মিলনসাগরে বৈষ্ণব পদাবলী
স্তলিখিত পুঁথি ও ছাপামাধ্যমের যুগে লেখার শ্রম ও তালপত্রে বা মুদ্রিত কাগজের পাতায় স্থানাভাবের সমস্যা ছিল। তাই প্রাচীন
ও অনতি-প্রাচীন পদ সংগ্রাহক এবং সম্পাদকগণ বহুক্ষেত্রে পদাবলীর গুণমান বিচার করে তাঁদের গ্রন্থে তা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সে
কারণেই বেশ কিছু পদ, তাঁদের মতানুযায়ী, গুণমানের নিরীখে উত্কৃষ্ট পদ নয় এমন হওয়ার দরুণ হয়তো বাদ পড়েছে। যার জন্য
সম্ভবত তাঁদের লেখায় বার বার “উত্কৃষ্ট পদ”, “চল-সই পদ” কথাগুলি উঠে এসেছে।

বর্তমান ইন্টারনেট-যুগে পুঁথি ও ছাপামাধ্যমের স্থানাভাবের সমস্যা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই বলে, আমরা
মিলনসাগরে কবির
কবিতার গুণমান নিয়ে বিচার না করে সে দায়িত্ব পাঠকের উপরেই ছেড়ে দেওয়া সঠিক মনে করি। তার উপর আমাদের দ্বারা
বৈষ্ণব পদাবলীর মতো ঐতিহাসিক সাহিত্যের নিদর্শনের গুণমান বিচারের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা চেষ্টা করছি বিশ্বের “কবিতা-
প্রেমী” বাংলাভাষী ও বাংলাভাষা জানা মানুষের কাছে, বৈষ্ণব পদাবলী পৌঁছে দিতে। আমরা বিভিন্ন পদাবলীর সংস্করণে পাওয়া
টীকা ও ব্যাখ্যা এখানে সাধ্যমত তুলছি। আরও প্রয়োজন হলে, পদাবলীর গবেষকরা তা অবশ্যই যোগাড় করে নিতে পারবেন
বলে আমরা মনে করি। আশাকরি তাঁরা এ জন্য আমাদের ক্ষমা করবেন। পদাবলীর ভাষার জন্য একটি অভিধান তৈরী করে  প্রতি
পাতার সঙ্গে তা যুক্ত করে দিয়েছি। আশা করছি তাতে সাধারণ পাঠকের অবশ্যই সুবিধা হবে।

বৈষ্ণব পদকর্তাদের মধ্যে ছিলেন বৈষ্ণব এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কবি। বর্তমান যুগে উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই এই
পদাবলীর প্রয়োজন বা গুরুত্ব এই জন্য যে, হিন্দুদের এটা কলিকাল চলছে! ভগবান বিষ্ণু নাকি এখন নিদ্রা যাচ্ছেন। কলির প্রভাবে
অন্যায় অবিচার হানাহানি এখন তুঙ্গে! গোমাংস খাওয়ার খবর বা গুজবেই বিধর্মীকে খুন করতে পিছপা হচ্ছে না হিন্দুরা। এ যেন
সম্রাট অশোকের মৌর্য্য সাম্রাজ্যের পতনে পরে, পুষ্যমিত্র সংঘের সময়কালের হিন্দু তথা ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনরুত্থান! অন্যদিকে পশ্চিমী
খৃষ্টীয় দুনিয়ার সঙ্গে প্রবহমান জিহাদ বা ক্রুসেডের ফলস্বরূপ এবং আভ্যন্তরীন ধর্মীয় মতভেদের কারণে একে অপরের থেকে বড়
মুসলমান এই কথা প্রমাণ করতে গিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ অনেকাংশে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাতে পিছপা হচ্ছেন
না। তালিবান, আলকায়দা, ইসলামিক স্টেট ও আইসিস দ্বারা সংঘটিত একের পর এক ঘটনাবলী তাই প্রমাণ করে। বামিয়ানের
বুদ্ধমূর্তি স্বয়ং হজরত মহম্মদের কালেও সুরক্ষিত থাকতে পারলে আধুনিক কালে তালিবানরা তা ভেঙে ফেললেন কি প্রমাণ করতে
তা তাঁরাই জানেন!  

এই বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্য এমন একটি বিষয় যেখানে আমরা দেখতে পাই যে বর্তমান হিন্দু ও মুসলমান, উভয়ের পূর্বপুরুষ
কোথাও কিছুক্ষণের জন্য হলেও, একাত্ম বোধ করেছিলেন। এই পদাবলী সাহিত্য এ যুগের বাঙালীকে, তাঁদের প্রায় হারিয়ে যাওয়া
ভাতৃত্ববোধকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে একটুও সাহায্য করলে, আমরা মনে করবো যে এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।

আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৬.২.২০১৭, পরিবর্ধন - ২.৫.২০১৭