কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তর কবিতা
*
হৈমন্তী
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা” ১ (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া |


বৈদেহী বিচিত্রা আজি সংকুচিত শিশিরসন্ধ্যায়
প্রচারিল আচম্বিতে অধরার অহেতু আকূতি :
অস্তগামী সবিতার মোঘমুক্ত মাঙ্গলিক দ্যুতি
অনিত্যের দায়ভাগ রেখে গেল রজনীগন্ধায় ||

ধূমায়িত রিক্ত মাঠ, গিরিতট হেমন্তলোহিত,
তরুণতরুণীশূন্য বনবীথি চ্যুত পত্রে ঢাকা,
শৈবালিত স্তব্ধ হ্রদ, নিশাক্রান্ত বিষণ্ণ বলাকা
ম্লান চেতনারে মোর অকস্মাৎ করেছে মোহিত ||

নীরব, নশ্বর যারা, অবজ্ঞেয়, অকিঞ্চন যত,
রুচির মায়ায় যেন বিকশিত তাদের মহিমা ;
আমার সংকীর্ণ আত্মা, লঙ্ঘি আজ দর্শনের সীমা,
ছুটছে দক্ষিণাপথে যাযাবর বিহঙ্গের মতো ||

সহসা বিস্ময়মৌন উচ্চকন্ঠে বিতর্ক, বিচার,
প্রাণের প্রত্যেক ছিদ্রে পরিপূর্ণ বাঁশরীর সুর ;
জানি মুগ্ধ মুহূর্তের অবশেষ নৈরাশে নিষ্ঠুর ;
তবু জীবনের জয় ভাষা মাগে অধরে আমার ||

যারা ছিল এক দিন ; কথা দিয়ে, চ’লে গেছে যারা ;
যাদের আগমবার্তা মিছে ব’লে বুঝেছি নিশ্চয় ;
স্বয়ম্ভু সংগীতে আজ তাদের চপল পরিচয়
আকস্মিক দুরাশায় থেকে থেকে করিবে ইশারা ||

ফুটিবে গীতায় মোর দুঃস্থ হাসি, সুখের ক্রন্দন,
দৈনিক দীনতা-দুষ্ট বাঁচিবার উল্লাস কেবল,
নিমেষের আত্মবোধ, নিমেষের অধৈর্য অবল,
অখণ্ড নির্বাণ-ভরা রমণীর তড়িৎ চুম্বন ||

মোদের ক্ষণিক প্রেম স্থান পাবে ক্ষণিকের গানে,
স্থান পাবে, হে ক্ষণিকা, শ্লথনীবি যৌবন তোমার
বক্ষের যুগল স্বর্গে ক্ষণতরে দিলে অধিকার,
আজি আর ফিরিব না শাশ্বতের নিষ্ফল সন্ধানে ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জাতিস্মর
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা” ১ (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া |


নাথু-সংকটে হাঁকে তিব্বতী হাওয়া |
প্রাকৃত তিমিরে মগ্ন চুমলহরি |
ছঙ্গু-সায়রে কার বহিত্র বাওয়া
অপর্ণ বনে দিয়েছে রহস ভরি ||

সুহৃদ আগুন নিবে গেছে গৃহকোণে ;
শ্রান্ত সাথীরা স্বপনে আপনহারা ;
আমি শুধু ব’সে তুষায়িত বাতায়নে
প্রহরে প্রহরে গুণি খাসে কত তারা ||

অঙ্গ তুহিন, তপ্ত আমার মাথা,
ক্লান্ত, তথাপি নিদ্রা আসে না ডাকে ;
বাণীহীন কোন্ অনাদি বিষাদগাথা
গুঞ্জরে বিস্মরণের ফাঁকে ফাঁকে ||

হিমানীবিজন এই দুর্গম দেশে,
মনে হয় যেন, কে আমার অনুগামী ;
হয়তো বা আমি ভুলে গেছি আজ কে সে,
কিন্তু ভোলে নি তারে অন্তর্যামী ||

বিগত জনমে, এই পর্বতশিরে,
এমনই নীরব প্রাগিতিহাসিক রাতে
শিকার সমাপি এসেছিনু ঘরে ফিরে
মৃগের বদলে তাহারে কি ল’য়ে সাথে ?

মিনতি আমার প্রথমে ধরে নি কানে ;
কুটিল ভ্রূকুটি মোছে নি ললাটে ত্বরা ;
তার পরে কেন--- তা কেবল সেই জানে—
আযাচিতে হল সহসা স্বয়ংবরা ||

চ্যুত বল্কলে নিবে গেল দীপখানি ;
বাহিরের হিম মুকুরিল দ্রব চোখে ;
হঠাৎ তাহার লঘু, ভাস্বর পাণি
খুঁজিল আমারে প্রাক্তন নিরোলোকে |

আবার কি তার আদিম নিমন্ত্রণী
আহ্বানে মোরে অমৃতের অভিসারে ?
কাঁদে সেদিনের প্রণব প্রতিধ্বনি
প্রতন গিরির গহ্বরকারাগারে ?

পুরাণপুরুষ ছাড়া পাবে নিমেষে কি ?
মাটির মানুষ মিলিবে মাটির সনে ?
বিদগ্ধ প্রাণী, এ কি মরীচিকা দেখি ?
ফিরিব প্রভাতে পরিচিত পরিজনে ||

মৌল আকূতি মরমেই যাবে ম’রে |
জনশূন্যতা সদা মোরে ঘিরে রবে |
সামান্যাদের সোহাগ করিদ ক’রে
চিরন্তনীর অভাব মিটাতে হবে ||

বর্বর বায়ু চিরায়ু অচলচূড়ে
মুছে দিবে মোর অশুচি পায়ের রেখা |
মার্জিতরুচি জনপদে,  বহু দূরে,
ভিড়ে মিশে আমি ভেসে যাব একা একা ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
নান্দীমুখ
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া |


তোমার যোগ্য গান বিরচিব ব’লে,
বসেছি বিজনে, নব নীপবনে,
পুষ্পিত তৃণদলে |
শরতের সোনা গগনে গগনে ঝলকে ;
ফুকারে পবন, কাশের লহরী ছলকে ;
শ্যাম সন্ধ্যার পল্লবঘন অলকে
চন্দ্রকলার চন্দনটিকা জ্বলে |
মুগ্ধ নয়ান, পেতে আছি কান,
গান বিরচিব ব’লে ||

তবু অন্তরে থামে না বৃষ্টিধারা :
আর্দ্র, ধূসর, বিদেহ নগর,
মত্সর প্রেত-পারা,
প্রকৃতির লীলা আরবি কুহেলিকানাতে,
ইঙ্গিতে যেন চায় অভিযোগ জানাতে ;
তন্ময় ধ্যান ভেঙে যায় তার হানাতে |
প্রচ্ছদে ওই ছায়াপাত করে কারা ?
কী নাম শুধাই ---উত্তর নাই ;
ঝরে শুধু বারিধারা ||

মুখে এক বার তাকায়ে নির্নিমেষে,
শূন্যোদ্ভব দেব, না দানব,
আবার শূন্যে মেশে |
বুঝি তারা শুধু কুজ্ ঝটিকার চাতুরী :
তবু তুলনায় ধন্ধ জাগায় মাথুরই ;
প্রতীকপ্রতিম তাদের কাস্তে, হাতুড়ি
ফসল মুড়ায়, মানমন্দির পেষে |
মূর্ত নিষেধ, মূক নির্বেদ
তাকায় নির্নিমেষে ||

কখনও কখনও মনে হয় যেন চিনি—
বিদ্যুতে লেখা হেন রূপরেখা
চীনে পটে বন্দিনী |
স্পেনেও হয়তো অমনই অঙ্গভঙ্গি
চিত্রার্পিত অসংহতির সঙ্গী ;
সেখানেও আজ নিভৃত বিলাস লঙ্ঘি,
পশে উপবনে পরদেশী অনীকিনী |
স্পেন থেকে চীন প্রদোষে বিলীন ;
অথচ তাদের চিনি ||

ভালোবেসেছিল তারাও, আমার মতো,
সীমাহীন মাঠ, আকাশ স্বরাট,
তারারাশি বাতাহত |
গড্ডালিকার সহবাসে উত্যক্ত,
তারা  খুঁজেছিল সাযুজ্য সংরক্ত ;
কল্পতরুর নত শাখে সংসক্ত
শুক্ল শশীরে ভেবেছিল করগত |
নগরে কেবল সেবিল গরল
তারাও, আমার মতো ||

কিন্তু শূন্যে ছড়ায়ে ঊর্ণাজাল,
মধুমক্ষীরে উপহাসে ঘিরে
জাগ্রত মহাকাল |
জনপ্রাণীও পারে না তা থেকে পলাতে ;
পোড়ে মৌচাক আধিদৈবিক অলাতে ;
নৈমিত্তিক সব্যসাচীর শলাতে
অপসৃত হয় গুপ্তির জঞ্জাল |
কানামাছি উড়ে ; ত্রিভুবন জুড়ে
কালের ঊর্ণাজাল ||

তাই আমাদের সমাহিত অভিসারে
ঘটে দুর্গতি, মৌন অরতি
সংকেত প্রতিহারে ;
বিপ্রলব্ধ বিশ্বমানের বিষাদে
অঙ্গুলি তুলি, দেখায় অলখ নিষাদে |
বুঝেও বুঝি না নিরাকার আঁখি কী সাধে,
প্ররোচিত করে ত্যাগে, না অঙ্গীকারে |
মাগে প্রতিশোধ, মানায় প্রবোধ,
অনিকেত অভিসারে ||

তার স্বাধিকার আগে ফিরে দিতে হবে ;
নতুবা নগর, তথা প্রান্তর,
ভ’রে রবে বাসী শবে |
অশক্য পিতা ; বলীর কন্ঠলগ্ন
মাতা বসুমতী ব্যভিচারে আজ মগ্ন ;
ক্ষাত্র শোণিতে অবগাহি, জামদগ্ন্য
তবু পাতিবে না স্বর্গরাজ্য ভবে |
স্বীয় শক্তিতে হবে যোগ দিতে
শুদ্ধির তাণ্ডবে ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জেসন্
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া  |


বহু কষ্টে শিখেছি সাঁতার ;
অন্তত স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাওয়া শক্ত নয় আর |
নদীতেও নানা বাঁক আছে ;
সেগুলোর কোনোটাতে ঠেকে গিয়ে বাঁচে
এমন লোকেও যারা সাঁতারের স-টুকু জানে না |
সমুদ্র তো তাদের টানে না |
শরে বা শৈবালে
কিংবা মত্স্যনারীদের সবুজ চুলের ঊর্ণাজালে
জড়ায় না তারা কানামাছির মতন ||

বরঞ্চ ঘূর্ণির উন্মথন
তাদের নিক্ষেপ করে শরণসৈকতে |
বিষম দ্বৈরথে
জাগ্রত দৈত্যকে মেরে, অর্ধরাজ্য রাজকন্যাসহ
তারাই কুড়িয়ে পায় ; প্ররোহী আবহ
বাড়ায় তাদের বংশ ; অবশেষে ঘুমিয়ে এখানে,
স্বর্গের স্বাগত শোনে সচকিত কানে ||

আমগ্ন তরণী ছেড়ে, ঝাঁপাতে পারি না তবু জলে |
বিফল কৌশলে
ভাঙা হাল ধ’রে থাকি ; ছেঁড়া পাল  সযত্নে খাটাই ;
লুপ্তপ্রায় মানচিত্রে চাই |
ভুলে যাই একা আমি ; সঙ্গে ছিল যারা,
প্রলুব্ধ বন্দরে কিংবা পথকষ্টে আজ আত্মহারা,
কে কোথায় প’ড়ে আছে, জানি না ঠিকানা |
শূন্য মনে ভূতে দেয় হানা ;
প্রকীর্তির ছায়াচ্ছবি নিরাশ্রয় চোখে ফুটে ওঠে ||

ফের এসে জোটে
উচ্ছল অর্ণবপোতে স্বদেশের শ্রেষ্ঠ বীর যত ;
গুরুদীক্ষা, বাহুবল, সহায় দৈবত
তরায় সমূহ বিঘ্ন, নিরুদ্দেশে গন্তব্য চেনায় |
পুনরায়
স্বয়ংবরা পণ্ড করে মায়াবীর চক্রান্ত,  চাতুরী ;
হাহাকারে ভরে রাজপুরী
তার উগ্র রিরংসায় ; অভিসারী ঝড়ে
সবিতার বলি লুটে, পলাতক তরীতে সে চড়ে ||

স্বৈরিণীর অনুকম্পা চোকে নি তাতেও |
অযাচিত সন্তানে সে দিয়েছিল আমাকে পাথেয় ;
অপহৃত উত্তরাধিকার,
আমি নয়, সেই নিজে করেছিল নির্দয়ে উদ্ধার |
তবু তার গভীর মায়ায়
পারি নি তলিয়ে যেতে ; কৃষ্ণপক্ষ চোখের ছায়ায়
সিন্ধুর ঊষর জ্বালা চাই নি জুড়োতে |
বিপরীত স্রোতে
সর্বনাশ নিশ্চিত জেনেও ,
ভুলি নি শান্তির চেয়ে স্বধর্মই শ্রেয় |

ফলত নিরবলম্ব, নিঃসন্তান,  নিঃস্ব আজ আমি ;
অন্তর্যামী
সাধ ও সাধ্যের ভেদ গোলায় কেবলই |
ঘটে অন্তর্জলি
শতচ্ছিদ্র তরণীতে ; কিন্তু ভাবি অকূল পাথারে
স্বেচ্ছায় চলেছি ছুটে ; বস্তুত জোয়ারে
ততটাই ফিরে আসি , যতখানি এগোই ভাঁটাতে |
অপ্সরীরা, ব’সে আঘাটাতে,
নিশ্চেষ্ট কৌতুক দেখে ; স্তব্ধপাখা
সাগরবলাকা
অধীর চিত্কার হানে সন্ধ্যার আকাশে ||

তবে কি বিশ্বাসে
ভাঙা হাল ধরে থাকি,  ছেঁড়া পাল সংযত্নে খাটাই ,
লুপ্তপ্রায় মানচিত্রে চাই,
মনে ভাবি
এ-কখানা জীর্ণ কাঠে অস্মিতার অসম্ভব দাবি
আবার প্রতিষ্ঠা পাবে সপ্তসিন্ধুপারে ?
তার চেয়ে নিঃশঙ্ক সাঁতারে
ব্যয় ক’রে নিশ্বাসের অন্তিম সঞ্চয়,
অগাধে সংকল্পসিদ্ধি একাধারে  নিশ্চিন্ত, নিশ্চয় ||

স্বপ্ন আজ ব্যর্থ বিড়ম্বণা ;
জরাবিগলিত দেহে  আত্মঘ্ন যন্ত্রণা
বিজিগীষা |
যে-প্রাক্তন তৃষা
মেটাতে পারে নি সিন্ধু, হয়তো বা নির্বাণ হবে তা
জোয়ার-ভাঁটার সন্ধি নদীবক্ষে, যেথা
মুকুরিত মহাশূন্য, সমুদ্রের পিতা ও প্রতীক,
দুরত্যয়, স্বস্থ, প্রগতিক ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিপ্রলাপ
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া

হয়তো ঈশ্বর নেই ; স্বৈর সৃষ্টি আজন্ম অনাথ ;
কালের  অব্যক্ত বৃদ্ধি শূঙ্খলার অভিব্যক্ত হ্রাসে ;
বিয়োগান্ত ত্রিভুবন বিবিক্তির বোমারু বিলাসে,
জঙ্গমের সহবাসে বৈকল্যের দুঃস্থ সন্নিপাত ||

প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদে তবু নেই পূর্ব বা পশ্চাৎ ;
বিজ্ঞানের বিবর্তন প্রপঞ্চের নিত্য অনুপ্রাসে ;
প্রতিসম বৈপরীত্য সম্পূর্ণের দুর্মর প্রকাশে ;  
শক্তির অব্যয়ীভাবে তুল্যমূল্য ঘাত-প্রতিঘাত ||

তাই আর্ত প্রার্থনার অপভ্রষ্ট আকাশদুহিতা
নাস্তিপ্রত্যাখ্যাত হয়ে, ফেরে গূঢ় দৈববাণী-রূপে ;
বুঝি দুঃখ আবশ্যিক, দুরদৃষ্টে দোষার্পণ বৃথা,
করে প্রতিবিম্বপাত বৈকল্পিত মুক্তি অন্ধকূপে ||     

অচিরাৎ বিপ্রলাপে ডুবে মরে স্বগত সন্তাপ ;
আমার শাস্তিতে,  মানি,  ক্ষান্ত তার অবরোহী পাপ ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কঞ্চুকী          
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া  


নাটকী নায়ক-রূপে আজীবন দেখেছি নিজেকে ;     
ভেবেছি আমার সঙ্গে অদৃষ্টের দ্বৈরথসমর :
মর্ত্যের প্রতিভূ আমি, প্রতিপক্ষ সন্ত্রস্ত অমর,
কাজেই নিস্তার নেই পরিণামী সর্বনাশ থেকে ;

তবু যবনিকাপাত দেবে ম্লান পরাজয় ঢেকে ;
প্রতিলোম অভিযানে লোকযাত্রা হবে অগ্রসর,
আমাকে হৃত্পদ্মে ধ’রে,  ব্যর্থ বীর্যে যীশুর দোসর,
আমি যাব আত্মৌপম্য সমাহিত সন্ততিতে রেখে ||

উপস্থিত পঞ্চমাঙ্ক : প্রাক্ নির্বাণ দীপের উদ্ভাসে
সমবেত পাত্র-পাত্রী করে স্ব স্ব বিধিলিপি পাঠ ;
নেপথ্যে আমার স্থান ; অন্ধকারে অধিকারী হাসে ;
সে রঙ্গরসিক ব’লে,  আমি ভ্রান্তিবিলাসে সম্রাট ||

কদাচ দৈবাৎ যদি বাস্তবিক ভূমিকায়ও ঢুকি,
কামাখ্যার ষড়যন্ত্রে সাজি তবে ঘুমন্ত কঞ্চুকী ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
উন্মার্গ
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া


ঢেউ গুনে গুনে, কেটে যায় বেলা
সিন্ধুতীরে :     
জানি পুনরায় ভাসাব না ভেলা
অবাধ, অগাধ, অপার নীরে |          
তবে মাঝে মাঝে কেন মনে পড়ে
পালের স্ফূর্তি উদ্দাম ঝড়ে ;
উধাও তারার ইশারায় পথ
আবার নিরুদ্দেশে,
যেথা সর্বতোভদ্র জগৎ
সম্ভাবনার নিখিল নির্বিশেষে ?

অথবা নিবাত, নির্মল, নীল
দ্বিপ্রহরে
পরিণত মায়ামুকুরে সলিল
আকাশে, বাতাসে আলস ভরে :   
স্তম্ভিত তরী যেন পটে আঁকা ;
অবাক বলাকা সংবৃতপাখা ;
অনাথ দ্বীপের বৃথা অধিবাস
বিলীন বিস্মরণে ;
অপ্সরীদের নিভৃত বিলাস
মুক্তাবিকচ রক্ত প্রবালবনে ||

কখনও আবার বাদলে ব্যাহত
আলোর গ্লানি
চেতনাচেতনে গনায় নিয়ত
অজাত দিনের অন্ধ হানি |
কিন্তু একদা সন্ধ্যার আগে
মৌসুমী মেঘ ভিন্ন দু ভাগে,
স্নানযাত্রার স্বর্ণ সরণী
মুক্ত মর্ত্যধামে :
দক্ষিণে ডোবে স্মিত দিনমণি ,
পৌর্ণমাসীর চন্দ্রমা জাগে বামে ||

তারপর প্রতি পলের অভেদ :
দিবা ও নিশা
আনে না কালের স্রোতে বিচ্ছেদ ;
এমনকি আয়ু হারায় দিশা |
নিত্য অন্তরীক্ষ ও জল,
অতৃপ্ত তৃষা তথা কুতূহল,
এবং দুরাপ, দূর দিগন্ত—
মূর্ত অসন্ধান ;
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত
সে-যবনিকার প্রতিভাসে ক্ষীয়মাণ ||

তবু এসেছিল সহসা ব্যাঘাত
স্বগত ধ্যানে |
কঠিন মাটির অভিসম্পাত
বর্তেছিল কি অভিজ্ঞানে ?
অন্তত দিতে চেয়েছিল ঘুষ
মণিকাঞ্চন-যোগে প্রত্যুষ ;
প্রশস্তি ব’লে হয়েছিল ভুল
শঙ্খচিলের হাসি ;
মায়াবী পুলিনে লোভের প্রতুল
দেখেই তরণী অবিশ্বাসী ||

অনাত্মীয়ের মুখ চেয়ে আছি
সেদিন থেকে :
উঞ্ছ কুড়িয়ে অগত্যা বাঁচি
নিরুপার্জন নির্বিবেকে |
দৃষ্টির সীমা মাপে হিমগিরি ;
পর্ণকুটীরে দুর্যোগে ফিরি
সৈকতে এসে বসি কদাচিৎ
আমার উপক্রমে ;
মহার্ণবের সাংসংগীত
হয়তো বা শুনি শুক্তির মাধ্যমে ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভ্রষ্ট তরী
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া।


সহসা সবুজে আবীরের আভা লাগে,
মেঘের আড়ালে সূর্য অস্ত যায় ;
নীলের বিকার ধূসর পূর্বভাগে ;
অলস সাগর, আকাশেও তার সায় ||

দূর দিগন্তে সংবৃত শর্বরী,
শুক্র সুদ্ধ এখনও দেয় নি দেখা ;      
নিরুদ্দেশের যাত্রী আমার তরী ;
নিরবলম্ব নিখিলে সে আজ একা ||

একদা কত কী ভর করেছিল তাতে---
স্বপ্ন ও স্মৃতি, পর্বতপরিমাণ :
মহার্ণবের দারুণ ঝঞ্ঝবাতে
কিঞ্চিৎও শেষে পায় নি পরিত্রাণ ||

মাস্তুল ডেকে এনেছিল অশনিকে,
পালে জেগেছিল কেবল ত্রাহিস্বর,
ভেঙেছিল হাল :  সর্বনাশের দিকে
গতি হয়েছিল অবাধ অতঃপর ||

আপাতত তাকে নাচাতে পারে না আর
অপ্সরীদের নির্মম জলকেলি ;
সে বুঝেছে বৃথা অজানার অভিসার—
পাতকের দ্বারে জাতকের ঠেলাঠেলি

দিনমানে তাই চতুর চিত্রভানু
লোভায় না লঘু মরীচিকা-নির্মাণে :
অন্ধ আলোর পলাতক পরমাণু
অমারাতে তাকে ছায়াপথে মিছে টানে ||


একা সে এখন, বাঁধা অধুনার তালে ;
ত্রিসীমায় নেই আদ্যন্তের দিশা :
ঢলঢল জল সচল চক্রবালে ;
সন্ধিলগ্নে সংগত দিবা-নিশা ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
যযাতি   
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত “বাংলা আধুনিক কবিতা ” ১  (১৯৯২ )
থেকে নেওয়া।


উত্তীর্ণ পঞ্চাশ : বনবাস প্রাচ্য প্রাজ্ঞদের মতে
অতঃপর অনিবারণীয় ; এবং বিজ্ঞানবলে
পশ্চিম যদিও আয়ুর সামান্য সীমা বাড়িয়েছে
ইদানীং, তবু সেখানেই মৃত্যুভয় যৌবনের
প্রভু, বার্ধক্যের আত্মাপহারক | আশ্রুত তারক
অন্যত্রও অনাগত ; জ্ঞাতিভেদে বিবিক্ত মানুষ ;
নিরঙ্কুশ একমাত্র  একনায়কেরা | কিন্তু তারা
প্রাচীর, পরিখা, রক্ষী, গুপ্তচর ঘেরা প্রাসাদেও
উন্নিদ্র যেহেতু, তাই ভগ্ন সেতু নদীতে নদীতে,
মরু নগরে নগরে | পক্ষান্তরে অতিবেল কারা
তথা সংক্রমিত মেরু ব্যক্তির ধ্বংসাবশেষ : দ্বেষে
পুষ্ট চীন থেকে পেরু ; প্রতিহিংসা মানে না সিন্ধুর
মানা | নৈশ হানা, আত্মঘাতী অঙ্গীকার, বিচারের
সম্মত বিকার বা স্বস্হ ধিক্কার অড়িয়ে যে যায়
ভাগ্যগুণে, চোখে চোখে তাকে অদৃশ্য শকুনে
প্রবাসেও অহরহ : যথাকালে অমৃতের দায়
সাশ্রু সন্ততিকে সঁপে, অন্তিম শয্যায় নিকামত
পারে না আশ্রয় নিতে ; ঊষর ধূলিতে নিষ্পিষ্ট সে,
ইতিহাসনিষ্ক্রান্তও বটে | অর্থাৎ কৃতান্ত আজ
ব্যক্ত সর্ব ঘটে ;  এবং, প্রৌঢ়ের কেন, সকলেরই
কর্তব্য যেমন অরণ্যে রোদন, তেমনই সম্প্রতি
সাধ্য লোকালয়ে সে-বৃথা বিলাপ ||

.                                       অবশ্য আমার
পক্ষে সংগত যে নয় অনুতাপ, সে-কথা স্বীকার
করি ; কারণ যদিচ মগ্ন শৈলে আমার মাতাল
নৌকা বানচাল হয়ে, বর্তমান বিশ্লিষ্ট কঙ্কাল—
অপ্রাপ্তসত্কার শব প’চে প’চে অস্থিসার যেন—
তথাপি যেকালে নিরুদ্দেশ যাত্রার সংজ্ঞায় হেন
দুরবস্থা শুধু সম্ভাব্যই নয়, অবশ্যম্ভাবীও
বটে, অশোভন তখন নির্বেদ | তা ছাড়া স্বকীয়
সিদ্ধি প্রার্থনীয় নয় সূত্রধার গণেশের কাছে ;
অকূল পাথারে অযাচিত সাম্রাজ্য একদা বাচে
যারা জিতেছিল, অন্তত তাদের অনন্য সম্বল
ছিল প্রাণপাত পৌরুষ এবং রুদ্র কৌতুহল---
নিতান্ত নিরুপলক্ষ | তরল অনলে পরিণত
ঝলমল জল ; গলিত অম্বরতল ; অনুগত
দিগ্বধূর আঁখি ছলছল কষ্টকল্পনায় ; মেঘে
অন্তর্হিত চূড়া, পদান্ত ঊর্মির মুখর উদ্বেগে
প্রতিষ্ঠিত অস্তগিরি, ইত্যাদি বিবাদী লক্ষণের
অলৌকিক নির্বিরোধ তথা সে-সমন্বয়ের জের
স্মিত বিদেশিনীর অভয়ে, এবং সোনার তরী
তাদের ডাকে নি অজানার অভিসারে | হিংস্র অরি
বন্দরে বন্দরে, অবিশ্বাস্য অনুচর, অবহেলা
চরমে নিশ্চিত জেনেই, বেরিয়েছিল তারা ||

.                                             ভেলা
আমি ভাসিয়েছিলুম একদা তাদেরই মতো, আজ
এটুকুই আমার পরম পরিচয় | আমাকেও
লক্ষ্যভেদী নিষাদের উল্বণ উল্লাস উদাসীন
নদীর উজানে দিয়েছিল অব্যাহতি মাল্লাদের
গুণটানা থেকে | গাঁঠ গাঁঠ বিলাতী বস্ত্রের ভার,
রাশি রাশি মার্কিনী গমের ভাবনা ও প্রতিযোগী
ব্যাপারীর বাদ-বিসংবাদ সঙ্গে গিয়েছিল
চুকে ; এবং হঠাৎ অধোগতি অনুকূল স্রোতে ;
হয়েছিল অবারিত | অন্তরীক্ষ বিদীর্ণ বিদ্যুতে ;
ভ্রমি ; ভঙ্গ  জলস্তম্ভ ; সমুখ প্রত্যষ কপোতের
পক্ষবিধূনন ; সন্নত সবিতা বেগুনী শোণিতে
লুপ্ত রহস্যের বীভত্স প্রতীক ; ফুটন্ত জলার
জালে জর্জরিত তিমি ; শেষনাগ শিথিলকুণ্ডলী,
মত্কুণের উপজীব্য ; অপ্রেময় নির্বাতমণ্ডলে
বিধ্বস্ত সলিল ; ঊর্ধ্বশ্বাস বরুণের বিপরীত
রতি---সবই দেখেছিলুম আমিও, না দেখে দেখেছি
ব’লে ভাবি নি অথবা অস্বীকার করি নি দেখার
পরে ; এবং এখন স্বভাবের অনুমোদনেই
আমার অনন্য স্বপ্ন প্রাচীন প্রাকারে সুরক্ষিত
জনপদ, স্নিগ্ধ, সান্দ্র সন্ধ্যায় যেখানে খিন্ন শিশু
ভঙ্গুর তরণী-সহ মুকুরিত নিকষ গোষ্পদে ||

কিন্তু গত শতকেও উল্লিখিত গ্রামের সন্ধান
পায় নি স্বয়ং ব়্যাঁবো, সার্বজন্য রসের নিপান
মৃগতৃষ্ণানিবারণে অসমর্থ ব’লে, সে যদিও
ছুটেছিল জনশূন্য পূর্ব আফ্রিকায়, পরকীয়
সাম্রাজ্যবাদের প্রায়শ্চিত্তকল্পে যেন ( সাকী আর
কবিতা সেখানে যেমন অভাবনীয়, মদিরার
অপার্যাপ্তি  তেমনি দারুণ ) | আমি বিংশ শতাব্দীর
সমানবয়সী ;  মজ্জমান বঙ্গোপসাগরে ; বীর
নই, তবু জন্মাবধি যুদ্ধে যুদ্ধে, বিপ্লবে বিপ্লবে
বিনষ্টির চক্রবৃদ্ধি দেখে, মনষ্যধর্মের স্তবে
নিরুত্তর, অভিব্যক্তিবাদে অবিশ্বাসী, প্রগতিতে
যত না পশ্চাত্পদ, ততোধিক বিমুখ অতীতে |
কারণ ভূতের নির্বন্ধাতিশয়ে, তথা ভবিষ্যের
নিষেধে, অধুনা ত্রিশঙ্কু, এবং সে-খণ্ডে বিশ্বের
মধ্যে দ্বৈপায়ন আমরা সকলে, জানি কি না জানি,
নাস্তিরই বিবর্তবাদ | এমনকি উপস্থিত হানি
সম্ভবত অবাস্তব সুললিত সে-পদ্যের মতো,
যাতে রেণু, বেণু, কদাচ ধেনুও, মিলে, ক্রমাগত
অভিভাবে আত্মোপলব্ধির অভাব লুকিয়ে রাখে ;
এবং অলীক ভেবে,  উচ্ছ্বসিত স্বপ্নরচনাকে
যখন করেছি ত্যাগ, সেকালে স্বকপোলকল্পিত
সর্বনাশে হাহুতাশ অবৈধ ও সাফল্যবর্জিত ||

উপরন্তু, দেবযানী-শর্মিষ্ঠার কলহকলাপে
আমার অদ্বৈতসিদ্ধি পণ্ড হয়ে থাক বা না থাক,
অকাল জরায় আমি অবরূদ্ধ নই শুক্রশাপে ;
অজাত পুরুর সঙ্গে ব্যতিহার্য নয় দুর্বিপাক |
অর্থাৎ প্রকট ব’লে সম্ভোগের অনন্ত বঞ্চনা,
পঞ্চাশে পা না দিতেই, অন্তর্যামী নৈমিষে নির্বাক :
এবং রটায় বটে মাঝে মাঝে আজও উদ্ভাবনা
পরিপূর্ণ মহাশূন্য ভস্মীভূত জ্যোতিষ্কের প্রেতে,
প্রাক্তন অভ্যাসদোষে ভুলে যায় মৌনের মন্ত্রণা
উন্নীত অমর কাব্যে কাগজের সুকুমার শ্বেতে ;
কিন্তু চিত্তবিক্ষেপেও অভিব্যাপ্ত বর্তুল সংসার
যেখানে আসক্তি, ঘৃণ্য ভিন্ন শুধু প্রাগ্বর্তী সংকেতে,
এবং চক্রান্তভুক্ত পূর্বাপর নিপাত, উদ্ধার
যেহেতু, আমাকে তাই অনুযোগ, শোচনা, ঈর্ষ্যাদি
ক্ষেপাতে পারে না আর | চরাচরে নেতির বিস্তার
নির্বিকার, হয়তো বা নিরাকার ব্রহ্মের সমাধি :
অন্তত এ-পরিবেশে মানুষের প্রার্থনাসমূহ
জাতিস্মর অভিমন্যু ; তবু স্তব্ধ বিধাতাকে সাধি---
মেনে নিতে পারি যেন অপ্রতর অসীমের ব্যূহ,
স্বপ্নে, জাগরণে যেন মনে রাখি নয় কল্পতরু
ঊর্ধ্বমূল, অধঃশাখ, দুর্নিরীক্ষ্য সেই মহীরুহ,
যাকে কেন্দ্র ক’রে ছোটে দিগ্ বিদিকে সমুদ্র--- না মরু ?

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
অপচয়
কবি সুধীন্দ্র নাথ দত্ত
অদিত বাইরী  সম্পাদিত “দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ লেখকদের ১৫০ বছরের প্রেমের কবিতা”  
(২০০৪ ) থেকে নেওয়া |


প্রেয়সী,  আছে কি মনে সে-প্রথম বাঙ্ময় রজনী,
ফেনিল মদিরা-মত্ত জনতার উল্বণ উল্লাস,
বাঁশির বর্বর কান্না, মৃদঙ্গের আদিম উচ্ছ্বাস,
অন্তরের অন্ধকারে অনঙ্গের লঘু পদধ্বনি ?

আছে কি স্মরণে, সখী, উত্সবের উগ্র উন্মাদনা,
করদ্বয়ে পরিপ্লুতি, চারি চক্ষে প্রগল্ ভ বিস্ময়,
শূন্য পথে দুটি যাত্রী, সহসা লজ্জার পরাজয়,
প্রতিজ্ঞার বহুলতা, আশ্লেষের যুগ্ম প্রবর্তনা ?
সে-শুদ্ধ চৈতন্য, হায়, বৃথা তর্কে আজি দিশাহারা,
বন্ধ্য স্পর্শে পরিণত স্বপ্নপ্রসু সে-গাঢ় চুম্বন,
ভ্রাম্যমান আলেয়ারে ভেবেছিল বুঝি ধ্রুবতারা,
অকূল পাথারে তাই মগ্নতরী আমার যৌবন ||

মরে না দুরাশা তবু ;  মনে হয় এ-নিঃস্ব জগতে
এতখানি অপচয় ঘটাবে না বিধি কোনও মতে ||

.             ***************************              
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর