কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের বৈষ্ণব পদাবলী |
না জানিস্ প্রেম-মর্ম্ম ব্যর্থ করিস্ পরিশ্রম ভণিতা নেই কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (১৯২৩), তৃতীয় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ৩য় পল্লব, ভবন্ বিরহ, পদসংখ্যা ১৬৩২। এই পদটি কবিরাজ গোস্বামীর শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের অন্ত্যলীলার উনবিংশ পরিচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ॥ সুহই॥ না জানিস্ প্রেম-মর্ম্ম ব্যর্থ করিস্ পরিশ্রম তোর তেষ্টা বালক সমান। তোর যদি লাগি পাইয়ে তবে তোরে শিক্ষা দিয়ে এমন যেন না করিস্ বিধান॥ ওরে বিধি তো বড় নিষ্ঠুর। অন্যোন্য দুর্ল্লভ জন প্রেমে করাই সম্মিসন অকৃতার্থে কেনে করিস্ দূর॥ ধ্রু॥ ওরে বিধি অকরুণ দেখাইয়া কৃষ্ণানন নেত্র মন লোভাইলি আমার। ক্ষণেক করিতে পান কাঢ়ি নিলি অন্য স্থান পাপ কৈলে দত্ত-অপহার॥ অক্রূর করে তোর দোষ আমায় কেনে কর রোষ ইহা যদি কর দুরাচার। তুমি অক্রূর-মূর্ত্তি ধরি কৃষ্ণ নিলি চুরি করি অন্যের নহে ঐছে ব্যবহার॥ টীকা ও ব্যাখ্যা - ৫ -৭। “ওরে” ইত্যাদি। ওরে বিধি! তুই নিতান্তই নিষ্ঠুর ; পরস্পরের নিকট দুর্ল্লভ --- এরূপ (প্রণয়ী) জনদিগকে পরস্পরের সহিত প্রণয় বন্ধনে সংযুক্ত করিয়া, অকৃতার্থ অবস্থায় অর্থাৎ তাঁহাদিগের প্রেমের উদ্দেশ্য সফল না হইতেই তাঁহাদিগকে কেন বিযুক্ত করিস্ ? ১২ - ১৫। “অক্রূর” ইত্যাদি। রে দুরাচার! যদি তুই ইহা কহিস্ (যে,) “অক্রূর তোর নিকট অপরাধ করিয়াছে, আমার প্রতি কেন ক্রোধ করিস্” ? (ইহার উত্তর এই) তুই নিজেই অক্রূরের মূর্ত্তি ধারণ করিয়া শ্রীকৃষ্ণকে অপহরণ করিয়াছিস্ ; (কেন না) অন্য কাহারও এ প্রকার অন্যায় ব্যবহার নহে। (ইহা ভাগবতীয় ক্রূরস্ত্বম-ক্রূর ইত্যাদি শ্লোকের স্বাধীন মর্ম্মানুবাদ)। ----সতীশচন্দ্র রায়, শ্রীশ্রীপদকল্পতরু॥ এই পদটিই কবিরাজ গোস্বামীর শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের অন্ত্যলীলার উনবিংশ পরিচ্ছেদে এই ভাবে দেওয়া রয়েছে। অস্বার্থো যথা রাগঃ। না জানিস্ প্রেম-মর্ম্ম ব্যর্থ করিস্ পরিশ্রম তোর তেষ্টা বালক সমান। তোর যদি লাগি পাইয়ে তবে তোরে শিক্ষা দিয়ে এমন যেন না করিস্ বিধান॥ ওরে বিধি তো বড় নিষ্ঠুর। অন্যান্য দুর্ল্লভ জন প্রেমে করাই সম্মিসন অকৃতার্থে কেন করিস্ দূর॥ ধ্রু॥ ওরে বিধি অকরুণ দেখাইয়া কৃষ্ণানন নেত্র মন লোভাইলি আমার। ক্ষণেকে করিতে পান কাড়ি নিলি অন্য স্থান পাপ কৈলে দত্ত-অপহার॥ অক্রূর করে তোর দোষ আমায় কেন কর রোষ ইঁহো যদি করে দুরাচার। তুমি অক্রূর-মূর্ত্তি ধরি কৃষ্ণ নিলি চুরি করি অন্যের নহে ঐছে ব্যবহার॥ আপনার কর্ম্ম দোষ তোরে কিবা করি রোষ তোর আমায় সম্বন্ধ বিদূর। যে আমার প্রাণনাথ একত্র রহি যাঁর সাথ সেই কৃষ্ণ হইলা নিঠুর॥ সব ত্যাজি ভজি যাঁরে সেই আপন হাতে মারে নারীবধে কৃষ্ণের নাহি ভয়। তাঁর লাগি আমি মরি উলটি না চাহে হরি ক্ষণ মাত্রে ভাঙ্গিল প্রণয়॥ কৃষ্ণেরে কেন করি রোষ আপন দুর্দ্দৈব দোষ পাকিল মোর এই পাপফল। যে কৃষ্ণ মোর প্রেমাধীন তাঁরে কৈল উদাসীন এই মোর অভাগ্য প্রবল॥ এই মত গৌর রায় বিষাদে করে হায় হায় হাহা কৃষ্ণ! গেলে তুমি কতি। গোপীভাব হৃদয়ে তাঁর বাক্যে বিলাপয়ে গোবিন্দ দামোদর মাধবেতি॥ তবে স্বরূপ রামরায় করি নানা উপায় মহাপ্রভুর করে আশ্বাসন। গায়েন মঙ্গল গীত প্রভুর ফিরাইতে চিত প্রভুর কিছু স্থির হৈল মন॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ব্রজেন্দ্র-কুল দুগ্ধ-সিন্ধু কৃষ্ণ তাহে পূর্ণ ইন্দু ভণিতা নেই কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (১৯২৩), তৃতীয় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ৩য় পল্লব, ভবন্ বিরহ, পদসংখ্যা ১৬৫১। এই পদটি কবিরাজ গোস্বামীর শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের অন্ত্যলীলার উনবিংশ পরিচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ॥ সুহই॥ ব্রজেন্দ্র-কুল দুগ্ধ-সিন্ধু কৃষ্ণ তাহে পূর্ণ ইন্দু জন্মি কৈল জগত উজোর। যার কান্ত্যমৃত পিয়ে নিরন্তর পিয়া জীয়ে ব্রজজন-নয়ন-চকোর॥ সখি হে কোথা কৃষ্ণ করাও হে দরশন। তিলেক যাহার মুখ না দেখিলে ফাটে বুক শীঘ্র দেখাও না রহে জীবন॥ ধ্রু॥ এই ব্রজের রমণী কামার্ক-তপ্ত কুমুদিনী নিজ করামৃত দিয়া দান। প্রফুল্লিত করে যেই কাহাঁ মোর চন্দ্র সেই দেখাই সখি রাখ মোর প্রাণ॥ কাহাঁ সে চূড়ার ঠান শিখি-পুচ্ছের উড়ান নব মেঘে যেন ইন্দ্র-ধনু। পীতাম্বর তড়িদ্দ্যুতি মুক্তামালা বক-পাঁতি নবাম্বুদ জিনি শ্যাম-তনু॥ একবার যার নয়নে লাগে সদা তার হৃদয়ে জাগে কৃষ্ণ-তনু যেন আম্র-আঠা। নারীর মনে পৈশে যায় যত্নে নাহি বাহিরায় তনু নহে সেহাকুলের কাঁটা॥ জিনিয়া তমাল-দ্যুতি ইন্দ্রনীল-সম কাঁতি যে কান্তিতে জগত মাতায়। শৃঙ্গার-রস ছানি তাহে চন্দ্র-জ্যোত্স্না আনি জানি বিধি নিরমিল তায়॥ কাহাঁ সে মুরলী-ধ্বনি নবাভ্র-গর্জ্জন জিনি জগতাকর্ষে শ্রবণে যাহার। উড়ি যায় ব্রজ-জন তৃষিত চাতকগণ আসি পিয়ে কান্ত্যমৃত-ধার॥ মোর সেই কলানিধি প্রাণ-রক্ষা-মহৌষধি সখি তোমার তেঁহো সুহৃত্তম। যেই জীয়ে তাহা বিনে ধিক্ সেই জীবনে বিধি করে এত বিড়ম্বন॥ এই পদটিই কবিরাজ গোস্বামীর শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের অন্ত্যলীলার উনবিংশ পরিচ্ছেদ, ২৮৮-পৃষ্ঠায় এই ভাবে দেওয়া রয়েছে। ॥ যথা রাগঃ॥ ব্রজেন্দ্র কুল দুগ্ধ সিন্ধু কৃষ্ণ তাহে পূর্ণ ইন্দু জন্মি কৈলা জগৎ উজোর। কান্ত্যমৃত যেবা পীয়ে নিরন্তর পীয়া জীয়ে ব্রজ জনের নয়ন চকোর॥ সখি হে কোথা কৃষ্ণ করাও হে দরশন। ক্ষণেকে যাঁহার মুখ না দেখিলে ফাটে বুক শীঘ্র দেখাও না রহে জীবন॥ এই ব্রজের রমণী কামার্ক তপ্ত কুমুদিনী নিজ করামৃত দিয়া দান। প্রফুল্লিত করে যেই কাহাঁ মোর চন্দ্র সেই দেখাও সখি রাখ মোর প্রাণ॥ কাহাঁ সে চূড়ার ঠাম শিখিপুচ্ছের উড়ান নব মেঘে যেন ইন্দ্র-ধনু। পীতাম্বর তড়িদ্দ্যুতি মুক্তামালা বকপাঁতি নবাম্বুদ জিনি শ্যামতনু॥ একবার যার নয়নে লাগে সদা তার হৃদয়ে জাগে কৃষ্ণতনু যেন আম্র আঠা। নারীর মনে পশি যায় যত্নে নাহি বাহিরায় তনু নহে সেয়াকুলের কাঁটা॥ জিনিয়া তমাল দ্যুতি ইন্দ্রনীল সম কান্তি যে কান্তিতে জগৎ মাতায়। শৃঙ্গার রস সার ছানি তাহে চন্দ্র জ্যোত্স্না ছানি জানি বিধি নিরমিল তায়॥ কাহাঁ সে মুরলী ধ্বনি নবাম্বুদ গর্জ্জিত জিনি জগদাকর্ষে শ্রবণে যাহার। উড়ি যায় ব্রজ জন তৃষিত চাতকগণ আসি পীয়ে কান্ত্যমৃত ধার॥ মোর সেই কলানিধি প্রাণ রক্ষার মহৌষধি সখি মোর তিঁহো সুহৃত্তম। দেহ জীয়ে তাহা বিনে ধিক্ সেই জীবনে বিধি করে এত বিড়ম্বন॥ যে জন জীতে নাহি চায় তারে কেন জীয়ায় বিধি প্রতি উঠে ক্রোধ শোক। বিধিকে করে ভর্ত্সন কৃষ্ণে দেন ওলাহন পড়ি ভাগবতের এক শ্লোক॥ এই পদটি, ১৯৬১ সালে প্রকাশিত, বিমান বিহারী মজুমদার সম্পাদিত “ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী-সাহিত্য”, ৫০০-পৃষ্ঠায় এভাবে দেওয়া রয়েছে। ॥ সুহই - ছোট দশকুশী॥ ব্রজেন্দ্র কুল দুগ্ধসিন্ধু কৃষ্ণ তাহে পূর্ণ ইন্দু জন্মি কৈলা জগৎ উজোর। যার কান্ত্যমৃত পিয়ে নিরন্তর পিয়া জিয়ে ব্রজজন নয়ন-চকোর॥ সখি হে, কোথা কৃষ্ণ করাও দরশন। ক্ষণেকে যাহার মুখ না দেখিলে ফাটে বুক শীঘ্র দেখাও না রহে জীবন॥ এই ব্রজ রমণী কামার্ক-তপ্ত কুমুদিনী নিজ করামৃত দিয়া দান। প্রফুল্লিত করে যেই কাহা মোর চন্দ্র সেই দেখাও সখি রাখ মোর প্রাণ॥ কাঁহা সে চূড়ার ঠাম শিখি পুচ্ছের উড়ান নব মেঘে যেন ইন্দ্রধনু। পীতাম্বর তড়িদ্দ্যুতি মুক্তামালা বকপাঁতি নবাম্বুদ জিনি শ্যাম তনু॥ একবার যার নয়নে লাগে সদা তার হৃদয়ে জাগে কৃষ্ণতনু যেন আম্র-আঠা। নারীর মনে পৈশে যায় যত্নে না বাহিরায় তনু নহে সেয়াকুলের কাঁটা॥ জিনিয়া তমাল দ্যুতি ইন্দ্রনীল সম কাঁতি যে কান্তিতে জগত মাতায়। শৃঙ্গার রস ছানি তাহে চন্দ্রজ্যোত্স্না আনি জানি বিধি নিরমিল তায়॥ কাঁহা সে মুরলী ধ্বনি নবাভ্র গর্জ্জিত জিনি জগদাকর্ষে শ্রবণে যাহার। উঠি ধায় ব্রজ জন তৃষিত চাতকগণ আসি পিয়ে কান্ত্যমৃতধার॥ মোর সেই কলানিধি প্রাণ রক্ষার মহৌষধি সখি, মোর তেঁহো সুহৃত্তম। যেই জীয়ে তাহা বিনে ধিক্ সেই জীবনে বিধি করে এত বিড়ম্বন॥ টীকা - ব্রজেন্দ্রকুল দুগ্ধসিন্ধু ইত্যাদি। --- শ্রীকৃষ্ণরূপ পূর্ণচন্দ্রের উদ্ভব হইয়াছে ব্রজের শ্রেষ্ঠ কুলরূপ দুগ্ধসমুদ্রে। তিনি জন্মিয়া জগৎ উজ্জ্বল করিয়াছেন। তাঁহার কান্তিরূপ অমৃত সর্ব্বদা পান করিয়া তাঁহার প্রেয়সীরা জীবন ধারণ করেন ; ব্রজজনের নয়ন তাঁহার রূপসুধা পান করিবার জন্য চকোরের ন্যায় উদ্গ্রীব হইয়া থাকে । কামার্ক-তপ্ত কুমুদিনী। --- শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্রস্বরূপ, আর গোপীরা কুমুদিনীতুল্য। দিনের বেলায় সূর্য্যের তাপে কুমুদিনী যেমন ম্লান হইয়া থাকে, তেমনি কামরূপ সূর্য্যের তাপে গোপীরূপ কুমুদিনীরা মৃতপ্রায় হইয়া আছেন, কৃষ্ণরূপ চন্দ্রের কিরণপাইলে তাঁহারা বাঁচিবেন। পীতাম্বর তড়িদ্দ্যুতি ইত্যাদি। --- শ্রীকৃষ্ণের পীতবসন যেমন বিদ্যুৎ ; আর তাঁহার দেহ যেন নূতন মেঘ ; তাঁহার গলার মুক্তার মালা দেখিয়া মনে হয়, যেন শুভ্র বলাকাশ্রেণী উড়িয়া চলিয়াছে। তনু নহে সেয়াকুলের কাঁটা। --- তনু অর্থাৎ কৃশ বা ছোট নহে, সেয়াকুল একরকম কাঁটার লতা --- সেহাকুল বা সংস্কৃতে শৃগালকোকিলা। নবাভ্র গর্জ্জন জিনি। --- নূতন মেঘের মৃদুমন্দ গর্জ্জনকে হারাইয়া দিয়াছে যে মুরলীর ধ্বনি। কান্ত্যমৃত --- কান্তিরূপ অমৃত। ---বিমান বিহারী মজুমদার, “ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী-সাহিত্য”॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
কৃষ্ণ-লীলামৃত সার তার শত শত ধার ভণিতা দীন কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (১৯২৭), ৪র্থ খণ্ড, ৪র্থ শাখা-২য় ভাগ, ৩৬শ পল্লব, প্রার্থনা, পদসংখ্যা ৩০৪১। ॥ সুহই॥ কৃষ্ণ-লীলামৃত সার তার শত শত ধার দশ দিক বহে যাহা হৈতে। সে চৈতন্য-লীলা হয় সরোবর অক্ষয় মন-হংস চরাহ তাহাতে॥ ভক্তগণ শুন মোর দৈন্য-বচন। তোমা সভার শ্রীচরণ করি অঙ্গ-বিভূষণ করোঁ কিছু এই নিবেদন॥ কৃষ্ণ-ভক্তি-সিদ্ধান্তগণ প্রফুল্লিত পদ্ম-বন তার মধু কর আস্বাদন। প্রেম-রস-কুমুদ-বনে প্রফুল্লিত রাত্রি দিনে তাতে চরাও মন-ভৃঙ্গগণ॥ নানাভাবে ভক্ত-জন হংস-চক্রবাকগণ যাতে সভে করেন বিহার। কৃষ্ণ-কেলি মৃণাল যাহা পাই সর্ব্বকাল ভক্ত-হংস করয়ে আহার॥ সেহ সরোবরে যাঞা হংস চক্র ভৃঙ্গ হৈয়া সদা তাহে করহ বিলাস। খণ্ডিবে সকল দুখ পাইবে পরম সুখ অনায়াসে হবে প্রেমোল্লাস॥ এ অমৃত অনুক্ষণ সাধু-মহান্ত-মেঘগণ বিশ্বোদ্যানে করে বরিষণ। তাতে ফলে প্রেম-ফল ভক্ত খায় নিরন্তর তার প্রেমে জীয়ে জগ-জন॥ চৈতন্য-লীলামৃত-পূর কৃষ্ণ-লীলা-কর্পূর দুই মিলি হয় যে মাধুর্য্য। সাধু-গুরু-প্রসাদে তাতে যার মন বান্ধে সেই জানে মাধুর্য্য-প্রাচুর্য্য॥ সেই লীলামৃত বিনে খায় যদি অন্নপানে তভু ভক্তের দুর্ব্বল জীবন। যার এক বিন্দু-পানে প্রফুল্লিত-তনু-মনে হাসে গায় করয়ে নর্ত্তন॥ এ অমৃত কর পান যাহা বিনে নাহি আন চিত্তে করি সুদৃঢ় বিশ্বাস। না পড় কুতর্ক-গর্ত্তে অমেধ্য কর্ক্কশাবর্ত্তে যাতে পড়িলে হয় সর্ব্বনাশ॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ অদ্বৈত আর ভক্তবৃন্দ আর যত শ্রোতা ভক্তগণ। তোমা সভার শ্রীচরণ শিরে করি বিভূষণ যাহা হৈতে অভীষ্ট-পূরণ॥ শ্রীরূপ সনাতন রঘুনাথ শ্রীচরণ শিরে ধরি করি তার আশ। কৃষ্ণ-লীলামৃতাম্বিত চৈতন্যচরিতামৃত গায় কিছু দীন কৃষ্ণদাস॥ এই পদটি কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ২৫শ পরিচ্ছেদ, ৬৮৭-পৃষ্ঠায় এভাবে দেওয়া রয়েছে। ॥ যথা রাগ॥ কৃষ্ণ-লীলামৃত সার তার শত শত ধার দশ দিক বহে যাহা হৈতে। সে চৈতন্য-লীলা হয় সরোবর অক্ষয় মনোহংস চরাও তাহাতে॥ ভক্তগণ শুন মোর দৈন্য বচন। তোমা সবার পদধূলি অঙ্গে বিভূষণ করি কিছু মুঞি করোঁ নিবেদন॥ কৃষ্ণভক্তি সিদ্ধান্তগণ যাতে প্রফুল্ল পদ্মবন তার মধু কর আস্বাদন। প্রেম রস কুমুদ বনে প্রফুল্লিত রাত্রি দিনে তাতে চরাও মনোভৃঙ্গগণ॥ নানা ভাবের ভক্তজন হংস চক্রবাকগণ যাতে সভে করেন বিহার। কৃষ্ণ কেলি মৃণাল যাহা পাই সর্ব্বকাল ভক্ত হংস করয়ে আহার॥ সেই সরোবরে গিয়া হংস চক্রবাক হঞা সদা তাঁহা করহ বিলাস। খণ্ডিবে সকল দুখ পাইবে পরম সুখ অনায়াসে হবে প্রেমোল্লাস॥ এই অমৃত অনুক্ষণ সাধু মহান্ত মেঘগণ বিশ্বোদ্যানে করে বরিষণ। তাতে ফলে অমৃত ফল ভক্ত খায় নিরন্তর তার প্রেমে জীয়ে জগ-জন॥ চৈতন্য লীলামৃত পূর কৃষ্ণ লীলা কর্পূর দুই মিলি হয় যে মাধুর্য্য। সাধু গুরু প্রসাদে তাহা যেই আস্বাদে সেই জানে মাধুর্য্য প্রাচুর্য্য॥ সেই লীলা অমৃত বিনে খায় যদি অন্ন পানে তবু ভক্তের দুর্ব্বল জীবন। যার এক বিন্দু পানে প্রফুল্লিত তনু মনে হাসে গায় করয়ে নর্ত্তন॥ এ অমৃত কর পান যাহা সম নাহি আন চিত্তে করি সুদৃঢ় বিশ্বাস। না গর কুতর্ক গর্ত্তে অমেধ্য কর্ক্কশাবর্ত্মে যাতে পড়িলে হয় সর্ব্বনাশ॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত ভক্তবৃন্দ আর যত শ্রোতা ভক্তগণ। তোমা সবার শ্রীচরণ শিরে করি ভূষণ যাহা হৈতে অভীষ্ট পূরণ॥ শ্রীরূপ সনাতন রঘুনাথ জীব চরণ শিরে ধরি যার করি আশ। কৃষ্ণ-লীলামৃতাম্বিত চৈতন্য চরিতামৃত গায় কিছু দীন কৃষ্ণদাস॥ এই পদটি জগবন্ধু ভদ্র সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ তরঙ্গিণী” (১৯৩৪), প্রথম তরঙ্গ, ৩য় উচ্ছাস, গৌরাবতারের ঐশ্বর্য্য ও মাধুর্য্য, পদসংখ্যা ২০, ২৩-পৃষ্ঠায় এইভাবে দেওয়া রয়েছে । ॥ যথা রাগ॥ কৃষ্ণ-লীলামৃত সার তার শত শত ধার দশ দিক বহে যাহা হৈতে। সে চৈতন্য-লীলা হয় সরোবর অক্ষয় মনোহংস চরাও তাহাতে॥ ভক্তগণ শুন মোর দৈন্যবচন। তোমা সবার শ্রীচরণ করি অঙ্গ-বিভূষণ করো কিছু এই নিবেদন॥ ধ্রু॥ কৃষ্ণভক্তি সিদ্ধান্তগণ প্রফুল্লিত পদ্মবন তার মধু কর আস্বাদন। প্রেমরস কুমুদবনে প্রফুল্লিত রাত্র দিনে তাতে চরাহ মনোভৃঙ্গগণ॥ নানাভাবে ভক্তগন হংস চক্রবাকগণ যাতে সভে করেন বিহার। কৃষ্ণকেলি মৃণাল যাহা পাই সর্ব্বকাল ভক্ত করয়ে আহার॥ সেই সরোবরে যাঞা হংস-চক্রবাক হৈঞা সদা তাতে করহ বিলাস। খণ্ডিবে সকল দুঃখ পাইবে পরম সুখ অনায়াসে কহে কৃষ্ণদাস॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি দীন কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |
শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত ভক্তবৃন্দ ভণিতা কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ আনুমানিক ১৭৫০ সালে বৈষ্ণবদাস ( গোকুলানন্দ সেন ) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের, সটীক সংস্করণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (১৯২৭), ৪র্থ খণ্ড, ৪র্থ শাখা-২য় ভাগ, ৩৬শ পল্লব, প্রার্থনা, পদসংখ্যা ৩০৮৬। এই পদটি কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃতের মধ্যলীলার ২য় পরিচ্ছেদের “কিবা সাক্ষাৎ কাম দ্যুতিবিম্ব মূর্ত্তিমান” গীতের শেষাংস। যস্মাৎ পূর্ব্বকীর্ত্তনানুসারেণ যথা। ॥ পাহিড়া॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত ভক্তবৃন্দ শিরে ধরোঁ সভার চরণ। স্বরূপ রূপ সনাতন রঘুনাথের শ্রীচরণ- ধূলি করোঁ মস্তকে ভূষণ॥ পাঞা যার আজ্ঞা-ধন ব্রজের বৈষ্ণবগণ বন্দো তার মুখ্য হরিদাস। চৈতন্য-বিলাস-সিন্ধু- কল্লোলের এক বিন্দু তার কণা কহে কৃষ্ণদাস॥ এই পদটি, রাধামোহন ঠাকুর (রাধামোহন দাস) দ্বারা আনুমানিক ১৭২৫ সালে সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৮৭৮ সালে, রামনারায়ণ বিদ্যারত্ন দ্বারা সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “পদামৃত সমুদ্র”, ৪৯০পৃষ্ঠায় এইভাবে দেওয়া রয়েছে। ॥ শ্রীসহিত গান্ধাররাগ সমতলৌ॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ অদ্বৈতাদি ভক্তবৃন্দ শিরে ধরি সভার চরণ। স্বরূপ রূপ সনাতন রঘুনাথের শ্রীচরণ ধূলি করি মস্তকে ভূষণ॥ পাঞা যার আজ্ঞা ধন ব্রজের বৈষ্ণবগণ বন্দো তার মুখ্য হরিদাস। চৈতন্য বিলাস সিন্ধু কল্লোলের এক বিন্দু তার কণা কহে কৃষ্ণদাস॥ এই পদটি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব-পদলহরী”, ৫৭৪-পৃষ্ঠায় এভাবে দেওয়া রয়েছে। ॥ পাহিড়া॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ, অদ্বৈতাদি ভক্তবৃন্দ শিরে ধরি সবার চরণ। স্বরূপ রূপ সনাতন, রঘুনাথের শ্রীচরণ, ধূলি করো মস্তকে ভূষণ॥ পাঞা যার আজ্ঞা-ধন, ব্রজের বৈষ্ণবণ, বন্দ্যো তার মুখ্য হরিদাস। চৈতন্য-বিলাস-সিন্ধু, কল্লোলের এক বিন্দু, তার কণা কহে কৃষ্ণদাস॥ এই পদটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত, নবদ্বীপ চন্দ্র ব্রজবাসী ও খগেন্দ্রনাথ মিত্রের মহাজন পদালী সংকলন “শ্রীপদামৃতমাধুরী” ৩য় খণ্ড, ৭১৮-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ শ্রীগান্ধার - ছোট-রূপক তাল॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ, অদ্বৈতাদি ভক্ত-বৃন্দ, শিরে ধরি সবার চরণ। স্বরূপ রূপসনাতন, রঘুনাথের শ্রীচরণ, ধূলি করি মস্তকে ভূষণ॥ পাইয়া যার আজ্ঞাধন, ব্রজের বৈষ্ণবণ, বন্দে তার মুখ্য হরিদাস। শ্রীচৈতন্য-বিলাস সিন্ধু, কল্লোলের এক বিন্দু, তার কণা কহে কৃষ্ণদাস॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |
গৌরাঙ্গ অনুক্ষণ সাধু মহান্ত মেঘগণ ভণিতা দীন কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ জগবন্ধু ভদ্র সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ তরঙ্গিণী”, ১৯৩৪ থেকে নেওয়া। প্রথম তরঙ্গ, ৩য় উচ্ছাস, গৌরাবতারের ঐশ্বর্য্য ও মাধুর্য্য, পদসংখ্যা ২১, পৃষ্ঠা ২৩। এই পদটি কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ২৫শ পরিচ্ছেদ, পৃ-৬৮৭-র পদের অংশ মাত্র, সামান্য পরিবর্তন সহ। যেহেতু জগবন্ধু ভদ্র এই পদটিকে আলাদাভাবে দেখিয়েছেন, আমরাও আলাদা ভাবে এখানে সংযোজন করলাম। মূল পদটি হলো “কৃষ্ণ-লীলামৃত সার তার শত শত ধার” । ॥ সুহই॥ গৌরাঙ্গ অনুক্ষণ সাধু মহান্ত মেঘগণ বিশ্বোদ্যানে করে বরিষণ। তাতে ফলে প্রেম-ফল ভক্ত খায় নিরন্তর তার প্রেমে জীয়ে জগজ্জন॥ চৈতন্যলীলামৃতপূর কৃষ্ণলীলা কর্পূর দুই মিলি হয় যে মাধুর্য্য। সাধু-গুরু-প্রসাদে তাতে যার মন বাঁধে সেই জানে মাধুর্য্য-প্রাচুর্য্য॥ সেই লীলামৃত বিনে খায় যদি অন্নপানে তবু ভক্তের দুর্ব্বল জীবন। যার এক বিন্দু পানে প্রফুল্লিত তনু মনে হাসে গায় করয়ে নর্ত্তন॥ এ অমৃত কর পান যাহা বিনা নাহি আন চিত্তে করি সুদৃঢ় বিশ্বাস। না পড় কুতর্ক-গর্ত্তে অমেধ্য কর্ক্কশাবর্ত্তে যাহাতে পড়িলে সর্ব্বনাশ॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ অদ্বৈত আর ভক্তবৃন্দ আর যত শ্রোতা ভক্তগণ। তোমা সবার শ্রীচরণ শিরে করি ভূষণ যাহা হৈতে অভীষ্ট পূরণ॥ শ্রীরূপ শ্রীসনাতন রঘুনাথ শ্রীচরণ শিরে ধরি করি তাঁর আশ। কৃষ্ণলীলামৃতাম্বিত চৈতন্য-চরিতামৃত গায় কিছু দীন কৃষ্ণদাস॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি দীন কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |
কস্তুরিকা নীলোত্পল তার সেই পরিমল ভণিতা কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃত, অন্ত্যলীলা, ১৯শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৯৫। যথা রাগঃ। কস্তুরিকা নীলোত্পল তার সেই পরিমল তাহা জিনি কৃষ্ণ অঙ্গ গন্ধ। ব্যাপে সর্ব্ব ভুবনে করে সর্ব্ব আকর্ষণে নারীগণের আঁখি করে অন্ধ॥ সখি হে! কৃষ্ণ গন্ধ জগত মাতায়। নারীর নাসাতে পৈশে সর্ব্বকাল তাঁহা বৈশে কৃষ্ণ পাশ ধরি লঞা যায়॥ নেত্র নাভি বদন কর যুগ চরণ এই অষ্ট পদ্ম কৃষ্ণ অঙ্গে। কর্পূর লিপ্ত কমল তার যৈছে পরিমল সেই গন্ধ অষ্ট পদ্ম সঙ্গে॥ হেমকীলিতচন্দন তাহা করি ঘর্ষণ তাহে অগুরু কুম্কুম কস্তুরী। কর্পূর সনে চর্চা অঙ্গে পূর্ব্বে অঙ্গের গন্ধ সঙ্গে মিলি তাকে যেন কৈলা চুরি॥ হরে নারীর তনুমন নাসা করে ঘুর্ণন খসায় নীবী, ছুটায় কেশ বন্ধ। করি আগে বাউরী নাচায় জগৎনারী হেন ডাকাইত অঙ্গ গন্ধ॥ সেই গন্ধ বশ নাসা সদা করে গন্ধের আশা কভু পায় কভু নাহি পায়। পাইলে পীয়া পেট ভরে পীঙ পীঙ তবু করে না পাইলে তৃষ্ণায় মরি যায়॥ মদনমোহন নাট পসারি চান্দের হাট জগন্নারী গ্রাহক লোভায়। বিনিমূলে দেয় গন্ধ গন্ধ দিয়া করে অন্ধ ঘরে যাইতে পথ নাহি পায়॥ এই মত গৌরহরি গন্ধে কৈল মন চুরি ভঙ্গ প্রায় ইতি উতি ধায়। যায় বৃক্ষলতা পাশে কৃষ্ণ স্ফুরে সেই আশে কৃষ্ণ না পায় গন্ধ মাত্র পায়। স্বরূপ রামানন্দ গায় প্রভু নাচে সুখ পায় এইমতে প্রাতঃকাল হৈল। স্বরূপ রামানন্দ রায় করি নানা উপায় মহাপ্রভুর বাহ্য স্ফুর্ত্তি কৈল॥ মাতৃ ভক্তি প্রলাপন ভিত্তে মুখ ঘর্ষণ কৃষ্ণগন্ধ স্ফুর্ত্তি দিব্য নৃত্য। এই চারি লীলা ভেদে গাইল এই পরিচ্ছেদে কৃষ্ণদাস রূপগোঁসাঞির ভৃত্য॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |
কিবা সাক্ষাৎ কাম দ্যুতিবিম্ব মূর্ত্তিমান ভণিতা কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ২য় পরিচ্ছেদ, পৃ-৪৭। যথা রাগ। কিবা সাক্ষাৎ কাম দ্যুতিবিম্ব মূর্ত্তিমান কি মাধুর্য্য স্বয়ং মূর্ত্তিমন্ত। কিবা মনো নেত্রোত্সব কিবা প্রাণবল্লভ সত্য কৃষ্ণ আইলা নেত্রানন্দ॥ গুরু নানাভাব গণ শিষ্য প্রভুর তনু মন নানা রীতে সতত নাচায়। নির্ব্বেদ, বিষাদ, দৈন্য, চাপল্য, হর্ষ, ধৈর্য্য, মন্য, এই নৃত্যে প্রভুর কাল যায়॥ চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, রায়ের নাটক গীতি কর্ণামৃত, শ্রীগীত গোবিন্দ। স্বরূপ রামানন্দ সনে মহাপ্রভু রাত্রিদিনে গায় শুনে পরম আনন্দ॥ পুরীর বাত্সল্য মুখ্য রামানন্দের শুদ্ধ সখ্য গোবিন্দাদ্যে শুদ্ধ হাস্য রস। গদাধর জগদানন্দ স্বরূপের সানন্দ এই চারি ভাবে প্রভু বশ॥ লীলাসুখ মত্তজন তার হয় ভাবোদ্গম ঈশ্বরে সে কি ইহা বিস্ময়। তাতে মখ্য রসাশ্রয় হইয়াছেন মহাশয় তাহে হয় সর্ব্ব ভাবোদয়॥ পূর্ব্বে ব্রজবিলাসে যেই তিন অভিলাষে যত্নে হ আস্বাদ নহিল। শ্রীরাধার ভাবসার আপনে করি অঙ্গীকার সেই তিন বস্তু আস্বাদিল॥ আপনে করি আস্বাদনে শিখাইল ভক্তগণে প্রেম চিন্তামণির প্রভু ধনী। নাহি জানে স্থানাস্থান যারে তারে কৈল দান মহাপ্রভু দাতা শিরোমণি॥ এই গুপ্ত ভাব সিন্ধু ব্রহ্মা না পায় এক বিন্দু হেন ধন বিলাইল সংসারে। ঐছে দয়ালু অবতার ঐছে দাতা নাহি আর গুণ কেহ নারে বর্ণিবারে॥ কহিবার কথা নহে কহিলে কেহ না বুঝহে ঐছে চিত্র চৈতন্যের রঙ্গ। সেই সে বুঝিতে পারে চৈতন্যের কৃপা যাঁরে হঙ তাঁ দাসানুদাস সঙ্গ॥ চৈতন্য লীলা রত্নসার স্বরূপের ভাণ্ডার তিঁহ থুইল রঘুনাথের কণ্ঠে। তাহা কিছু যে শুনিল তাহা ইহাঁ বিস্তারিল ভক্তগণে দিল এই ভেটে॥ যদি কেহ হেন কহে গ্রন্থ কৈল শ্লোকময়ে ইতর জনে নারিবে বুঝিতে। প্রভুর যেই আচরণ সেই করি বর্ণন সর্ব্বচিত্ত নারি আরাধিতে॥ নাহি কাহোসো বিরোধ নাহি কাহোঁ অনুরোধ সহজ বস্তু করি বিবেচন। যদি হয় রাগোদ্দেশ তাঁহা হয়ে আবেশ সহজ বস্তু না যায় লিখন॥ যেবা নাহি বুঝে কেহ শুনিতে শুনিতে সেহ কি অদ্ভুত চৈতন্যচরিত। কৃষ্ণে উপজিবে প্রীতি জানিবে রসের রীতি শুনিলেই বড় হয় হিত॥ ভাগবত শ্লোকময় টীকা তার সংস্কৃত হয় তবু কৈছে বুঝে ত্রিভুবন। ইহা শ্লোক দুই চারি তার ব্যাখ্যা ভাষা করি কেন না বুঝিবে সর্ব্বজন॥ শেষ লীলার সূত্রগণ কৈল কিছু বিবরণ ইহা বিস্তারিতে চিত্ত হয়। থাকে যদি আয়ু শেষ বিস্তারিব লীলাশেষ যদি মহাপ্রভুর কৃপা হয়॥ আমি বৃদ্ধ জরাতুর লিখিতে কাঁপয়ে কর মনে কিছু স্মরণ না হয়। না দেখিয়ে নয়নে না শুনিয়ে শ্রবণে তবু লিখি এ বড় বিস্ময়॥ এই অন্ত্যলীলা সার সূত্র মধ্যে বিস্তার করি কিছু করিল বর্ণন। ইহা মধ্যে মরি যবে বর্ণিতে না পারি তবে এই লীলা ভক্তগণ ধন॥ সংক্ষেপে এই সূত্র কৈল যেই ইহা না লিখিল আগে তাহা করিব বিস্তার। যদি তত দিন জীয়ে মহাপ্রভুর কৃপা হয়ে ইচ্ছা ভরি করিব বিচার॥ ছোট বড় ভক্তগণ বন্দোঁ সবার চরণ সবে মোরে করহ সন্তোষ। স্বরূপ গোঁসাঞির মত রূপ রঘুনাথ জানে যত তাহি লিখি নাহি মোর দোষ॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ অদ্বৈতাদি ভক্তবৃন্দ শিরে ধরি সবার চরণ। স্বরূপ রূপ সনাতন রঘুনাথের শ্রীচরণ ধূলি করোঁ মস্কে ভূষণ॥ পাঞা যাঁর আজ্ঞা ধন ব্রজের বৈষ্ণবগণ বন্দোঁ তাঁর মুখ্য হরিদাস। চৈতন্য বিলাস সিন্ধু কল্লোলের এক বিন্দু তার কথা কহে কৃষ্ণদাস॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |
অহো! ব্রজেন্দ্র নন্দন ব্রজের কোন কন্যাগণ ভণিতা দীন হীন কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃত, অন্ত্যলীলা, ১৬শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৬০। যথা রাগঃ। অহো! ব্রজেন্দ্র নন্দন ব্রজের কোন কন্যাগণ অবশ্য করিবে পরিণয়। সে সম্বন্ধে গোপীগণ যাকে জানে নিজ ধন সে সুধা অন্যের লভ্য নয়॥ গোপীগণ! কহ সব করিয়া বিচারে। কোন্ তীর্থে কোন্ তপ কোন্ সিদ্ধ মন্ত্র জপ এই বেণি কৈল জন্মান্তরে॥ হেন কৃষ্ণাধর সুধা যে কৈল অমৃত মুদা যার আশায় গোপী ধরে প্রাণ। এই বেণি অযোগ্য অতি একে স্থাবর পুরুষ জাতি সে সুধা সদাই করে পান॥ যার ধন না কহে তারে পান করে বলাত্কারে পীতে তারে ডাকিয়া জানায়। তার তপস্যার ফল দেখ ইহার ভাগ্য বল ইহার উচ্ছিষ্ট মহাজনে খায়॥ মানসগঙ্গা কালিন্দী ভুবন পাবন নদী কৃষ্ণ যদি তাতে করে স্নান। বেণু ঝুটাধররস হঞা লোভ পরবশ সেই কালে হর্ষে করে পান॥ এত নদী রহু দূরে বৃক্ষ সব তার তীরে তপ করে পর উপকারী। নদীর শেষ রস পাঞা মূল দ্বারে আকর্ষিয়া কেন পীয়ে বুঝিতে না পারি॥ নিজাঙ্কুরে পুলকিত পুষ্প হাস্য বিকসিত মধু মিষে বহে অশ্রুধার। বেণুর মানি নিজ জাতি আর্য্যের যেন পুত্র নাতি বৈষ্ণব হইলে আনন্দ বিকার॥ বেণুর তপ জানি যবে সেই তপ করি তবে এ ত অযোগ্য আমরা যোগ্য নারী। যাহা না পাঞা দুঃখে মরি অযোগ্য পীয়ে সহিতে নারি তাহা লাগি তপস্যা বিচারি॥ এতেক বিলাপ করি প্রেমাবেশে গৌরহরি সঙ্গে লঞা স্বরূপ রামরায়। কভু নাচে কভু গায় ভাবাবেশে মূর্চ্ছা যায় এইরূপে রাত্রি দিন যায়॥ স্বরূপ রূপ সনাতন রঘুনাথের শ্রীচরণ শিরে ধরি করি যার আশ। চৈতন্যচরিতামৃত অমৃত হৈতে পরামৃত গায় দীন হীন কৃষ্ণদাস॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি দীন হীন কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |
নদীয়া উদয় গিরি পূর্ণ চন্দ্র গৌর হরি ভণিতা কৃষ্ণদাস কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা, ১৩শ পরিচ্ছেদ, পৃ-৩২১। যথা রাগ। নদীয়া উদয় গিরি পূর্ণ চন্দ্র গৌর হরি কৃপা করি হইল উদয়। পাপ তমো হৈল নাশ ত্রিজগতের উল্লাস জগৎ ভরি হরিধ্বনি হয়॥ সেই কালে নিজালয় উঠিয়া অদ্বৈত রায় নৃত্য করে আনন্দিত মনে। হরি দাসে লঞা সঙ্গে হুঙ্কার কীর্ত্তন রঙ্গে কেনে নাচে কেহ নাহি জানে॥ দেখি উপরাগ শশী শীঘ্র গঙ্গা ঘাটে আসি আনন্দে করিল গঙ্গাস্নান। পাঞা উপরাগ ছলে আপনার মনো বলে ব্রাহ্মণেরে দিল নানা দাম॥ জগত আনন্দ ময় দেখি মনে সবিস্ময় ঠারে ঠোরে কহে হরিদাসঃ। তোমার ঐছন রঙ্গ মোর মন পরসন্ন জানি কিছু কার্য্যে আছে ভাস’॥ আচার্য্য রত্ন, শ্রীনিবাস, হৈল মনে সুখোল্লাস যাই স্নান কৈল গঙ্গাজলে। আনন্দে বিহ্বল মন করে হরি সংকীর্ত্তন নানা দান কৈল মনোবলে॥ এই মত ভক্ত, যতী, যার যেই দেশে স্থিতি তাঁহা তাঁহা পাঞা মনোবলে। নাচে, করে সংকীর্ত্তন, আনন্দে বিহ্বল মন দান করে গ্রহণের ছলে॥ ব্রাহ্মণ, সজ্জন, নারী, নানা দ্রব্যে থালি ভরি আইল সবে যৌতুক লইঞা। যেন কাঁচা সোনা জ্যোতিঃ দেখি বালকের মূর্ত্তি আশীর্ব্বাদ করে সুখ পাঞা॥ সাবিত্রী, গৌরী, সরস্বতী, শচী, রম্ভা, অরুন্ধতী, আর যত দেব নারীগণ। নানা দ্রব্যে পাত্র ভরি ব্রাহ্মণীর বেশ ধরি আসি সবে করে দরশন॥ অন্তরীক্ষে দেবগণ, গন্ধর্ব্ব, ঋষি, চারণ, স্তুতি নৃত্য করে বাদ্য গীত। নর্ত্তক, বাদক, ভাট, নবদ্বীপে যার নাট আসি সবে নাচে পাঞা প্রীত॥ কেবা আসে কেবা যায় কেবা নাচে কেবা গায় সম্ভালিতে নারি কার বোল। খণ্ডিলেক দুঃখ শোক প্রমোদ পূর্ণিত লোক মিশ্র হৈলা আনন্দে বিভোল॥ আচার্য্য রত্ন, শ্রীনিবাস, জগন্নাথ মিশ্র পাশ আসি তারে করি সাবধান। করাইল জাত কর্ম্ম যে আছিল বিধি ধর্ম্ম তবে মিশ্র করে নানা দান॥ যৌতুক পাইল যত ঘরে বা আছিল যত সব ধন বিপ্রে দিল দান। যত নর্ত্তক গায়ন ভাট অকিঞ্চন জন ধন দিয়া কৈল সবার মান॥ শ্রীবাসের ব্রাহ্মণী নাম তাঁর মালিনী আচার্য্য রত্নের পত্নী সঙ্গে। সিন্দুর, হরিদ্রা, জল, খই কলা, নানা ফল, দিয়া পূজে নারীগণ রঙ্গে॥ অদ্বৈত আচার্য্য ভার্য্যা জগৎ বন্দিতা আর্য্যা নাম তাঁর সীতা ঠাকুরাণী। আচার্য্যের আজ্ঞা পাঞা চলে উপহার লঞা দেখিতে বালক শিরোমণি॥ সুবর্ণের কড়ি বউলি রজতপত্র পাশুলি সুবর্ণের অঙ্গদ কঙ্কণ। দু বাহুতে দিব্য শঙ্খ রজতের মল বঙ্ক স্বর্ণ মুদ্রা নানা হারগণ॥ ব্যাঘ্রনখ হেম জড়ি কটি পট্ট সূত্র ডোরি হস্ত পদের যত আভরণ। চিত্র বর্ণ পট্ট শাড়ী ভুনি দোগজা পট্টপাড়ি স্বর্ণ রৌপ্য মুদ্রা বহুধন॥ দুর্ব্বা, ধান্য, গোরোচন হরিদ্রা কুঙ্কুম, চন্দন, মঙ্গল দ্রব্য পাত্র ভরিঞা। বস্ত্র গুপ্ত দোলা চড়ি সঙ্গে লঞা দাসী চেড়ী বস্ত্রালঙ্কারে পেটারি ভরিঞা॥ ভক্ষ্য ভোজ্য উপহার সঙ্গে লৈল বহুভার শচীগৃহে হৈল উপনীত। দেখিয়া বালক ঠাম সাক্ষাৎ গোকুল কান বর্ণ মাত্র দেখে বিপরীত॥ সর্ব্ব অঙ্গ সুনির্ম্মাণ সুবর্ণ প্রতিমা ভান সর্ব্ব অঙ্গ সুলক্ষণ ময়। বালকের দিব্য মূর্ত্তি দেখি পাইল বহু প্রীতি বাত্সল্যেতে দ্রবিল হৃদয়॥ দুর্ব্বা ধান্য দিল শীর্ষে কৈল বহু আশিষে চিরজীবী হও দুই ভাই। ডাকিনী শাকিনী হৈতে শঙ্কা উপজিল চিতে ভয়ে নাম থুইল নিমাই॥ পুত্র মাতা স্নান দিনে দিল বস্ত্র বিভূষণে পুত্র সহ মিশ্রেরে সম্মানি। শচী মিশ্রের পূজা লঞা মনেতে হরিষ হঞা ঘরে আইলা সীতা ঠাকুরাণী॥ ঐছে শচী জগন্নাথ পুত্র পাঞা লক্ষ্মীনাথ পূর্ণ হইল সকল বাঞ্ছিত। ধন ধান্যে ভরে ঘর লোক মান্য কলেবর দিনে দিনে হয় আনন্দিত॥ মিশ্র, বৈষ্ণব শান্ত, অলম্পট, শুদ্ধ, দান্ত, ধন ভোগে নাহি অভিমান। পুত্রের প্রভাবে যত ধন আসি মিলে তত বিষ্ণুপ্রীতে দ্বিজে দেন দান॥ লগ্ন গণি হর্ষমতি নীলাম্বর চক্রবর্ত্তী গুপ্তে কিছু কহিল মিশ্রেরে। মহা পুরুষের চিহ্ন লগ্নে, অঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন দেখি --- এই তারিবে সংসারে॥ ঐছে প্রভু শচী ঘরে কৃপায় কৈল অবতারে যেই ইহা করয়ে শ্রবণ। গৌর প্রভু দয়াময় তারে হয়েন সদয় সেই পায় তাঁহার চরণ॥ পাইয়া মানুষ জন্ম যে না শুনে গৌর গুণ হেন জন্ম তার ব্যর্থ হৈল। পাইয়া অমৃত ধুনী পিয়ে বিষ গর্ত্ত পানী জন্মিয়া সে কেন নাহি মৈল॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ আচার্য্য অদ্বৈত চন্দ্র স্বরূপ, রূপ, রঘুনাথ দাস। ইঁহার সবার শ্রীচরণ শিরে ধরি নিজ ধন জন্মলীলা গাইল কৃষ্ণ দাস॥ এই পদটি জগবন্ধু ভদ্র সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ তরঙ্গিণী” (১৯৩৪), ২ তরঙ্গ, ১ম উচ্ছাস, জন্মলীলা, পদসংখ্যা ১৩, ৩৯-পৃষ্ঠায় এইভাবে রয়েছে। ॥ কল্যাণ॥ নদীয়া উদয় গিরি পূর্ণ চন্দ্র গৌর হরি কৃপা করি হইলা উদয়। পাপতম হৈল নাশ ত্রিজগতের উল্লাস জগ ভরি হরিধ্বনি হয়॥ সেই কালে নিজালয় উঠিয়া অদ্বৈত রায়ে নৃত্য করে আনন্দিত-মনে। হরিদাসে লৈয়া সঙ্গে হুঙ্কার কীর্ত্তন রঙ্গে কেনে নাচে কেহ নাহি জানে॥ দেখি উপরাগ শশী শীঘ্র গঙ্গাঘাটে আসি আনন্দে করিল গঙ্গাস্নান। পাঞা উপরাগ ছলে আপনার মনোবলে ব্রাহ্মণেরে দিল নানা দান॥ জগত আনন্দ ময় দেখি মনে বিস্ময় ঠারে ঠোরে কহে হরিদাস। তোমার ঐছন রঙ্গ মোর মন পরসন্ন জানি কিছু কার্য্যে আছে ভাষ॥ আচার্য্যরত্ন শ্রীবাস হৈল মনে সুখোল্লাস যাই স্নান কৈল গঙ্গাজলে। আনন্দে বিহ্বল মন করে হরিসংকীর্ত্তন নানা দান কৈল মনোবলে॥ ব্রাহ্মণ সজ্জন নারী, নানা রত্নে থালি ভরি আইল সবে যৌতুক লইঞা। যেন কাঁচা সোনা জ্যোতি দেখি বালকের মূর্ত্তি আশীর্ব্বাদ করে সুখ পাঞা॥ সাবিত্রী গৌরী সরস্বতী শচী রম্ভা অরুন্ধতী, আর যত দেবনারীগণ। নানা দ্রব্যে পাত্র ভরি ব্রাহ্মণীর বেশ ধরি আসি সবে করে দরশন॥ অন্তরীক্ষে দেবগণ গন্ধর্ব্ব ঋষি চারণ স্তুতি নৃত্য করে বাদ্য গীত। নর্ত্তক বাদক ভাট নবদ্বীপে যার নাট আসি সবে নাচে পাঞা প্রীত॥ কেবা আসে কেবা যায় কেবা নাচে কেবা গায় সম্ভালিতে নারি কার বোল। খণ্ডিলেক দুঃখ শোক প্রমোদ পূর্ণিত লোক মিশ্র হৈলা আনন্দে বিহ্বোল॥ আচার্য্যরত্ন শ্রীবাস জগন্নাথ মিশ্র পাশ আসি তারে করে সাবধান। করাইল জাতকর্ম্ম যে আছিল বিধি ধর্ম্ম তবে মিশ্র করে নানা দান॥ যৌতুক পাইল যত ঘরে বা আছিল যত সব ধন বিপ্রে কৈল দান। যত নর্ত্তক গায়ন ভাট অকিঞ্চন জন ধন দিয়া কৈল সবার মান॥ শ্রীবাসের ব্রাহ্মণী নাম তাঁর মালিনী আচার্য্যরত্নের পত্নী সঙ্গে। সিন্দুর হরিদ্রা-জল খই কলা নানা ফল দিয়া পূজে নারীগণ রঙ্গে॥ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ আচার্য্য অদ্বৈত চন্দ্র স্বরূপ রূপ রঘুনাথ দাস। ইঁহার সবার শ্রীচরণ শিরে ধরি নিজ ধন জন্মলীলা গাইল কৃষ্ণ দাস॥ . ************************* . কবি কৃষ্ণদাস-এর সূচীতে . . . . কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের-এর সূচীতে . . . মিলনসাগর |