কবি মেহেরুন্নেসা - বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রথম নারী শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা। জন্মগ্রহণ
করেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার দক্ষিণে খিদিরপুরে। পিতা আবদুর রাজ্জাক, মাতা নূরুন নেসা। তাঁরা
ছিলেন চার ভাইবোন। বোন মোমেনা বেগম ও দুই ভাই রফিক ও টুটুল।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরে তাঁর পরিবার চলে যান তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানের ঢাকায়। তাঁরা প্রথমে পুরানো ঢাকায় থাকতেন। পরে মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হন।
১৯৬১ সালে যোগ দেন ফিলিপস রেডিও কোম্পানিতে। এছাড়া পিতার অসুস্থতার কারণে, তিনি ইউ.এস.আই.
এস. লাইব্রেরিতেও অনুলিখনের কাজও নিয়েছিলেন। উল্লেখ্য এই যে, সেই সময় ফিলিপস, ইংরেজি ও
উর্দুতে মুখপত্র ছাপাত, কবি মেহেরুন্নেসার চেষ্টায় বাংলা ভাষায় রচিত পত্রিকাও প্রকাশে বাধ্য হয় ফিলিপস
কর্তৃপক্ষ।
১৯৬৯ সালে বাঙালিদের উদ্যোগে “অ্যাকশন কমিটি” গঠিত হ’লে তিনিও সেই কমিটির সভা-মিছিলে
অংশগ্রহণ করতেন। ৭১ এ বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে কবি কাজী রোজীর (প্রয়াত সাংসদ) নেতৃত্বে এ্যাকশন
কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন কবি মেহেরুন্নেসা।
৭ মার্চ ১৯৭১, এর রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের সময়ও তিনি
উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতর্কিতে হামলা চালিয়ে
একতরফা গণহত্যা শুরু করে। তার দুদিন আগে ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের
ডাকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে, তিনি তাঁর দুই ভাইকে নিয়ে “জয় বাংলা” স্লোগান দিতে দিতে, মিরপুরের ৬
নম্বর সেকশনের ডি-ব্লক, ১২ নম্বর রোডের নিজের বাড়িতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন
করেন। সেদিনই “বেগম” পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার লেখা শেষ কবিতা “জনতা জেগেছে”। এসব কারণে
তিনি চিহ্নিত হয়ে যান।
২৭.৩.২০০৯ এ প্রকাশিত মেসবা খানের “দৈনিক জনকণ্ঠ” পত্রিকার লেখা থেকে জানা যায় যে ২৭ মার্চ তাঁর
বাড়িতে পাকিস্তানি আলবদর অবাঙালিরা অতর্কিতে আক্রমণ করে। তাঁর দুই ভাই রফিক ও টুটুল এবং মা
সহ মেহেরুন্নেসাকে নারকীয়ভাবে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শী মিরপুরের আলী আহাম্মদের ভাষায় তারা
মেহেরুন্নেসাকে চুলের মুঠি ধরে উঠানে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে। মেহেরুন্নেসার কাটা
মাথার বেণী করা চুল ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফ্যান ছেড়ে দেওয়া হয়। উল্লাস করা হয় কাটা মস্তকের রক্ত
ছিটিয়ে। মেহেরুন্নেসার ছোট দুই ভাইকে হত্যা করার পর তাদের কাটা মাথা দিয়ে ফুটবল খেলে। হত্যার
সময়ে কবির বয়স ছিলো ঊনত্রিশ বছর।
কবির শৈশব থেকেই কবিতা লেখার ঝোঁক ছিল। ১৯৫৪ সালে (মতান্তরে ১৯৫২ সালে) “খেলাঘরের” পাতায়
তাঁর প্রথম কবিতা “চাষী” প্রকাশিত হয়। সেই সময়ে “ইত্তেফাক”, “দৈনিক ‘পাকিস্তান”, মাসিক “মোহাম্মদী”,
“সংগ্রাম”, “অনন্যা”, “কাফেলা”, “বেগম”, “যুগের দাবি”, “কৃষিকথা”, “ললনা” সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর
কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি রানু আপা নামে “পাকিস্তানি খবর” এর মহিলা মহল পাতার সম্পাদনা
করতেন। বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের পরামর্শে তিনি স্বদেশ, প্রেম ও প্রকৃতি বিষয়ে আরবী-
ফার্সী শব্দের ব্যবহার বর্জন করে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর লেখালেখির সূত্রে তিনি কবি সুফিয়া
কামালের স্নেহধন্য হয়েছিলেন। কবি মেহেরুন্নেসার ইচ্ছা ছিল তাঁর কবিতার বইয়ের নাম হবে “সূর্যজ্যোতির
পাখি”।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দ্বিতীয় খণ্ড (নভেম্বর ১৯৮২) থেকে
জানা যাচ্ছে যে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লেখক সংগ্রাম শিবির আয়োজিত বিপ্লবী
কবিতা পাঠের আসরে হাসান হাফিজুর রহমান, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক,
আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন কবিরসহ অন্য কবিদের সঙ্গে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন
মেহেরুন্নেসা। এই আসরে সভাপতিত্ব করেছিলেন ডঃ আহমদ শরীফ। সেই অনুষ্ঠানে কবি তাঁর “জনতা
জেগেছে” কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার মাত্র দুইটি পূর্ণ কবিতা জোগাড় করে এখানে তুলতে
পেরেছি। তাপস রায়ের লেখা, শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার দুটি কবিতা, রাইজিংবিডি.কম থেকে আমরা
আরও ছয়টি কবিতার অংশ পেয়ে এখানে তুলে দিয়েছি।
পাঠকের কাছে অনুরোধ রইলো যে যদি এই খণ্ড কবিতাগুলির পূর্ণ রূপ এবং কবির অন্য আরো কবিতা
পান এবং তা যদি আমাদের পাঠান, তাহলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমরা প্রেরকের নাম সহ এখানে তা তুলে
দেবো। এই কবির কবিতা টাইপ করে পাঠাতে হবে না। কেবল ছবি তুলে পাঠালেই চলবে, নীচে দেয়া
আমাদের ইমেল অথবা হোয়াটসঅ্যাপে।
মিলনসাগরে শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার কবিতা পাতা তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাঁর কবিতা আগামী
প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রচেষ্টাকে সার্থক মনে করবো।
উত্স -
- মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রথম নারী কবি মেহেরুন্নেসা, রা’আদ রহমান, প্রতিদিনেরসংবাদ.কম, ২৩ নভেম্বর,
২০২১।
- বাংলাদেশের প্রথম নারী শহীদ কবি মেহেরুননেসা, তানজীর আহমেদ সিয়ামের ব্লগ, ২৯ শে মার্চ,
২০১৮।
- হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দ্বিতীয় খণ্ড”।
- বাংলাদেশের প্রথম নারী শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা, মুহাম্মদ হিলালউদ্দীন, , abnews24.com ।
- কবি মেহেরুন্নেসার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি, নাগরিক ডেস্ক, ০১ সেপ্টেম্বর
২০১৯, প্রথমআলো.কম।
- প্রেরণার তারুণ্য সূর্যজ্যোতির পাখি, পিয়াস মজিদ, ০৩ নভেম্বর ২০১৬, প্রথমআলো.কম।
- শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার দুটি কবিতা, তাপস রায়, ২৪ মার্চ ২০১৫, রাইজিংবিডি.কম।
- প্রথম শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা, ২০ ডিসেম্বর ২০২০, দৈনিকআমাদেরসময়.কম।
- চুলের মুঠি ধরে উঠোনে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে - স্মরণ - বাংলাদেশের প্রথম
নারী শহীদ, কৃতজ্ঞতা মেসবা খান, "দৈনিক জনকণ্ঠ"। তপু দেবনাথের ফেসবুক পাতা থেকে।
কবি মেহেরুন্নেসার মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল : srimilansengupta@yahoo.co.in
হোয়াটসঅ্যাপ : +91 9830681017
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২৮.৯.২০২২
. ^^ উপরে ফেরত
...