আশ্চর্য ভোরের ফুল একদিন দিয়েছিলে তুমি | বিনিময়ে তার দিয়েছি তোমার হাতে স্নেহময় সর্বস্ব আমার |
তাই আজ রিক্ত আমি, তুমি দৃর অবেলার নির্মল আকাশে হেমন্তের অশ্রুপাত ; আর আমি ভেসে যাই প্রত্যাশী নীলিমা ছুঁয়ে দিগন্তের বাউল বাতাসে |
কেননা নীরব স্পর্শে এই সব প্রতিশ্রুতি করে গেছ স্মৃতিচিহ্নময় ; যেখানেই কান পাতি এক-ই ধ্বনিময় কোমল বুকের শব্দ অবসাদহীন ---- আজ তুমি ক্লান্ত মেঘ, আমি দৃপ্ত মধ্যাহ্নের দুরন্ত স্বাধীন |
আমার সর্বস্ব নিয়ে পরিণামে তার দিয়েছ সমগ্র বিশ্বে মৃত্যুঞ্জয়ী এই অভিসার | চোখের বিমল জলে ভাসমান এ আঁধারে দেখ মধুময়---- দিয়েছ ভোরের ফুল, আকাশে প্রাঙ্গণে তার অবিরাম আন্দোলিত সার্বিক বিজয় |
ভারতবর্ষ কবি আশিস সান্যাল বারুদ পারে না কাব্যগ্রন্থ থেকে, ১৯৭২
ভারতবর্ষ কেবল মানচিত্র নয় | কালির আঁচড়ে বার বার বিক্ষত করলেও বুকের ভেতরে কোন ক্ষতের চিহ্ন পড়ে না | শুধুই বদলে যায় তার চারিদিকের প্রসারিত প্রান্তিক রেখাগুলি |
. বেদের ভারতবর্ষ . পুরাণের ভারতবর্ষ . বুদ্ধের ভারতবর্ষ . অশোকের ভারতবর্ষ . আকবরের ভারতবর্ষ . ক্লাইভের ভারতবর্ষ . স্বাধীন ভারতবর্ষ . এক নয়---- . মানচিত্রে পড়েছে বার বার কালির দাগ |
এর-ই মধ্যে প্রাগৈতিহাসিক মুকুট মাথায় মৌনী হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে এক ভারতবর্ষ | জন্মের মুহূর্তে যার বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠেছিলাম ----- সেই ভারতবর্ষ নয় আজকের এই নদী প্রান্তর খচিত জন্মভূমি |
ভারতবর্ষ এক আশ্চর্য বোধ এক প্রশান্ত অনুভূতি, অনেক মানুষের প্রবহমান পদচারণায় অনুপ্রাণিত এক নির্মল বিবেক |
সুন্দর কবি আশিস সান্যাল নিজের বিরূদ্ধে যুদ্ধ কাব্যগ্রন্থ থেকে, ১৯৯৯
কেবল সুন্দর থাকে পৃথিবীতে আর সব ঝরে যায় পৃথিবীর যাবতীয় উত্সারিত সচ্ছলতা সব | ঝরে যায় ঝাউপাতা, ফুল মেঘ, চৈত্রের মুখর মনে হাওয়ার উত্সব |
নক্ষত্রেরও মৃত্যু হয় | রমণীও একদিন খুলে যায় তার ব্যবহৃত সমস্ত পোশাক | ডুব দেয় অন্ধকারে---- ইতিহাসে পড়ে থাকে বিচূর্ণ স্মৃতির মতো শুধু তার ইতস্তত আদিম কঙ্কাল | প্রজাপতি উড়ে যায় ছিন্ন করে সময়ের সব বেড়াজাল |
সুন্দরের হাতে তাই পরাজিত হতে নেই কিছুমাত্র গ্লানি | ভোরের পলাশ বনে রঙিন পতাকা নিয়ে যত রাহাজানি পড়ে থাকে সব তার স্মৃতির ভেতরে সুন্দর উজ্জ্বল হয় অথচ প্রত্যহ এই রক্তিম প্রহরে |