঝারে আবার আসিবে জানি।  

তোমার পায়েতে নত করে মাথা যত পন্ডিতদল
তোমার সমুখে হার মেনেছিল কাজির বাহুবল
তোমার ভক্ত হইল শক্ত এবং যারা  কোমল
তোমার গানের প্রেমরসে মজে দুনিয়া হল পাগল।

আজকে সমাজ বিভেদদীর্ণ  মানুষ চায় বদল
ধর্মের নামে করে মারামারি জাতের নামে কোঁদল
নেমে এস প্রভূ সবার মাঝারে করে দাও এক দল,
মহাপ্রভূ শ্রীচৈতন্য সব ভরসার স্থল, তুমি শেষ সম্বল।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
দুর্গানাম
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

শিউলি ফুলে  গেছে ঢেকে
শিশির ভেজা ঘাস
দুর্গা ঠাকুর আসছে ধরায়
করতে অসুর নাশ।
কাবুল জুড়ে তালিবান
নির্বিচারে নিচ্ছে প্রাণ
দুর্গা মাগো কোথায় তুমি
থামাওনা  এই  রক্তস্নান
আমেরিকায় জ্বলছে আগুন
জঙ্গলেতে দাবানল
মেরুদেশে গলছে বরফ
সমুদ্রেতে বাড়ছে জল
সৃষ্টিটাকে রক্ষা করো
বাঁচাও মাগো সবার প্রাণ
ত্রাহি ত্রাহি করছে মানুষ
ধ্বংস লীলার  হোক অবসান
ভুল করেছে তোমার ছেলে
ক্ষমা করে নাওমা কোলে
রোগ ব্যাধি সব নাওনা তুলে
শিশুর হাসি ভরাক প্রাণ
যা গেছে তা যাকনা চলে
হাসতে হবে সবাই মিলে
আয়না সবাই দুঃখ ভুলে
করি মায়ের জয়গান
দুগ্গা ঠাকুর এলো বলে
অসুখ বিসুখ যাবে চলে
প্রাণ খুলে সব জয়মা বলে
আবাহনীর ধরনা তান
ভরসা রাখিস মায়ের উপর
মায়ের কৃপায় শক্তিমান
দুর্গতকে রক্ষা করেন
তাইতো মায়ের দুর্গা নাম।
দুর্গা জপো দুর্গা গাও
দুর্গা নামেই পরিত্রাণ
শেষের  বেলায় রাখিস মনে
মায়ের মধুর দুর্গানাম

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পথ ভোলা রথ
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

আষাঢ় মাসের আকাশ জুড়ে কালো মেঘের খেলা
সময় হলো বসবে এবার পাড়ায় রথের মেলা।
গরম গরম পাঁপর ভাজা সঙ্গে মাটির পুতুল
রথ চলেছে হেলেদুলে গান ধরেছে বাউল
রথের ভিতর আছেন বসে ঠাকুর জগন্নাথ
চোখ রেখেছেন সবকিছুতে নেইকো দুটি হাত
রথ চলেছে মাসির বাড়ি পথেতে মসজিদ
চলছে সেথায় নামাজ পড়া আসছে খুশির ঈদ
হঠাৎ করে জগন্নাথের মাথায় কি যে হল
বলেন তিনি আমায় নিয়ে মসজিদেতে চলো
পন্ডিতেরা টিকি নেড়ে বলে তা কি হয়?
মসজিদে তো আল্লা থাকে কৃষ্ণ নাহি রয়
ঠাকুর বলেন এই বুঝেছিস ধর্ম এতদিনে?
আল্লাহ ইশা কৃষ্ণ সবাই এক – এটা রাখ্ জেনে
মসজিদে মোর মাসি আছে দোরগোড়াতে বসে
দিন দুঃখী  ভিখারিনী হাত গিয়েছে খসে
রথের চাকা ঘুরে গেল মসজিদেরই পানে
পন্ডিত আর ভক্তবৃন্দ সবাই অবাক মানে
মসজিদেরই দোরগোড়াতে থামলো এসে রথ
ভিখারিনী ছিল বসে ঠিক সামনের পথ
যেমনি হলো দুইজনেতে দৃষ্টি বিনিময়
ভিখারিনী হারানো হাত আবার ফিরে পায়
কেঁদে বলে ভিখারিনী এসো গোপাল এসো
মসজিদেতে থাকি আমি একটু হেথায় বসো।
ঠাকুর বলেন থাকব আমি বসে তোমার পাশে
উল্টোরথে ফিরব ঘরে যখন তিথি আসে
মাসি তুমি খাইয়ো আমায় ভিক্ষা করা অন্ন
চাইনা আমার ছাপ্পান ভোগ, ওতেই হব ধন্য।
ভক্তরা সব অবাক হয়ে তাকায় এ ওর মুখে
মৌলবীরা আল্লা বলে কৃষ্ণকে নেয় বুকে
এমন দিন কি আসবে কভু থাকবে না কো জাত
সবাই যেদিন মানবে একই আল্লা জগন্নাথ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
যদি সত্যি এমন হয়
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

ভারি মজা ভর্তি হব প্রাইমারী ইস্কুলে
বয়স এখন কেবল ৬০ পড়ব না কো মুস্কিলে
সবাই জানে শূন্য খানার নেইতো কোন মূল্য
তাইত বলি ৬০টা  ঠিক ৬ বছরের তুল্য
আছে সবই জানা শোনা
করবোনাকো পড়াশোনা
খেলব সবাই প্রাণভরে আর হাসব সারাদিন
মা বাবা নেই বকবেনা  কেউ
পরীক্ষা নেই – করোনা ঢেউ
বছর গেলে বসব সবাই পরের ক্লাসে গিয়ে
বছর কুড়ি থাক করোনা
ইঞ্জিনিয়ার আবার হ’না
৮০ হলে করবো বিয়ে নতুন বৌয়ের সাথে
ততদিনে পুরানো বউ উঠতে পারে খাটে
আর যদিও থাকে বেঁচে
গোঁফ দাড়ি সব ফেলব চেঁচে
নতুন রুপে নতুন নামে নতুন পরিচয়
এ সব শুধুই কল্পনা মোর সত্যি কিছু নয়
পাগল আমি হইনি মোটেও পেয়োনাকো ভয়
মাঝে মাঝে ভাবি যদি সত্যি এমন হয়।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মা আসছে
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

কাশের বনে লাগল দোলা
আকাশে মেঘ ভাসছে
সবার মনে খুশির ছোঁয়া
আসছে রে মা আসছে
অনেক হলো অসুখ বিসুখ
দুঃখগুলো ধুলোয় মিশুক
দিঘির জলে ফুটল শালুক
প্রকৃতি আজ হাসছে
আবাহনীর গানের সুরে
আকাশে মেঘ ভাসছে
বছর ঘুরে ঢাকের বোলে
মনটা আবার নাচছে
সকাল বেলায় শিউলি ফুলের
গন্ধ হাওয়ায় ভাসছে
দুর্গতি সব সরিয়ে দিতে
মা দুর্গা আসছে।
মায়ের কাছে প্রার্থনা
মারো অসুর করোনা
আবার যেন দেখতে পারি
মন খুলে সব হাসছে
আশায় আবার বুক বেঁধেছি
মা দুর্গা আসছে।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমরা সকলে
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

আমরা সকলে মিলেছি আবার তিরিশ বছর পরে,
কেউ রয়ে  গেছে বিদেশে এখনো কেউবা ফিরেছে ঘরে।
অনেকে এখনো চাকরিতে আছে  বাকিরা আয়েস করে
কি পেলাম আর কি যে হারালাম কি হবে হিসাব করে?
অতীতের সেই ফেলে আসা দিন সবার স্মৃতিতে আজো অমলিন
কে জানে কেমনে পেরিয়ে এলাম মাঝে এতগুলো দিন
মুখেতে এসেছে বয়সের রেখা চুলে ধরে গেছে পাক,
চোখেতে উঠেছে চশমা সবার কারোবা মাথায় টাক।
ছেলেমেয়ে নিয়ে বড় সংসার, সামলাতে গিয়ে হই জেরবার
তবু মনে পড়ে কলেজে যখন ছিলাম আমরা ব্যাচিলার
পড়াশুনা আর হাসি মজা ছিল, অন্য চিন্তা ছিলনা আর।
তিরিশ বছর চাকরি করেছি দেখেছি নুতন দেশ,
নতুন বন্ধু হয়েছে অনেক রয়েছে স্মৃতিতে রেশ
তবু ভুলিনিকো কলেজের দিন, সেই স্মৃতি আছে ফ্রেশ
তাইতো আজকে মিলেছি সকলে, সত্যি লাগছে বেশ,
মনে হয় যেন অতীতেই আছি কিছু হয়নিকো শেষ।
কত কথা আজ মনে পড়ে যায় মনে পড়ে কত গল্প
লিখতে বসলে বই হয়ে যাবে সময় রয়েছে অল্প
আজ তাই থাক এটুকুই শুধু আবার মিলব পরে
প্রার্থনা করি থাকুক শান্তি তোদের সবার ঘরে
বাকি দিনগুলো কেটে যায় যেন হাসি আনন্দ ভরে
ওগো দয়াময় এই শুধু দিও মোদের করুণা করে।
জনে জনে যেন প্রেম দিতে পারি মুখে যেন হাসি ঝরে,
অন্তিমকালে রেখো মা চরণে অতনু মিনতি করে।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মামদো
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

দাঁড়িয়ে ছিলাম ছাদের উপর
ভরসন্ধ্যাবেলা
হঠাৎ মনে হল যদি
ভূতে মারে ঠেলা?
যেমন ভাবা ঘুরে দেখি
ভুল নয়কো সন্দ--
ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে
মিশকালো এক মামদো।
ভয়েতে মোর হাত পা ঠান্ডা
ভাবি পালাই দুরে—
মামদো বলে ওরে ওরে
ডরাস কেন মোরে?
দেখতে আমি এমন হলেও
মেজাজ আমার ঠান্ডা
ভালো যদি বাসিস আমায়
রইবো হয়ে বান্দা
সেই থেকে মোর ভাব হয়েছে
মামদো ভূতের সাথে
রোজ সকালের কবিতাটা
দেয় সে আমার হাতে।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোটের খেলা
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

ও ভাই জমে গেছে ভোটের খেলা বঙ্গে-
কালকে ছিল ঘাসফুলেতে সব ধর্মের সঙ্গে,
আজ সকালে হিন্দুপ্রেমে গেরুয়া দেয় অঙ্গে।
গরীব মানুষ মরছে খিদেয় করোনা তরঙ্গে,
নেতারা সব মাথা ঘামায় জিতেঙ্গে ইয়া হারেঙ্গে।
ড্যাম কুড়কুড় বাদ্যি বাজে এসে গেল ভোট-
কারো দলে ঘোঁট পেকেছে কেউ বেঁধেছে জোট।
কেউ বেঁধেছে পাগড়ি মাথায় কেউ পরেছে কোট,
কেউ দিয়েছে সাইকেল আর কেউ দিয়েছে নোট।
ঠাঠা রোদে গ্রামের মানুষ এসেছে মিছিলে-
বড় বড় মন্ত্রীগুলো অনেক কথাই বলে,
চুকে গেলে ভোটের খেলা যে যার যাবে চলে।
প্রতিশ্রুতির কথাগুলো বেবাক যাবে ভুলে-
চাষী মজুর পোড়া কপাল হায় আল্লা বলে,
হেলিকপ্টার আসবে আবার পাঁচ বছর পেরোলে।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিমূলতলা
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

আজ ঘুম ভেঙ্গেছে কোন সকালে
কেন জানিনা-
আজ পড়ছে মনে অতীত দিনের
অনেক ঘটনা।
সেই  শিশু বয়স, ঘুরতে গেছি
শিমূলতলাতে,
আনন্দ আর কত হাসি
গল্প বলাতে।
সেই শীতল জলের গভীর কূঁয়া
গাছের তলাতে,
খাঁটি দুধ আর মিষ্টি পেঁপে
সকাল বেলাতে-
দিয়ে যেত বাড়ির দাওয়ায়
সস্তা দামেতে,
সেই সবাই মিলে হাটে যাওয়া
পাহাড় তলিতে-
আর সন্ধ্যা বেলায় হ্যারিকেনের
লম্ফ  জ্বালিতে।
সঙ্গে ছিলেন মা আর বাবা
নিজের বলিতে,
আজ শুধুই আমি খুঁজি তাদের
স্মৃতির ঝুলিতে।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
একুশ থেকে বাইশ
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায়

একুশ সালের বেজেছে ঘন্টা
সময় হয়েছে শেষ,
কিছু স্মৃতি ভরে রেখেছে  মনটা
কিছু রেখে গেছে রেশ।
ভাইরাস এসে কেড়ে নিয়ে গেছে
বেশ কয়েকটা মাস,
ঘরে বসে বসে কেটে গেছে দিন
পড়েছে দীর্ঘশ্বাস।
যখন বেরল ভ্যাকসিন
আর ফিরল সুখের দিনটা,
নতুন শঙ্কা বয়ে নিয়ে এল
ওমিক্রন এর চিন্তা।
যাকগে ওসব ছেড়ে দিয়ে আনি
নতুন আশার আলো,
প্রার্থনা করি বাইশ আনুক
খবর ভালো ভালো।
রোগের প্রকোপ চলে যাক দুরে
হাসি আনন্দ আসুকনা ফিরে,
সবলোকে মিলি হাসি আর খেলি
বেড়াতে বেরই চলো
পিকনিক করি মাঠে গিয়ে দুরে
Happy New Year বলো।
বাইশ সালের নতুন বছরে
এই আশা শুধু মনের ভিতরে
পুরানো বন্ধু পুরানো শহরে
আবার মিলিত হবে,
মুখে হাসি আর মনে স্মৃতি নিয়ে
প্রাণের কথাটি কবে।
পথ চেয়ে তাই বসে আছি ভাই
সময় আসবে কবে,
আজ তবে শুধু এইটুকু থাক
বাকি কথা পরে হবে।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর