কবি বৈষ্ণবদাসের বৈষ্ণব পদাবলী
*
অথ অনুবাদ-প্রকরণং
কবি বৈষ্ণবদাস
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের (শ্রীশ্রীগীতকল্পতরু), প্রথম সংস্করণ ১৩০৪
বঙ্গাব্দ (১৮৯৭), ৪র্থ খণ্ড, অনুবাদ-প্রকরং। পদকল্পতরু ৪র্থ শাখার শেষে বৈষ্ণবদাসের
দেওয়া গ্রন্থ-সার বিবরণ।

অথ অনুবাদ-প্রকরণং।

জয় জয় গৌরচন্দ্র জয় দীন-বন্ধু।
পতিত-পাবন জয় করুণার সিন্ধু॥
জয় জয় পরম দয়াল নিত্যানন্দ।
জয় জয় সীতানাথ শান্তিপুর-চন্দ॥
শ্রীবাস-শ্রীগদাধর-আদি ভক্তবৃন্দ।
জয় জয় সভাকার চরণারবিন্দ॥
এইবার করুণা কর গৌর-ভক্তগণ।
তোমা সভার শ্রীচরণ হউ’ প্রাণ-ধন॥
যাঁহার স্মরণে হৈল গ্রন্থ-সংগ্রহ।
সে চরণ-ধূলি দেহ করি অনুগ্রহ॥
দন্তে তৃণ ধরি পড়ি দণ্ডবৎ হৈয়া।
কর যুড়ি নিবেদিয়ে শুন মন দিয়া॥
অদোষ-দরশী তোমরা গৌর-ভক্তগণ।
অপরাধ ক্ষমি শুন মোর নিবেদন॥

আচার্য্য প্রভুর বংশ শ্রীরাধামোহন।
কে কহিতে পারে তাঁর গুনের বর্ণন॥
যাহার বিগ্রহে গৌর-প্রেমের নিবাস।
হেন শ্রীআচার্য্য প্রভুর দ্বিতীয় প্রকাশ॥
গ্রন্থ কৈলা পদামৃতসমুদ্র-আখ্যান।
জন্মিল আমার লোভ তাহা করি গান॥
নানা পর্য্যটনে পদ-সংগ্রহ করিয়া।
তাঁহার যতেক পদ সব তাহা লৈয়া॥
সেই মূল-গ্রন্থ অনুসারে ইহা কৈল।
প্রাচীন প্রাচীন পদ যতেক পাইল॥
এই গীত-কল্প-তরু নাম কৈনু সার।
পূর্ব্বরাগাদিক্রমে চারি শাখা যার॥

প্রথম শাখার করি পল্লব গণনা।
শুন গৌর-ভক্ত-বৃন্দ করিয়া করুণা॥
প্রথম পল্লবে কৈলা মঙ্গলাচরণ।
সপ্তবিংশতি পদ তাহাতে ঘটন॥
দ্বিতীয়ে শ্রীরাধিকার পূর্ব্বরাগ-বর্ণনা।
যড়্ বিংশতি পদ তাহে আছয়ে যোটনা॥
তৃতীয়ে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের পূর্ব্বরাগ গাইল।
ত্রয়োদশ পদে তাহা সমাপন কৈল॥
চতুর্থে শ্রীরাধাকৃষ্ণের পূর্ব্বরাগ-বর্ণনা।
পঞ্চত্রিংশ পদ তাহে আছয়ে ঘটনা॥
পঞ্চম পল্লবে পূর্ব্বরাগ এক প্রকার।
বয়ঃসন্ধি-রূপ পঞ্চদশ পদ তার॥
যষ্ঠে পূর্ব্বরাগ প্রকারান্তর গাইল।
পঞ্চদশ পদে তাহা সমাপন কৈল॥
সপ্তমে পূর্ব্বরাগ বিস্তার কিছু আছে।
ঊনষষ্টি পদ তাহা গাইয়াছি পাছে॥

অষ্টমে কৃষ্ণের পুন পূর্ব্বরাগ-গান।
চতুস্ত্রিংশ পদে তাহা কৈল সমাধান॥
নবমে সংক্ষিপ্ত-সম্ভোগের রসোদ্গার।
সপ্তদশ পদ তাহে গাইয়াছি সার॥
সেই রস প্রকারান্তরে দশম একাদশে।
ছয় পদ আঠার পদ জানিবে বিশেষে॥
এই ত কহিল প্রথম শাখার গণন।
পূর্ব্বরাগ সংক্ষিপ্ত-সম্ভোগ-বর্ণন॥
একাদশ পল্লব প্রথম শাখায় হইল।
দুই শত পঞ্চষষ্টি পদে সমাপিল॥

.        ------------------------      

শুন বৈষ্ণব গোসাঞি করিয়া করুণা।
দ্বিতীয় শাখার করি পল্লব গণনা॥
প্রথমে রূপানুরাগ অভিসার মিলন।
একাদশ পদে তাদা কৈল সমাপন॥
দ্বিতীয়ে রূপানুরাগ বাসকসজ্জাদি।
একাদশ পদ তাহে মিলন গাইল।
তৃতীয়ে রূপাভিসার মিলন গাইল।
ষোড়শ পদেতে তাহা সমাপন কৈল॥
চতুর্থ পল্লবে সে বসন্ত-কালোচিত।
বাসকসজ্জাদি একবিংশতি পদ গীত॥
পঞ্চমে বাসকসজ্জা শীত কালোচিত।
সোহো ত ষোড়শ পদ মিলন সহিত॥

ষষ্ঠে বর্ষা-কালোচিত বাসকসজ্জাদি।
একাদশ পদ তাহে মিলন অবধি॥
সপ্তমে অভিসারাদি খণ্ডিতা পর্য্যন্ত।
সর্ব্ব-কালোচিত গান ছাব্বিশ পদে অন্ত॥
অষ্টম নবম আর দশম পল্লবে।
খণ্ডিতা বর্ণন ধীরা-মধ্যার স্বভাবে॥
দ্বাদশৈকাদশ আর সপ্ত পদ তায়।
ক্রমে সে গাইল তোমা সবার কৃপায়॥
একাদশে হয় অধীরা-মধ্যার কথন।
ত্রয়োদশ পদ তাহে খণ্ডিতা-বর্ণন॥
দ্বাদশেতে ধীরাধীরা-মধ্যার খণ্ডিতা।
একাদশ পদে সব গাইয়াছি তথা॥
ত্রয়োদশ পল্লবে গাই কলহান্তরিতা।
একোনবিংশতি পদ অপরূপ কথা॥
পুন প্রকারান্তরে সে কলহান্তরিতা।
চতুর্দশ পঞ্চদশ পল্লবে সে কথা॥
দ্বাদশ আর ত্রয়োদশ পদ আছে ক্রমে।
মিলন পর্য্যন্ত সেই সব অনুপমে॥
ষোড়শে আর সপ্তদশে দুর্জ্জয় মান।
নয় পদে চল্লিশ পদে দুই সমাধান॥
অষ্টদশ পল্লব আর ঊনবিংশতিতে।
দ্বাদশ ত্রয়োদশ পদ মান বহুমতে॥
বিংশতি পল্লবে মান বিবিধ প্রকার।
পঞ্চবিংশতি পদ হয়ত তাহার॥


একবিংশতি পল্লবে পুন সেই মান।
একাদশ পদে সহেতু মান সমাধান॥
দ্বাবিংশতি পল্লবে নির্হেতু মান হয়।
প্রতিবিম্ব-দৃষ্টি-আদি তের পদ তায়॥
ত্রয়োবিংশ অকারণ মানের প্রকার।
নানামত ভেদ তাহে নয় পদ তার॥
চতুর্ব্বিংশে সংকীর্ণ-সম্ভোগ-রসোদ্গার।
দ্বিতীয় শাখার শেষ নয় পদ তার॥
চব্বিশ পল্লবে দ্বিতীয় শাখা সমাপিল।
তিন শত একান্ন পদ তাহে হৈল॥

.        ----------------------------


শুন গৌর-ভক্তবৃন্দ করিয়া করুণা।
তৃতীয় শাখার করি পল্লব গণনা॥
প্রথম সে স্বয়ংদৌত্য সম্ভোগ মিলন।
দশ পদ গান সেই অতি বিলক্ষণ॥
দ্বিতীয়ে অষ্টপদে পুন স্বয়ংদূতী-গান।
তৃতীয়ে ত স্বয়ংদূতীর বিবিধ বিধান॥
একাদশ পদ তৃতীয়ে চতুর্থে সে দশ।
স্বয়ংদূতী সম্পূর্ণ-সম্ভোগাখ্যান রস॥
মানাদিতে স্বয়ংদূতী সে এক প্রকার।
তাহা নহে এই হয়ে বড় চমত্কার॥
পঞ্চমে সে সম্ভোগান্তে রসালস-গান।
গৃহে আগমন অষ্ট পদে সমাধান॥

ষষ্ঠে রসোদ্গার হয় ত্রিবিধ প্রকার।
অষ্ট প্রকরণে ঊনআশী পদ তার॥
সপ্তমে রসোদ্গার পরে শ্রীকুণ্ডে মিলন।
সপ্তদশ পদ সম্ভোগাদি প্রকরণ॥
নবমে প্রেম-বৈচিত্র্য হয়ে তৃতীয় প্রকার।
আশ্রচর্য্য চরিত্র ত্রয়োদশ পদ তার॥
দশমৈকাদশে অনুরাগ বহু গাইল।
রূপ আক্ষেপ অভিসার স্থল তিন কৈল॥
আক্ষেপের নানা ভেদ মুখ্য নয় প্রকার।
এক শত ষন্নবতি পদ হয়ে তার॥
দ্বাদশ পল্লবে হয় অভিসারানুরাগ।
দশ পদ সম্ভোগ পর্য্যন্ত সম ভাগ॥
ত্রয়োদশে অভিসারোত্কণ্ঠা আদি করি।
অভিসারে ছয় চল্লিশ পদ তাহে ধরি॥
চতুর্দ্দশে রূপোল্লাস সম্ভোগ মিলন।
চতুস্ত্রিশ পদ তাহে করিল যোটন॥
পঞ্চদশে নিত্য রাস সর্ব্ব-কালোচিত।
ঊনত্রিংশ পদ তাহে মধুর সঙ্গীত॥
তারি মধ্যে বিপরীত-সম্ভোগ-বিস্তার।
ষোড়শ বিংশতি পদে তারি রসোদ্গার॥
এক নিবেদন শুন করি অবধান।
জন্ম-তিথি-পূজা-দিনে যে করিবে গান॥

অদ্বৈত নিত্যানন্দ চৈতন্যের জন্ম-লীলা।
ঠাকুর বৈষ্ণবগণ যেমত কহিলা॥
সপ্তদশ পল্লবে পঞ্চদশ পদে গাই।
অষ্টাদশে নন্দোত্সব আনন্দ বাধাই॥
তারি মধ্যে একভাগে রাধিকার জন্মোত্সব।
দশ চারি চৌদ্দ পদে গাইয়াছি সব॥
মাতার বাত্সল্য আর কৃষ্ণের বাল্য-লীলা।
শুনি পশু পাখী কান্দে গলি যায় শিলা॥
সম্যক কি সাধ্য তার কোন কোন লীলা।
প্রাচীন বৈষ্ণবগণ যেমত গাইলা॥
তাহা শুনি কিছু কিছু যে হৈল সংগ্রহ।
তাহা শুন ভক্তগণ করি অনুগ্রহ॥
ঊনবিংশতি পল্লবে কৌমার-কালোচিত।
মাতার বাত্সল্য সে বিংশত পদ গীত॥
বিংশতিতে বাত্সল্য আর গোষ্ঠাষ্টমী লীলা।
বত্স-চারণাদি পঞ্চবিংশতি পদ হৈলা॥
একবিংশতিতে আর দ্বাবিংশ পল্লবে।
সখ্য বাত্সল্য গোষ্ঠ-গমন উত্সবে॥
যজ্ঞপত্নী-অন্ন-ভোজনাদি নানা খেলা।
ত্রিংশ আর ষড়্ বিংশতি পদ তাহে হৈলা॥
ত্রয়োবিংশে গোবর্দ্ধন-ধারণাদি লীলা।
সাত চারি এগার পদ সংগ্রহ হইলা॥
চতুর্বিংশে শরত্কালে মহারাস-লীলা।
পঞ্চাশ পদ তাহে সংগ্রহ হইলা।
বৈষ্ণব গোসাঞি কৃপা যেমত করিলা॥

পঞ্চবিংশে দান-লীলা আর গোচারণ।
এক শত ছয় পদ সাত প্রকরণ॥
ষড়বিংশে রাধাকৃষ্ণের নৌকায় বিলাস।
অষ্টষষ্টি ষোড়শ পদে রসের উল্লাস॥
সপ্তবিংশে বসন্ত-লীলা বিস্তার বর্ণন।
শ্রীপঞ্চমী হোলি মধু-রাস-লীলাগণ॥
ফুল-দোল চৈত্রে মাধবী-লীলা আর।
এক শত একাদশ পদ হয়ে তার॥
অষ্টাবিংশে স্নান-যাত্রা অষ্ট পদ হয়।
ঊনত্রিংশে রথ-যাত্রা ছয় পদ তায়॥
ত্রিংশ পল্লবে বর্ষা-ঝুলন-বিহার।
একোনবিংশতি পদ হয় চমত্কার॥
একত্রিংশে অভিষেক তিন চারি প্রকার।
সপ্তদশ পদ তাহে গান সুবিস্তার॥
এইত কহিল তৃতীয় শাখার পল্লব।
তোমা সবার শ্রীচরণ-কৃপা-অনুভব॥
একত্রিংশ পল্লবে তৃতীয়-শাখা সমাপিল।
নয়শত পঞ্চ ষষ্টি পদ তাহে হৈল॥

.        ------------------------------

কৃপা করি শুন সব গৌর-ভক্তগণ।
চতুর্থ শাখার করি পল্লব গণন॥
কালীয়-দমন-আদি নানান বিরহ।
প্রথমে দ্বাদশ পদ করিল সংগ্রহ॥
দ্বিতীয় পল্লবে গোষ্ঠ অক্রুরাগমন।
দ্বাবিংশতি পদ ভাবি-বিরহ-বর্ণন॥
তৃতীয় পল্লবে কৃষ্ণের মথুরাগমন।
চতুর্দ্দশ পদ তাহে বিরহ ভবন্॥
চতুর্থে ভুত বিরহ শ্রীমতীর বিলাপ।
ষোল পদে গাইয়াছি বিরহ-সন্তাপ॥
পঞ্চমেতে অর্দ্ধ-বাহ্যে প্রলাপ-বর্ণন।
দ্বাদশ পদে তাহা কৈল সমাপন॥
ষষ্ঠে দিব্যোন্মাদ প্রলাপ স্বপ্নবৎ মিলন।
পঞ্চ চল্লিশ পদ তাহে তিন প্রকরণ॥
সপ্তমে স্বপ্নে সঙ্গ রসোদ্গার-কথন।
চারি পদ গান সেই এক প্রকরণ॥
অষ্টমে বসন্ত গ্রীষ্ম বর্ষা আদি করি।
ঋতু-ভেদে বিরহ চোয়ান্ন পদ ধরি॥
দ্বাদশ মাসের বিলাপ নবম পল্লবে।
সপ্তআশী পদ তাহে করি অনুভবে॥
দশম পল্লবে নানা বিরহ-বর্ণন।
ত্রিংশ পদ হয় সেই চারি প্রকরণ॥
চিন্তাদি-দশা-বর্ণন হয় একাদশে।
সপ্তআশী পদ তাহে জানি যে বিশেষে॥
দ্বাদশে পঁচিশ পদ ভাবোল্লাস মিলন।
ত্রয়োদশে পঞ্চ তার রসোদ্গার-কথন॥

চতুর্দ্দশে সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ-বিস্তার।
বিপরীত আদি ঊনবিংশতি পদ তার॥
সে সম্ভোগের রসোদ্গার ছয় পদ হয়।
পঞ্চদশ পল্লবে তাহা জানিহ নিশ্চয়॥
সমৃদ্ধিমান্  শ্রীজয়দেবের বসন্ত-বর্ণন।
বিরহোত্কণ্ঠাদি মান দুই প্রকরণ॥
পঞ্চত্রিংশ পদ তাহে ষোড়শ পল্লবে।
কৃপা করি শুন গৌর-ভক্তগণ সবে॥
তার পর গাইয়াছি গৌরচন্দ্র-লীলা।
প্রাচীন মহান্তগণ যে সব বর্ণিলা॥
সপ্তদশ পল্লবে প্রভুর নৃত্যাদি-বর্ণন।
তাহাতে পঞ্চাশ পদ হয়ে বিলক্ষণ॥
অষ্টাদশ আর ঊনবিংশতি পল্লবে।
গৌরাঙ্গের রূপাদি-বর্ণনা নানা ভাবে॥
ঊনষট্টি পদ আর ষোল পদ তায়।
রূপ-গুণ-ভাবাদি-বর্ণন নদীয়ায়॥
বিংশতিতে ঐশ্বর্ষ্য-মহিমা-আদি করি।
দুই প্রকরণে সে চৌত্রিশ পদ ধরি॥
একবিংশে মহাপ্রভুর সন্ন্যাস-করণ।
শান্তিপুর-আদি পুন নীলাদ্রি-গমন॥
নীলাচলে নৃত্য-গীত-কীর্ত্তনাদি ভাব।
মাতা ভক্তগণের নানা বিরহ-বিলাপ॥
প্রভু নিত্যানন্দের গৌড়-মণ্ডলাগমন।
নীলাচলে গেলা অদ্বৈতাদি ভক্তগণ॥

ছিয়াত্তর পদ তাহে করিল সংগ্রহ।
শুন শুন ভক্তগণ করি অনুগ্রহ॥
দ্বাবিংশ পল্লবে নিত্যানন্দ প্রভুর লীলা।
অষ্টত্রিংশ পদ তাহে সংগ্রহ হইলা॥
ত্রয়োবিংশে নিত্যানন্দ চৈতন্যের গুণ।
ষোড়শ পদেতে তাহা আছয়ে বর্ণন॥
চতুর্বিংশে অদ্বৈত প্রভুর কিছু গুণ।
গাইয়াছি পঞ্চপদ সংক্ষেপ-বর্ণন॥
পঞ্চবিংশে গৌর-ভক্তগণের কিছু লীলা।
দ্বাত্রিংশ পদ তাহে সংগ্রহ হইলা॥
ষড়্ বিংশে বিদ্যাপতি আর চণ্ডীদাস।
ইহা সবার গুণ কিছু আছয়ে প্রকাশ॥
দশ পদে সংক্ষেপ করিয়া সে গাইল।
সপ্তবিংশে দশাবতারে তের পদ হৈল॥
অষ্টাবিংশে কৃষ্ণচন্দ্রের রূপের বর্ণন।
পঞ্চাস পদ তাহে করিল গায়ন॥
ঊনত্রিংশে শ্রীরাধিকার রূপ যে গাইল।
ষোল পদ গান তাহে সংগ্রহ হইল॥
ত্রিংশ পল্লবে অষ্টকালীয় বর্ণন।
দুইশত তেহাত্তোরি পদ সাত প্রকরণ॥
একত্রিংশে পুন অষ্টকালী নিত্য লীলা।
একানব্বই পদ তাহে সংগ্রহ হইলা॥
দ্বাত্রিংশে সেই লীলা সংক্ষেপ-বর্ণন।
একোনসপ্ততি পদ দুই প্রকরণ॥

সেই নিত্য-লীলা পুন অত্যন্ত সংক্ষেপে।
এক পঞ্চাশ পদ ত্রয়স্ত্রিংশ পল্লবে॥
চতুস্ত্রিংশ পল্লবে হয় নাম-সংকীর্ত্তন।
একবিংশতি পদ প্রাচীন-বর্ণন॥
পঞ্চত্রিংশে নিজাতিষ্ট-বিয়োগে বিলাপ।
ছয় পদ গান ভক্তগণের সন্তাপ॥
ষট্ ত্রিংশে সংপ্রার্থনা দৈন্য-বোধিকা।
লালসাময়ী আদি হৈল সমাধিকা॥
তারি মধ্যে সমাপ্তিতে বৈষ্ণব গোসাঞি।
একশত অষ্টাদশ পদ তাহে গাই॥
এইত কহিল চতুর্থ শাখার গণন।
ষট্ ত্রিংশ পল্লবে চতুর্থ শাখা সমাধান।
এক সগস্র পঞ্চাশত বিংশতি পদ গান॥
চতুর্থ শাখাতে গ্রন্থ সংপূর্ণ হইল।
সংগ্রহ করিয়া পদ যতেক গাইল॥
এই গীত-কল্পতরু তোমা সবাকার।
কৃপা মতে সংগ্রহ করিনু মুঞি ছার॥

.        ----------------------------  

একাদশ পল্লব হয় প্রথম শাখাতে।
পূর্ব্বরাগ সংক্ষিপ্ত-সম্ভোগ-লীলা তাতে॥
দ্বিতীয় শাখাতে চতুর্ব্বিংশতি পল্লব।
মান আদি সংকীর্ণ-সম্ভোগ লীলা সব॥
একত্রিংশ পল্লব হয় তৃতীয় শাখাতে।
সংপূর্ণ সম্ভোগ আদি নানা রস তাতে॥
ষট্ ত্রিংশ পল্লব হয় চতুর্থ শাখায়।
প্রবাসাদি সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ তাহায়॥
এক শত দ্বিতীয় পল্লবে চারি শাখা।
তিন সহস্র এক শত এক পদে লেখা॥

যত পদ তত পত্র পল্লবে জানিবে।
নানা ছন্দ নানা বর্ণ বৃক্ষোপরি শোভে॥
পুষ্প ভাব-ফল প্রেম-বৃক্ষে আছে ভরি।
শ্রবণ-কীর্ত্তনে ভক্তগণ খায় পাড়ি॥
যত পাড়ি খায় তত বাড়য়ে অপার।
ক্ষণে ক্ষণে স্বাদু নিত্য নূতন বিস্তার॥
এই কল্পতরু ভক্তগণে দিনু ভেট।
শ্রবণ-কীর্ত্তন-দ্বারে খাই ভর পেট॥
ওহে গৌর-ভক্তবৃন্দ এই করি আশ।
তোমা সবার ভুক্ত-শেষ মোর হউ গ্রাস॥
তোমা সবার শ্রীচরণ বিনে নাহি গতি।
এই লাগি পুন পুন করিয়ে মিনতি॥
দন্তে তৃণ ধরি প্রভু করিয়ে প্রার্থনা।
নিজ সঙ্গে রাখ করি অপরাধ মার্জ্জনা॥
জয় জয় প্রভু মোর বৈষ্ণব গোসাঞি।
জীবনে মরণে মোর আর গতি নাই॥
জয় জয় অদোষ-দরশী ভক্তবৃন্দ।
অধম জনেরে দেহ চরণারবিন্দ॥

আরে মোর আরে মোর বৈষ্ণব টাকুর।
কৃপা করি কর তোমার উচ্ছিষ্টের কুক্কুর॥
জীবনে মরণে করি শ্রীচরণ-আশ।
দন্তে তৃণ ধরি কহে এ বৈষ্ণব দাস॥


ইতি শ্রীশ্রীগীত-কল্পতরু গ্রন্থস্য অনুবাদ-প্রকরণং সম্পূর্ণং।
শ্রীগৌরভক্তগণার্পিতমস্তু
ইতি সমাপ্তোহয়ং শ্রীশ্রীগীতকল্পতরু-গ্রন্থঃ।

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর