কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
*
নিঃস্ব পথে পড়ে থাকা একটি শহিদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অসিতকুমার বন্ধ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বাংলা কবিতা সমুচ্চয় ২য় খণ্ড” (১৯৯৩)
কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া।


একটি শান্ত মৃতদেহ
তার বুকে মুখে নরহস্তচালিত জখমের দাগ
এখানে এসে চুমু খাচ্ছে ঘাসের শিষ
চাঁদ
শিশির
সমস্ত পৃথিবী, মাঠা, প্রান্তর
কত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে,
তাদের থেকে সত্যতর ওই
মৃত চক্ষুকোটর
হয়তো কাল মর্গে কলুষ হাতের স্পর্ষ লাগবে তাতে
কিন্তু সূর্য শতাব্দী সহস্রাব্দী ভ্রমণ-শেষে
ওইখানেই সুখ রেখে যায়
পিছনে তার পিতামাতার উন্মাদ হয়ে যাওয়া
তুচ্ছ
সে মহীয়ান
স্বপ্ন সেখানে বাসা বেঁধেছে
.        পিঁপড়ে নয়, কোনো পাখির ঠোঁট নয়
সুন্দর আমাদের ভালবাসা।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভারতবর্ষের মা
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অর্জুন গোস্বামী সম্পাদিত “রক্ত ঝরাতে পারিনাতো একা” (২০০৫) কাব্যসংকলন থেকে
নেওয়া।


ওভারব্রিজের ধারে কাপড় শুকাচ্ছে এক বুড়ি,
অন্তত ভাগ্য ভাল তার,
এখন যৌবন নেই, তাই
বুকের খুঁটের অংশ তুলে নিয়ে শুকুচ্ছে সে আগে,
তারপর ফেরতা পাল্টে নেবে।
হে রৌদ্র বাতাস
অন্তত তোমরা তাকে সাহায্য করছ,
কিন্তু যারা ভাত কাপড় কেড়ে নেয়
তাদের শাস্তি দিতে কেউ নেই আজো।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মে দিনের সেই সময়
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কবি অতীন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত “মে-দিনের কবিতা” (মে
১৯৮৬) থেকে নেওয়া।


তোমার চোখ তুমি তীক্ষ্ণ করো এই সময়, মে দিনে
আরো ভেতরে নেমে তুমি ভেতরের মাটি ওপরে তুলে আনো
পতাকা তো প্রোথিত রয়েছে আবহমান নিপীড়িত মানুষের মধ্যে
তার মাথা ঝাঁকিয়ে বিরুদ্ধতা করার ভিতরে
পতাকার রং ফিরতে পারে, মানুষের রং ফেরে না

ওখানে হৃদয়ের রং ছেনে ছেনে তুমি যথার্থ পতাকা বানিয়ে যাও
অন্নের জল ছলছল উত্তোলিত ভালবাসার জোয়ারের ভেতরে
নতুন জমানার বীজ তুমি বপন কর

কোনো দিনের সাঙাৎরা যদি আজ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে
বেদনার্ত হয়ো না
তোমার মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা ক’রে থাকবে
ঘরে ঘরে জলভাতলঙ্কার সীমানাহীন আনন্দ।

.          
       ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্বপ্নের গল্প
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ প্রস্তুতিপর্ব পত্রিকায় অক্টোবর ১৯৭৬। পুনঃপ্রকাশ পুলক চন্দ সম্পাদিত
“রক্তে ভাসে স্বদেশ সময়” (মে ১৯৭৭) কাব্যসংকলনে।


সেই বৃদ্ধ
একদিন যে বিশাল পরিবর্তনের পতাকা উড়িয়েছিল
পাঁচটা গ্রামের মানুষ যার ডাকে বাঘের মতো লাফিয়ে পড়ত
আজ সে থোকা থোকা থানকুনি আর গন্ধভাদালের পাতা
বিক্রী ক’রছে ফুটপাথের বাজারের এক কোণে
তার সমর্থ হাত থেকে এখন আর
গ্রাইন্ডিঙের ফুলকি বেরোয় না
তার পাঁজরা ক’টা দেখা যায়
এখন সে হাঁপানিতে ভুগছে
আর থানকুনি পাতা বিক্রী করছে।

এখনো যদি তুমি তার মনের খবর জিজ্ঞেস করো
দেখবে সে জাল বুনছে
যেমন জাল বোনে মাকড়সা আকাশে
যেমন সমুদ্রপারের কাঁকড়ার মতো ছোট ছোট পোকাগুলো
বালি ফুঁড়ে অনবরত জেগে উঠছে
নক্সি-কাঁথা বুনে যাবার ইচ্ছায়
যতই না পথচারীরা
তাদের সে কারিগরিকে পায়ের তলায় মাড়িয়ে দিক,

---হয়তো তার ছেলে
অথবা তার মতো বৃদ্ধের অন্য কোন ছেলে
ওয়েল্ডিঙের সাদা নীল আলোয় যার মুখের ওপর দিয়ে বিজলী খেলে যাচ্ছে ঘনঘন
অথবা হাঁটু দুটি যার রিক্সার প্যাডেলে বিরামহীন
মেসিনের চেয়েও দ্রুত ওঠা নামা করছে
দিনরাত বৈষম্যকে বহন ক’রে কুঁজো হয়ে উঠবার জন্য,

---এই বৈষম্যকে তার দূর না করলে চলবে না!
বুক-ভরতি বেঁধা কাঁটা
যেমন দূর না করলে চলবে না
ইঁট পাথরের টায়ার-ফাটানো বদ্খৎ রাস্তার অসহনীয়তাকে
ভারি রোলারে একটানা চাপে।

রাস্তার ধারে গন্ধভাদালের পাতা বিক্রী করার ফাঁকে-ফাঁকে
হাঁপানির পাঁজরার স্বপ্ন দেখা এখনো ফুরোয় না।

.                 ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সার্থক মরণ : কাশীপুর উদ্বাস্তু শিবিরে
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
রচনা ১৯৭৮। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “ব্রাত্য পদাবলী” (১৯৮০) থেকে নেওয়া।


এখন বুলেটে আঁকা কাস্তে হাতুড়ী
এতদিন চরকা ছিল আঁকা,
এখন বন্দুক লাল সালুর আনন্দো মোড়া আছে
এতদিন খদ্দরে ছিল ঢাকা ;
রক্তিম বুলেটে বুক বেঁধে নিয়ে
কী সুখে যে কাৎ হ’য়ে পড়ি,
যেমন গানিধীর গান ঠোঁটে তুলে
গান্ধীরই শিষ্যের হাতে মরি!

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শহর গ্রাম
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
রচনা ১৯৭৮। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “ব্রাত্য পদাবলী” (১৯৮০) থেকে নেওয়া।


কেউ থেকো না নদীর ধারে
থাকবে শুধু শহরে,
নদীর ধারে থাকলে পরে
ভাসিয়ে নেবে লহরে।

গবরমেন্টের চোখ-দু’টি
শহর ভালবাসে,
গ্রামে যারা থাকছে তারা
বানেই কেবল ভাসে।

.          ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তার নাম কি ছ্যাচোর
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
রচনা ১৯৭৮। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “ব্রাত্য পদাবলী” (১৯৮০) থেকে নেওয়া।

রুগ্ম শিল্পের মালিককে


.                ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমার জীবনে অর্ধেক আছে সুখ
কবি সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অর্জুন গোস্বামী সম্পাদিত “রক্ত ঝরাতে পারিনাতো একা” (২০০৫) কাব্যসংকলন থেকে
নেওয়া।

ঠিকে মজুরের গান


.                ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর