কবি কবিরঞ্জনের বৈষ্ণব পদাবলী
*
আর কবে হবে মোর শুভখন দীন
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২২ বঙ্গাব্দ (১৯১৫), প্রথম খণ্ড, প্রথম
শাখা, ৮ম পল্লব, শ্রীকৃষ্ণের পূর্ব্বরাগ---প্রকারান্তর, পদসংখ্যা ২১২।


.       শ্রীকৃষ্ণের অত্যুত্কণ্ঠা।

.            ॥ বরাড়ী॥

আর কবে হবে মোর শুভখন দীন।
নয়ানে নেহারিতে না বাসব ভীন॥
এ সখি এ সখি নিবেদন তোয়।
সো কি সুধামুখি মীলব মোয়॥ ধ্রু॥
আধ মুচকি হাসি হেরব নয়নে।
সুমধুর বোল কি শূনব শ্রবণে॥
কুচযুগ করে পরশিতে যব যাব।
করে কর বারি বয়ন পালটাব॥
চরণ পরশি মুখ করব সরস।
রসাবেশে মঝু হিয়ে করব অলস॥
রাই রঙ্গিণি মঝু মীলব কোর।
সফল জীবন তব হোয়ব মোর॥
ঐছন কাতর নাগর ভাষ।
শুনি কবিরঞ্জন চলু ধনী পাশ॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কি কহব রে সখি আজুক বিচার
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২২ বঙ্গাব্দ (১৯১৫), প্রথম খণ্ড, প্রথম
শাখা, ১১শ পল্লব, সংক্ষিপ্ত রসোদ্গার, পদসংখ্যা ২৫৬।


.            ॥ বালা ধানশী॥

কি কহব রে সখি আজুক বিচার।
সো সুপুরুখ মঝু কয়ল শিঙ্গার॥
ধরি পহুঁ হাসি আলিঙ্গণ দেল।
মনমথ-অঙ্কুর কুসুমিত ভেল॥
আঁচর পরশি পয়োধর হেরু।
জন্ম-পঙ্গু জনু ভেটল মেরু॥
যব নিধি-বন্ধ খসায়ল কান।
আপন দিব তব যদি কিছু জান॥
রতি-চিহ্নে জানলুঁ কঠিন মুরারি।
তোহারি পুণ্যে জীয়লুঁ হাম নারী॥
কহ কবিরঞ্জন সহজ মধুরাই।
না কহ সুধামুখি গেও চতুরাই॥

ইতি মুগ্ধা-রসোদ্গারঃ।

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কি পুছসি রে সখি কানুক নেহ
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ (১৯১৮), ২য় খণ্ড, ৩য়
শাখা, ৬ষ্ঠ পল্লব, রসোদ্গার, পদসংখ্যা ৬৮০।


.        ॥ তিরোথা ধানশী॥

কি পুছসি রে সখি কানুক নেহ।
এক জিউ বিহি সে গঢ়ল ভিন দেহ॥
কহিল যে কাহিনি পুছে কত বেরি।
না জানি কি পায়ই মঝু মুখ হেরি॥
বিনি মঝু দরশ পরশে নাহি জীব।
মো বিনু পিয়াসে পানি নাহি পীব॥
উর বিনু সেজ পরশ নাহি পাই।
চীবহি বিনু তাম্বুল নাহি খাই॥
ঘুমক আলসে যদি পালটিয়ে পাশ।
মান ভয়ে মাধব উঠয়ে তরাস॥
আন সঞে কাহিনি না সহে পরাণ।
আন সম্ভাষণে হরয়ে গেয়ান॥
কহে কবিরঞ্জন শুন বর-নারি।
তোহারি পরশ-রসে লুবধ মুরারি॥


এই পদটিই আনুমানিক ১৭২৫ সালে রাধামোহন ঠাকুর সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৮৭৮
সালে, রামনারায়ণ বিদ্যারত্ন দ্বারা সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “পদামৃত সমুদ্র”
সংকলনের পৃষ্ঠা ২৩২-তে এভাবে রয়েছে।

অধিক প্রাগল্ভ্য যোগাদ্ যথা॥

॥ গান্ধাররাগ কন্দর্প তালৌ॥

কি পুছসি এ সখি কানুক সনেহ।
এক জিউ বিহি গঢ়ল ভিন দেহ॥ ধ্রু॥
কহিল কাহিনি কত পুছই বেরি বেরি।
কত সুখ পাওবি মঝু মুখ হেরি॥
বিনু মঝু পরশ দরশে নাহি জীব।
মো বিনু পিয়া সেই পানি নাহি পীব॥
উর বিনু সেজ পরশ নাহি পাই।
চীবহু বিনু তাম্বূল নাহি খাই॥
রসভ আলসে যদি পালটি দেঙ পাশ।
মান ভয়ে মাধব উঠয়ে তরাস॥
আন সম্ভাষণে হরয়ে গেয়ান।
আন সনে কাহিনি না সহে পরাণ॥
কহ কবি রঞ্জন শুন বর নারি।
তোহারি পরবশ লুবধ মুরারি॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
পুরুখ-রতন হেরি মন ভেল ভোর
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ (১৯১৮), ২য় খণ্ড, ৩য়
শাখা, ১১শ পল্লব, আক্ষেপানুরাগ, পদসংখ্যা ৯৬৪।


.        ॥ সিন্ধুড়া॥

পুরুখ-রতন হেরি মন ভেল ভোর।
তিল-আধ সুখ লাগি দুখ নাহি ওর॥
বড় অভিলাষে ভজিলুঁ বর নাহ।
দৈবে বিমুখ ভেল কি কহব কাহ॥
দরশন দুলহ দুলহ নব নেহ।
বিরহ-বিকল মন জিবন সন্দেহ॥
অপরূপ রূপ মধুর রস-লীলা।
সকল নাগরিগণ-কষণক-শিলা॥
অনুচিত কাজ সহজে মঝু ভেলা।
সোঙরি সো তনু নব যৌবন গেলা॥
মরমক দুখ কহিতে হয় লাজ।
দারুণ দৈব কয়ল কোন কাজ॥
রসিক-শিরোমণি নাগর কান।
রস সঙ্গিত কবিরঞ্জন ভাণ॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
উদসল কুন্তল-ভারা
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ (১৯১৮), ২য় খণ্ড, ৩য়
শাখা, ১৫শ পল্লব, বিপরীত সম্ভোগ, পদসংখ্যা ১০৭৮।


.        ॥ গুর্জ্জরী॥

উদসল কুন্তল-ভারা।
মুরতি শিঙ্গার-লখিমি অবতারা॥
অতিশয় প্রেম-বিকারা।
কামিনি করত পুরুখ-বিহারা॥
ডোলত মোতিম-হারা।
যামুন-জলে যৈছে দূধক ধারা॥
কুচ-কুম্ভ পালটল বয়না।
রস-অমিয়া জনু ঢারল ময়না॥
প্রিয়তম কর তহিঁ দেবা।
সরসিজ মাহে জনু রহল চকেবা॥
কঙ্কণ কিঙ্কিণি বাজে।
জয় জয় ডিণ্ডিম মদন সমাজে॥
রসিক-শিরোমণি কান।
কবিরঞ্জন রস ভাণ॥


ব্যাখ্যা -
কুন্তলভার এলাইয়া পড়িল। মূর্ত্তিমতী শৃঙ্গার-লক্ষ্মী স্বয়ং অবতীর্ণা হইয়াছেন।
অতিশয় প্রেম বিকারে কামিনী পুরুষের মত বিহার করিতেছেন। মতির মালা দুলিতেছে,
যমুনাজলে যেন দুগ্ধধারা। কুচকুম্ভ অধোমুখ হইল। মদন যেন অমৃতরস ঢালিল। প্রিয়তম
তাহাতে হস্তার্পণ করিলেন। যেন পদ্মের মাঝে চক্রবাক যুগল রহিল। ক্কন ক্কন রবে কটির
কিঙ্কিণী বাজিতেছে। মদনের রাজ্যে ডিণ্ডিমের জয়ধ্বনি। কানু রসিকগণের শিরোমণি।
কবিরঞ্জন রস গাহিতেছেন। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, বৈষ্ণব পদাবলী, ১৯৪৬ সাল, পৃষ্ঠা ২৯৯


ই পদটি বিদ্যাপতির রচিত বলে মনে করা হোত এবং “কবিরঞ্জন” বিদ্যাপতিরই একটি
উপাধি বলে মনে করা হোতো। নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত সংকলিত ও সম্পাদিত, বঙ্গীয়-
সাহিত্যপরিষৎ থেকে ১৩১৬ বঙ্গাব্দে ( ১৯০৯ সাল ) প্রকাশিত, বিদ্যাপতি
ঠাকুরের পদাবলী গ্রন্থের পৃষ্ঠা ৩৫৫-তে পদটি রয়েছে একই রূপে ও ভণিতায়।

ই পদটিই ১৬৪৩-১৬৭৬ খৃষ্টাব্দের সময়কালে, রামগোপাল দাস (ভণিতা গোপাল দাস)
সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার সেন ও প্রফুল্ল
পাল দ্বারা সম্পাদিত, বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ-রসকল্পবল্লী”,
একাদশ কোরক, নানা লীলা, পৃষ্ঠা ১৬৩-তে এভাবে দেয়া রয়েছে।

উদসল কুন্তল-ভারা।
গলে দোলে মোতিম হারা॥
মুরতি শিঙ্গার লখিমি অবতারা।
যমুনা জলে যন দুধকি ধারা॥
দারুণ মদন বিকারা।
কামিনি করত পুরুখ ব্যবহারা॥
কিঙ্কিণি রণরণি মাঝে।
জয় জয় ডিণ্ডিম মদন সমাঝে॥
রসিক শিরোমণি কান।
কহে কবিরঞ্জন ভান॥


ই পদটিই আনুমানিক ১৭২৫ সালে রাধামোহন ঠাকুর সংকলিত ও বিরচিত
এবং ১৮৭৮ সালে, রামনারায়ণ বিদ্যারত্ন দ্বারা সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন
“পদামৃত সমুদ্র” সংকলনের পৃষ্ঠা ২৩২-তে এভাবে রয়েছে।

তত্র বিপরীত রস॥

॥ গুর্জ্জরী রাগ কন্দর্প তালৌ॥

উদসল কুন্তল ভারা।
মরুতি শিঙ্গার লখিমি অবতারা॥
অতিশয় প্রেম বিকারা।
কামিনি করতহিঁ পুরুখ-বেহারা॥
ডোলত মোতিম হারা।
যামুন জল যৈছে দূধক ধারা॥
কঙ্কণ কিঙ্কিণি বাজে।
জয় জয় ডিডিণ্ডিম মদন সমাজে॥
রসিক শিরোমণি কান।
কবিরঞ্জন রসগান॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কি কব রাইয়ের গুণের কথা
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ (১৯১৮), ২য় খণ্ড, ৩য়
শাখা, ১৬শ পল্লব, বিপরীত-সম্ভোগ-রসোদ্গার, পদসংখ্যা ১১০৪।


.        ॥ পঠমঞ্জরী॥

কি কব রাইয়ের গুণের কথা।
সব গুণে তারে গড়িলে ধাতা॥
এ রাস-বিলাস করিল যত।
এক মুখে তাহা কহিব কত॥
কিবা সে মধুর নটন গান।
অমিয়া-অধিক করিলুঁ পান॥
সে সব কহিতে হিয়া না বান্ধে।
দরশন লাগি পরাণ কান্দে॥
শুন হে পারণ-বল্লভ সখা।
সে ধনী পুন কি পাইব দেখা॥
নয়ন-বাণে সে হানল যবে।
বিভোর হইয়া রহিলু তবে॥
চুম্বন করল যখন ধনী।
অথির তবহুঁ কছু না জানি॥
দৃঢ় আলিঙ্গনে হরল জ্ঞান।
বিপরীত কবিরঞ্জন ভাণ॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আরে সখি কবে হাম সো ব্রজে যায়ব
কবি কবিরঞ্জন
আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত
শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (১৯২৩), ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ৮ম পল্লব, স্বপ্নে কৃষ্ণ-
দর্শন, পদসংখ্যা ১৭৬০।


॥ সুরট জয়জয়ন্তী॥

আরে সখি কবে হাম সো ব্রজে যায়ব।
কবে পিতা নন্দ                                যশোদা মায়ের স্থানে
ক্ষীর সর মাখন খায়ব॥ ধ্রু॥
কবে প্রিয় ধবলী                                  শাঙলী সুরভি লেই
সখা সঞে দোহি দোহায়ব।
কবে প্রিয় শ্রীদাম                                    সুবল সখা মেলি
কাননে ধেনু চরায়ব॥
কবে যমুনা-তীরে                                       নীপ-তরু-মূলে
মোহন বেণু বাজায়ব।
কবে বৃষভানু-                                  কিশোরি গোরি সঞে
কুঞ্জহি রাস বিহারব॥
কবে ললিতা আদি                                    রাইক প্রিয়সখি
আবেশে কোর পর লায়ব।
কহে কবিরঞ্জন                                         ঐছন শুভদিন
রাইক মান মানায়ব॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
শ্যামর গৌরবরণ একুদেহ
কবি কবিরঞ্জন
১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “বৈষ্ণব পদাবলী” নামক পদাবলীর সংলন ,
পৃষ্ঠা ২৯৭।


শ্রীরাঙ্গের স্বরূপ বর্ণন

.        ॥ ধানশী॥

শ্যামর গৌরবরণ একুদেহ।
পামর জন ইথে করয়ে সন্দেহ॥
সৌরভে আগর মূরতি রসসার।
পাকল ভেল জনু ফল সহকার॥
গোপ জনম পুন দ্বিজ অবতার।
নিগমে না জানয়ে নিগূঢ় বিহার॥
প্রকট করল হরিনাম বাখান।
নারী পুরুখ মুখে না শুনিয়ে আন॥
ত্রিপুরাচরণকমল মধুপান।
সরস সঙ্গীত কবিরঞ্জন গান॥


ব্যাখ্যা -
শ্যামবর্ণ (কৃষ্ণ) এবং গৌরবর্ণ (শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য) একই দেহ। পামরজনেই ইহাতে সন্দেহ করে
। সৌরভে পরিপূর্ণ রসের সার মূর্ত্তি। যেন সহকার ফল (আম্র) সুপক্ক হইয়াছে। কাঁচা
আমের রঙের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের দেহবর্ণ ও পাকা আমের সঙ্গে শ্রীগৌরাঙ্গের দেহবর্ণের সাদৃশ্য
কল্পনা করা হইয়াছে। ইহার মধ্যে কাঁচা আম অপেক্ষা পাকা আমে সৌরভ ও রসাধিক্যের
সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রহিয়াছে। পূর্ব্বে গোপকুলে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, আর এবার দ্বিজকুলে
আবির্ভূত হইয়াছেন। শ্রীগৌরাঙ্গের এই নিগূঢ় বিহার নিগমের-ও অজ্ঞাত। (বেদ গোপ্য
অবতার) শ্রীগৌরাঙ্গ হরিনামের মহিমা প্রকট করিলেন। নরনারীর মুখে এখন হরিনাম ভিন্ন
অন্য কথা শুনি না। ত্রিপুরাচরণকমলের মধুপানমত্ত কবিরঞ্জন এই সরস সঙ্গীত গাহিতেছেন।
- হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, “বৈষ্ণব পদাবলী”, পৃষ্ঠা ২৯৭।

রামগোপাল দাস তাঁর সংকলিত ও বিরচিত শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণরসকল্পবল্লী গ্রন্থে লিখেছেন যে
“শ্যাম গৌরবরণ একদেহে” ইত্যাদি গানটি কবিরঞ্জনের রচিত। যদিও শেষ দুটি পংক্তির
তিনটি ভিন্ন ভণিতাযুক্ত পাঠ পেয়েছিলেন সুকুমার সেন।

১।
ত্রিপুরাচরণকমল মধুপান।
সরস সঙ্গীত কবিরঞ্জন গান॥

২।
শ্রীরঘুনন্দনচরণ করি সার।
কহে কবিশেখর গতি নাহি আর॥

৩।
করি গৌরচরণ-কমলমধু পান।
কমলসঙ্গীত মাধবীদাস ভান॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মহানস ব্রজভূমি মাহ
কবি কবিরঞ্জন
১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “বৈষ্ণব পদাবলী” নামক পদাবলীর সংলন , পৃষ্ঠা ২৯৭।


শ্রীরাঙ্গের স্বরূপ বর্ণন

॥ ধানশী॥

মহানস ব্রজভূমি মাহ।
কয়লহি ভাব রসে                                    স্বাদু সুধাধিক
যোগিনী পাক নিরবাহ॥
অগম যোগস্থল                                        কো পরবেশব
রোয়ে অমর নরবৃন্দ।
ভোখ পিয়াসে                                        কোন্ বিলাওব
দুলহ অমিয় মকরন্দ॥
জগভরি জয় জয়                                  নদীয়া মহাকাশে
উয়ল গউর বর ইন্দু।
দূরে গেও উচনীচ                                     ভাসল ত্রিভূবন
উথলল কৌমুদী সিন্ধু॥
অভেদ সুর নর                                        শ্বপচ দ্বিজবর
সুচির অনর্পিত প্রেমা।
অঞ্চলে পাওল                                      গোলোক বৈভব
কঙ্ক নিশঙ্কিত হেমা॥
পাই পরমান্ন                                          দীন অধমজন
ধনি ধনি কলিযুগ বন্দে।
কবিরঞ্জন ভণ                                         ঐছে নিবেদন
রঘুনন্দন পদদ্বন্দ্বে॥


ব্যাখ্যা -
রন্ধনশালা ব্রজভূমির মধ্যে যোগিনী পৌর্ণমাসী সুধার অধিক সুস্বাদু ভাবরসের পাক (শ্রীরাধাকৃষ্ণ লীলা)
নির্ব্বাহ করিলেন। সেই অগম্য যোগস্থলে কে প্রবেশ করিবে! অমর নরগণ কাঁদিতেছে। তাহাদের ক্ষুধায়
পিপাসায় কে দুর্লভ মকরন্দ বিতরণ করিবে! (সুর নরগণকে ক্ষুধাতুর ও পিপাসাতুর দেখিয়া তাহাদের
ক্রন্দনে) নদীয়া মহাকাশে শ্রেষ্ঠ গৌরাঙ্গচন্দ্র উদিত হইলেন। জগৎ ভরিয়া জয় জয় ধ্বনি উঠিল। উচ্চ নীচ
ভেদ দূর হইল, (গৌর করুণা) কৌমুদীসিন্ধু উথলিল, ত্রিভুবন ভাসিল। দেবতা মানব, চণ্ডাল ব্রাহ্মণ, সকলেই
চিরকালের অনর্পিত গোলোকবৈভব প্রেমরত্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত হইল। দরিদ্র স্বর্ণ পাইয়া শঙ্কাশূন্য হইল (তাহার
দারিদ্রভয় দূর হইল)। পরমান্ন প্রাপ্ত হইয়া অধম দীনজনও ধন্য ধন্য বলিয়া (অথবা ধন্য হইয়া) কলিযুগকে
বন্দনা করিল। কবিরঞ্জন বলিতেছেন, --- শ্রীরঘুনন্দন-পদদ্বন্দ্বে এই নিবেদন করিলাম। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়,
“বৈষ্ণব পদাবলী”, পৃষ্ঠা ২৯৭।

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
চরণ নখ রমণিরঞ্জন ছান্দ
কবি কবিরঞ্জন
১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “বৈষ্ণব পদাবলী” নামক পদাবলীর সংলন ,
পৃষ্ঠা ২৯৮।


কলহান্তরিতা

॥ ধানশী॥

চরণ নখ রমণিরঞ্জন ছান্দ।
ধরণী লোটাওল গোকুলচান্দ॥
রোখ তিমির এত বৈরি কে জান।
রতনক ভৈগেল গৈরিক ভান॥
ঢরকি ঢরকি পড়ু লোচনলোর।
কত রূপে বিনতি কয়ল পহুঁ মোর॥
নারিজনমে হাম না রয়লুঁ ভাগি।
মরণ শরণ ভেল মানকি লাগি॥
লাগল কুদিন কয়লুঁ হাম মান।
অব নাহি নিকশয়ে কঠিন পরাণ॥
কহে কবিরঞ্জন শুন বরনারি।
প্রেম অমিয়ারসে লুবধ মুরারি॥


ব্যাখ্যা -
যাঁহার পদ নখের ছান্দেই রমণী মন র়্জিত হয়, সেই গোকুলচাঁদ ধরণীতে লুটাইয়া গেল
(ধূলায় গড়াগড়ি দিয়া গেল)। ক্রোধ আমাকে অন্ধকারে ডুবাইয়া এত শত্রুতা করিবে কে
জানিত ? (কিছু দেখিতে দিল না।) রত্নকে গিরিমাটী বলিয়া মনে করিলাম। উছলিয়া
উছলিয়া তাহার চোখে জল ঝরিতে ছিল, প্রভু আমাকে কত রূপে মিনতি করিলেন। আমি
অবাগিনী, নারী হইয়া জন্মিয়াছি (অথবা নারী হইয়া জন্মিয়া সৌভাগ্যের
অধিকারিণী হইলাম না)। মানের জন্য আমাকে এখন মরণের শণ লইতে হইল। দুর্দ্দিন
লাগিল, আমি মান করিলাম। এখনো কঠিন প্রাণ বাহির হইল না। কবিরঞ্জন বলিতেছেন,
বরনারি, শোন, মুরারি তোমার  প্রেমামৃত রসে লুব্ধ। (তিনি কি তোমাকে ত্যাগ করিতে
পারেন ?)। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, “বৈষ্ণব পদাবলী”, পৃষ্ঠা ২৯৯।


ই পদটিই ১৬৪৩-১৬৭৬ খৃষ্টাব্দের সময়কালে, রামগোপাল দাস (ভণিতা গোপাল দাস)
সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার সেন ও প্রফুল্ল
পাল দ্বারা সম্পাদিত, বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ-রসকল্পবল্লী”, অষ্টম কোরক,
নায়িকা বিভাগ, পৃষ্ঠা ১১৯-এ মাত্র চার পংক্তির দেয়া রয়েছে। হয়তো রামগোপাল দাস
সংকলন করার সময়ে যা কিছু তাঁর স্মৃতিতে ছিল, অথবা যেটুকু প্রচলিত ছিল,, তাই
তুলেছিলেন।

তত্র পদং শ্রীকবিরঞ্জন ঠাকুরস্য---

চরণ নখ রমণিরঞ্জন ছান্দ।
ধরণী লোটাওল গোকুলচান্দ॥
ঢরকি ঢরকি পড়ু লোচনলোর।
কত রূপে বিনতি কয়ল পহুঁ মোর॥


ই পদটিই সপ্তদশ দশকে, পীতাম্বর দাস ( রামগোপাল দাসের পুত্র ) সংকলিত ও
বিরচিত এবং ১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার সেন ও প্রফুল্ল পাল দ্বারা
সম্পাদিত, বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “অষ্টরস-ব্যাখ্যা ও রসমঞ্জরী” গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৩০৮-তে
এভাবে দেয়া রয়েছে।

॥ গুর্জ্জরী॥

চরণনখর মণিরঞ্জন চান্দ।
ধরণী লোটায়ত গোকুলচান্দ॥
ঢরকি ঢরকি পড়ে লোচনে লোর।
কত রূপে বিনতি করল পহুঁ মোর॥
রোখে তিমির এত বৈরিক জান।
রতনক ভৈগেল গৌরিক ভান॥
নারিজনমে হাম না করিলুঁ ভাগি।
মরণ শরণ ভেল মান কি লাগি॥
লাগল কুদিন মুঝে করলহুঁ মান।
অবহুঁ না নিকসয়ে কঠিন পরাণ॥
কহে কবিরঞ্জন সুন বরনারি।
প্রেম অমিঞারসে লুবধ মুরারি॥

.       *************************          
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর