কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কবিতা
*
ওরে মন-পাখী চাতুরি করবে বল কত আর
অধ্যাত্ম গান
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
সুকুমার সেন সম্পাদিত “বাংলা কবিতা সমুচ্চয়” ১ম খণ্ড থেকে নেওয়া |


ওরে মন-পাখী চাতুরি করবে বল কত আর
বিধাতার প্রেমের জালে পড়বে নাকি একবার |
সাবধানে ঘুরে ফিরে,
থাক বাহিরে বাহিরে,
.     জাল কেটে পালাও উড়ে
.                   ফাঁকি দিয়ে বার বার |

তোমায় একদিন ফাঁদে পড়তে হবে,
সব চালাকি ঘুচে যাবে,
.     অন্নজল বিনে যখন
.                    করবে দুঃখে হাহাকার |
যেদিন ব্যাধের বাণে ;
কাল সাপের দংশনে
.     জ্বলিয়ে মরিবে প্রাণে
.                     দেখবে চক্ষে অন্ধকার |
তখন   আপনা হইতে পোষ মানিবে
তাড়াইলেও নাহি যাবে
.     পিঞ্জরে বসে হরির গুণ
.                     গাইবে নিরন্তর ||

.                 ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সুরাদলন-সংগ্রামে সাজ বন্ধুগণ
সামাজিক-সঙ্গীত
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ মল্লার, আড়াঠেকা॥

সুরাদলন-সংগ্রামে সাজ বন্ধুগণ |
কর চূর্ণ মদ্যপাত্র, পাপ শুণ্ডিকাভবন ||
প্রচণ্ড অসুরদল,                      প্রচারি সুরা গরল,
মহা পাপে ডুবাইল, ধর্ম্ম নীতি জ্ঞান ধন |

কাঁদিছে বিধবা কত,                   হইয়ে সর্ব্বস্ব হত,
শুনিলে বিদরে প্রাণ ঝরে দুনয়ন |
ব্যভিচার কুদৃষ্টান্তে,                 প্রবল কলঙ্ক স্রোতে,
করিতেছে সর্ব্বনাশ ঘোর অনিষ্ট সাধন ||

.                        ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আহা কি অপরূপ হেরি নয়নে
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ ঝিঝিট, যৎ॥

আহা কি অপরূপ হেরি নয়নে |
মিলে বন্ধুগণে,---
প্রীতি-প্রফুল্ল-হৃদয়ে,                        ভক্তি-কমল ল’য়ে
করেন অঞ্জলি দান বিভুচরণে |
তরুণ ভানুকিরণে,                         প্রভাত সমীরণে,
মেদিনী অনুরঞ্জিত নবজীবনে :
প্রকৃতি মধুর স্বরে,                       ব্রহ্মনাম গান করে,
আনন্দে মগন হ’য়ে পিতার প্রেমে |
উত্সব-মন্দিরে আজ,                    বিশ্বপতি ধর্ম্মরাজ,
করেন বিরাজ রাজসিংহাসনে ;
মরি কি সুন্দর শোভা,               পুণ্যময়ের পুণ্য-প্রভা,
কৃতার্থ হইল প্রাণ দরশনে |
স্নেহময়ী মাতা হ’য়ে,                    পুত্র কন্যাগণে ল’য়ে
চলেছেন আনন্দময়ী আনন্দ ধামে,
নিমন্ত্রণ করি সবে,                     এনেছেন মহোত্সবে,
বিতরিতে প্রেম-অন্ন ক্ষুধিত জনে ||

.                        ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
যদি এক বিন্দু প্রেম পাই
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ ঝিঝিট, মধ্যমান॥

যদি এক বিন্দু প্রেম পাই,
তবে কি তোমার চরণ ছেড়ে আর কোথা যাই ?
থাকি চিরদিন,                                 তোমার অধীন,
ধন-মান-সম্ভ্রম কিছু নাই চাই |
সকলি ত্যজিতে,                              অসাধ্য সাধিতে,
পারি তব প্রসাদে কিছু না ডরাই |
সংসার বন্ধন,                                  করিয়ে ছেদন,
হ’য়ে প্রেমে মগন তব গুণ গাই ||

.                        ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ধর ধৈর্য্য ধর, ক্রন্দন সম্বর, আশা কর
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

.                        ॥ বিভাস, একতালা॥

ধর ধৈর্য্য ধর, ক্রন্দন সম্বর, আশা কর, নিরাশ হইওনা হইওনা |
পাপীর ক্রন্দনধ্বনি, শুনিবেন জননী, চিরদিন দুঃখ রবেনা রবেনা ||
ল’য়ে প্রেমস্রোতে, বসায়ে আদরে, ভাসাইলে সবে আনন্দের নীরে,
মধুর বচনে, তুষিবে যতনে, ক্ষান্ত হ’ও—খেদ ক’রনা ক’রনা |
.      মুছাইবে চক্ষের জল,     তাপিত হৃদয় করিবে শীতল ;
.           করিবে মঙ্গল, স্থান দিয়ে শান্তি নিকেতনে |
শিশুর ক্রন্দনরব, মায়ে কি কখন, নির্দ্দয় হ’য়ে পারেন করিতে শ্রবণ,
লইবেন কোলে, পাপী পুত্র বলে, স্থির হও আর কেঁদনা কেঁদনা |
.    তাঁর স্নেহের আর নাই উপমা,        অসীম তাঁর করুণা,
.        নির্ভর কর তাঁহাতে,  অধীর হওনা হওনা |
দেখরে দৃষ্টান্ত, তোমার মত কত, শোকে তাপে যারা ছিল অভিভূত,
.                চরণ ছায়ায়, পেয়েছে আশ্রয়,
.              করিছে নির্ভয়ে সত্যের জয় ঘোষণা ||

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তোমারি করণায় নাথ
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ ভৈরবী, আড়াঠেকা॥

তোমারি করুণায় নাথ,                 সকলি হইতে পারে,
অলঙ্ঘ্য পর্ব্বত সম, বিঘ্ন বাধা যায় দূরে |
অবিশ্বাসীর অন্তর,                          সঙ্কুচিত নিরন্তর,
তোমার না করে নির্ভর, সর্ব্বদা ভাবিয়ে মরে |
তুমি মঙ্গল নিধান,                       করিছ মঙ্গল বিধান,
তবে কেন বৃথা মরি, ফলাফল চিন্তা ক’রে |
ধন্য তব করুণা,                       পাপীকেও করনা ঘৃণা,
নির্ব্বিশেষে সমভাবে, সবে আলিঙ্গন করে ||

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওরে মন পাখি চাতুরী করবে বল কত আর
বাউল-সঙ্গীত
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।


ওরে মন পাখি চাতুরী করবে বল কত আর |
বিধাতার প্রেমের জালে, পড়্ বে নাকি একবার ||
সাবধানে ঘুরে ফিরে,                         থাক বাহিরে বাহিরে,
জাল কেটে পলাও উড়ে, ফাঁকি দিয়ে বার বার |
তোমায় একদিন ফাঁদে পড়তে হবে, সব চালাকি ঘুচে যাবে,
অন্ন জল বিনে যখন ক’রবে দুঃখে হাহাকার ||
যে দিন ব্যাধের বাণে,.                          কাল সাপের দংশনে,
জ্বলিয়ে মরিবে প্রাণে, দেখবে চক্ষে অন্ধকার |
তখন আপনা হইতে পোষ মানিবে, তাড়াইলেও নাহি যাবে,
পিঞ্জরে বসে হরির গুণ গাইবে নিরন্তর ||

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মন না হলে সোজা, ফকির সাজা
বাউল-সঙ্গীত
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।  


মন না হলে সোজা, ফকির সাজা, কেবল রে ভাই বিড়ম্বনা |
ফকিরের সজ্জা ধরে, নৃত্য করে, করছ ধর্ম্মের আলোচনা ||
তুমি যে আপন কাজে, ঠেক নিজে, পরকে কি বুঝাও বলনা ;
তুমি যে কত গান গাও, পরকে বুঝাও, নিজে কেন তা বুঝনা |
নিজে না বুঝিলে পরে, অন্য পরে, বুঝবে কেন তা ভাবনা ||
কাঙ্গাল কয় যুক্তি ধর,  ভাল কর, ভাল হওরে সর্ব্বজনা,
নিজে না হলে ভাল, পরকে ভাল, কর্ব্বে ভাব তা হবেনা ||

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জয় জ্যোতির্ম্ময় জগদাশ্রয় জীবগণ জীবন
ব্রহ্ম-সঙ্গীত
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ বিভাস, একতালা॥

জয় জ্যোতির্ম্ময় জগদাশ্রয় জীবগণ জীবন ;
তুমি পরমেশ্বর ( প্রভুহে ) পূর্ণব্রহ্ম আদি-অন্ত-কারণ |
মহিমার ইন্দ্র, দয়ার চন্দ্র, স্নেহে পরাজিত ভুবন |
( কোথায় আছহে ও কাঙ্গালের সখা )
আমি অধম পাতকী, করযোড়ে ডাকি, দাও মোরে তব চরণ |
প্রেমের পাথার, পুণ্যের আধার, ক্লেশ-কলুষনাশন,
( একবার দেখা দাও হৃদয়-মাঝে )
তুমি দীন-শরণ, ভকত জীবন, লজ্জা-ভয় নিবারণ ||

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
দয়াময় দীনবন্ধু দরিদ্রের দুঃখ ভঞ্জন
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ ঝিঝিট খাম্বাজ, একতালা॥

দয়াময় দীনবন্ধু দরিদ্রের দুঃখ ভঞ্জন |
তব কৃপাহি কেবল,                       পাপী-তাপীর সম্বল,
দুর্ব্বলের বল তুমি, নিরাশ্রয়ের অবলম্বন |
হে বিভো করুণাসিন্ধু,                      বিপদ কালের বন্ধু,
দিয়ে কৃপাবারি-বিন্দু, করহে পাপ মোচন |
তুমি নাথ দীন দয়াল,                    স্নেহময় ভকত বত্সল,
পাপীর দুঃখে নহ পিতা কখন উদাসীন |
ওহে অগতির গতি,                      করি ও পদে মিনতি,
থাকে যেন ভক্তি নাথ, তোমাতে চিরদিন |
পাপ ভারাক্রান্ত হয়ে                 ডাকি নাথ কাতর-হৃদয়ে,
পার কর ভবসিন্ধু, দিয়ে অভয় চরণ ||

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এত দয়া পিতা তোমার, ভুলিব কোন্ প্রাণে আর
কবি ত্রৈলোক্যনাথ সান্ন্যাল
প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহিত “সহস্র-সঙ্গীত” সংকলন (১৮৯২) থেকে নেওয়া।

॥ ঝিঝিট খাম্বাজ, ঠুংরি॥

এত দয়া পিতা তোমার, ভুলিব কোন্ প্রাণে আর,
দেবের দুর্লভ তুমি, ব্রহ্মাণ্ডের স্বামী, দীন হীন অকিঞ্চন হে |
পড়ে অকূলসাগরে,                             যখন ডাকি তোমারে,
ব্যাকুল হইয়ে কোথা দয়াময় বলে হে,
তখন কাছে এসে, মধুর ভাষে, তাপিত হৃদয়ে শান্তি দাও হে আমায় |
কে জানে এমন ক’রে,                          ভালবাসিতে পাপীরে,
তোমার মতন ভূমণ্ডলে হে ;
আমি জন্মাবধি, কত অপরাধী, তথাপি দুর্ব্বল ব’লে ক্ষম বারম্বার |
জানিলাম নানা মতে,                          তোমা বিনা এ জগতে,
কেহ নাহি আর আপনার হে ;
ধন্য ধন্য নাথ,                                           করি প্রণিপাত,
নিজগুণে পাপীজনে কর ভবে পার

.                              ****************                          
.                                                                              
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর