কবি লোচনদাসের লোচন ও লোচনাদাস ভণিতার বৈষ্ণব পদাবলী
*
শচীর গোরা কামের কোড়া দেখলাম ঘাটের কুলে
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১১৯-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

শচীর গোরা, কামের কোড়া, দেখলাম ঘাটের কুলে।
চাঁচর চুলে, বেড়িয়া ভালে, নব-মালতীর মালে॥
কাঁচা সোণা, লাগে ঘৃণা, রূপের তুলনা দিতে।
(এমন) চিতচোরা, মনোহরা, নাইকো অবনীতে॥
কি আর বলিছ গো সই (তোমায়) বুঝাব কি?
(ছাদে) স্নানে যেতে, সখীর সাথে, গৌর দেখেছি॥
(সে) রূপ দেখি, দুটী আঁখি, ফিরাইতে নারি।
পুঃ তারে, দেখ্ বার তরে, কতো সাধ করি॥
কি আর বলিছ গো সই তুমি ত আছ ভাল।
আমার মরমের কথা মরমেই রহিল॥
জাগিতে ঘুমাইতে সদা গৌর জাগে মনে।
লোচন বলে, যে দেখেছে, সেই উহা জানে॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এক নাগরী বলে দিদি নাইতে যখন যাই
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১১৯-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

এক নাগরী বলে দিদি নাইতে যখন যাই।
ঘোম্ টা খুলে বদন তুলে দেখেছিলাম তাই॥
রূপ দেখে, চম্ কে উঠে, ঘরকে এলাম ধেয়ে।
দুটী নয়ন, বাঁধা রইল, গৌরপানে চেয়ে॥
গা থর থর, করে আমার, অঙ্গ সকল কাঁপে।
নাসার নোলক, ঝলক দিয়ে, মনের ভিতর ঝাঁপে॥
জলের ঘাট, আলো করেছে, গৌর-অঙ্গের ছটা।
রূপ দেখিতে, হুড় পড়েছে, নব যুবতীর ঘটা॥
সাধ কৈরে, দেখ্ তে গেলাম, এমন কেবা জানে।
অনুরাগের ডুরি দিয়ে, প্রাণকে ধৈরে টানে॥
উড়ু উড়ু করে প্রাণ, রইতে নারি ঘরে।
গৌরচাঁদকে না দেখিলে, প্রাণ সে কেমন করে॥
চাইলে নয়ন বাঁধা রবে, মনচোরা তার রূপ।
হাস্যবয়ান, রাঙ্গা নয়ান, এই না রসের কূপ॥
চাইলে মেনে, মরবি ক্ষেপি, কুল সে রবে নাই।
কুল শীল কাখবি যদি, থাক্গা বিরল ঠাই॥
কুল খোওয়াবি, বাউরি হবি, লাগ্ বে রসের ঢেউ।
লোচন বলে, রসিক হলো, বুঝতে পারে কেউ॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
গোরারূপ রসের কূপ সহজেই এত
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১১৯-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

গোরারূপ, রসের কূপ, সহজেই এত।
করে কলা, রসের ছলা, তবে হয় কত॥
যদি বাঁধে, বিনোদ ছাঁদে, চাঁচর চিকণ চুল।
তবে সতী, কুলবতী, রাখ্ তে নারে কুল॥
যাঁরে দেখে, নয়ন বাঁকে, তার কি রহে মান।
যদি যাচে, তবে কি বাঁচে, রসবতীর প্রাণ॥
গলায় মালা, বাহু দোলা, দিয়ে চলে যায়।
কামের রতি, ছাড়ি পতি, ভজে গোরার পায়॥
বুক ভরা, গোরা মোরা, দেখ্ লে ভরে বুক।
কোলে হেন, করি যেন, সুখের উপর সুখ॥
হাসির ধারা, সুধাপারা, শীতল করা প্রাণ।
রসবশ (সর্ব্বস্ব) সরবস, সাধের স্বরূপখান॥
শুন প্রাণ-প্রিয়সথি, কি কহিবো আর।
লোচন বলে, এবার আমি, গোরা করেছি সার॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
গৌর-রতন করে যতন রাখ্ ব হিয়ার মাঝে
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১১৯-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

গৌর-রতন করে যতন রাখ্ ব হিয়ার মাঝে।
গৌর-বরণ, ভূষণ পর্ বো, যেখানে যেমন সাজে॥
গৌরবরণ, ফুলের ঝাঁপায়, লোটন বাঁধবো চুলে।
গৌর বৈলে, গৌরব কৈরে, পথে যাব চ’লে॥
গৌরবরণ গোরোচনায় গৌর লিখবো গায়।
গৌর বৈলে, রূপ যৌবন, সমর্পিবো পায়॥
কুলের মূল, উপাড়িয়ে, ভাসাব গঙ্গার জলে।
লাজের মুখে আগুন দিয়া, বেড়াবো গৌর বলে॥
গৌরচাঁদ রসের ফাঁদ পেতেছে ঘরে ঘরে।
সতী, পতি ছাড়ি, দেহ দিতে সাধ করে॥
(তোমরা) কিছুই বলো, রূপসাগরে, সকলি গেল ভেসে।
লোচন বলে কুতূহলে দেখ্ বে বৈসে বৈসে॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নয়নে নয়ন দিয়ে কি গুণ করিল প্রিয়ে
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১২০-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

নয়নে নয়ন দিয়ে কি গুণ করিল প্রিয়ে।
( ওঝা-রাজ গুণীর শিরোমণি॥ ধ্রু॥ )
দুটি আঁখি ছল্ ছলায়ে এক নাগরী বলে।
গৌরলেহের কি বা জানি, রসে অঙ্গ ঢলে॥
অনেক দিনের সাধ ছিল মোর, অধররস পিতে।
মনের দুখে, ভাব্ না করে, শুয়েছিলাম রেতে॥
যখন আমি মাঝ-নিশিতে, ঘুমে হয়েছি ভোরা।
তখন আমি দেখ্ ছি যেন, বুকের উপর গোরা॥
নবকিশোর, গাথানি তার, কাঁচা ননী হেন।
ভুজলতায়, বেঁধে কথা কয়, ছেড়ে দিব কেন॥
হেন মতে, মন ডুবিয়ে, ঠেক্ লাম সুখের দুখে।
বদন ঢলে, অধর-রস, পড়লো আমার মুখে॥
অধররস খেয়ে তাপিত প্রাণ যে শীতল হলো।
বিলাসান্তে, সময় মতে, নিশি পোহাইলো॥
হায় হায় হায় বলি, উঠ্ লাম চমকিয়ে।
হায় রে বিধি, রসের নিধি, নিলি কেন দিয়ে॥
প্রাণ ছন্ ছন্ করে আমার, মন ছন্ ছন্ করে।
আধ-কপালে, মাথার বিষে রৈতে নারি ঘরে॥
লোচন বলে, কাঁদিস্ কেনে, ঢোক্ আপনার ঘর।
হিয়ার মাঝে, গোরাচাঁদে, মন ডুবায়ে ধর॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হেঁই গো হেঁই গো গোরা কেনে যায় পাসরা
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১২০-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

হেঁই গো হেঁই গো গোরা কেনে যায় পাসরা।
গোরারূপে, মন মজিলো, বাউল হৈল পারা॥
নয়নে লাগিল গোরা কি করিব সই।
গুপ্ত কথা, ব্যক্ত হলো, দিন দুই চার বৈ॥
শয়নে স্বপনে গোরা, হিয়ার উপরে।
নিজ পতি কোরে থাকি, কি আর বলো মোরে॥
তৈল খুরি, লৈয়া যদি সিনান্ বারে যাই।
গোরারূপ মনে পড়ে, পড়ি সেই ঠাঁই॥
. . .
গা থর্ থক্ অঙ্গ কাঁপে, কিছু বলতে নারি॥
নিশি দিশি হিয়ায় জাগে, কি বল্ ব তা বলে।
লোচন বলে, বল্ গা কেনে পা গ্যালো পিছ্ লে॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এক নাগরী হেসে বলে শুন্ গো মরম সই
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১২০-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

এক নাগরী, হেসে বলে, শুন্ গো মরম সই।
মরম্ জানিস্ , রসিক বটিস্ , তেঁই সে তোরে কই॥
তো বিনে গো, রসের কথা, কইবো কার ঠাঁই।
এমন রসের, মানুষ মোরা, কভু দেখি নাই॥
কিবা জলদ, ঝলক মতি, নাসায় নোলক দোলে।
স্থির হৈতে নারি গোরার হাসির হিল্লোলে॥
হঠাত্কারে দেখ্ তে গেলাম, এমন কে তা জানে।
অনুরাগের ডুরি দিয়ে, মন্ কে ধৈরে টানে॥
অঙ্গ ঘটা, রূপের ছটা, পথে চলে যায়।
গৌররূপের ঠমক দেখে, চমক্ লাগে গায়॥
গা থর্ থর্ করে মোর, অঙ্গ সকল কাঁপে।
নাসার নোলক রূপের ছটা, হিয়ার মাঝে ঝাঁপে॥
আড় নয়নে ঘোমটা দিয়া, দেকেছিলাম চেয়ে।
রসের নেটো, নেচে যায়, নদের বাজার দিয়ে॥
তোরা খুব্ খুব্ রসে ডুব্ ডুব্ , রসকাঙ্গালি মোরা।
রসের মালা গলায় দিয়ে দেশান্তরি হবো॥
এদেশে তো, কপাট দিলে, সে দেশ তো পাই।
বাহির গাঁয়ে, গলায় দিয়ে দেশান্তরি হবো॥
সাপের মণি, বার্ করিলে হারাই যদি মণি।
মণি হারাইলে তবে, না বাঁচয়ে ফণী॥
যতন করে রতন রাখা, বাহির করা নয়।
প্রাণের ধনকে, বার করিলে, চৌকি দিতে হয়॥
লোচন বলে ভাবিস্ কেন, ঢোক আপনার ঘর।
হিয়ার মাঝে গোরাচাঁদে মন ডুবায়ে ধর॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমার গৌরাঙ্গ নাচে হেমকিরণিয়া
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১২১-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

আমার গৌরাঙ্গ নাচে হেমকিরণিয়া।
হেমের গাছে প্রেমের রস, পড়্ ছে চুয়াইয়া॥
ঠার ঠাম্ কা, কাঁকাল বাঁকা, মধুরমাখা হাসি।
রূপ দেখিতে জাতিকুল, হারাই হারাই বাসি॥
অদভুত নাটের ঠাম গোরা-অঙ্গের ছটা।
রূপ দেখিতে হুড় পড়েছে, নব-যুবতীর ঘটা॥
মন মজিল কুল ডুবিল, বৈছে প্রেমের বান।
লোচন বলে মদন ভোলে, আর কি আছে আন॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কিবা সে লাবণ্য রূপ বয়সে উত্থান
ভণিতা লোচন দাস
কবি লোচন দাস
এই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১২১-পৃষ্ঠায় এইরূপে
দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

কিবা সে লাবণ্য রূপ বয়সে উত্থান।
চাহিতে গৌরাঙ্গ পানে পিছলে নয়ান॥
প্রতি অঙ্গ নিরুপম কি দিব তুলনা।
হিয়ার আরতি মাত্র করিয়ে যোটনা॥
কেশের লাবণ্য দেখে না রহে পরাণ।
ভুরু-ধনু কামের উন্নত নাসা বাণ॥
লোল দীঘল আঁখি যার পানে চায়।
না দিয়ে নিছনি কুল কেবা ঘরে যায়॥
জলের ভিতর ডুবি তবু দেখি গোরা।
ত্রিভুবনময় গোরাচাঁদ হৈল পারা॥
চিতের আকুতে যদি মুদি দুটি আঁখি।
হিয়ার মাঝারে তবু গৌররূপ দেখি॥
করিশুণ্ড জিনি কিয়ে বাহুর হেলা দোলা।
হিয়ার দোলনে দোলে মালতীর মালা॥
মনে করি নৈদে যুড়ি এ বুক বিছাই।
তাহার উপরে আমি গৌরাঙ্গ নাচাই॥
মনে করি নৈদে যুড়ি হৌক মোর হিয়া।
বেড়ান গৌরাঙ্গ তাতে পদ পসারিয়া॥
বলুক বলুক সকল সোকে গৌরকলঙ্কিনী।
দিক্ যারা কুল রাখে কুলের কামিনী॥
নদীয়ানগরে গৌরচাঁদ চলে য়ায়।
চঞ্চল নয়ন করি দুই দিকে চায়॥
নাগরীদের নেত্র যেন ভ্রমরার পাঁতি।
গৌর-মুখ-পদ্মমধু পিউ মাতি মাতি॥
পদ্মমধু পানে তাদের দেখিয়া উল্লাস।
গৌরগুণ গায় সুখে এ লোচন দাস॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এমন সুন্দর গোরা কোথা না আছিল গো
এহেন সুন্দর গোরা কোথা বা আছিল গো
ভণিতা লোচন
কবি লোচন দাস
এই পদটি চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা সমস্ত জীবন ধরে, ১৮৭০ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত এবং তাঁর পুত্র
রাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা ১৯২২ সালে প্রকাশিত “শ্রীশ্রীপদামৃতসিন্ধু”, ১১৪-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া
রয়েছে।

শ্রীকৃষ্ণের রূপ।

এমন সুন্দর গোরা কোথা না আছিল গো, কে আনিল নদীয়া নগরে।
নিরখিতে গৌররূপ পরাণে পশিল গো, তনু কাঁপে পুলকের ভরে॥
ভাবের আবেশে আলুয়া পড়িছে গো, প্রেমে ছল ছল দুটী আঁখি।
দেখিতে দেখিতে মনে এমনি করিছে গো, পরাণপুতলি করি রাখি॥
বিধি কি আনন্দনিধি মথি নিরমিল গো, কিবা সে গড়ল কারিগরে।
পিরিতের কুন্দে তুলি উহারে কুন্দিল গো, নয়ন কুন্দিল কামশরে॥
গোকুলে নন্দের কানু বঙ্কিম আছিল গো, কালিয়া কুটিল তার হিয়া।
রাইর পিরিতে তারে সমান করিল গো, সেই এই বিহরে নদীয়া॥
ভাবিতে রাধার রূপ গোরা তনু হইল গো, পূরবে হইল প্রেম দানে।
ইহার চরিতে যার চিত না ডুবিল গো, ধিক্ ধিক্ তার পরাণে॥
মনের মরম কথা কাহারে কহিব গো, চিত যেন চুরি কৈল চোরে।
লোচন পিয়াসে মরে ওরূপ দেখিতে গো, বিধাতা বঞ্চিত ভেল মোরে॥

ই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন
“শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, (প্রথম সংস্করণ ১৯০২), ১২১-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ যথারাগ॥

এহেন সুন্দর গোরা                    কোথা বা আছিল গো
কে আনিল নদীয়া নগরে।
নিরখিতে গৌররূপ                        হৃদয়ে পশিল গো
তনু কাঁপে পুলকের ভরে॥
ভাবের আবেশে ওলা                   এলায়ে পড়েছে গো
প্রেমে ছল ছল দুটি আঁখি।
দেখিতে দেখিতে আমার                  হেন মনে হয় গো
পরাণপুতলি করি রাখি॥
বিধি কি আনন্দনিধি                      মথি নিরমিল গো
কিবা সে গড়িল কারিকরে।
পীরিতি কুঁদে কুঁদে                        উহারে কুঁদিল গো
(উহার) নয়ান কুঁদিল কামশরে॥
গোকুল-নেটোর কাণ                      বঙ্কিম আছিল গো
কালিয়ে কুটিল যার হিয়া।
রাধার পীরিতি উহায়                     সমান করেছে গো
সেই এই বিহরে নদীয়া॥
মনের মরম কথা                        কাহারে কহিব গো
চিত যেন চুরি কৈল চোরে।
লোচন পিয়াসে মরে                    ও রূপ দেখিয়া গো
বিধাতা বঞ্চিত কৈল মোরে॥

ই পদটি ১৯২০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে প্রকাশিত, মুনশী শ্রীআবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ
সংকলিত, “বাঙ্গালা প্রাচীন পুথির বিবরণ”, ২য় খণ্ড, ১ম সংখ্যা, ১১-পৃষ্ঠায় এইরূপে দেওয়া রয়েছে।

এমন সুন্দর গোরা                   কোথা না আছিল গো
. . . এই পংক্তিটি রড়া যাচ্ছে না . . .
নিরখিতে গোররূপ                       পরাণে পশিল গো
তনু কাঁপে পুলকের ভরে॥
ভাবের আবেশে ও না                  আলুয়া পড়িছে গো
প্রেমের ছল ছল দুটি আঁখি।
দেখিতে দেখিতে মনে                      এমতি হইছে গো
পরাণ পুতলি দিয়া রাখি॥
বিধি কি আনন্দনিধি                      মথি নিরমিল গো
কে বা সে গঠিল কারিকরে।
পিরিতি কুন্দের কুন্দে                   তাহারে কুন্দিল গো
নয়ান কুন্দিল কামসরে॥
গোকুলে নন্দের কান                      বঙ্কিম আছিল গো
কালিয়া কুটিল তার হিয়া।
রাইর পিরিতে তারে                       সমান করিল গো
সেই এই বিহরে নদীয়া॥
ভাবিতে রাধার তনু                       গোরারূপ হল গো
সরল হইল প্রেমদানে।
ইহার চরিতে যার                         চিত না দ্রবিল গো
ধিক্ ধিক্ তাহার জীবনে॥
মনের মরম কথা                          কাহারে কহিব গো
চিত জেন চুরি কৈল চোরে।
লোচন পিয়াসে মরে                      ও রূপ দেখিয়া গো
বিধাতা বঞ্চিত কৈল মোরে॥

.        *************************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর