কবি লোচনদাসের লোচন ও লোচনাদাস ভণিতার বৈষ্ণব পদাবলী |
অমিয়া মথিয়া কেবা, নবনী তুলি গো অমৃত মথিয়া কেবা নুনী তুলিল গো ভণিতা লোচন দাস কবি লোচন দাস কথিত ১৪৫৯ শকাব্দে অর্থাৎ ১৫৩৭ খৃঃ লোচনদাস কর্ত্তৃক বিরচিত এবং ১৮৭৮ খৃঃ, রামনারায়ণ বিদ্যারত্ন দ্বারা সম্পাদিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ “চৈতন্য-মঙ্গল”, আদি খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৬৮। ॥ তরজা ছন্দ ধানশী রাগ॥ অমিয়া মথিয়া কেবা, নবনী তুলি গো, তাহাতে গঢ়িল গোরা দেহা। জগৎ ছানিয়া কেবা, রস নিঙ্গাড়িছে গো, এক কৈল সুধই সুলেহা॥ অনুরাগের দধি, প্রেমার সাঁজনা দিয়া, কেবা পাতিয়াছে আঁখি দুটী। তাহাতে অধিক মহু, লহু লহু কথা গো, হাসিয়া বলয়ে গুটী গুটী॥ অখণ্ড পীযূষধারা, কে না আউটিল গো, সোণার বরণ হৈল চিনি। সে চিনি মাড়িয়া কেবা, ফেণি তুলিল গো, হেন বাসো গোরা অঙ্গ খানি॥ বিজুরী বাঁটিয়া কেবা, গা খানি মাজিল গো, চাঁদ মাজিল মুখ খানি। লাবণ্য বাঁটিয়া কেবা, চিত নিরমাণ কৈল, অপরূপ প্রেমার বলনি॥ সকল পূর্ণিমার চাঁদে, বিকল হইয়া কাঁদে, কর পদ পদমের গন্ধে। কুড়িটী নখের ছটা, জগৎ আলা কৈল গো, আঁখি পাইল জনমের আন্ধে॥ এমন বিনোদিয়া গোরা, কোথাও দেখি যে নাই, অপরূপ প্রেমার বিনোদে। পুরুষ প্রকৃতি ভাবে, কাঁদিয়া আকুল গো, নারী কেমনে মন বান্ধে॥ সকল রসের রসে, বিলাস হৃদয় খানি, কে না গঢ়াইল রঙ্গ দিয়া। মদন বাঁটিয়া কেবা, বদন গঢ়িল গো, বিনি ভাবে মো মলু কাঁদিয়া॥ ইন্দ্রের ধনুক আনি, গোরার কপালে গো, কে না দিল চন্দনের রেখা। কুরূপা সুরূপা যত, কুলের কামিনী গো, দুই হাত করি চাহে পাখা॥ রঙ্গের মন্দির খানি, নানা রত্ন দিয়া গো, গঢ়াইল বড় অনুরঙ্গে। লীলায় বিনোদখেলা, ভাবের আবেশে গো, মদনবেদনা ভাবি কাঁদে॥ না চাহে আঁখির কোণে, সদাই সভার মনে, দেখিবারে আঁখি পাখী ধায়। আঁখির পিয়াস দেখি, মুখের লালসা গো, অলসল জর জর গায়॥ কুলবতী কুল ছাড়ে, পঙ্গু ধাওল ভরে, গুণ গায় অসুর পাষণ্ড। ধূলায়ে লোটাঞা কান্দে, কেহ স্থির নাহি বান্ধে, গোরাগুণ অমিয়া অখণ্ড॥ ধাওরে ধাওরে ধাওরে বলি, প্রেমানন্দে কোলাকুলি, কেহ নাচে অট্ট অট্ট হাসে। সুশীলা কুলের বহু, সে বলে সকল ঘাউ, গোরা-অঙ্গ-রূপের বাতাসে॥ নদীয়ানগর-বধূ, হেরি গোরা-মুখবিধু, ঝর ঝর নয়নে সদাই। অনুরাগে বুক ভরে, পুলকিত কলেবরে, মন মাঝে সদাই জাগই॥ যোগেন্দ্র মুনীন্দ্র কিবা, মনে ভাবে রাত্রি দিবা, গোরাগুণে লাগি গেল ধান্ধা । অখিল-ভুবনপতি, ধূলায় লুটাঞা কান্দে, সদাই সোঙরে রাধা রাধা ॥ লখিমী বিলাস ছাড়ি, প্রেমে অভিলাষ কৈল, অনুরাগে রাঙ্গা দুটি আঁখি। রাধার ধেয়ানে হিয়া, বাহির না হয় গো, ওই গোরা তনু তার সাথী॥ দেখরে দেখরে লোক, হেন প্রেম অপরূপ, ত্রিজগৎ-নাথ নাথ হঞা। অকিঞ্চন জন সনে, কি জানি কি ধন মাগে, কিবা সুখে বলয়ে নাচিয়া॥ জয় রে জয় রে জয়, হেন প্রেম রসালয়, ভাঙ্গি বিলায়ল গোরারায়। নির্জীবে জীবন পাইল, পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল, আনন্দে লোচনদাসে গায়॥ এই পদটি আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত শ্রীশ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থের ১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ১৮শ পল্লব, শ্রীগৌরাঙ্গের রূপ প্রভৃতি, ২১২৯ পদসংখ্যক পদ-রূপে দেওয়া রয়েছে। এই পদটি নিমানন্দ দাস সংকলিত পদরসসার পুথির ২২৩৬ সংখ্যক পদ। ॥ কল্যাণী॥ অমিয়া মথিয়া কেবা লবনি তুলিল গো তাহাতে গড়িল গোরা-দেহ। জগত ছানিয়া কেবা রস নিঙ্গারিল গো এক কৈল সুধই সুলেহ॥ অখণ্ড পিযুষ-ধারা কেবা আউটিল গো সোণার বরণে হৈল চিনি। সে চিনি মারিয়া কেবা ফেনি তুলিল গো হেন বাসি গোরা-অঙ্গখানি॥ অনুরাগের দধি প্রেমার সাচনা দিয়া কেনা পাতিয়াছে আঁখি দুটি। তাহাতে অধিক মহু লহু লহু কথাখানি হাসিয়া কহয়ে গুটি গুটি॥ বিজুরী বাটিয়া কেবা গা খানি মাজিল গো চাঁদে মাজিল মুখখানি। লাবণ্য বাটিয়া কেবা চিত নিরমাণ কৈল অপরূপ রূপের বলনি॥ সকল-পূর্ণিমা-চাঁদে বিকল হইয়া কান্দে কর-পদ-পদুমের গন্ধে। কুড়িটী নখের ছটায় জগত আলো কৈল গো আঁখি পাইল জনমের অন্ধে॥ এমন বিনদ রূপ কেথাও না দেখি গো অপরূপ প্রেমের বিনোদে। পুরুষ প্রকৃতি ভাবে কান্দিয়া আকুল গো নারী কেমনে প্রাণ বান্ধে॥ সকল রসের সার বিনদ হৃদয়খানি কেনা গড়িলে রঙ্ দিয়া। মদন বাটিয়া কেবা বদন গড়িল গো বিনি ভাবে মু মলু কান্দিয়া॥ ইন্দ্র ধনুক আনি গোরার কপালে গো কেবা দিল চন্দনের রেখা। পুরুবের স্বরূপ যত কুলের কামিনী গো দু হাত করিতে চাহে পাখা॥ রঙ্গের মন্দির খানি নানা রত্ন দিয়া গো গড়াইল বড় অনুবন্ধে। লীলা-বিনোদ কলা ভাবে অভিলাষি গো মদন-বেদন ভাবি কান্দে॥ নাচায় আঁখির কোণে সদাই সভার মনে দেখিবারে আঁখি-পাখী ধায়। আঁখির তিয়াস দেখি মুখের লালস গো আলসল জর জর গায়॥ কুলবতী কুল ছাড়ে পঙ্গু ধায় উভ-লড়ে গুণ গায় অসুর পাষণ্ড। ধূলায় লোটাইয়া কান্দে, কেহো থির নাহি বান্ধে গোরা-গুণ অমিয়া অখণ্ড॥ ধাওরে ধাওরে বলি প্রেমানন্দে কোলাকুলি কেহো নাচে অট্ট অট্ট হাসে। সুশীলা কুলের বহু সেবনে সকল বাঙ গোরা-গুণ-রূপের বাতাসে॥ নদীয়া নগর-বধূ হেরি গোর-মুখ-বিধু ঝর ঝর নয়ান সদাই। অনুরাগে বুক ভরে পুলকিত কলেবরে মন মাঝে সদাই জাগাই॥ যোগীন্দ্র মুনীন্দ্র কিবা মনে গণে রাত্রি দিবা গোরা-রূপে লাগি গেল ধান্দা। অখিল ভুবন-পতি ধুলায় লোটাঞা কান্দে সদাই সোঙরে রাধা রাধা॥ লখিমী-বিলাস ছাড়ি প্রেম-অভিলাষী গো অনুরাগে রাঙ্গা দুটি আঁখি। রাধার ধেয়ানে হিয়া বাহির না হয় গো এই গোরা তনু তার সাথী॥ দেখ রে দেখ রে লোক হেন প্রেমা অপরূপ ত্রিজগত-নাথ নাথ হৈয়া। অকিঞ্চনের সনে কি নাহ কি ধন মাগে কিনা সুখে বুলয়ে নাচিয়া॥ জয় রে জয় রে জয় হেন প্রেম-রসালগ্ন ভাঙ্গি বিলাইল গোরা রায়। নির্জ্জীবে জীবন পাইল পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল আনন্দে লোচনদাস গায়॥ এই পদটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্রীশচন্দ্র মজুমদার দ্বারা সম্পাদিত, ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত, পদাবলী সংকলন “পদরত্নাবলী” ২৮৫-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ কল্যাণী॥ অমৃত মথিয়া কেনা নুনি তুলিল গো তাহাতে গড়িল গোরা দেহ। জগৎ ছানিয়া কেবা, রস নিঙ্গড়িল গো এক কৈল সুধই সুলেহ॥ অখণ্ড বিজুরি ধারা, কেবা আউটিল গোরা সোনার বরণ হৈল চিনি। সে চিনি মারিয়া কেবা গা খানি মাজিল গো হেমবাসে গোরা অঙ্গখানি॥ অনুরাগের দধি প্রেমার সাচনা দিয়া কেনা পাতিয়াছে আঁখি দুটি। তাহাতে অধিক মহু লহু লহু কথাখানি হাসিয়া কহয়ে গুটিগুটি॥ বিজুরি বাটিয়া কেবা, গা খানি মাজিল গো চাঁদে মাজিল মুখখানি। লাবণী বাটিয়া কেবা, চিত্ত নিরমাণ কৈল অপরূপ রূপের বলনি॥ সকল পূর্ণিমা চান্দে, আকুল হইয়া কান্দে কর পদ পদুমের গন্ধে। কুড়িটী নখের ছটায়, জগৎ আলো কৈল গো আঁখি পাইল জনমের অন্ধে। এমন বিনোদিয়া, কোথায় দেখিয়ে নাই অপরূপ প্রেমের বিনোদে॥ পুরুষ প্রকৃতি ভাবে, কান্দিয়া আকুল গো নারী বা কেমনে প্রাণ বান্ধে॥ সকলের রস সার বিশাল হৃদয়খানি কেনা গড়াইল রঙ্ দিয়া। মদন বাঁটিয়া কেবা, বদন গড়িল গো বিনিভাবে মু মনু কাঁদিয়া॥ ইন্দ্রের ধনুক আনি, গোরার কপালে গো কেবা দিল চন্দনের রেখা। ওরূপ স্বরুপা যত কুলের কামিনী ছিল দুহাতে করিতে চায় পাখা॥ রঙ্গের মন্দিরখানি, নানা রতন দিয়া গড়াইল বড় অনুবন্ধে। লীলা বিনোদ কলা, ভাব অভিলাষি গো মদন বেদন ভাবি কান্দে॥ নাচায় আঁখির কোণে সদাই সবার মনে দেখিবারে আঁখিপাখী ধায়। আঁখির তিয়াস দেখি, মুখের লালস গো অলসল জর জর গায়॥ কুলবতী কুল ছাড়ে, পুঙ্গু ধায় উভরড়ে গুণ গায় অসুর পাষণ্ড। ধূলায় লোটাইয়া কান্দে, কেহ থির নাহি বান্ধে গোরা গুণ অমিয়া অখণ্ড॥ ধাওয়ে ধাওয়ে বলি, প্রেমানন্দে কোলাকুলি কেহ নাচে অট্ট অট্ট হাসে। সুশীলা কুলের বহু, সেবনে সকলে যাই গোরা গুণ রূপের বাতাসে॥ নদীয়া নগর বধু হেরি গোরা মুখবিধু ঝর ঝর নয়ান সদাই। অনুরাগে বুক ভরে, পুলকিত কলেবরে মনমাঝে সদাই জাগাই॥ যোগীন্দ্র মুনীন্দ্র কিবা মনে গুনে রাত্রি দিবা গোরা রূপে নাগি গেল ধান্দা। অখিল ভুবনপতি, ধূলায় লোটাঞা ক্ষিতি সদাই সোঙরে রাধা রাধা॥ লখিমী বিলাস ছাড়ি, প্রেম অভিলাষী গো অনুরাগে রাঙ্গা দুটি আঁখি। রাধার ধেয়ানে হিয়া, বাহির না হয় গো এই গোরা তনু তার সাখি॥ দেখরে দেখরে লোক, হেন প্রেমা অপরূপ ত্রিজগৎনাথ নাথ হৈয়া। অকিঞ্চন সনে কি নাহ কি ধন মাগে কি না সুখে বুলয়ে নাচিয়া॥ জয় রে জয় রে জয়, হেন প্রেম রসালয় ভাঙ্গি বনাইল গোরারায়। নির্জ্জীবে জীবন পাইল, পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল আনন্দে লোচন দাস গায়॥ এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ৭৭-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ কল্যাণী॥ অমৃত মথিয়া কেবা নবনী তুলিল গো তাহাতে গড়িল গোরাদেহ। জগত ছানিয়া কেবা রস নিঙ্গড়িল গো এক কৈল সুধই সুলেহ॥ অখণ্ড পীযূষ ধারা কোথা আউটিল গোরা সোনার বরণ হৈল চিনি। সে চিনি মারিয়া কেবা ফেনি তুলিল গো হেন বাসো গোরা অঙ্গখানি॥ অনুরাগের দধি প্রেমের সাচনা দিয়া কে না পাতিয়াছে আঁখি দুটী। তাহাতে অধিক মহু লহু লহু কথাখানি হাসিয়া কহয়ে গুটি গুটি॥ বিজুরী বাটিয়া কেবা গাখানি মাজিল গো চাঁদ মাজিল মুখখানি। লাবণ্য বাটিয়া কেবা চিত নিরমাণ কৈল অপরূপ রূপের বলনি॥ সকল পূর্ণিমা চাঁদে আকুল হইয়া কাঁদে কর-পদ-পদুমের গন্ধে। এমন বিনোদিয়া কোথায় দেখি য়ে নাই অপরূপ প্রেমের বিনোদে॥ কুড়িটী নখের ছটায় জগত আলো কৈল গো আঁখি পাইল জনমের অন্ধে। পুরুষ প্রকৃতি ভাবে কান্দিয়া আকুল গো নারী বা কেমনে প্রাণ বান্ধে॥ সকলের রস সার বিশাল হৃদয়খানি কে না গড়াইল রঙ্গ দিয়া। রদন বাটিয়া কেবা বদন গড়িল গো বিনি ভাবে সু সলু কাঁদিয়া॥ ইন্দ্রের ধনুক আনি গোরার কপালে গো কেবা দিল চন্দনের রেখা। ওরূপ সুরুপা যত কুলের কামিনী ছিল দু হাতে করিতে চায় পাখা॥ রঙ্গের মন্দির খানি নানা রত্ন দিয়া গো গড়াইল বড় অনুবন্ধে। লীলা বিনোদ কলা ভাবে অভিলাষী গো মদন বেদন ভাবি কাঁদে॥ না চায় আঁখির কোণে সদাই সবার মনে দেখিবারে আঁখি পাখী ধায়। আঁখির তিয়াস দেখি সুখের লালস গো অলসল জর জর গায়॥ কুলবতী কুল ছাড়ে পুঙ্গু ধায় উভরড়ে গুণ গায় অসুর পাষণ্ড। ধূলায় লোটায়ে কাঁদে কেহ থির নাহি বাঁধে গোরাগুণ অমিয়া অখণ্ড॥ ধাওরে ধাওরে বলি প্রেমানন্দে কোলাকুলি কেহ নাচে অট্ট অট্ট হাসে। সুশীলা কুলের বউ সে বলে সকল যাউ গোরা গুণ-রূপের বাতাসে॥ নদীয়ানগর-বধু হেরি গোরামুখবিধু ঝর ঝর নয়ান সদাই। অনুরাগে বুক ভরে পুলকিত কলেবরে মনমাঝে সদাই জাগাই॥ যোগীন্দ্র মুনীন্দ্র কিবা মনে গণে রাত্র দিবা গোরারূপে লাগি গেল ধান্দা। অখিল-ভুবনপতি ধূলায় লোটায় ক্ষিতি সদাই সোঙরে রাধা রাধা॥ লখিমী বিলাস ছাড়ি প্রেম অভিলাষী গো অনুরাগে রাঙ্গা দুটি আঁখি। রাধার ধেয়ানে হিয়া বাহির না হয় গো এই গোরাতনু তার সাখী॥ দেখ রে দেখ রে লোক হেন প্রেমা অপরূপ ত্রিজগতনাথ নাথ হৈয়া। অকিঞ্চনের সনে কি নাই কি ধন মাগে কিনা সুখে বুলয়ে নাচিয়া॥ জয় রে জয় রে জয় হেন প্রেম-রসালয় ভাঙ্গি বিলাইল গোরারায়। নির্জ্জীবে জীবন পাইল পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল আনন্দে লোচনদাস গায়॥ এই পদটি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব-পদলহরী”, ৫৫০-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ কল্যাণী॥ অমৃত মথিয়া কেবা, নুনী তুলিল গো, তাহাতে গড়িল গোরা-দেহ। জগত ছানিয়া কেবা, রস নিঙ্গড়িল গো, এক কৈল সুধই সুলেহ॥ অখণ্ড বিজুরী-ধারা, কেবা আউটিল গোরা, সোণার বরণ হৈল চিনি। সে চিনি মারিয়া কেবা, গা খানি মাজিল গো হেন বা স গোরা-অঙ্গখানি॥ অনুরাগের দধি, প্রেমের সাচনা দিয়া, কেনা পাতিয়াছে আঁখি দুটি। তাহাতে অধিক মহুঁ, লহু লহু কথাখানি, হাসিয়া কহয়ে গুটি গুটি॥ বিজুরী বাটিয়া কেবা, গা খানি মাজিল গো, চাঁদে মাখিল মুখখানি। লাবণ্য বাটিয়া কেবা, চিত্ত নিরমাণ কৈল, অপরূপ রূপের বলনি॥ সকল-পূর্ণিমা-চাঁদে, আকুল হইয়া কান্দে, কর-পদ-পদুমের গন্ধে। কুড়িটী নখের ছটায় জগত আলো কৈল গো আঁখি পাইল জনমের অন্ধে। এমন বিনোদিয়া কোথায় দেখি য়ে নাই অপরূপ প্রেমের বিনোদে॥ পুরুষ প্রকৃতি ভাবে, কান্দিয়া আকুল গো, নারী বা কেমনে প্রাণ বান্ধে॥ সকলের রস সার, বিশাল হৃদয়খানি, কেনা গড়াইল রঙ দিয়া। মদন বাটিয়া কেবা, বদন গড়িল গো, বিনি ভাবে মু মনু কান্দিয়া॥ ইন্দ্রের ধনুক আনি, গোরার কপালে গো, কেবা দিল চন্দনের রেখা। ও রূপস্বরুপা যত, কুলের কামিনী ছিল, দুহাত করিতে চায় পাখা॥ রঙ্গের মন্দির খানি, নানা রতন দিয়া, গড়াইল বড় অনুবন্ধে। লীলা বিনোদ কলা, ভাবে অভিলাষি গো, মদন-বেদন ভাবি কান্দে॥ নাচায় আঁখির কোণে, সদাই সবার মনে, দেখিবারে আঁখি-পাখী ধায়। আঁখির তিয়াস দেখি, সুখের লালস গো, অলসল জর জর গায়॥ কুলবতী কুল ছাড়ে, পুঙ্গু ধায় উভরড়ে, গুণ গায় অসুর পাষণ্ড। ধূলায় লোটাইয়া কাঁদে, কেহ থির নাহি বান্ধে, গোরা-গুণ অমিয়া অখণ্ড॥ ধাওয়ে ধাওরে বলি, প্রেমানন্দে কোলাকুলি, কেহ নাচে অট্ট অট্ট হাসে। সুশীলা কুলের বহু, সেবনে সকল যাউ, গোরা-গুণ-রূপের বাতাসে॥ নদীয়া নগর-বধূ, হেরি গোরা-মুখ-বিধু, ঝর ঝর নয়ান সদাই। অনুরাগে বুক ভরে, পুলকিত কলেবরে, মন মাঝে সদাই জাগাই॥ যোগীন্দ্র মুনীন্দর কিবা, মনে গুণে রাত্রি দিবা, গোরা-রূপে লাগি গেল ধান্দা। অখিল ভুবনপতি, ধূলায় লোটাঞা ক্ষিতি, সদাই সোঙরে রাধা রাধা॥ লখিমী বিলাস ছাড়ি, প্রেম-অভিলাষী গো, অনুরাগে রাঙ্গা দুটি আঁখি। রাধার ধেয়ানে হিয়া, বাহির ন হয় গো, এই গোরা-তনু তার সাথী॥ দেখ রে দেখ রে লোক, প্রেমা অপরূপ, ত্রিজগত-নাথ নাথ হৈয়া। আকিঞ্চনের সনে, কি নাহ কি ধন মাগে, কিনা সুখে বুলয়ে নাচিয়া॥ জয় রে জয় রে জয়, হেন প্রেম-রসালয়, ভাঙ্গি বিলাইল গোরারায়। নির্জ্জীবে জীবন পাইল, পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল, আনন্দে লোচনদাস গায়॥ এই পদটি ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত, মহানামশুক নবদ্বীপচন্দ্র ঘোষ সম্পাদিত পদাবলী সংকলন শ্রীশ্রীগৌরপদরত্নমালা, ১৪২-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ ভজন - দাসপাঁড়িয়া॥ অমৃত মথিয়া কেবা, নবনী তুলিল গো, তাহাতে গড়িল গোরা দেহ। জগত ছানিয়া কেবা, রস নিঙ্গড়িল গো, এক কৈল সুধই সুলেহ॥ অখণ্ড পীযূষ ধারা, কেবা আউটিল গোরা, সোণার বরণ হৈল চিনি। সে চিনি মারিয়া কেবা, ফেণি তুলিল গো, হেস বাসোঁ গোরা অঙ্গ খানি॥ অনুরাগের দধি, প্রেমের সাচনা দিয়া, কে না পাতিয়াছে আঁখি দুটী। তাহাতে অধিক মহু, লহু লহু কথাখানি, হাসিয়া কহয়ে গুটী গুটী॥ বিজুরী বাটিয়া কেবা, গা খানি মাজিল গো, চাঁদে মাখিল মুখখানি। লাবণ্য বাটিয়া কেবা, চিত নিরমাণ কৈল, অপরূপ রূপের বলনি॥ সকল পূর্ণিমা চাঁদে, বিকল হইয়া কাঁদে, কর-পদ পদুমের গন্ধে। এমন বিনোদিয়া কোথায় দেখি য়ে নাই অপরূপ প্রেমের বিনোদে॥ কুড়িটী নখের ছটায়, জগত আলো কৈল গো, আঁখি পাইল জনমের অন্ধে। পুরুষ প্রকৃতিভাবে, কান্দিয়া আকুল গো নারী বা কেমনে প্রাণ বান্ধে॥ জয়রে জয়রে জয়, হেন প্রেম রসালয়, ভাঙ্গি বিলাইল গোরা রায়। নির্জীবে জীবন পাইল, পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল, আনন্দে লোচনদাস গায়॥ এই পদটি ১৯৩৭-৫৩সালের মধ্যে প্রকাশিত, নবদ্বীপচন্দ্র ব্রজবাসী ও খগেন্দ্রনাথ মিত্রর মহাজন পদাবলী “শ্রীপদামৃতমাধুরী” ৪র্থ খণ্ড, ৪৪১-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে। ॥ সুহই - মধ্যম দশকুশী॥ অমিয়া মথিয়া কেবা লবনি তুলিল গো তাহাতে গড়িল গোরা-দেহ। জগত ছানিয়া কেবা রস নিঙ্গারিল গো এক কৈল সুধই সুলেহ॥ অখণ্ড পিযুষ-ধারা কেবা আউটিল গো সোণার বরণে হৈল চিনি। সে চিনি মারিয়া কেবা ফেনি তুলিল গো হেন বাসি গোরা-অঙ্গখানি॥ অনুরাগের দধি প্রেমার সাচনা দিয়া কেনা পাতিয়াছে আঁখি দুটি। তাহাতে অধিক মহু লহু লহু কথাখানি হাসিয়া কহয়ে গুটি গুটি॥ বিজুরী বাটিয়া কেবা গাখানি মাজিল গো চাঁদে মাজিল মুখখানি। লাবণ্য বাটিয়া কেবা চিত নিরমাণ কৈল অপরূপ রূপের বলনি॥ সকল-পূর্ণিমা-চাঁদে বিকল হইয়া কান্দে কর-পদ-পদুমের গন্ধে। কুড়িটি নখের ছটায় জগত আলো কৈল গো আঁখি পাইল জনমের অন্ধে॥ এমন বিনদরূপ কেথাও না দেখি গো অপরূপ প্রেমের বিনোদে। পুরুষ প্রকৃতি ভাবে কান্দিয়া আকুল গো নারী কেমনে প্রাণ বান্ধে॥ সকল রসের সার বিনদ হৃদয়খানি কে না গড়িলে রঙ্ দিয়া। মদন বাটিয়া কেবা বদন গড়িল গো বিনি ভাবে মু মলুঁ কান্দিয়া॥ ইন্দ্রধনুক আনি গোরার কপালে গো কেবা দিল চন্দনের রেখা। পুরুবের স্বরূপ যত কুলের কামিনী গো দু হাত করিতে চাহে পাখা॥ রঙ্গের মন্দির খানি নানা রত্ন দিয়া গো গড়াইল বড় অনুবন্ধে। লীলা-বিনোদ কলা ভাবে অভিলাষি গো মদন-বেদন ভাবি কান্দে॥ নাচায় আঁখির কোণে সদাই সভার মনে দেখিবারে আঁখি-পাখী ধায়। আঁখির তিয়াস দেখি মুখের লালস গো আলসল জরজর গায়॥ কুলবতী কুল ছাড়ে পঙ্গু ধায় উভ লড়ে গুণ গায় অসুর পাষণ্ড। ধূলায় লোটাইয়া কান্দে কেহো থির নাহি বান্ধে গোরা-গুণ অমিয়া অখণ্ড॥ ধাওরে ধাওরে বলি প্রেমানন্দে কোলাকুলি কেহো নাচে অট্ট অট্ট হাসে। সুশীলা কুলের বহু সেবনে সকল যাঙ গোরা-গুণ-রূপের বাতাসে॥ নদীয়া নগর-বধূ হেরি গোর-মুখ-বিধু ঝর ঝর নয়ান সদাই। অনুরাগে বুক ভরে পুলকিত কলেবরে মনমাঝে সদাই জাগাই॥ যোগীন্দ্র মুনীন্দ্র কিবা মনে গণে রাত্রি দিবা গোরা-রূপে লাগি গেল ধান্দা। অখিল ভুবন-পতি ধুলায় লোটাঞা কান্দে সদাই সোঙরে রাধা রাধা॥ লখিমী-বিলাস ছাড়ি প্রেম-অভিলাষী গো অনুরাগে রাঙ্গা দুটি আঁখি। রাধার ধেয়ানে হিয়া বাহির না হয় গো এই গোরা তনু তার সাখী॥ দেখ রে দেখ রে লোক হেন প্রেমা অপরূপ ত্রিজগত-নাথ নাথ হৈয়া। অকিঞ্চনের সনে কি লাগি কি ধন মাগে কি না সুখে বুলয়ে নাচিয়া॥ জয় রে জয় রে জয় হেন প্রেম-রসালয় ভাঙ্গি বিলাইল গোরা রায়। নির্জ্জীবে জীবন পাইল পঙ্গু গিরি ডিঙ্গাইল আনন্দে লোচন দাস গায়॥ . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |