ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে মার্চপাস্ট করে চলে যাবে এবং স্যালুট করবে কেবল তোমাকে প্রিয়তমা
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো বন-বাদাড় ডিঙিয়ে কাঁটাতার, ব্যারিকেড পার হয়ে অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে ভায়োলিন বোঝাই ক’রে কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা | ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো---- এমন ব্যবস্থা করবো বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো মাথার ওপর গোঁ গোঁ করবে ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো প্যারাট্রুপারদের মতো ঝ’রে পড়বে কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা |
ভয় নেই, ভয় নেই, ভয় নেই—আমি এমন ব্যবস্থা করবো একজন কবি কমাণ্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা | সংর্ঘষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হ’য়ে যাবে--- আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক অনায়াসে বিরোধী দলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বত্সর লাল নীল সোনালী মাছ---- ভালোবাসার চোরা-চালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা |
ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো অ্যার্ক ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো স্টেটব্যাঙ্কে গিয়ে গোলাপ কিংবা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান | ভয় নেই, ভয় নেই ভয় নেই . আমি এমন ব্যবস্থা করবো নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে . নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা |
প্রেম কবি শহীদ কাদরী We Must love one another or die,---- W. H. Auden
না, প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়---- যার চোখ, মুখ, নাক ঠুকরে খাবে তলোয়ার-মাছের দঙ্গল, সুগভীর জলের জঙ্গলে সমুদ্রচারীর বাঁকা দাঁতের জন্যে যে উঠেছে বেড়ে, তাকে, হ্যাঁ, তাকে কেবল জিজ্ঞেস ক’রো, সেই বলবে না, প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়, ভেঙে-আসা জাহাজের পাটাতন নয়, দারুচিনি দ্বীপ নয় ; দীপ্র বাহুর সাঁতার নয় ; খড়কুটে ? তা-ও নয় | ঝোড়ো রাতে পুরোনো আটচালার কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে কোনো এক গাড়ি-বারান্দার ছাঁট-লাগা আশ্রয়টুকুও নয় | ফুসফুসের ভেতর যদি পোকা-মাকড় গুঞ্জন ক’রে ওঠে না, প্রেম তখন আর শুশ্রূষাও নয় ; সর্বদা, সর্বত্র পরাস্ত সে ; মৃত প্রেমিকের ঠাণ্ডা হাত ধ’রে সে বড়ো বিহ্বল, হাঁটু ভেঙে-পড়া কাতর মানুষ | মাথার খুলির মধ্যে যখন গভীর গৃঢ় বেদনার চোরাস্রোত হীরকের ধারালো ছটার মতো ব’য়ে যায়, বড়ো, তাত্পর্যহীন হয়ে ওঠে আমাদের ঊরুর উথ্বান, উদ্যত শিশ্নের লাফ, স্তনের গঠন |
মাঝে মাঝে মনে হয় শীতরাতে শুধু কম্বলের জন্যে, দু’টো চাপাতি এবং সামান্য সব্জীর জন্যে, কিংবা একটু শান্তির আকাঙ্ক্ষায়, কেবল স্বস্তির জন্যে বেদনার অবসান চেয়ে তোমাকে হয়তো কিছু বর্বরের কাছে অনায়াসে বিক্রি ক’রে দিতে পারি---- অবশ্যই পারি | কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে, এই স্বীকারোক্তির পর মনে হলো : হয়তো বা আমি তা পারিনি---- হয়তো আমি তা পারবেো না |