গোকুলানন্দ ভণিতার কবির বৈষ্ণব পদাবলী
*
পরম মঙ্গল-কন্দ আচার্য্য অদ্বৈতচন্দ্র
ভণিতা গোকুলানন্দ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত
শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ২৫শ পল্লব, গৌরভক্তবৃন্দের
চরিত্র-বর্ণন, পদসংখ্যা ২৩৫১।

॥ তথা রাগ॥

পরম মঙ্গল-কন্দ                               আচার্য্য অদ্বৈতচন্দ্র
জয় জয় পহু সীতা-নাথ।
জয় শান্তিপুর-রায়                               অবতরি করুণায়
বিহরই নিজ-বৃন্দ সাথ॥
গুণ কি কহিব ওরে ভাই।
প্রেম-ধন-বিতরণে                               কত শত জীবগণে
ধনী কৈলা কৃপা-দিঠে চাই॥ ধ্রু॥
প্রতিজ্ঞা করিয়া মনে                           দীন হীন আকিঞ্চনে
আচণ্ডাল করিলা উদ্ধার।
নরিমিল কেবা জনু                              অরুণ নয়ান দুনু
করুণায় পরিপূর্ণ যার॥
উথলিল মহানন্দ                                 অবতীর্ণ গৌরচন্দ
ঘন ঘন পূরে মালশাট।
নিজানন্দ-কুতূহলে                              হুঙ্কার গর্জ্জন করে
উঘারিলা প্রেমের কপাট॥
হেন প্রেম-বিলাসনে                             বঞ্চিত এহেন জনে
করুণায় ভরিল সংসার।
দাড়াইলুঁ হেন মনে                           প্রভু সে অদ্বৈত বিনে
গোকুলানন্দের নাহি আর॥

ই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী
সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী” (১৯৩৪, প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ২৯৮-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ কামোদ॥

পরম মঙ্গলকন্দ                              অদ্বৈত আচার্য্য-চন্দ
জয় জয় পহুঁ সীতানাথ।
জয় শান্তিপুর-রায়                              অবতরি করুণায়
বিহরহ নিজবৃন্দ সাথ॥
গুণ কি কহিব ওরে ভাই।
প্রেমধনবিতরণে                               কত শত জীবগণে
ধনী কৈলা কৃপাদিঠে চাই॥ ধ্রু॥
প্রতিজ্ঞা করিলা মনে                           দীনহীন-অকিঞ্চনে
আচণ্ডাল করিয়া উদ্ধার।
নরিমল কিবা জনু                              অরুণ নয়ান দুনু
করুণায় পরিপূর্ণ যার॥
উথলিল মহানন্দ                                অবতীর্ণ গৌরচন্দ্র
ঘন ঘন পূরে মালশাট।
নিজানন্দ কুতূহলে                              হুঙ্কার গর্জ্জন করে
উঘারিল প্রেমের কবাট॥
হেন প্রেম বিলসনে                                বঞ্চি এ হেন জনে
করুণায় ভরল সংসার।
দাড়াইনু হেন মনে                               প্রভু অদ্বৈত বিনে
গোকুলানন্দের-নাহি আর॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
সঙ্গে পরিকর গৌরবর সুন্দর
ভণিতা গোকুলানন্দ
১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন
“শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী” (১৯৩৪, প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১০০-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ সুহই॥

সঙ্গে পরিকর                            গৌরবর সুন্দর
যাওত সুরধুনীতীর।
ও রূপ নেহারি                           চিত উমতাওল
সরম ভরম গেও হইনু অথির॥
সজনি গোরারূপের কতই মাধুরি।
সতী কুলবতী হাম                        ঐছন বেয়াকুল
নিমিখেতে হইল বাউরি॥ ধ্রু॥
অতনুকুসুমশরে                        অন্তর জর জর
দূরে গেও লোকপরিবাদ।
গৌররূপ-সায়রে                   জীবন যৌবন ডারব
ইহ মঝু মনে সাধ॥
যত গুরু গরবিত                      সব হাম তেজব
না করব কুলের বিচার।
গোকুলানন্দের হিয়া                রূপের সায়র মাঝে
ডুবল না জানি সাঁতার॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নাচে রে অদ্বৈত ঘুরি ঘুরি নাচে
ভণিতা গোকুলানন্দ
১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী
সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”  (১৯৩৪, প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ২৯৮-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ ধানশী॥

নাচে রে অদ্বৈত ঘুরি ঘুরি নাচে।
গৌর নিতাই আগে রাখি নাচে পাছে পাছে॥
ঠমকে ঠমকে নাচে কটি দোলাইয়া।
ক্ষণে ক্ষণে নাচে পহুঁ গালে হাত দিয়া॥
ক্ষণে তালে তালে বুড়া অঙ্গুলি নাচায়।
ক্ষণে করতালি দিয়া তাল ধরে পায়॥
ঊদ্দণ্ড করয়ে নৃত্য ঊর্দ্ধবাহু করি।
ক্ষণে নাচে দুই করে কঠি আটি ধরি॥
কাঁকালি করিয়া বাঁকা ক্ষণে নাচে বুড়া।
বহির্ব্বাস খুলি মাথে ক্ষণে বাঁধে চূড়া॥
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা করি ক্ষণেকে দাঁড়ায়।
ক্ষণে ভূমিকম্প করি লম্ফে ঝম্পে যায়॥
কভু চীত্কারে বুড়া বাঁকা হইয়া পড়ে।
কভু নব ভঙ্গী করি হাতে পদ ধরে॥
নৃত্য দেখি গৌর নিতাই হাসিতে লাগিল।
গোকুলানন্দের মনে আনন্দ বাড়িল॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
শারী শুক দোহ জনে উঠিয়া বিহানে
ভণিতা গোকুলানন্দ
১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন
“শ্রীশ্রীপদরত্ন-মালা”, ২৩৯-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। এই পদটির সঙ্গে “রাই জাগ রাই
জাগ সারী শুক বলে” পদটির অনেক পংক্তিরই মিল রয়েছে।  সম্ভবত একই পদ থেকে
ভিন্ন রূপে বিবর্তিত হয়েছে।

॥ ভৈরবী॥

শারী শুক দোহ জনে উঠিয়া বিহানে।
রাধা শ্যামে জাগাইতে করে অনুমানে॥
শারী বলে শুন শুক নিশি আছে এক ঘড়ি।
কেমন করিয়া জাগাইব কিশোর কিশোরী॥
শারী কহে শুন শুক ডাক উচ্চস্বরে।
পবন প্রবল বহে কুঞ্জের ভিতরে॥
ডালে বসে শুক তখন করে উচ্চধ্বনি।
জাগিয়া বৈঠল অমনি রাধা বিনোদিনী॥
গোকুলানন্দেতে কহে কি কাজ করিলি।
তমালে কনকলতা কেন ছাড়াইলি॥

ই পদটি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “পদামৃত লহরী”, ১৫৯-পৃষ্ঠায় এই রূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ রাগিণী বিভাষ - তাল তেওট॥

শারী শুক দুহুঁজনে উঠিয়া বিহানে।
রাইকানু জাগাইতে করিল মননে॥
শারী বলে ওহে শুক বলিহে তোমারে।
অরুণ কিরণ হেরি প্রাণ কাঁপে ডরে॥
শারীর বচনে শুক ডাকে উচ্চ স্বরে।
পবন প্রবল বহে কুঞ্জের ভিতরে॥
ডালেতে বসিয়া শুক করে চারুধ্বনি।
জাগিয়া বৈঠল তখন রাধা বিনোদিনী॥
গোকুলানন্দ কহে শুকরে বড় দুঃখ দিলি।
তমালে কনক লতা কেন ছাড়াইলি॥

ই পদটি নবদ্বীপ চন্দ্র ব্রজবাসী ও খগেন্দ্রনাথ মিত্রের মাধুরী নাম্নী ব্যাখ্যা সম্বলিত
মহাজন পদাবলী “শ্রীপদামৃতমাধুরী” ৩য় খণ্ড, ৫৮১-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ বিভাস - জপতাল॥

শারি শুক দুহুজন উঠিয়া বিহানে।
রাই কানু জাগাইতে করে অনুমানে॥
শারি বলে ওহে শুক বলিহে তোমারে।
অরুণ কিরণ হেরি প্রাণ কাঁপে ডরে॥
শারির বচনে শুক ডাকে উচ্চস্বরে।
পবন প্রবল বহে কুঞ্জের ভিতরে॥
ডালেতে বসিয়া শুক করে উচ্চ ধ্বনি।
জাগিয়া বৈঠল তখন রাধা বিনোদিনী॥
গোকুলানন্দ কহে শুক বড় দুখ দিলি।
তমালে কনকলতা কেন ছাড়াইলি॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ধৈর্য্যং কুরু ধৈর্য্যং রাধে মম গচ্ছং মথুরায়ে
ভণিতা গোকুলানন্দ
১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীপদরত্ন-মালা”,
৪৪৬-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। প্রথম পংক্তির ভিন্নতার জন্য এই পদটিকে “রাই ধৈর্য্যং,
কুরু ধৈর্য্যং, মম গচ্ছং মথুরায়ে” এই শিরোনামে স্বতন্ত্র পদ হিসেবেও এখানে তোলা হয়েছে।

॥ সুহিনি॥

ধৈর্য্যং কুরু ধৈর্য্যং রাধে মম গচ্ছং মথুরায়ে।
ঢুরব পুরী প্রতি প্রতক্ষে যাহা দরশন পাওয়ে॥
ভদ্রং অতি ভদ্রং শীঘ্রং কুরু গমনা।
অবিলম্বনে মথুরাপুরে প্রবেশি করল ভ্রমণা॥
মথুরাবাসিনী এক রমণী দূতি তাকর পুছে।
নন্দাত্মজ কৃষ্ণ খ্যাত কাহার ভবনে আছে॥
শুনি কহে ধনি তাহে নাহি চিনি সো কাহে হিয়া আওব।
মোরা জানি বসু দেবকি সুত রামানুজ মাধব॥
সোই সোই কোই কোই দরশনে মম আশা।
গোকুলানন্দ(১) কহে যাও যাও ঐছে উচ্চ বাসা॥

১ - পাঠন্তর যদুনন্দন। পদটি যদুনন্দন ভণিতাতেও পাোয়া গিয়েছে।

ই পদটি নবদ্বীপ চন্দ্র ব্রজবাসী ও খগেন্দ্রনাথ মিত্রের মাধুরী নাম্নী টীকা সম্বলিত মহাজন পদাবলী
“শ্রীপদামৃতমাধুরী” ৪র্থ খণ্ড, ৮৭-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ বিভাস - জপতাল॥

ধৈর্য্যং কুরু ধৈর্য্যং গচ্ছং মথুরায়ে।
ঢুঁরব হাম পুরি প্রত্যেকে যাঁহা দরশন পাওয়ে॥
অতি ভদ্রং অতি ভদ্রং শীঘ্রং গতি গমনা।
অবিলম্বনে মথুরাপুরে প্রবেশ করল ভ্রমণা॥
মথুরাবাসিনী এক রমণী তাকর দূতী পুছে।
নন্দজাত কৃষ্ণখ্যাত কাহার ভবনে আছে॥
শুনি সো ধনি কহয়ে বাণী সো কাঁহা হিঁয়া আওব।
বসু-দৈবকী সুত কৃষ্ণখ্যাত কংশরিপু মাধব॥
সোই সোই কোই কোই দরশনে মম আশা।
গোকুলানন্দ কহে যাও যাও ঐ যো উচ্চ বাসা॥

ই পদটি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “পদামৃত লহরী”, ১৫৯-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ রাহিণী সোহিনী - তাল লোফা॥

রাই ধৈর্য্যং, কুরু ধৈর্য্যং, মম গচ্ছং মথুরায়ে।
ঢুঁরব পুরী প্রতি, প্রত্যক্ষে যাহা দরশন পাওয়ে॥
ভদ্রং অতি ভদ্রং, শীঘ্রং কুরু গমনা।
অবিলম্বেন মথুরাপুরে, প্রবেশি করল ভ্রমণা॥
মথুরাবাসিনী, এক রমণী, দূতী তাকর পুছে।
নন্দাত্মজ, কৃষ্ণ খ্যাত, কাহার ভবনে আছে॥
শুনি কহে ধনি, তাহে নাহি চিনি, সো কাহে হিঁয়া আওব।
মোরা জানি, বসু দেবকী সুত, রামানুজ মাধব॥
সোই সোই, কোই কোই, দরশনে মম আশা।
গোকুলানন্দ, কহে যাও যাও, ঐ যে উচ্চ বাসা॥

ভাবার্থ -
দূতী বলিতেছেন যে, রাই, তুমি ধৈর্য্য ধর, আমি এখনি তোমার বঁধু আনিতে চলিলাম। যেখানে পাইব
আনিয়া দিব। শ্রীমতী শুনিয়া বলিলেন, তোমার মঙ্গল হউক, তুমি শীঘ্র গমন কর। দূতী অমনি মথুরা নগরে
যাইয়া একজন মথুরাবাসিনীকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তুমি নন্দসুত কৃষ্ণ কোথায় আছে বলিয়া দিতে
পার? মথুরা-নাগরী বলিলেন, নন্দসুতকে চিনি না, তবে এক কৃষ্ণ আছেন মথুরার রাজা, তিনি বসুদেব-নন্দন
। দূতী বলিলেন, তিনিই সেই, তাঁর দর্শনে আসিয়াছি। তখন পদকর্ত্তা বলিতেছেন, ঐ যে উচ্চ অট্টালিকা
দেখা যায়, তুমি ওখানে যাও।

ই পদটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত দুর্গাচরণ বিশ্বাস সংগৃহীত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “কীর্ত্তন-পদাবলী”,
৪৯-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে। বন্ধনীর মধ্যে কীর্তন গানের আখর দেওয়া রয়েছে।

বৃন্দাদূতীর মথুরা গমন।

রাই ধৈর্য্যং রহু ধৈর্য্যং মম গচ্ছং মথুরাওয়ে,
(আমি চলিলাম গো, এই ত আমি চলিলাম গো, আমায় দে দে চরণ ধূলা দে আমি চলিলাম গো)
রাই ধৈর্য্যং রহু ধৈর্য্যং মম গচ্ছং মথুরাওয়ে,
গিয়ে ঢুঁড়ব পুরী প্রতি প্রত্যক্ষে যাঁহা দরশন পাওয়ে।
(সেই রাধানাথে, আমাদের সেই রাধানাথে, আমাদের আমাদের আমাদের সেই রাধানাথে)
যাঁহা দরশন পাওয়ে॥
যায় অতি ভদ্রং অতি ভদ্রং শীঘ্রং গতি গমনা,
(যেন রথে চড়েছে, দূতী যেন মনোরথে চড়েছে, অনুরাগ সারথি করে মনোরথে চড়েছে)
শীঘ্রং গতি গমনা॥
অবিলম্বনে মথুরাপুরী প্রবেশ করিল ভ্রমনা।
(রাধানাথ বলে, দূতী যায় রাধানাথ বলে, রাধানাথ কোথা আছ বলে দূতী যায় রাধানাথ বলে)
প্রবেশ করিল ভ্রমনা॥
এক রমণী অল্প বয়সে নিজ প্রয়োজন পুছে,
বলে নন্দ সুত কৃষ্ণ খ্যাত কাহার ভবনে আছে।
(আমায় বলে দাও গো, জান যদি আমায় বলে দাও গো, নন্দের নন্দন কোথায় আছে আমায় বলে দাও গো)
কাহার ভবনে আছে॥
শুনি সো ধনি কহ এ বাণী সো কাঁহে হিঁয়া আয়ব,
(সে ত ছাড়া নয়, তিল আজ ব্রজ ছাড়া নয়, সেই ব্রজের কৃষ্ণ ব্রজে আছে তিল আধ ব্রজ ছাড়া নয়)
সো কাঁহে হিঁয়া আয়ব॥
বসুদেবকী সুত কৃষ্ণ খ্যাত কংস ঋপু মাধব।
(হ’ল সেই ত রাজা, এই মথুরায় হ’ল সেই ত রাজা, আমরা নন্দের নন্দন চিনি না হ’ল সেই ত রাজা)
কংস ঋপু মাধব॥
সই সই কই কই তাঁর দরশনে মম আসা,
(তারে দেখতে এলাম, নিতে আসি নাই দেখতে এলাম, কৃষ্ণ তোদের হ’ক বা মোদের হ’ক নিতে আমি নাই
দেখতে এলাম)
দরশনে মম আসা॥
গোঁসাই গোকুলানন্দ কহে যাও যাও ঐ যে উচ্চ বাসা।
(যদি যেতে পার, নারী হয়ে যদি যেতে পার, রাজভবন ঐ দেখা যায় যদি যেতে পার)
ঐ যে উচ্চ বাসা॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাই ধৈর্য্যং, কুরু ধৈর্য্যং, মম গচ্ছং মথুরায়ে
ভণিতা গোকুলানন্দ
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “পদামৃত লহরী”, ১৭৮-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে। প্রথম পংক্তির
ভিন্নতার জন্য এই পদটিকে “ধৈর্য্যং কুরু ধৈর্য্যং রাধে মম গচ্ছং মথুরা” এই শিরোনামে স্বতন্ত্র পদ
হিসেবেও এখানে তোলা হয়েছে।

॥ রাহিণী সোহিনী - তাল লোফা॥

রাই ধৈর্য্যং, কুরু ধৈর্য্যং, মম গচ্ছং মথুরায়ে।
ঢুঁরব পুরী প্রতি, প্রত্যক্ষে যাহা দরশন পাওয়ে॥
ভদ্রং অতি ভদ্রং, শীঘ্রং কুরু গমনা।
অবিলম্বেন মথুরাপুরে, প্রবেশি করল ভ্রমণা॥
মথুরাবাসিনী, এক রমণী, দূতী তাকর পুছে।
নন্দাত্মজ, কৃষ্ণ খ্যাত, কাহার ভবনে আছে॥
শুনি কহে ধনি, তাহে নাহি চিনি, সো কাহে হিঁয়া আওব।
মোরা জানি, বসু দেবকী সুত, রামানুজ মাধব॥
সোই সোই, কোই কোই, দরশনে মম আশা।
গোকুলানন্দ, কহে যাও যাও, ঐ যে উচ্চ বাসা॥

ভাবার্থ -
দূতী বলিতেছেন যে, রাই, তুমি ধৈর্য্য ধর, আমি এখনি তোমার বঁধু আনিতে চলিলাম। যেখানে পাইব
আনিয়া দিব। শ্রীমতী শুনিয়া বলিলেন, তোমার মঙ্গল হউক, তুমি শীঘ্র গমন কর। দূতী অমনি মথুরা নগরে
যাইয়া একজন মথুরাবাসিনীকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তুমি নন্দসুত কৃষ্ণ কোথায় আছে বলিয়া দিতে
পার? মথুরা-নাগরী বলিলেন, নন্দসুতকে চিনি না, তবে এক কৃষ্ণ আছেন মথুরার রাজা, তিনি বসুদেব-নন্দন
। দূতী বলিলেন, তিনিই সেই, তাঁর দর্শনে আসিয়াছি। তখন পদকর্ত্তা বলিতেছেন, ঐ যে উচ্চ অট্টালিকা
দেখা যায়, তুমি ওখানে যাও।

ই পদটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত দুর্গাচরণ বিশ্বাস সংগৃহীত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “কীর্ত্তন-পদাবলী”,
৪৯-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে। বন্ধনীর মধ্যে কীর্তন গানের আখর দেওয়া রয়েছে।

বৃন্দাদূতীর মথুরা গমন।

রাই ধৈর্য্যং রহু ধৈর্য্যং মম গচ্ছং মথুরাওয়ে,
(আমি চলিলাম গো, এই ত আমি চলিলাম গো, আমায় দে দে চরণ ধূলা দে আমি চলিলাম গো)
রাই ধৈর্য্যং রহু ধৈর্য্যং মম গচ্ছং মথুরাওয়ে,
গিয়ে ঢুঁড়ব পুরী প্রতি প্রত্যক্ষে যাঁহা দরশন পাওয়ে।
(সেই রাধানাথে, আমাদের সেই রাধানাথে, আমাদের আমাদের আমাদের সেই রাধানাথে)
যাঁহা দরশন পাওয়ে॥
যায় অতি ভদ্রং অতি ভদ্রং শীঘ্রং গতি গমনা,
(যেন রথে চড়েছে, দূতী যেন মনোরথে চড়েছে, অনুরাগ সারথি করে মনোরথে চড়েছে)
শীঘ্রং গতি গমনা॥
অবিলম্বনে মথুরাপুরী প্রবেশ করিল ভ্রমনা।
(রাধানাথ বলে, দূতী যায় রাধানাথ বলে, রাধানাথ কোথা আছ বলে দূতী যায় রাধানাথ বলে)
প্রবেশ করিল ভ্রমনা॥
এক রমণী অল্প বয়সে নিজ প্রয়োজন পুছে,
বলে নন্দ সুত কৃষ্ণ খ্যাত কাহার ভবনে আছে।
(আমায় বলে দাও গো, জান যদি আমায় বলে দাও গো, নন্দের নন্দন কোথায় আছে আমায় বলে দাও গো)
কাহার ভবনে আছে॥
শুনি সো ধনি কহ এ বাণী সো কাঁহে হিঁয়া আয়ব,
(সে ত ছাড়া নয়, তিল আজ ব্রজ ছাড়া নয়, সেই ব্রজের কৃষ্ণ ব্রজে আছে তিল আধ ব্রজ ছাড়া নয়)
সো কাঁহে হিঁয়া আয়ব॥
বসুদেবকী সুত কৃষ্ণ খ্যাত কংস ঋপু মাধব।
(হ’ল সেই ত রাজা, এই মথুরায় হ’ল সেই ত রাজা, আমরা নন্দের নন্দন চিনি না হ’ল সেই ত রাজা)
কংস ঋপু মাধব॥
সই সই কই কই তাঁর দরশনে মম আসা,
(তারে দেখতে এলাম, নিতে আসি নাই দেখতে এলাম, কৃষ্ণ তোদের হ’ক বা মোদের হ’ক নিতে আমি নাই
দেখতে এলাম)
দরশনে মম আসা॥
গোঁসাই গোকুলানন্দ কহে যাও যাও ঐ যে উচ্চ বাসা।
(যদি যেতে পার, নারী হয়ে যদি যেতে পার, রাজভবন ঐ দেখা যায় যদি যেতে পার)
ঐ যে উচ্চ বাসা॥

ই পদটি ১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীপদরত্ন-
মালা”, ৪৪৬-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ সুহিনি॥

ধৈর্য্যং কুরু ধৈর্য্যং রাধে মম গচ্ছং মথুরায়ে।
ঢুরব পুরী প্রতি প্রতক্ষে যাহা দরশন পাওয়ে॥
ভদ্রং অতি ভদ্রং শীঘ্রং কুরু গমনা।
অবিলম্বনে মথুরাপুরে প্রবেশি করল ভ্রমণা॥
মথুরাবাসিনী এক রমণী দূতি তাকর পুছে।
নন্দাত্মজ কৃষ্ণ খ্যাত কাহার ভবনে আছে॥
শুনি কহে ধনি তাহে নাহি চিনি সো কাহে হিয়া আওব।
মোরা জানি বসু দেবকি সুত রামানুজ মাধব॥
সোই সোই কোই কোই দরশনে মম আশা।
গোকুলানন্দ(১) কহে যাও যাও ঐছে উচ্চ বাসা॥

১ - পাঠন্তর যদুনন্দন। পদটি যদুনন্দন ভণিতাতেও পাওয়া গিয়েছে।

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাই জাগ রাই জাগ সারী শুক বলে
ভণিতা গোকুলানন্দ
১৯৩২ সালে প্রকাশিত ব্রজমোহন দাস সংকলিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব সেবা আরতি
ও কীর্ত্তন পদাবলী ও নিত্যক্রিয়া পদ্ধতি”, ২২-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে। এই পদটির
সঙ্গে “শারী শুক দোহ জনে উঠিয়া বিহানে” পদটির অনেক পংক্তিরই মিল রয়েছে।  
সম্ভবত একই পদ থেকে ভিন্ন রূপে বিবর্তিত হয়েছে।

রাই জাগ রাই জাগ সারী শুক বলে।
কত নিদ্রা যাও কালমাণিকের কোলে॥
রজনী প্রভাত হৈল, বলিয়ে তোমারে।
অরুণ কিরণ হেরি, প্রাণ কাঁপে ডরে॥
শুক বলে শারী, মোরা রোষণীয়া পাখী।
জাগালে না জাগে রাই, ধরম কর সাখী॥
ডালেতে বসিয়া শুক, করে উচ্চধ্বনি।
উঠিয়া বসিল তবে, রাধা বিনোদিনী॥
গোকুলানন্দ বলে শুক, কি কার্য্য করিলি।
তমালে কনকলতা, কেন ছাড়াইলি॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
উঠ মোর ভেয়ারে কানাই
ভণিতা গোকুলানন্দ
এই পদটি বীরভূম জেলার হেতমপুর এস্টেটের মহারাজ মহিমারঞ্জন চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত এবং তাঁর
অর্থানুকুল্যে ১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় দ্বারা সহসম্পাদিত ও প্রকাশিত, বীরভূম-বিবরণ
১ম খণ্ড, মঙ্গলডিহি কাহিনী, ১৭৭-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। মিলনসাগরে প্রকাশ ২৮.৬.২০২০।

উঠ মোর ভেয়ারে কানাই
প্রভাত হইল নিশি, খগ গেল দশ দিশি, আখি মেল আর ভোর নাই,
বদন মার্জ্জনা কর, খাও দধি দুগ্ধ সর, কটীতটে পর পীতবাস।
বৎস গাভী লয়ে সঙ্গে, আনন্দ কৌতুক রঙ্গে, চল যাই বৃন্দাবন-পাশ॥
বৃন্দাবনে সুশীতল, আছে নানা পক্ক ফল, আম জাম রসাল পিয়াল।
তুলিবে সে সব ফল, শিঙ্গা ভরি লব জল, সুখে খাব আমরা রাখাল॥
বলরাম দাদা আগে, নিতুই বিহানে জাগে, তোরে কেন জাগাইতে হয়।
গোকুলানন্দেতে কয়, এত নিন্দা ভাল নয়, মা যশোদা জল লয়ে রয়॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর