কবি দীন কৃষ্ণদাসের বৈষ্ণব পদাবলী |
ঠাকুর পণ্ডিতের বাড়ী গোরা নাচে ফিরি ফিরি কবি দীন কৃষ্ণদাস আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ (১৯১৮), দ্বিতীয় খণ্ড, তৃতীয় শাখা, ২৫শ পল্লব, শ্রীগৌরভক্তবৃন্দের চরিত্র-বর্ণন, পদসংখ্যা ২৩৫৮। এই পদটি, ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, ৫৩৮-পৃষ্ঠায় একই রূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ ভাটিয়ারি॥ ঠাকুর পণ্ডিতের বাড়ী গোরা নাচে ফিরি ফিরি নিত্যানন্দ বলে হরি হরি। কান্দি গৌরীদাস বলে পড়ি প্রভুর পদ-তলে কভু না ছাড়িবে মোর বাড়ী॥ আমার বচন রাখ অম্বিকানগরে থাক এই নিবেদন তুয়া পায়। যদি ছাড়ি যাবে তুমি নিশ্চয় মরিব আমি রহিব সে নিরখিয়া কায়॥ তোমরা যে দুটি ভাই থাক মোর এই ঠাঞি তবে সভার হয় পরিত্রাণ। পুন নিবেদন করি না ছাড়িহ গৌরহরি তবে জানি পতিত-পাবন॥ প্রভু কহে গৌরীদাস ছাড়হ এমত আশ প্রতিমূর্ত্তি সেবা করি দেখ। তাহাতে আছিয়ে আমি নিশ্চয় জানিহ তুমি সত্য মোর এই বাক্য রাখ॥ এত শুনি গৌরীদাস ছাড়ি দীর্ঘনিশ্বাস ফুকরি ফুকরি পুন কান্দে। পুন সেই দুই ভাই প্রবোধ করয়ে তায় তমু হিয়া থির নাহি বান্ধে॥ কহে দীন কৃষ্ণদাস চৈতন্য-চরণে আশ দুই ভাই রহিলা তথায়। ঠাকুর পণ্ডিতের প্রেমে বন্দী হৈলা দুই জনে ভকত-বত্সল তেঞি গায়॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
নাচে গোরা প্রেমে ভোরা কবি দীন কৃষ্ণদাস ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, পৃষ্ঠা-৫৩৫। শ্রীগৌরচন্দ্র ॥ তুড়ি॥ নাচে গোরা প্রেমে ভোরা ক্ষণে ক্ষণে বলে হরি হরি। ক্ষণে বৃন্দাবন করয়ে স্মরণ ক্ষণে ক্ষণে প্রাণেশ্বরী॥ যাবকবরণ কটির বসন শোভা করে গোরা গায়। কখন কখন যমুনা বলিয়া সুরধুনীতীরে ধায়॥ তাথই তাথই মৃদঙ্গ বাজই ঝনঝন করতাল। নয়নঅম্বুজে বহে সুরনদী গলে দোলে বনমাল॥ আনন্দ-কন্দ গৌরচন্দ্র অকিঞ্চনে বড় দয়া। ( দীন ) কৃষ্ণদাস করত আশ ও পদপঙ্কজছায়া॥ এই পদটি, “কৃষ্ণদাস” ভণিতায় পাওয়া গিয়েছে, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী (হরিবল্লভ দাস) দ্বারা আনুমানিক ১৭০০ সালে সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৯২৪ সালে, রাধানাথ কাবাসী দ্বারা সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীক্ষণদা-গীতচিন্তামণি”, বিংশ ক্ষণদা - শুক্লা পঞ্চমী, পৃষ্ঠা-১৫২-এ এইরূপে। শ্রীগৌরচন্দ্রস্য ॥ তুড়ী॥ নাচে গোরা প্রেমে ভোরা ক্ষণে বলে হরি। ক্ষণে বৃন্দাবন করয়ে স্মরণ ক্ষণে ক্ষণে প্রাণেশ্বরী॥ যাবক-বরণ কটির বসন শোভা করে গোরা-গায়। কখন কখন যমুনা বলিয়া সুরধুনী-তীরে ধায়॥ তা থই তা থই মৃদঙ্গ বাজই ঝন ঝন করতাল। নয়ন-অম্বুজে বহে সুরনদী গলে দোলে বনমাল॥ আনন্দ-কন্দ গৌরচন্দ্র অকিঞ্চনে বড় দয়া। কৃষ্ণদাস করত আশ ও পদ-পঙ্কজ-ছায়া॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
আরে রে নিন্দুক ভাই তোর কি রে বোধ নাই কবি দীন কৃষ্ণদাস ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ- তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১০-পৃষ্ঠায়। ॥ ধানশী॥ আরে রে নিন্দুক ভাই তোর কি রে বোধ নাই বৃথাই ধরিলা দোন আঁখি। সব অবতারসার শ্রীগৌরাঙ্গ অবতার তুমি তারে রৈয়াছ উপেখি॥ সুরাপান অত্যাচার ভ্রুণহত্যা ব্যভিচার তন্ত্রধর্ম্মে ভারত ব্যাপিল। যক্ষ রক্ষ বিষহরি নানা উপহার করি জীব সবে পূজিতে লাগিল॥ দেখিয়া জীবের দৈন্য প্রভু মোর শ্রীচৈতন্য নবদ্বীপে প্রকট হইলা। তারক ব্রহ্ম হরিনাম যাচি সবে করি দান ধর্ম্মের সে গ্লানি ঘুচাইলা॥ জগাই মাধাই আদি দুষ্কৃতের নিরবধি হরিনামের করিলা উদ্ধার। ব্রাহ্মণ যবনে মিলি করাইলা কোলাকুলি পরতেকে দেখ একবার॥ নাস্তিকে করিলা ভক্ত খঞ্জে কৈলা গতিশক্ত অন্ধের করিলা চক্ষুদান। কহে দীন কৃষ্ণদাস নহিলে ইথে বিশ্বাস তোর আর নাহি পরিত্রাণ॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
রাঢ় দেশে নাম, একচক্রা গ্রাম, হাড়াই পণ্ডিত ঘর কবি দীন কৃষ্ণদাস ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ- তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ২৭৩-পৃষ্ঠায়। ॥ শ্রীরাগ॥ রাঢ় দেশে নাম, একচক্রা গ্রাম, হাড়াই পণ্ডিত-ঘর। শুভ মাঘ মাসি, শুক্লা ত্রয়োদশী, জনমিলা হলধর॥ হাড়াই পণ্ডিত, অতি হরষিত, পুত্র-মহোত্সব করে। ধরণী মণ্ডল, করে টলমল, আনন্দ নাহিক ধরে॥ শান্তিপুর-নাথ, মনে হরষিত, করি কিছু অনুমান। অন্তরে জানিলা, বুঝি জনমিলা, কৃষ্ণের অগ্রজ রাম॥ বৈষ্ণবের মন, হৈল প্রসন্ন, আনন্দ-সাগরে ভাসে। এ দীন পামর, হইবে উদ্ধার, কহে দীন কৃষ্ণদাসে॥ এই পদটি, আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ (১৯১৮), দ্বিতীয় খণ্ড, তৃতীয় শাখা, ১৭শ পল্লব, জন্মলীলা, পদসংখ্যা ১১১৬ এবং ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, ৫৩৬-পৃষ্ঠায়, “দুখী কৃষ্ণদাস” ভণিতায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে। ততঃ শ্রীনিত্যানন্দচন্দ্রাবির্ভাবঃ। ॥ শ্রীরাগ॥ রাঢ়দেশে নাম একচক্রা গ্রাম হাড়াই পণ্ডিত-ঘর। শুভ মাঘ-মাসি শুক্লা ত্রয়োদশী জনমিলা হলধর॥ হাড়াই পণ্ডিত অতি হরষিত পুত্র-মহোত্সব করে। ধরণী-মণ্ডল করে টলমল আনন্দ নাহিক ধরে॥ শান্তিপুর-নাথ মনে হরষিত করি কিছু অনুমান। অন্তরে জানিলা বুঝি জনমিলা কৃষ্ণের অগ্রজ রাম॥ বৈষ্ণবের মন হৈল পরসন্ন আনন্দ-সাগরে ভাসে। এ দীন পামর হইবে উদ্ধার কহে দুখী কৃষ্ণদাসে॥ এই পদটি, ১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীপদরত্ন- মালা”, ৪১-পৃষ্ঠায় “দীন কৃষ্ণদাস” ভণিতায় এই রূপে দেওয়া হয়েছে। ॥ শ্রীরাগ॥ রাঢ়দেশে নাম একচাকা গ্রাম হারাই পণ্ডিত ঘর। শুভ মাঘ মাসি শুক্লা ত্রয়োদশী জনমিলা হলধর॥ হারাই পণ্ডিত অতি হরষিত পুত্র মহোত্সব করে। ধরণী মণ্ডল করে টলমল আনন্দ নাহিক ধরে॥ শান্তিপুর নাথ, মনে হরষিত, করি কিছু অনুমান। অন্তরে জানিলা, বুঝি জনমিলা, কৃষ্ণের অগ্রজ রাম॥ বৈষ্ণবের মন হৈল প্রসন্ন আনন্দ সাগরে ভাসে। এ দীন পামর, হইবে উদ্ধার কহে দীন কৃষ্ণদাসে॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
পাসরা না যায় আমার গোরাচাঁদের লীলা কবি দীন কৃষ্ণদাস ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ- তরঙ্গিণী” (১৯৩৪, প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ২০-পৃষ্ঠায় এই পদটি নরহরির ভণিতায় রয়েছে। টীকায় উল্লেখ রয়েছে যে, কোন কোন গ্রন্থে এই পদটি কৃষ্ণদাসের ভণিতায় পাওয়া গিয়েছে, এই রূপে। ॥ বিভাষ॥ পাসরা না যায় আমার গোরাচাঁদের লীলা। যাঁর গুণে পশুপাখী ঝুরয়ে, গড়িয়া পড়য় শিলা॥ ধ্রু॥ যাঁহার নামের লাগি মহেশ হইলা যোগী বিরিঞ্চি ভাবয়ে অনুক্ষণে। ব্রহ্মার দুর্ল্লভ নাম সুলভ করিয়া পহুঁ যাচিঞা দেওল ত্রিভুবনে॥ শ্রীগৌরাঙ্গ অঙ্গে শোভে পুলক কদম্ব তাহে অপরূপ শ্রীঅঙ্গের শোভা। আনন্দ সলিলে ভাসে এই দীন কৃষ্ণদাসে দেখিয়া সে কনকের আভা॥১ ১। - কোন কোন গ্রন্থে এই পদটি কৃষ্ণদাসের ভণিতায় পাওয়া গিয়েছে। সেখানে ভণিতার পংক্তি এইরূপ “আনন্দে বিভোর অতি, নরহরি দাস তথি”। এই পদটি অনির্দিষ্ট নরহরির পাতায়ও আমরা তুলে দিয়েছি। . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |