কবি বিমানবিহারী মজুমদারের বৈষ্ণব পদাবলী
*
না জানি কি ভাসে গোরা হইল বিভোর
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        
কুরুক্ষেত্রে মিলন

.        গৌরচন্দ্রিকা

না জানি কি ভাসে গোরা হইল বিভোর।
নতমুখে কাঁপে শুধু চোখে বহে লোর॥
স্বরূপের গলা ধরি কহে প্রিয় সখি।
মায়া কিংবা মতিভ্রম সম্মুখেতে দেখি॥
যাহারে পাইব বলি রাখিনু জীবন।
এতদিন পরে সে কি দিল দরশন॥
কহ সখি দেখি কিবা স্যমন্তপঞ্চকে।
নন্দের নন্দন প্রাণ ব্রজের বঞ্চকে॥
কোথা গেল বনমালা শিখিপুচ্ছচূড়া।
শ্যামলসুন্দর কান্তি আর পীতধড়া॥
গুঞ্জামালা দ্বারকায় কিবা নাহি মিলে।
কেমনে ভুলায় তবে মহিষী সকলে॥
এত বলি গোরারায় করে হায় হায়।
নিতাই দেখিয়া দুখে ধরণী লোটায়॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কেন আর বল সখি কেন আর বল
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

শ্রীবৃন্দাবনে ললিতার প্রতি শ্রীরাধা

কেন আর বল সখি কেন আর বল।
তীর্থস্নানপুণ্যে মোর কিবা হবে ফল॥
না যায় কঠিন প্রাণ পড়ি আছি ব্রজে।
কেমনে দেখাব মুখ লোকের সমাজে॥
যেদিন বন্ধুরে মোর দিয়াছি বিদায়।
রোড়া বিধি সব সাধ দলিয়াছি পায়॥
শ্যাম হেন বঁধু পায়্যা যে জন হারায়।
নয়নের জলে তার পাষাণ মিলায়॥
রাধার বিলাপ শুনি কহয়ে ললিতা।
গোপনে পাঠায়ে লিপি ডাকিছে মিতা॥
তুমি তো মিজের সুখ কভু চাহ নাই।
শ্যামের সুখের তরে চল যাই রাই॥
সাজিল যশোদা সঙ্গে রাই কুন্দলতা।
মুটকি বহিয়া চলে নিতাই সর্বথা॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
অনেক দিনের পরে হেরিবে বন্ধুকে
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।


.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

.        শ্রীরাধার প্রতি ললিতা

অনেক দিনের পরে হেরিবে বন্ধুকে।
মলিন বসনে কেন চলিছ রাধিকে॥
কত সাজায়েছি তোমা অভিসার কালে।
এ বেশে দেখিতে হল এই ছিল ভালে॥
কানুর সন্দেশ শুনি তৃণগুল্মলতা।
পুলক উজ্জ্বল হয়ে কহে কি বারতা॥
কত ফুলদল আজি উঠিছে ফুটিয়া।
বনমালা গাঁথিয়াছি পরাবে বলিয়া॥
বৃষেরা ধাইছে বেগে রথদল বাহি।
কখন জুড়াবে আঁখি শ্যামমুখ চাহি॥
ললিতা বচন শুনি রাধা অচেতন।
নিতাই কাঁদিয়া করে চামর ব্যজন॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
উদ্ধব সচিবসখা কৃষ্ণেরে পাইয়া একা
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

কুরুক্ষেত্রে মিলন


শ্রীকৃষ্ণের প্রতি উদ্ধব


উদ্ধব সচিবসখা                                কৃষ্ণেরে পাইয়া একা
নিবেদয়ে ধরিয়া চরণ।
দাসেরে ক্ষমিও প্রভু                          তোমারে কোথাও কভু
দেখি নাই এত উচাটন॥
তোমার আপনজন                                গোপগোপী বন্ধুগণ
ধাইয়াছে কুরুক্ষেত্র পানে।
স্নান-দান ছল করি                               দেখিবে প্রাণের হরি
আন কথা নাহি তুলে কানে॥
একান্ত নিভৃত স্থানে                          অন্যে জেন নাহি জানে
মেলনি উচত সঙ্গোপনে।
অন্তঃপুর সন্নিকটে                                  মধুস্রবা নদীতটে
স্থান আছে তাদের কারণে॥
হয়ো না উতলা এত                                দিবস হইলে গত
প্রিয়জনে দিও দরশন।
নিতাই শুনিয়া ভাবে                              কেমনে মিলন হবে
নাই হেথা কোন কুঞ্জবন॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কত কাল পরে বাপ কত কাল পরে
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

.        শ্রীকৃষ্ণের প্রতি যশোদা


কত কাল পরে বাপ কত কাল পরে।
মা বলিয়া ডাক দিয়া আল্যা মোর ঘরে॥
কাঁদিয়া কাঁদিয়া বাছা গিয়াছে নয়ন।
কেমনে দেখিব বল ও-চাঁদ বদন॥
কাছে এস কোলে এস যশোদাদুলাল।
কত কষ্ট দিল তোমা করিয়া রাখাল॥
লোকে বলে তুমি নাকি দুষ্ট রাজগণে।
যুদ্ধ করি পাঠায়েছ শমন-ভবনে॥
এত মারামারি বাছা করিতে কি আছে।
নিবারিতে তোমা বুঝি কেহ নাই কাছে॥
মা বলিয়া বার বার ডাক দেখি বাপ।
শুনিলে নিতাই বলে জুড়াবে সন্তাপ॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
দেখ বন্ধু চাহি রাধাপানে
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

কুরুক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ললিতা


দেখ বন্ধু চাহি রাধাপানে।
তোল নাই তার দুখ কানে॥
দূতীরা গিয়াছে কতবার।
আশ্বাস দিয়াছ বার বার॥
কত দেশ ঘুরিতেছ তুমি।
দূর বুঝি বৃন্দাবন ভূমি॥
পাসরিতে করেছি যতন।
নিজবশে নাই তার মন॥
তব পায়ে সঁপিল যে মন।
ধর্ম কর্ম তনু মন ধন॥
তারে ছাড়ি রহিলা কেমনে।
অকৃতজ্ঞ নাহি তোমা হেনে॥
জান তার বুকে কত ব্যথা।
নিতাই কাঁদয়ে শুনি কথা॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
শুনহ ললিতা মোর মরমের বাণী
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

.     ললিতার প্রতি শ্রীকৃষ্ণ

শুনহ ললিতা মোর মরমের বাণী।
সত্য তব অভিযোগ নতশিরে মানি॥
কেমনে আমার দুখ তোমারে বুঝাই।
কত সুখে আছি দেখ মুখপানে চাই॥
অতি খল দুষ্টমতি যত বৈরিগণ।
চারিগিকে খুঁজে ফিরে মোর প্রিয়জন॥
প্রতিশোধ ল’তে চায় করি নির্যাতন।
তাই আমি বৃন্দাবনে না করি গমন॥
ঐশ্বর্যগৌরবে সখি নাহি কিছু সুখ।
রাধিকার প্রেম বিনা নাহি ভরে বুক॥
দহিছে সুতীব্র তেজে বিরহের জ্বালা।
নিমেষে শুখায়ে যায় বুকে ফুলমালা॥
দু’হাতে লুকায়ে মুখ কাঁদয়ে শ্রীকৃষ্ণ।
নিতায়ের ফাটে বুক রাধিকা সতৃষ্ণ॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
তব আজ্ঞা শিরে ধরি দেবী সত্যভামা
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

সত্যভামার প্রতি তাহার সহচরী


তব আজ্ঞা শিরে ধরি দেবী সত্যভামা।
গোপনে দেখিনু কৃষ্ণলীলা অনুপমা॥
কোন এক পৌর্ণমাসী দেবীর যতনে।
রাধিকা শোভিছে আজো কৌশোর-রতনে॥
তপস্যার জ্যোতিশিখা প্রায় সমুজ্জবল।
তারুণ্য লাবণ্যজলে করে ঝলমল॥
তাহার চরণতলে বসিয়া শ্রীহরি।
নয়নে নয়ন রাখি পিবয়ে মাধুরী॥
মুখানি মোছায় তার আপন বসনে।
জন্মে জন্মে তব দাস বলয়ে সঘনে॥
শ্রীকৃষ্ণের হেন শোভা কভু দেখি নাই।
মরিবারে চাহি লয়ে রূপের বালাই॥
শুনিয়া দূতীর বাণী দেবী ছাড়ে শ্বাস।
নিতায়ের মনে জাগে আনন্দ উচ্ছ্বাস॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাধা রাধা বলি কানু হারায় গেয়ান
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” গ্রন্থের পরিশিষ্ট। সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে
রাধাকৃষ্ণের মিলন লীলা।

.        কুরুক্ষেত্রে মিলন

.        মিলন


রাধা রাধা বলি কানু হারায় গেয়ান।
নিয়ড়ে বসিয়া ধনী করয়ে ধেয়ান॥
কাছে থাকি দূরে মানে কিবা অনুরাগে।
মিলনে বিরহজ্বালা শতগুণ জাগে॥
ক্ষণেকে চেতন পায়্যা হিয়া হিয়ে থাকে।
হারাবার ভয়ে বুঝি বুকে বাঁধি রাখে॥
অনুতাপে বলে কৃষ্ণ ক্ষমা কর ধনী।
তোমার প্রেমের ঋণ শোধিব আপনি॥
তব ভাবকান্তি ধরি কাঁদিয়া কাঁদিয়া।
লুটাব ধরণীতলে জনম ভরিয়া॥
নয়নের জলে মোর সাগর বহিবে।
সে কাঁদিবে মোর কথা যে জন স্মরিবে॥
বিস্ময়ে আকুল রাধা শুনি হেন বাণী।
নিতাই ভাবয়ে কহে হবে বা এমনি॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
দিবসের পরিণতি হেরহ এখন সতী
কবি বিমানবিহারী মজুমদার
কবি শ্রীরূপ গোস্বামীর “তরুণী-লোচন-তাপ-বিমোচন” সংস্কৃত পদটির, বিমানবিহারী মজুমদারের পদাবলীর
রুপে অনুবাদ, “পাঁচশত বত্সরের পদাবলী”, পদসংখ্যা ৬৭।


দিবসের পরিণতি                              হেরহ এখন সতী!
বনমালী আসিছেন ফিরে।
নূতন নূতন কত                                অঙ্গভঙ্গী নানামত
কমলচরণ ফেলি ধীরে॥
মন্দ মন্দ গতি বায়                            ময়ূর পুচ্ছের তায়
চূড়া দোলে মস্তক উপরে।
তরুণীলোচন তাপ                             দূর করে অভিশাপ
হেন হাস্য আস্য-সুধাকরে॥
ধেনিখুর-সংঘর্ষণে                              উঠিছে ধূলি গগনে
তাহে ব্যাপ্ত কমলের মালা।
শোভা নব ইন্দিবর                             কান্তিময় কলেবর
মনোহর যেন রসশালা॥
মধুর মুরলীধ্বনি                                করিছেন গুণমণি
তব রতি করিতে প্রবল।
শোভাময় সনাতন                               সঙ্গে সব সখাগণ
করিছেন রস কৌতূহল॥


শ্রীরূপ গোস্বামীর মূল সংস্কৃত পদটি . . .

॥ গৌরী॥

তরুণী-লোচন-                            তাপ-বিমোচন-
হাস-সুধাঙ্কুর-ধারী।
মন্দ-মরুচ্চল-                            পিঞ্ছ-কৃতোজ্জ্বল-
মৌলিকুদার-বিহারী॥
সুন্দরি পশ্য মিলতি বনমালী।
দিবসে পরণতি-                          মুপগচ্ছতি সতি
নব-নব-বিভ্রম-শালী॥ ধ্রু॥
ধেনু-খুরোদ্ধত                                রেণু পরিপ্লুত-
ফুল্ল-সরোরুহ-দামা।
অচির-বিকস্বর-                                লসদিন্দীবর-
মণ্ডল-সুন্দর-ধামা॥
কল-মুরলী-রুতি-                          কৃত-তাবক-রতি-
রত্র দৃগন্ত-তরঙ্গী।
চারু-সনাতন-                                  তনুরনুরঞ্জন-
কারি সুহৃদ্গণ-সঙ্গী॥

.         *************************         
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর