কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
|
কারায় শরৎ কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় কবির, ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত “মুক্তিপথে” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কবিতাটি পেয়েছি কবি প্রমথনাথ বিশী ও ডঃ তারাপদ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, “কাব্যবিতান” সংকলন, ১৯৫৭, থেকে।
আজ তোমাদের চারিপাশে সবুজ মাঠের ঘাসে ঘাসে শরৎ রবির সোনার আলো ঝরিছে ; আজ প্রভাতে এতক্ষণে রোদ পড়েছে কাশের বনে, শিউলিতলা সরস ফুলে ভরিছে ;
মেঘলা দিনের ওড়না ফেলি চাইছে ভুবন নয়ন মেলি, রাঙা মাটি নবীন আলোয় বাঁচিল ;
|
মঞ্জীর
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
কবিশেখর কালিদাস রায় সম্পাদিত “মাধুকরী” কাব্য সংকলন, ১৯৬৩, থেকে নেওয়া।
দুলিতে চাহিনা যশের মুক্তাহারে,
. মুকুটে জ্বলিতে নাহি মোর সাধ নাহি।
সকলের নীচে তুমি দে’ছ ঠাঁই যারে
. আমি তব সেই মঞ্জীর হ’তে চাহি।
ধরার ধূলায় যত কাছাকাছি থাকি
. সেই মোর ভালো, সেই মোর সম্মান।
তব ইঙ্গিতে স্পন্দি’ উঠিব ডাকি’,
. তব পদপাতে বাজিবে মোর প্রাণ।
কভু অতি মৃদু মঞ্জুল শিঞ্জনে
. এ তনুতে বাণী রণিবে কলস্বনা,
কভু-বা ধ্বনিবে,---দেবী, তব প্রয়োজনে,---
. দ্রুততালে তুলি’ ঘনঘোর ঝঞ্ঝনা।
জননী, তোমার রাতুল চকণ চুমি,
. তোমার ছন্দে ভরিব আমার ভাষা
যতদিন মোর বিকল এ দেহ তুমি
. না ফেলিবে দূরে---এই শুধু মোর আশা।
গাধার কামড়
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
রঞ্জনকুমার দাস সম্পাদিত “শনিবারের চিঠি কবিতা-সংখ্যা”, ২০০৫, কাব্য সংকলন থেকে
নেওয়া।
. ( গান )
. ১
চিত্তর মেয়ের পাত্তর দেখতে গেছলুম উত্তর পাড়াতে।
এম.এ.র ছাত্তর,---বাপ তার রাজি মাত্তর সত্তর হাজারে!
দুত্তোর বলে এলুম চলে পারলুম না আর দাঁড়াতে।
নিদ্রাবীর
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও কবি এখ্লাসউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত “দুই বাংলার ছড়া”,
১৯৯৩, ছড়া সংকলন থেকে নেওয়া।
রামবাগানের রামু দে,
লোকটি বড়ই আমুদে,
দিনরাত্তির দাঁড়িয়ে ঘুমোন,
চক্ষু দুটি না মুদে।
ডাকলে বলেন, “এই যে যাই,
মোটেই আমি ঘুমোই নাই।“
“ডাকছিল নাক?” শুধোয় লোক,
“ওটা আমার হাঁফের রোগ।“
জামবুনির হম্বুদির বর
টেক্কা দেছেন তার ওপর ;
ঘুমিয়ে রাতে সুধার কর,
চালিয়ে বাইক ফেরেন ঘর,
আলের পথে মাইল চার।
হাত পা আছে আস্ত তাঁর
চোখ বোজা রয়, নাক ডাকে,
পথিক ছাড়ে পথ তাঁকে।
ছারপোকা
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও কবি সরল দে সম্পাদিত “পাঁচশো বছরের কিশোর কবিতা”
কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া।
বংশবাটির হংসবাহন আছেন ভারী সংশয়ে---
কেমন করে ধ্বংস হবে দংশকীটের বংশ এ ?
মত্কুণেদের উত্পীড়নে ছটফটিয়ে রাত কাটে।
দিনান্তে যান শ্রান্ত দেহে যেই হতে চিত্পাত থাটে---
অমনি তাঁকে ধরবে ছেঁকে সাতশো খুদে রাক্ষসী
নিত্য তাদের রক্ত দিয়ে আর যে থাকে থাক খুশী---
তাঁর থাকা আর চলছে নাকো। কীটনাশকের গন্ধেতে
নার জ্বলে তাঁর, --- ছারপোকারা বাস করে আনন্দেতে।
সবংশে আজ ধ্বংস তাদের না করলে নেই স্বস্তি তাঁর।
পাটনা থেকে প্রাণের সুহৃদ কংসদমন দস্তিদার
পার্সেলেতে পাঠিয়ে দেছেন পঁচিশ কিলো কম-সে-কম
বোটকা-গন্ধ “খাটমলারি” ---বিখ্যাত ছারপোকার যম।
টাটকা বিষে খাটতোষকের শত্রুকুলের হত্যা সায়
হলেই দেবেন লম্বা ঘুম আজ---হংস আছেন প্রত্যাশায়।
“পঁচিশ কিলোয় গ্রাম হবে সাফ” জানিয়ে দেছেন সুহৃদ তাঁর।
হংসবাহন স্বপ্ন দেখেন বছর-বাদে সুনিদ্রার।
এতেও যদি ফল না মেলে---আগুন দিয়ে লেপ-কাঁথায়---
মাঝ পুকুরে ভাসিয়ে ভেলা যাবেন তিনি নিদ্রা তায়।
পুঁটিমাছ
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
ডঃ নীরদবরণ হাজরা সম্পাদিত “ছোটদের আবৃত্তিকোষ”,২০০৭, কাব্য সংকলন থেকে
নেওয়া।
গুটিকত পুঁটিমাছ ঝুঁটি ধরে আন্।
ঝুঁটি নাই ? তবে নাই। আছে তো রে কান ?
কান নাই ? হাত আছে ? হাত নাই ? ডানা ?
তাও নাই ? বাজে কথা। জেলে বাড়ি যা না।
জেনে আয়, কী টানলে পুঁটি মাছ আসে,
খুঁটি পুঁতে বেঁধে দিলে চরে কিনা ঘাসে।
ফুটি খেতে দিলে তারে রোদ্দুরে রেখে
কত দিনে গান গায়, ---“অ আ ক খ” শেখে।
জেনে নিতে ভালো করে যাস নে কো ভুলে---
কতদিনে চুরি করে সিন্দুক খুলে।
বাঁকা চোখে চায় আর হাসে ফিক্ ফিক্,
তার আগে দূর করে দেব, সবে ঠিক।
নাটোর
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীপ্রিয়দর্শী সম্পাদিত “ছন্দে ছন্দে [ প্রথম ভাগ ]”, ১৯৯০, থেকে নেওয়া।
হাঁটো ভাই হাঁটো রে, যেতে হবে নাটোরে
খাটো করে কাটো চুল, দাড়ি গোঁফ ছাটো রে!
সে-দেশেতে কানে নাকি পায় সবে শুনতে,
ঢাকী নাকি ডাকে নাকো, ধুতি-শাড়ী বুনতে।
লোক বড় ধড়িবাজ, কড়িকাঠ খায় না,
বড়ি দিতে ছাতে যায়, পুকুরেতে যায় না!
সে-দেশেতে ভাত খেয়ে চায় সবে আঁচাতে,
গোয়ালেতে গরু রাখে, পাখি রাখে খাঁচাতে।
নুন দেয় ব্যাঞ্জনে, চুন দেয় দেয়ালে,
সে-দেশে গাড়ি নাকি টানে নাকো শেয়ালে।
রাত্রে ঘুমোতে কেউ করে না আপত্তি,
চলো ভাই দেখে আসি মিথ্যে না সত্যি!
পরিচয়
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
নরেন্দ্র দেব সম্পাদিত পাঠশালা পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৭ সংখ্যা ( নভেম্বর ১৯৪০ ) থেকে
নেওয়া।
বহুযুগ ধ’রে ছিনু আশা ক’রে এতদিনে পেনু পরিচয়, তব পরিচয়।
আজি ঝঞ্ঝায় ডুবে গেছে হায় পাথারে আমার তরীচয়, তরা তরীচয়।
ফাগুনে বাদল
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত প্রেম যুগে যুগে কাব্য সংকলন ১৩৫২ ( ১৯৪৫-৪৬ ) থেকে নেওয়া।
কিছু করিব না কাজ,
তোমায় আমায় মুখোমুখি হ’য়ে শুধু ব’সে র’আজ।
কহিব না কথা, গাহিব না গান, মেঘম্লান দিবালোকে
শুধু চেয়ে র’ব তনু মন প্রাণ ভরিয়া দু’জোড়া চোখে।
হালুয়াচরণ
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত রংমশাল পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৪ ( নভেম্বর ১৯৩৭ ) সংখ্যা
থেকে নেওয়া।
প্যারীচরণের কাণ্ড শুনেছ ?
. হালুয়া সে ভাল করে!
---এই চাল মারে, যেখানে সেখানে,
. জাঁক যেন নাহি ধরে!
পিকনিকে গিয়ে কহিল সে, আমি
. করিব মোহন ভোগ!