কবি দৈবকীনন্দন এর বৈষ্ণব পদাবলী
*
দৈবকীনন্দনের বৈষ্ণব বন্দনা
ভণিতা দৈবকীনন্দন
কবি দৈবকীনন্দন দাস
শ্রাবণ, শ্রীচৈতন্যাব্দ ৪২৪-এ প্রকাশিত (১৯১১), অতুলকৃষ্ণ গোস্বামী সম্পাদিত শ্রীশ্রীবৈষ্ণব-বন্দনা গ্রন্থ থেকে
পাওয়া।

॥ আভীর রাগ॥

প্রাণ গোরাচাঁদ মোর ধন গোরাচাঁদ।
জগত বাঁধিল গোরা পাতি প্রেমফাঁদ॥ ধ্রু॥
মিনতি করিয়া তৃণ ধরিয়া দশনে।
নিবেদন করোঁ গুরু-বৈষ্ণব-চরণে॥
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-নিত্যানন্দ-অবতারে।
যতেক বৈষ্ণব তাহা কে কহিতে পারে॥
বৈষ্ণব জানিতে নারে দেবের শকতি।
মুঞি কোন্ হঙ জন শিশু অল্পমতি॥
জিহ্বার আরতি অতি মনের বাসনা।
তেঞি সে করিতে চাহোঁ বৈষ্ণববন্দনা॥
যে কিছু কহিয়ে গুরু-বৈষ্ণব-প্রসাদে।
ক্রমভঙ্গ না লইবে মোর অপরাধে॥
বন্দোঁ শচী জগন্নাথমিশ্রপুরন্দর।
যাহার নন্দন বিশ্বরুপ বিশ্বম্ভর॥
বন্দনা করিব বিশ্বরূপ ধন্যধন্য।
চৈতন্য-অগ্রজ নাম শ্রীশঙ্করারণ্য॥
বন্দিব সে মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য।
পতিতপাবন-অবতার ধন্যধন্য॥
বন্দোঁ লক্ষ্মী ঠাকুরাণী আর বিষ্ণুপ্রিয়া।
গদাধর পণ্ডিতগোসাঞি বন্দনা করিয়া॥
বন্দোঁ পদ্মাবতী দেবী হাড়াইপণ্ডিত।
যাঁর পুত্র নিত্যানন্দ অদ্ভুতচরিত॥
দয়ার ঠাকুর বন্দোঁ শ্রীনিত্যানন্দ।
যাঁহা হৈতে নাটে-গীতে সভার আনন্দ॥
বসুধা জাহ্নবা বন্দোঁ দুই ঠাকুরাণী।
যাঁর পুত্র বীরভদ্র জগতে বাখানি॥
শ্রীবীরভদ্র গোসাঞি বন্দিব সাবধানে।
সকল ভূবন বশ যাঁর আচরণে॥


॥ ভাট্যালি রাগ॥

গোরা গোঁসাই পতিতপাবন অবতার॥
ধন্য অবতার গোরা ন্যাসিশিরোমণি।
এমন সুন্দর নাম কোথাও না শুনি॥ ধ্রু
সাবধানে বন্দো আগে মাধবেন্দ্রপুরী।
বিষ্ণুভক্তিপথের প্রথম অবতরি॥
আচার্য্য গোসাঞি বন্দোঁ অদ্বৈত ঈশ্বর।
যে আনিল মহাপ্রভু ভুবনভিতর॥
সীতা ঠাকুরাণী বন্দোঁ হঞা একমন।
অচ্যুতানন্দাদি বন্দোঁ তাঁহার নন্দন॥
( পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি ভক্তচূড়ামণি।
যাঁর নাম লয়ে প্রভু কাঁদিলা আপনি॥ )
বন্দিব শ্রীশ্রীনিবাস ঠাকুর পণ্ডিত।
নারদ-খেয়াতি যাঁর ভুবনবিদিত॥
ভক্তি করি বন্দিব মালিনী ঠাকুরাণী।
শ্রীমুখে গৌরাঙ্গ যাঁরে বলিলা জননী॥
শ্রীনারায়ণী দেবী বন্দিব সাবধানে।
আলবাটী প্রভু যাঁরে কহিলা আপনে॥
হরিদাস ঠাকুর বন্দোঁ বিরক্তপ্রধান।
দ্রব্য দিয়া শিশুরে লওলাইলা হরিনাম॥
গোপীনাথ ঠাকুর বন্দোঁ জগতবিখ্যাত।
প্রভুর স্তুতিপাঠে যেই ব্রহ্মা সাক্ষাত॥
বন্দিব মুরারি গুপ্ত ভক্তিশক্তিমন্ত।
পূর্ব্ব-অবতারে যাঁর নাম হনুমন্ত॥
শ্রীচন্দ্রশেখর বন্দোঁ চন্দ্রসুশীতল।
আচার্য্যরত্ন বন্দোঁ যাঁর খ্যাতি নিরমল॥
গোবিন্দ গরুড় বন্দোঁ মহিমা-অপার।
গৌরপদে ভক্তিদ্বারে যাঁর অধিকার॥
বন্দিব অম্বষ্ঠ নাম শ্রীমুকুন্দ দত্ত।
গন্ধর্ব্ব জিনিয়া যাঁর গানের মহত্ত্ব॥
বাসুদেব দত্ত বন্দোঁ বড় শুদ্ধভাবে।
উত্কলে যাঁহারে প্রভু রাখিলা সমীপে॥
বন্দোঁ মহানিরীহ পণ্ডিত দামোদর।
পীতাম্বর বন্দোঁ তাঁর জ্যেষ্ঠ সহোদর॥
বন্দোঁ শ্রীজগন্নাথ শঙ্কর নারায়ণ।
বড় উদাসীন এই ভাই পঞ্চজন॥
বন্দোঁ মহাশয় চক্রবর্ত্তী নীলাম্বর।
প্রভুর ভবিষ্য যেঁহ কহিলা সত্বর॥
শ্রীরাম পণ্ডিত বন্দোঁ গুপ্ত নারায়ণ।
বন্দোঁ গুরু বিষ্ণু গঙ্গাদাস সুদর্শন॥
বন্দোঁ সদাশিব আর শ্রীগর্ভ শ্রীনিধি।
বুদ্ধিমন্ত খান বন্দোঁ আর বিদ্যানিধি॥
বন্দিব ধার্ম্মিক ব্রহ্মচারী শুক্লাম্বর।
প্রভু যাঁরে দিল নিজ প্রেমভক্তি বর॥
নন্দন আচার্য্য বন্দোঁ লেখক বিজয়।
বন্দোঁ খোলাবেচা-খ্যাতি পণ্ডিত শ্রীধর॥
প্রভু-সঙ্গে যাঁর নিত্য কৌতুক কোন্দল॥
বন্দোঁ ভিক্ষু বনমালী পুত্রের সহিতে।
প্রভুর প্রকাশ যে দেখিলা আচম্বিতে॥
হলায়ুধঠাকুর বন্দোঁ করিয়া আদর।
বন্দনা করিব শ্রী বাসুদেব ভাদর॥
বন্দিব ঈশানদাস করযোড় করি।
শচী ঠাকুরাণী যাঁরে স্নেহ কৈল বড়ি॥
বন্দোঁ জগদীশ আর শ্রীমান্ সঞ্জয়।
গরুড় কাশীশ্বর বন্দোঁ করিয়া বিনয়॥
বন্দনা করিব গঙ্গাদাস কৃষ্ণানন্দ।
শ্রীরাম মুকুন্দ বন্দোঁ করিয়া আনন্দ॥
বল্লভ আচার্য্য বন্দোঁ জগজনে জানি।
যাঁর কন্যা আপনি শ্রীলক্ষ্মী ঠাকুরাণী॥
সনাতন মিশ্র বন্দো আনন্দিত হৈয়া।
যাঁর কন্যা ধন্যা ঠাকুরাণী বিষ্ণুপ্রিয়া॥
আচার্য্য বনমালী বন্দোঁ দ্বিজ কাশীনাথ।
মহাপ্রভুর বিবাহের ঘটনা যার সাথ॥
( প্রভুর বিবাহোত্সবে ছিল যত জন।
তাঁসভার পাদপদ্ম বন্দি সর্ব্বক্ষণ॥ )


॥ সুহই রাগ॥

ভাল অবতার শ্রীগৌরাঙ্গ অবতার।
এমন করুণানিধি কভু নাহি আর॥ ধ্রু॥
গোসাঞি ঈশ্বরপুরী বন্দোঁ সাবধানে।
লোকশিক্ষা দীক্ষা প্রভু কৈলা যাঁর স্থানে॥
কেশব ভারতী বন্দোঁ সান্দীপনী মুনি।
প্রভু যাঁরে নিজগুরু করিলা আপনি॥
বন্দিব শ্রীরামচন্দ্রপুরীর চরণ।
প্রভু যাঁরে কহিলেন শ্রীরামের গণ॥
পরমানন্দপুরী বন্দোঁ উদ্ধবস্বভাব।
দামোদরপুরী বন্দোঁ সত্যাভামার ভাব॥
নরসিংহ তীর্থ বন্দোঁ পুরী সুখানন্দ।
শ্রীগোবিন্দপুরী বন্দোঁ পুরী ব্রহ্মানন্দ॥
নৃসিংহপুরী বন্দোঁ সত্যানন্দ ভারতী।
বন্দিব গরুড় অবধূত মহামতি॥
বিষ্ণুপুরী গোসাঞি বন্দোঁ করিয়া যতন।
‘বিষ্ণুভক্তিরত্নাবলী’ যাঁহার গ্রন্থন॥
ব্রহ্মানন্দ-স্বরূপ বন্দোঁ বড় ভক্তি করি।
কৃষ্ণানন্দপুরী বন্দোঁ শ্রীরাঘবপুরী॥
বিশ্বেশ্বরানন্দ বন্দোঁ বিশ্বপরকাশ।
মহাপ্রভুপদে যাঁর বিশেষ বিশ্বাস॥
শ্রীকেশবপুরী বন্দোঁ অনুভবানন্দ।
বন্দো রূপ সনাতন দুই মহাশয়।
বৃন্দাবনভূমি দুঁহে করিলা নির্ণয়॥
শ্রীজীবগোসাঞি বন্দোঁ সভার সম্মত।
সিদ্ধান্ত করিয়া যে রাখিল ভক্তিতত্ত্ব॥
রঘুনাথদাস বন্দোঁ রাধাকুণ্ডবাসী।
রাঘবগোসাঞি বন্দোঁ গোবর্দ্ধন-বিলাসী॥
বন্দিব গোপালভট্ট বৃন্দাবনমাঝে।
সনাতন-রূপ-সঙ্গে সতত বিরাজে॥
রঘুনাথভট্ট গোঁসাঞি বন্দিব একচিত্তে।
বৃন্দাবনে অধ্যাপক শ্রীভাগবতে॥
লোকনাথ ঠাকুর বন্দোঁ ভূগর্ভ ঠাকুর।
জীব নিস্তারিতে যাঁর করুণা প্রচুর॥
কাশীশ্বর গোঁসাঞি বন্দোঁ হঞা একমতি।
মথুরামণ্ডলে যাঁর বিশেষ খেয়াতি॥
শুদ্ধ সরস্বতী বন্দোঁ বড় শুদ্ধমতি।
প্রভুর চরণে যাঁর বিশুদ্ধ ভকতি॥
প্রবোধানন্দ গোসাঞি বন্দো করিয়া যতন।
যে করিলা মহাপ্রভুর গুণের বর্ণন॥
জগদানন্দ পণ্ডিত বন্দোঁ সাক্ষাৎ সরস্বতী।
মহাপ্রভু কৈলা যাঁরে পরম পিরীতি॥
মহা-অনুভব বন্দোঁ পণ্ডিত রাঘব।
পানীহাটী-গ্রামে যাঁর প্রকাশ বৈভব॥
পুরন্দর-পণ্ডিত বন্দোঁ অঙ্গবিক্রম।
সপরিবারে লাঙ্গুল যাঁর দেখিলা ব্রাহ্মণ॥
কাশীমিশ্র বন্দোঁ প্রভু যাঁহার আশ্রমে।
বাণীনাথপট্টনায়ক বন্দিব সাবধানে॥
শ্রীপ্রদ্যুম্নমিশ্র বন্দোঁ বড় অধিকারী।
প্রভু যাঁরে লভিলা দুর্লভ জ্ঞান করি॥
বক্রেশ্বরপণ্ডিত বন্দোঁ দিব্যশরীর।
অভ্যন্তরে কৃষ্ণতেজ গৌরাঙ্গ বাহির॥
বন্দিব সুগ্রীবমিশ্র শ্রীগোবিন্দানন্দ।
প্রভু লাগি মানসিক যাঁর সেতুবন্ধ॥
সম্ভ্রমে বন্দিব আর গদাধরদাস।
বৃন্দাবনে অতিশয় যাঁহার প্রকাশ॥
সদাশিব কবিরাজ বন্দোঁ একমনে।
নিরন্তর প্রেমোন্মাদ---বাহ্য নাহি জানে॥
প্রেমময়তনু বন্দোঁ সেন শিবানন্দ।
জাতি প্রাণ ধন যাঁর গোরাপদদ্বন্দ্ব॥
চৈতন্যদাস রামদাস আর কর্ণপূর।
শিবানন্দের তিন পুত্র বন্দিব প্রচুর॥
বন্দিব মুকুন্দদাস ভাবে শুদ্ধচিত্ত।
ময়ূরের পাথা দেখি হইলা মূর্চ্ছিত॥
প্রেমের আলয় বন্দোঁ নরহরিদাস।
নিরন্তর যাঁর চিত্তে গৌরাঙ্গবিলাস॥
মধুর চরিত্র বন্দোঁ শ্রীরঘুনন্দন।
আকৃতি প্রকৃতি যাঁর ভুবনমোহন॥
রঘুনাথদাস বন্দোঁ প্রেমসুধাময়।
যাঁহার চরিত্রে সব লোক বশ হয়॥
আচার্য্য পুরন্দর বন্দোঁ পণ্ডিত দেবানন্দ।
গৌরপ্রেমময় বন্দোঁ শ্রীআচার্য্যচন্দ্র॥
আাকাইহাটের বন্দোঁ কৃষ্ণদাস ঠাকুর।
পরমানন্দপুরী বন্দোঁ সতীর্থ প্রভুর॥
শ্রীগোবিন্দঘোষ বন্দিব সাবধানে।
যাঁর নাম সার্থক প্রভু করিলা আপনে॥
বন্দিব মাধবঘোষ প্রভুর প্রীতিস্থান।
প্রভু যাঁরে করিলা অভঙ্গ-স্বরদান॥
শ্রীবাসুদেবঘোষ বন্দিব সাবধানে।
গৌরগুণ বিনু যাঁর অন্য নাহি জ্ঞানে॥
ঠাকুর শ্রীঅভিরাম বন্দিব সাদরে।
যোল-সাঙ্গের কাষ্ঠ যেঁহো বংশী করি ধরে॥
সুন্দরানন্দ ঠাকুর বন্দিব বড় আশে।
ফুটাল কদম্বফুল জম্বীরের গাছে॥
পরমেশ্বরদাস ঠাকুর বন্দিব সাবধানে।
শৃগালে লওয়ান নাম সঙ্কীর্ত্তন-স্থানে॥
বংশীবদন ঠাকুর বন্দিব সাদরে।
গদাধরদাস করিলা বংশী অবতারে॥
ইষ্টদেব বন্দোঁ শ্রীপুরুষোত্তম নাম।
কে কহিতে পারে তাঁর গুণ অনুপাম॥
সর্ব্বগুণহীন যে তাহারে দয়া করে।
আপনার সহজ করুণাশক্তি-বলে॥
সপ্তম বত্সরে যাঁর শ্রীকৃষ্ণ-উন্মাদ।
ভুবনমোহন নৃত্য শকতি অগাধ॥
গৌরীদাস-কীর্ত্তনীয়ার কেশেতে ধরিয়া।
নিত্যানন্দস্তব করাইলা নিজশক্তি দিয়া॥
গদাধরদাস আর শ্রীগোবিন্দঘোষ।
যাঁহার প্রকাশে প্রভু পাইল সন্তোষ॥
যাঁর অষ্টোত্তরশতঘট গঙ্গাজলে।
অভিষেক, সর্ব্বজ্ঞতা যাঁর শিশুকালে॥
করবীরমঞ্জরী আছিল যাঁর কাণে।
পদ্মগন্ধ হৈল তাহা সভা-বিদ্যমানে॥
যাঁর নামে স্নিগ্ধ হয় বৈষ্ণবসকল।
মূর্ত্তিমন্ত প্রেমসুখ যাঁর কলেবর॥
কালিয়া কৃষ্ণদাস বন্দোঁ বড় ভক্তি করি।
দিব্য উপবীত বস্ত্র কৃষ্ণতেজোধারী॥
কমলাকর পিপিলাই বন্দোঁ ভাববিলাসী।
যে প্রভুরে বলিল---লহ বেত্র দেহ বাঁশী॥
রত্নাকরসুত বন্দোঁ পুরুষোত্তম নাম।
নদীয়া-বসতি যাঁর দিব্যতেজোধাম॥
উদ্ধারণ দত্ত বন্দোঁ হঞা সাবহিত।
নিত্যানন্দসঙ্গে বেড়াইল সর্ব্বতীর্থ॥
গৌরীদাস পণ্ডিত বন্দোঁ প্রভুর আজ্ঞাকারী।
আচার্য্যগোসাঞিরে নিল উত্কলনগরী॥
পুরুষোত্তম পণ্ডিত বন্দোঁ বিলাসী সুজান।
প্রভু যাঁরে দিলা আচার্য্যগোসাঞির স্থান॥
বন্দিব সারঙ্গদাস হঞা একমন।
মকরধ্বজ কর বন্দোঁ প্রভুর গায়ন॥


॥ বড়ারী রাগ॥

গোরা গোঁসাঞি পতিতপাবন অবতার।
তোমার করুণায় সর্ব্বজীবের উদ্বার॥ ধ্রু॥
কবিরাজ মিশ্র বন্দোঁ ভাগবতাচার্য্য।
শ্রীমধুপণ্ডিত বন্দোঁ অনন্ত আচার্য্য॥
গোবিন্দ আচার্য্য বন্দোঁ সর্ব্বগুণশালী।
যে করিল রাধাকৃষ্ণের বিচিত্র ধামালী॥
সার্ব্বভৌম বন্দোঁ বৃহস্পতির চরিত্র।
প্রভুর প্রকাশে যাঁর অদ্ভুত কবিত্ব॥
প্রতাপরুদ্র রায় বন্দোঁ ইন্দ্র-সম খ্যাতি।
প্রকাশিলা প্রভু যাঁরে ষড়্ভুজ-আকৃতি॥
দ্বিজ রঘুনাথ বন্দোঁ বৈদ্য উড়্য়া বিপ্রদাস।
দ্বিজ হরিদাস বন্দোঁ বৈদ্য বিষ্ণুদাস॥
যাঁর গীত শুনি প্রভুর অধিক উল্লাস।
তার ভাই বন্দোঁ শ্রীবনমালিদাস॥
বেশের আবেশে যাঁর গোপীর বিলাস।
কহনে না যায় তাঁর প্রেমের প্রকাশ॥
কানাই খুটিয়া বন্দোঁ বিশ্ব-পরচার।
জগন্নাথ বলরাম দুই পুত্র যাঁর॥
বন্দোঁ উড়িয়া বলরামদাস মহাশয়।
জগন্নাথ বলরাম যাঁর বশ হয়॥
জগন্নাথদাস বন্দোঁ সঙ্গীতপণ্ডিত।
যাঁর গানরসে জগন্নাথ বিমোহিত॥
বন্দিব শিবানন্দ পণ্ডিত কাশীশ্বর।
বন্দিব চরণেশ্বর আর সিংহেশ্বর॥
বন্দিব সুবুদ্ধি মিশ্র মিশ্র শ্রীশ্রীনাথ।
তুলসী মিশ্র বন্দোঁ মাহাতী কাশীনাথ॥
শ্রীহরি ভট্ট বন্দোঁ মাহাতী বলরাম।
বন্দোঁ পট্টনায়ক মাধব যাঁর নাম॥
বসুবংশ রামানন্দ বন্দিব যতনে।
যাঁর বংশ গৌর বিনা অন্য নাহি জানে॥
বন্দিব শ্রীপুরুষোত্তমনাম ব্রহ্মচারী।
শ্রীমধু পণ্ডিত বন্দোঁ বড় ভক্তি করি॥
শ্রীকর পণ্ডিত বন্দোঁ দ্বিজ রামচন্দ্র।
সর্ব্বসুখময় বন্দোঁ যদু-কবিচন্দ্র॥
বিলাসী বৈরাগী বন্দোঁ পণ্ডিত ধনঞ্জয়।
সর্ব্বস্ব প্রভুরে দিয়া ভাণ্ড হাথে লয়॥
জগন্নাথ পণ্ডিত বন্দোঁ আচার্য্য লক্ষ্মণ।
কৃষ্ণদাস পণ্ডিত বন্দোঁ বড় শুদ্ধমন॥
সূর্য্যদাস পণ্ডিত বন্দোঁ বিদিত-সংসার।
বসুধা-জাহ্নবা বন্দোঁ দুই কন্যা যাঁর॥
মুরারি চৈতন্যদাস বন্দোঁ সাবধানে।
আশ্চর্য্য চরিত্র যাঁর প্রহ্লাদ-সমানে॥
পরমানন্দ গুপ্ত বন্দোঁ সেন জগন্নাথ।
কবিচন্দ্র মুকুন্দ বালক রাম-সাথ॥
শ্রীকংসারি সেন বন্দোঁ সেন শ্রীবল্লভ।
ভাস্কর ঠাকুর বন্দোঁ বিশ্বকর্ম্মা-অনুভব॥
সঙ্গীতকারক বন্দোঁ শ্রীবলরামদাস।
নিত্যানন্দচন্দ্রে যাঁর অকথ্য বিশ্বাস॥
মহেশ পণ্ডিত বন্দোঁ বড়ই উন্মাদী।
জগদীশ পণ্ডিত বন্দোঁ নৃত্যবিনোদী॥
নারায়ণীসুত বন্দোঁ বৃন্দাবনদাস।
চৈতন্যমঙ্গল যেঁহ করিল প্রকাশ॥
বড়গাছির বন্দিব ঠাকুর কৃষ্ণদাস।
প্রেমানন্দে নিত্যানন্দে যাঁহার বিশ্বাস॥
পরমানন্দ অবধৌত বন্দোঁ একমনে।
নিরন্তর উন্মত্ত---বাহ্য নাহি জানে॥
বন্দিব সে অনাদি গঙ্গাদাস পণ্ডিত।
যদুনাথ দাস বন্দোঁ মধুরচরিত॥
পুরুষোত্তম পুরী বন্দোঁ তীর্থ জগন্নাথ।
শ্রীরাম তীর্থ বন্দোঁ পুরী রঘুনাথ॥
বাসুদেব তীর্থ বন্দোঁ আশ্রম উপেন্দ্র।
বন্দিব অনন্ত পুরী হরিহরানন্দ॥
মুকুন্দ কবিরাজ বন্দোঁ নির্ম্মলচরিত।
বন্দিব আনন্দময় শ্রীজীবপণ্ডিত॥
বন্দনা করিব শিশুকৃষ্ণদাস-নাম।
প্রভুর পালনে যাঁর দিব্য তেজোধাম॥
মাধব আচার্য্য বন্দোঁ কবিত্ব-শীতল।
যাঁহার রচিত গীত ‘শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল’॥
গৌরীদাস পণ্ডিতের অনুজ কৃষ্ণদাস।
বন্দিব নৃসিংহ আর শ্রীচৈতন্যদাস॥
( রঘুনাথ ভট্ট বন্দোঁ করিয়া বিশ্বাস।
বন্দোঁ দিব্যলোচন শ্রীরামচন্দ্র দাস॥ )
শ্রীশঙ্কর ঘোষ বন্দোঁ অকিঞ্চনরীতি।
ডম্ফের বাদ্যে যে প্রভুরে করিল পিরীতি॥
পরম আনন্দে বন্দোঁ আচার্য্য মাধব।
ভক্তিফলে হৈলা গঙ্গাদেবীর বল্লভ॥
নারায়ণ পৈড়ারি বন্দোঁ চক্রবর্ত্তি শিবানন্দ।
বন্দা করিতে বৈষ্ণবের নাহি অন্ত॥
এই অবতারে যত অশেষ বৈষ্ণব।
কহনে না যায় সভার অনন্ত বৈভব॥
অনন্ত বৈষ্ণবগণ অনন্ত মহিমা।
হেন জন নাহি যে করিতে পারে সমা॥
বন্দনা করিতে মোর কত আছে বুদ্ধি।
দেবেহ কহিতে নারে বৈষ্ণবের শুদ্ধি॥
সভাকার উপদেষ্টা বৈষ্ণব ঠাকুর।
শ্রবণ-নয়ন-মন-বচনের দূর॥
শরণ লইলুঁ গুরু-বৈষ্ণব-চরণে।
সঙ্ক্ষেপে কহিলুঁ কিছু বৈষ্ণবূন্দনে॥
বৈষ্ণববন্দনা পঢ়ে-শুনে যেই জন।
অন্তরের মল ঘুচে-শুদ্ধ হয় মন॥
প্রভাতে উঠিয়া পড়ে বৈষ্ণববন্দনা।
কোন কালে নাহি পায় কোনই যন্ত্রণা॥
দেবের দুর্ল্লভ সেই প্রেমভক্তি লভে।
দৈবকীনন্দন দাস কহে এই লোভে॥

ইতি শ্রীদৈবকীনন্দনদাস-বিরচিতা
বৈষ্ণববন্দনা সমাপ্তা।

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর