কবি অকিঞ্চন দাসের বৈষ্ণব পদাবলী |
গগনে নিরখি বেলা ছল করি কুটিলা ভণিতা দ্বিজ অকিঞ্চন ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত, কাঞ্চন বসু সম্পাদিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, পদসংখ্যা-২৯৩৮, ৮১৫- পৃষ্ঠা। গগনে নিরখি বেলা ছল করি কুটিলা রাধার মন্দিরে যায় ধেয়ে। গিয়া রাধার ভবনে দেখে সব সখীগণে যায় রাধার স্নানের লাগিয়ে॥ দুই এক পদ যায় নন্দালয় পানে চায় দেখি মনে সংশয় জন্মিল। দেখিব কৃষ্ণ কি করে এত চিন্তি অন্তরে নন্দের মন্দিরে প্রবেশিল॥ দেখে কৃষ্ণ গেল স্নানে কুটিলা কুপিত মনে দাঁড়াইয়া ক্ষণেক ভাবিল। আজি ইহার তত্ত্ব লয়ে শাস্তি দিব দাদাকে কয়ে ভাবি পদ লখিয়া চলিল॥ তুলসী দেখিল দূরে ঘন দুটি হাত নেড়ে কুটিলা আসিছে কুঞ্জপানে। নিরখি সভয় চিত মন্দিরে পশি তুরুত নিবেদিল রাধা কৃষ্ণ স্থানে॥ শিন বিনোদিনী রাই কৃষ্ণ মুখ পানে চাই ভয়ে অঙ্গ কাঁপে থরহরি। সজল নয়নদ্বয় বিনয়ে কান্তেরে কয় রক্ষা কর বিপদ কাণ্ডারি॥ কৃষ্ণ কন ভয় হেন কর প্রাণেশ্বরী কেন আজি মোর মায়া বিস্তারিব। আয়ান মুরতি হয়ে এখনি নিকটে গিয়ে কুটিলারে বঞ্চনা করিব॥ তবে রাইয়ে প্রবোধিয়ে বৃন্দার নিকটে গিয়ে আয়ান রূপ করি ধারণ। ভণে দ্বিজ অকিঞ্চন তার শঙ্কা কি কারণ যার সখা বিপদভঞ্জন॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
নিকুঞ্জ মন্দির ঘরে ধরি কিশোরীর করে ভণিতা অকিঞ্চন দাস ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত, কাঞ্চন বসু সম্পাদিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, পদসংখ্যা-২৯৪১, ৮১৬-পৃষ্ঠা। নিকুঞ্জ মন্দির ঘরে ধরি কিশোরীর করে কহিছেন রসময় হরি। বিশাখা কহে ডাকি পাশা আন প্রাণসখি রাই সঙ্গে খেলাইব সারি॥ ললিতা কহয়ে হাসি হারিলে লইব বাঁশী রাই দিবে গজমোতি হার। হাসিয়া কহেন হরি আমি যদি জিনি সারি রাই চুম্ব দিবে শতবার॥ শুনিয়ে শ্যামের কথা কহিছে চম্পক লতা থাক বন্ধু ভরমে সরমে। কহিবার কথা নয় রাইয়ের যদি জয় হয় যা করিব তাহা আছে মনে॥ পরিহাস হাস্যরসে মুখানি ঝাঁপিয়ে বৈসে রাই সারি দিল ফেলাইয়া। রাই ফেলে দশ চারি ললিতা চালায় সারি জয় জয় আনন্দিত হইয়া॥ হাসিয়া হাসিয়া হরি করেতে লইয়া সারি পাশাতে পড়িল তিন বিন্দু। নাগরের মুখ হেরি হাসে যত ব্রজ নারী হারিলে হারিলে শ্যাম বন্ধু॥ এক সখী হাসিহাসি কাড়িয়া লইল বাঁশী করতালি সবাই বাজায়। অকিঞ্চন দাসে কয় রাধার হইল জয় গোপীর অধীন শ্যামরায়॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
প্রেমেতে অবশ হয়ে প্রাণনাথ মুখ চেয়ে ভণিতা অকিঞ্চন দাস ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত, কাঞ্চন বসু সম্পাদিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, পদসংখ্যা-২৯৪২, ৮১৭-পৃষ্ঠা। প্রেমেতে অবশ হয়ে প্রাণনাথ মুখ চেয়ে কহিছেন বিনোদিনী রাধা। ধর মোর বেশর ধর আপন আঁচরে কর তোমার মুরলী রাখ বান্ধা॥ হারি যদি হে নাগর নাহি লব বেশর জিনি যদি নাহি দিব বাঁশী। বাঁশীটি জিনিয়া লব আপন করিয়া থোব নতুবা হইব তব দাসী॥ শ্যাম কহেন হাসি হাসি আমার মোহন বাঁশী পাষাণ দ্রবয়ে যার গানে। এত গুণের বাঁশী মোর কত ধনের বেশর তোর সমান করহ কোন্ গুণে॥ রাই বলে সুন শ্যাম বেশর যাহার নাম সতত দোলয়ে নাসা মাঝে। যে বেশরে মুখ আলা আপনি ভুলেছ কালা হেন বেশর নিন্দ কোন লাজে॥ তোমার বাঁশীটি ভাল লইতে অবলাকুল হাতে মোর ঠকেছ এবার। অকিঞ্চন দাসে কয় এত কভু ভাল নয় ফিরায়ে দিওনা বাঁশী আর॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
যাবটে আমার রাইএর গোচর ভণিতা অকিঞ্চন দাস ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত, কাঞ্চন বসু সম্পাদিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, পদসংখ্যা-২৯৪৩, ৮১৭-পৃষ্ঠা। যাবটে আমার রাইএর গোচর বসতি হইবে কবে। শ্রীরূপ মঞ্জরী মোরে কৃপা করি চরণে রাখিবে তবে॥ মোরে কৃপা করি গোবর্দ্ধন গিরি রাধাকুণ্ড কুঞ্জবনে। যেখানে যেখানে লীলা নিকেতনে নিভৃত নিকুঞ্জ স্থানে॥ নিভৃত নিকুঞ্জে রাই যাবে রঙ্গে নয়নে দর্শন হবে। গুরুরূপা সখী অনাথিনী দেখি পশ্চাতে রাখিবে কবে॥ আর কত দিনে সেবাপরা গণে আমারে ইঙ্গিত বাণী। ইঙ্গিত বুঝিব পালঙ্ক বিছাব রাধারে বসাব আনি॥ পালঙ্ক উপরে বসায়ে রাধারে চরণ ধোয়াব সুখে। শুষ্ক বাস দিয়ে চরণ মুছায়ে কর্পূর তাম্বুল মুখে॥ ঠাকুর চরণে মোর নিবেদন আর কে ধরিবে দয়া। অকিঞ্চন দাসে সেবা অভিলাষে দেহ মোরে পদ ছায়া॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |