কবি ফালগুনী রায়ের কবিতা
*
আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস
কবি ফালগুনী রায়
কবিতাটি
কবি তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় টাইপ করে পাঠিয়েছেন।

প্রজাপতির চিত্রল ডানা দেখে বিরহ হতে বিবাহের দিকে
চলে যায় মানবসম্প্রদায় – আমি এক সৌন্দর্যরাক্ষস
ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়

আমার নিজের কোনো বিশ্বাস নেই কাউর ওপর
অলস বদ্মাস আমি মাঝে মাঝে বেশ্যার নাঙ হয়ে
জীবন যাপনের কথা ভাবি যখন মদের নেশা কেটে আসে
আর বন্ধুদের উল্লাস ইআর্কির ভেতর বসে টের পাই ব্যর্থ প্রেম
চেয়ে দেখি পূর্ণিমা চাঁদের ভেতর জ্বলন্ত চিন্তা

এখন আমি মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি—এক মৃতদেহ
আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে চলে গ্যাছে তার
শাঁখাভাঙ্গা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি— চিতাকাঠ শুয়ে আছে বৃক্ষের ভেতর
প্রেম নেই প্রসূতিসদনে নেই আসন্নপ্রসবা স্ত্রী
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি—
এ ভাবেই রয়ে গেছি কেটে যায় দিনরাত বজ্রপাত অনাবৃষ্টি
কত বালিকার মসৃণ বুকে গজিয়ে উঠল মাংস ঢিপি
কত কুমারীর গর্ভসঞ্চার গর্ভপাত -–সত্যজিতের দেশ  থেকে
লাভ ইন টোকিও চলে গ্যাল পূর্ব আফ্রিকায়—মার্কস স্কোয়ারে
বঙ্গ সংস্কৃতি ভারত সার্কাস – রবীন্দ্রসদনে কবিসম্মেলন আর
বৈজয়ন্তীমালার নাচ হ’ল –-আমার ত হ’ল না কিছু
কোনো উত্তরণ---অবনতি কোনো---

গণিকার বাথরুম থেকে প্রেমিকার বিছানার দিকে
আমার অনায়াস গতায়াত শেষ হয় নাই--- আকাশগর্ভ
থেকে তাই আজো ঝরে পড়ে নক্ষত্রের ছাই পৃথিবীর বুকের ওপর
তবু মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি এক মৃতদেহ আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে
চলে গ্যাছে তার শাঁখাভাঙ্গা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
প্রজাপতির চিত্রল ডানা দেখে বিরহ হতে বিবাহের দিকে চলে যায় মানুষেরা
আমি এক সৌন্দর্যরাক্ষস ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এইখানে
কবি ফালগুনী রায়
কবিতাটি
কবি তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় টাইপ করে পাঠিয়েছেন।

এইখানে সমুদ্র ঢুকে যায় নদীতে নক্ষত্র মেশে রৌদ্রে
এইখানে ট্রামের ঘন্ টিতে বাজে চলা ও থামার নির্দেশ
এইখানে দাঁড়িয়ে চার্মিনার ঠোঁটে আমি রক্তের হিম ও উষ্ণতা
ছুঁয়ে উঠে আসা কবিতার রহস্যময় পদধ্বনি শুনি— শুনি
কবিতার পাশে আত্মার খিস্তি ও চিৎকার এইখানে
অস্পষ্ট কু-আশার চাঁদ এইখানে ঝরে পড়ে গণিকার ঋতুস্রাবে

এইখানে ৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কোন গ্রীকবীর রমণ ও ধর্ষণের
সাধ ভুলে ইতিহাসে গেঁথে দ্যায় শৌর্য ও বীর্য এইখানে
বিষ্ণুপ্রিয়ার শরীরের নরম স্বাদ ভুলে একটি মানবী থেকে মানবজাতির দিকে
চলে যায় চৈতন্যের ঊর্ধবাহু প্রেম—সর্বোপরি
ইতিহাস ধর্মচেতনার ওপর জেগে থাকে মানুষের উত্থিত পুরুষাঙ্গ এইখানে

এইখানে কবর থেকে উঠে আসা অতৃপ্ত প্রেমিকের কামগন্ধ
কয়েকলক্ষ উপহাসের মুখোমুখি বেড়ে ওঠে আমার উচ্চাশা এইখানে
প্রকৃত প্রশ্নিল চোখে চোখ পড়লে কুঁকড়ে যায় আমার হৃদপিণ্ড এইখানে
এইখানে সশ্রদ্ধ দৃষ্টির আড়ালে যাবার জন্য পা বাড়াতে হয়

আমি নারী মুখ দ্যাখার ইচ্ছায় মাইলের পর মাইল হেঁটে দেখি শুধু মাগীদের ভিড়
সাতাশ বছর –-একা  একা সাতাশ বছর বেক্তিগত বিছানায় শুয়ে দেখি
মেধাহীন ভবিষ্যৎ জরাগ্রস্ত স্নায়ুমণ্ডলীর পাশে কবিদের কবির কবিতা
চারিধারে ঢিবি দেওয়ালের নিরেট নিঃশক্ত অন্ধকার।

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর