কবি অরুনিমা মন্ডল দাসের কবিতা
*
তশলিমা হতে চাই-৫
কবি অরুণিমা মন্ডল দাস

বিদ্রোহের প্রখর শক্তিটা উজ্জ্বল হয়ে ফেটে পড়ার আগেই নারীশক্তি চিতাভস্ম ছাইয়ের
মত ডুবে গেল!
তুমি ভেবেছিলে আমি ওই দুর্বল গাভিটার মতো তোমার পাশবিক অত্যাচারের স্বীকার
হয়ে রোদে ঠাঁই দাড়িয়ে চোখের জল ফেলব কিংবা তোমার সঙ্গে খেলাচ্ছলে সমোৎকৃষ্ট
ভাব জাগাবো!
নয়তো বা কোনো ফুটবলের খেলার মাঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের বৃথা উৎসাহ জাগাব সেই
একঘেঁয়ে তানপুরার তালে তালে!

.                         **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হঠাৎ বৃষ্টি-২
কবি অরুনিমা মন্ডল দাস

পাগলের পুরোনো প্রেমিক পাওয়ার মতো মেঘলা ঘন কালো আকাশে অমৃত-বৃষ্টি এল,-
পুলিশের গনধোলাই পাওয়ার পর ও চোর আশায় থাকে চোরাই মালের!
তেমনি খোলা উতলা মনের বারান্দা  হঠাৎ খুলে গেল!
চারিদিকে জনকোলাহলের মধ্যেও নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ একাকী মনে বল,
কস্ট পেতে পেতে অনুভূতির স্বাদগুলো তীব্র ও বেদনাদায়ক, হাতকাটা যন্ত্রনার মত মনে
হল!
মিষ্টির মধ্যেও তেতো উচ্ছের গন্ধ ভেসে মনটাকে বিষিয়ে দিলো!
ফকিরের কি আর স্বাদ হয় সংসার সাজানোর!
তাজমহল কি পারবে মমতাজ কে ফেরাতে!
আকবর কি বাজবে আবার যোধার প্রেমের বীণাতে!
মনের সুষ্ক বিবেক ভিজবে কি মিলনসাগরের মোহোনাতে!!

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কবি
কবি অরুণিমা মন্ডল দাস
প্রকাশকাল ১৪.৯.২০১৫

টেলিভিশনের কোন রিয়ালিটি শো র
বিকিনি মডেল দেখে আমাদের ঠিক কতখানি কবিত্ত্ব প্রকাশ পায়!!!!!???
যৌনতার গভীরে সুড়সুড়ি দিয়ে আবেগের থার্মোমিটারে দুশো ডিগ্রী সেলসিয়াস
তাপমাত্রা বাড়িয়ে নিজেকে যথার্থ সেক্সপীয়ার মনে করে মুখে উজ্জ্বল বাঁধানো
কলগেট হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়ান!!???
তুমি কি জানো
পারদের মাত্রার আঙ্গিকে কবি ঠিক কতখানি নীচে নামলো বা উপরে উঠলো!!!
#
অশ্লীলতা র ন্যাকামোর ঘোমটার থেকে
উল্লঙ্গ সততার কুতুবমিনার অনেকটাই দামী  আর হীরার মত চকচকে!
#
রবীন্দ্রসংগীতের তালে গায়ক সুমন, নচিকেতার গান যেমন মানানসই  
তেমন কনিকা কাপুর, হানি সিং র গান
ও আধুনিকতা র তালে তাল মিলিয়ে ব্রান্ডেড গেঞ্জি ,জাংগিয়া, পেনড্রাইভ, ডাটাকার্ড ,
ফেসবুক, ট্যুইটার এর মতই
মেনে নেওয়া উত্তম মানবিকতার পরিচায়ক!
#
জীবনানন্দ  জসীমুদ্দীন যেমন আমাদের মনে দাগ কাটে,
সঙ্খ ঘোষ জয় গোষ্বামী র কবিতাও আধুনিকতা র টান এনে মনের কোনে মুক্তো ছড়ায়!!!!
নতুন আধুনিক  কবিরা মাটন চিকেনের রান্নাতে কবিতার খোরাক হিসেবে নতুন মশলা
দিয়ে সুস্বাদু  পরিপক্ব কবিতাতে রূপায়িত  করলে চিকেনের স্বাদ নষ্ট হবে কি?!!!
#
ভাত ডাল তরকারী আর জিরের ঝোল
খেয়ে খেয়ে অপুষ্টি তে ভোগার থেকে
মাঝেমধ্যে হায়দ্রাবাদের বিরিয়ানি, পোলাও ,ধোসা খাওয়ার দরকার আছে।
শরীরে এনার্জী আসে !
আর কাব্যজগতের সেই টং  টং টং টংটংটংটং করে বেজে যাওয়া তানপুরার  
তাল কে বদলিয়ে যুবসমাজে নবজাগরনের উন্মেষ ঘটাতে পারে!!!

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ছাত্র ধর্মঘট
কবি অরুণিমা মন্ডল দাস
প্রকাশকাল ১৪.৯.২০১৫

ছাত্র -ধর্মঘট ঠিক কি!?  
লাঠালাঠি, হুড়োহুড়ি রক্তারক্তি করে অগ্নিতপ্ত প্রতিবাদী আন্দোলন
না
কলেজ চত্ত্বরে জোট বেঁধে হোক চুম্বন ,
হোক সঙ্গম ,হোক উলঙ্ঘন, করে সামাজিক, মানসিক  পরিবেশ নষ্ট করে
মিডিয়ার সামনে মুখ দেখিয়ে বিকৃত
আনন্দের অধিকারী হয়ে প্রকৃত যোদ্ধা
মনে করা!
#
পাঁচ বছরের ছেলে মনে মনে হাসে বলে
দেখ পাগলের কান্ড !!!
ভাবে শিক্ষিতের আবার এত বড়াই কিসে!?
#
একলব্যের মত গুরুপ্রেম মিলবে কি ভাঙ্গা সমাজে!
আর বাল্মীকি, দ্রোণাচার্যের  মত গুরু
শিষ্যকে প্রাণপ্রিয় সন্তানের মতই ভালোবাসে!
কোথায় সেই ব্রহ্মচর্য আশ্রম !!দৃঢ় গুরুপূজো মাথা নোয়ানো অন্তরের ভক্তি!
কৃষ্ণ সুদামা প্রেম, সুতপুত্র কর্নের গুরুভক্তি!
দ্রোণাচার্যের অর্জুনপ্রীতি,
বুড়ো আঙ্গুল কেটে গুরু কে গুরুদক্ষিণা!?
আছে কি সেই রামরাজ্য হনুমানের গভীর
রামভক্তি!?
বুকের পাঁজরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাম নামের তপ্ত উচ্চারণ!
#
বশিষ্ঠ, বিশ্বশ্রবা মুনির শিষ্য ভক্তি,
তপোবনের নির্মল মধুর প্রকৃতির সংগে
সেই নিষ্পাপ শিক্ষা!
গুরুপত্নী কে মাতৃজ্ঞানে পূজো করত,
আর গুরু কে পিতৃজ্ঞানে পূজো করে পা ধুইয়ে দিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছিয়ে
এক অনাবিল পবিত্র শান্তি অনুভব করত!
#
কোকিলটা বর্ণপরিচয়ের পাতা মুচড়ে মুচড়ে খাচ্ছিল!
তুমি সেটা দেখতেই পেলে না।
কারণ তুমি মাদকীয় আন্দোলনের নেশার
ঘোরে উন্মাদ ছিলে!
যার ফলে ছোটো ভাই অনিমেষ প্রেসিডেন্সীতে ফেল করল!
#
তুমি কি জানো  ঠিক কার কতটা ক্ষতি হল!
তিন ঘন্টা ট্রেনে ধাক্কা খেতে খেতে আসা
ছেলে মেয়েদের ঠিক কতখানি বিদ্যে
মাথায় ঢুকলো!
দলের ক্যাপ্টেন রা ঠিকঠাক  থাকলেও
বাকিরা অনশনের কষ্ট ,চুম্বনের থুতুর ছিটে,
আর পুলিশের লাঠির গুঁতো র থার্ড ডিগ্রীর ফার্স্ট ডোজ পেয়ে বাড়ি ফেরে!??
#
ইতিহাস বইয়ের পাতাতে হোক কলরবের
রণদামামা তীক্ষ সুরে বাজতে থাকে
কখনো বাঘের নখের থাবার মত
আবার কখনো ঠান্ডা মাথার রাজনৈতিক  লড়াই
সার্কাস শো এর মত  দোষারোপ  আর টুপি পরানোর খেলা!?
#
আমি ঠিক আন্দোলন করতে পারি না!?
বন্দে মাতরম ধ্বনিটা গুমরে গুমরে মরে গেছে!
বক্তৃতার দোষারোপ, মিডিয়ার হাত মাথা ঝাঁকুনি, টেলিভিশনের পর্দায় মুখ দেখানোর
আপ্রাণ চেষ্টা, পুলিশের হাতের
লাঠি ঘোরানো দেখেই
আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়!?
আর সংগে থাকে রাস্তার কুকুরদের ঘেউ
ঘেউ চিৎকার!???
#
বুকে পাথর চাপা রেখে পাবলিক বাছুরের
গলা কাটার মতো কতদিন সমাজের গোমাংসের সাপ্লাই দেবে!???
মুখে কাপড় বাঁধা জঙ্গী দের
শাস্তি না দিয়ে  খোলা মেক আপ করা মুখগুলিকে নরকের হাজার রকমের শাস্তি অনেক
মঙ্গলদায়ক!?    
কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনামের পূণ্যি ঘটে!
ব্রম্ভার সৃষ্টিতে অসুরদের বিনাশ ঘটিয়ে
ইশ্বরপুত্র যিশু প্রহ্লাদদের জন্ম ঘটতে পারে!!!!

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হঠাৎ বৃষ্টি
কবি অরুনিমা মন্ডল দাস

জৈষ্ঠ্যের প্রবল উত্তাপে প্রখর রশ্মির তেজে ঘামে সিক্ত মন, মন যেন প্রেমিক চাতক!
শীতল প্রেমের জল পানের জন্য অস্থির,
#
হঠাৎ কেউ যেন হাত ধরে উত্তেজনার শীতল বরফের হিমঘরে ডুবিয়ে দিল--,
মনে হল শীতল বৃষ্টি আমাকে ঘিরে ধরল,---
অশ্লিলতার মধ্যে শালীনতার ভাস্কর্য দেখতে পেলাম---,
টাইটানিক জাহাজটা আবার ভেসে উঠল প্রেমপর্বের সুস্ঠু পুনরাবৃত্তি করতে,
দেবদাস ও পারু আজ ও কোন অচিন
স্বপ্নের দেশে হাসি, আবেগের রঙ্গীন খেলাতে ব্যস্ত-
হায় এ কেমন নিরাশার জীবন!
প্রেমবৃস্টির ঝরঝর ধারায় সারাদিন ভিজলেও মনের পিপাসা মেটে না!
রামধনু রঙ্গের ফোয়ারাতে চারিদিক ভরে গেল!

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্বাধীনতা-২
কবি অরুনিমা মন্ডল দাস
প্রকাশকাল ১৪.৯.২০১৫    
 
পতাকা উত্তোলন করে গান্ধীজি আর নেতাজিকে ফুল,চন্দন চড়িয়ে ,চার কিলোমিটার ঘুরে
জয় হিন্দ বলে চিৎকার করে আপনি কি শান্তিতে আছেন নিরঞ্জনবাবু! ---রজনীগন্ধার গন্ধে
আর রবীন্দ্রসংগীত মাতে না!!! -কানে অনবরত যন্ত্রনা দেয়  নন্দীগ্রামের সেই রণহুঙ্কার!! -
মাতঙ্গিনীর শাঁখের আওয়াজ কি পৌঁছোবে রাজনৈতিক বক্সের চিৎকারের আগে!!! --
বন্দুকের আগে গোলাপের স্নিগ্ধ প্রেম নিজেকে কি গলা টিপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য
করাবে!--চায়ের কাপ হাতে বেলকনির কাছে দাঁড়ালে মনে হয় ---অস্ফুট করুন স্বরে  
বিপ্লবীরা কাকুতি মিনতি করছে প্রকৃত স্বাধীনতার ঠান্ডা লস্যি ই পেয়ে  বুকের জ্বালা
মেটাতে!!- আলু,পটল, পেঁয়াজের মত ও যেন স্বাধীনতার দাম ও চড়া দামে স্বার্থের
বাজারে বিক্রি হচ্ছে!!- রাস্তার ট্রাফিকের আওয়াজ,  রাস্তার ধর্মঘটের কোলাহল জাতীয়
সঙ্গীতের নির্মলতাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে অশরিরি প্রেতাত্মাদের মত যেন মাতিয়ে বেড়াচ্ছে!!
- শিউলি ফুলের ঝরে যাওয়া আজকাল রবীন্দ্রনাথের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ করায় না!-প্রকৃতির
রোমশ রঙ্গীন স্বপ্নকে কালো ধোঁয়াতে রূপান্তরিত করে!  
টেলিভিশনের স্টারদের শো আর রিয়ালিটি শো দেখে, মিডিয়ার সর্ট সার্কিট মন্তব্যে  
উত্তেজনার গ্লিসারিন বাড়িয়ে সোমালোচনার ঝড় তোলাই কি আমাদের স্বাধীনতা!!

.            
                   **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর