কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তর গান ও কবিতা
*
প্রভাতে পদ্ম
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১৯ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারা বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে প্রকাশিত “ঈশ্বরগুপ্তের
গ্রন্থাবলী (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে)” এর “বিবিধ” অধ্যায় থেকে নেওয়া।

সহস্রকরের করে,               কিবা শোভা সরোবরে,
সে রূপের নাহি অনুরূপ।
নলিনী ফেলিয়া বাস,                বিস্তার করিয়া বাস,
প্রকাশ করছে নিজ রূপ॥
মাথার আঁচল খুলে,                 প্রিয়পানে মুখ তুলে,
হেসে হেসে কি খেলা খেলায়।
আহা কিবা মনোহর,                দিবাকর দিয়া কর,
স্নেহে তার বদন মুছায়॥
নেচে নেচে ক্ষণে ক্ষণে,               হেঁটমুখে পড়ে বনে,
মনে এই ভাবের আভাস।
কমলদলের তলে,                   রবি-ছবি জলে জলে,
বিদূরিত হতেছে বিলাস॥
দলগুলি উঠো উঠো,           মুখখানি ফোটো ফোটো,
ছোট ছোট কমলের কলি।
মধুকর দলে দলে,                   দেই কলি-দলে দলে,
রতি-রসে মাতে কুতহলী॥
মোহিত মধুর রসে,               উড়ে গিয়ে ফুঁড়ে বসে,
এক ছেড়ে ধরে গিয়ে আর।
মধুলোভী মধুব্রত,                    পাইয়াছে সদাব্রত,
লুটিতেছে মধুর ভাণ্ডার॥

.              ****************              
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ফুল
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১৯ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারা বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “ঈশ্বরগুপ্তের গ্রন্থাবলী (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে)” এর “বিবিধ” অধ্যায় থেকে
নেওয়া।

একাবলি ছাঁদে তোমারে বলি।
শুন হে কোমল-কুসুম-কলি॥
কোলেতে পাইয়ে নায়ক অলি।
ভুলেছ সকল রসেতে ঢলি॥
জান না ত্বরিতে লাবণ্য তব!
বিগত হইবে সৌরভ সব॥
দল বাঁধিয়াছ খসিবে দল।
দলন করিবে চরণতল॥
ও শোভা চপলা প্রকাশ পায়।
ক্ষণেকে উদয় ক্ষণেকে যায়॥
যে রস কারণে গরব কর।
সে রস অচির বচন ধর॥
প্রভাত-শিশিরে করিয়ে স্নান।
সমীরে করিছ সুগন্ধ দান॥
সেই সমীরণ হরিয়ে প্রাণ।
করিবে তোমায় ধূলি সমান॥
সাবধান হও আসিছে কাল।
লুটিবে সৌন্দর্য্য মাধূর্য্যজাল॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ধন
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১৯ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারা বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “ঈশ্বরগুপ্তের গ্রন্থাবলী (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে)” এর “বিবিধ” অধ্যায় থেকে
নেওয়া।

মনোমুগ্ধ ধরাবাসী যত জীবগণ।
সদা ভাবে কোথা যাবে কোথা পাবে ধন॥
কি রূপে পাইবে টাকা তাই চিন্তা করে।
ভ্রমেও ভাবে না মনে বাঁছে কিংবা মরে॥
আপনার ভাল মন্দ কিছু নাহি বোঝে।
দিনরাত্রি এক ভাবে শুধু টাকা খোঁজে॥
ধনাগম-পিপাসায় প্রাণ যদি যায়।
নিরাশা-নদীর নীর তবু নাহি খায়॥
ধনের মহিমা সবে সদা গান করে।
কুকুর ঠাকুর হয় ধন পেলে পরে॥
বানরেতে বাবু হয় ধন হাতে পেলে।
মণি পেলে ফণী হন কুলীনের ছেলে॥
ধন যার আছে ভার দোষে নাহি দোষ।
কোষ যত পূর্ণ হয় তত পরিতোষ॥
কুরূপ হইলে ধনী মদনের প্রায়।
স্বর্ণ তার স্বর্ণপ্রভা ব্যক্ত করে গায়॥
অপকর্ম যত করে তত পায় বশ।
আশা পাশে বন্ধ হয়ে লোকে হয় বশ॥
ভবের ভীষণ ভাব যায় নাহি বোঝা।
কেবা সাধু কেবা চোর কেবা বাঁকা সোজা॥
কার শিরে পড়ে গিয়ে কার ভার বোঝা।
ফণী হয়ে দংশে কেবা কেবা হয় রোজা॥
কেবা করে অনুষ্ঠান কেবা করে যোগ।
কেবা করে আহরণ কেবা করে ভোগ॥
ভ্রমে ভুলে নাহি বুঝে বিয়োগ নীরোগ।
ভোগ হেতু যোগ বটে ফলে সেটা রোগ॥
রোগে আছে প্রতীকার ঔষধ প্রয়োগ।
এ যোগে ঔষধ মাত্র প্রাণের বিয়োগ॥
কে আর সাধন করে হয়ে রিপু-হারা।
পেলে ধন ছাড়ে বন তপোধন যারা॥
ধন ধন করি মন মত্ত সদা রয়।
মরণ নিকট অতি স্মরণ না হয়॥
ধন ধন ধন তুই ওরে বাপধন।
ধন আছে মনে বোধ হবে না নিধন॥
তৃষ্ণায় করুক বড় সমুদ্র শোষণ।
ধনতৃষ্ণা এক চোষে শোষে ত্রিতুবন॥
কোথা সেই জহ্নু মুনি কোথা তার পেট।
ধনতৃষী নিকটে করুক মাথা হেঁট॥
অর্থের ভিতরে অর্থ অনর্থে হেতু।
অসন্তোষ-সাগরের সেই মাত্র সেতু॥
তার পার যেতে আর নাহি পারে কেউ।
হেতু এই সেতু ফুঁড়ে উঠিতেছে ঢেউ॥
তৃষায় সুসার কর প্রাণপতি লোভ।
কিছুতেই তার আর মেটেনাকো ক্ষোভ॥
কুবেরের ধন যদি হস্তগত হয়।
তথাচ লোভের লোভ নিবারিত নয়॥
আরো বলে দেও দেও যত পার দিতে।
বিমুখ হব না আমি ত্রিভুবন নিতে॥
ওহে জীব ধপলোভে মোহিত হইলে।
এ ধন কোথায় রবে নিধন হইলে॥
নিধনের ধন যেই নিধনের ধন।
সে ধন সঞ্চয় কর ওরে বাছাধন॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধ
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১০ সালে প্রকাশিত কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সম্পাদিত বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “কবিবর স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের গ্রন্থাবলী এর “বিবিধ” অধ্যায় থেকে নেওয়া।

সাধের কি সাধ কিছু স্থির ভাব নয়।
কুসাধে কখন মনে বিষাদ উদয়॥
প্রথমে দেখিতে সাধ নাহি ছিল যারে।
এখন দেখিতে মন সদা চায় তারে॥
সাধনা করিয়ে তারে না পূরিল সাধ।
চারিদিকে শক্রগণে সাধে কত বাদ॥
আমার সাধনা তার ধরিয়া চরণে।
তবু তো সাধের নাহি সাধ মেটে মনে॥
কেমন সাধের ভাব বুবিতে না পারি।
ধন্য সাধ তোর গুণে যাই বলি হারি॥
মনের মানুষ দেখে কত সাধ বাড়ে।
না হেরিলে নিরাশায় আশা বাসা ছাড়ে॥
সাধের প্রভাবে যেই সুখের উদয়।
ক্রোধের কটাক্ষে তার জীবন সংশয়॥
মিলনের আগে যারে করিয়া যতন।
নানা ছলে কৌশলে তুষেছে সদা মন॥
হিম্ শীত সমীরণ তপনের কর।
বরষার জলধার সহ্য নিরন্তর॥
পদে পদে বিপদে করিয়া নিবারণ।
ক্রমে ক্রমে কালক্রমে হইল মিলন॥
নব অনুরাগে সুখে যায় কিছুকাল।
শেষেতে ধরিল ক্রোধ বিক্রমে বিশাল॥
কোনমতে প্রেমপথে কণ্টক অর্পণ।
করিবারে প্রতিক্ষণ সদা প্রতীক্ষণ॥
ক্রোধ অনুরোধে ফুরাইয়া গেল সাধ।
উপনীত হইল বিষম অপবাদ॥
যার লাগি দুঃখভোগী ছিল আগে মন।
এখন বিমুখ তারে বৃথা অকারণ॥
এমন সাধের সাধ নাহি দেখি আর।
পরিহার সাধের চরণে নমস্কার॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বুল্ বুল্ পক্ষীর যুদ্ধ
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১০ সালে প্রকাশিত কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সম্পাদিত বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “কবিবর স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের গ্রন্থাবলী এর “বিবিধ” অধ্যায় থেকে নেওয়া।

যেরূপেতে হয়েছিল পক্ষীর সমর।
কিঞ্চিৎ বৃত্তান্ত তার লিখি অতঃপর।
ধনীর প্রধান পক্ষী ভূপতির ছিল।
হুন্ রির হাতে পোড়ে রণে ভঙ্গ দিল।
ঘাড়ের পালক তার করে তুলাধনা।
অধোমুখে রহে রাজ-পক্ষ যত জনা॥
সেই ভাল গত সম শাঁসে যায় কাটা।
অনায়াসে তারে ছাড়ে কি বুকের পাটা॥
বাবুর বেতাল পক্ষী অতিশয় রোষে।
সে তালে বানায়ে তাল নুটি ক'রে চোষে॥
তাল ঠুকে এসে তাল সাত তাল খায়।
তালকাণা হলো শেষ বেতালের ঘায়॥
একে একে রাজাজীর ভাল পাখী সব।
বাবুর পাখীর কাছে হলো পরাভৰ॥
অপর পক্ষীর কথা কি কহিব আর।
সমর করিল যেন অমর-কুমার॥
হায় হায় কি লিখিব দে’খে হয় দয়া।
সপ্তমী না হতে হতে হইল বিজয়া॥
বাবুর দুধের শিশু গোটা দুই নয়া।
করিয়াছে নৃপতির কুরুচের গয়া॥
টাইম্‌ বাড়তে ছিল বাসনা রাজার।
পূর্ব্বের নিয়ম রক্ষা করা হলো ভার॥
নিজ পাখী সকলের দেখিয়া সঙ্কট।
দেড় ঘণ্টা আগে রাজা দিলেন চম্পট।
বসনে ঢাকেন মুখ চক্ষে বহে নীর॥
জুতা ফেলে ভিড় ঠেলে হলেন বাহির॥
সহায় তাঁহার পক্ষে এসেছিল যারা।
দুঃখ পেয়ে তারা সব বলবুদ্ধি-হারা॥
ছোঁড়া বুড়া গোঁড়াগুলো ফেবাতাড়া খেয়ে।
শিরে করে করাঘাত মনস্তাপ পেয়ে॥
কেহ বা নয়নজলে ভিজাইল মাটী।
কেহ কারে বুঝাইয়া লয়ে যায় বাটী॥
বার বার তিনবার তাহে নাহি খেদ।
অবশ্য ভূপতি শেষ পড়িবেন বেদ॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কবি
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৮৮৫ সালে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় রচিত ও সংগৃহীত “ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের
জীবনচরিত ও কবিত্ব বিষয়ক প্রবন্ধ” গ্রন্থের পাঁচ খণ্ডে ঈশ্বর গুপ্তের কবিতার
সংগ্রহের ৫ম খণ্ডের বিবিধ বিষয়ক কবিতা।

চিত্রকরে চিত্র করে, করে তুলি তুলি।
কবিসহ তাহার তুলনা, কিসে তুলি?
চিত্রকর দেখে যত, বাহ্য অবয়ব।
তুলিতে তুলিয়া রঙ্গ, লেখে সেই সব॥
ফলে সে বিচিত্র চিত্র, চিত্র অপরূপ।
কিন্ত তাহে নাহি দেখি, প্রকৃতির রূপ॥
চারু বিশ্ব করি দৃশ্য, চিত্রকর কবি।
স্বভাবের পটে লেখে, স্বভাবের ছবি॥
কিবা দৃশ্য কি অদৃশ্য, সকলি প্রকট।
অলিখিত কিছু নাই, কবির নিকট॥
ভাব, চিন্তা, প্রেম, রস, আদি বহুতর।
সমুদয় চিত্রকরে, কবি চিত্রকর॥
পটুয়ার চিত্র ক্রমে, রূপান্তর হয়।
কবি-চিত্র কি বা চিত্র, বিনাশের নয়॥
পটুয়ায় লেখে কত, হাত, মুখ, পদ॥
কবি চিত্রকর লেখে, শুধু মাত্র পদ॥
পদে পদে সেই পদে, কত হাত মুখ।
বিলোকনে বিয়োগির, দূর হয় দুখ॥
কবির বর্ণনে দেখি, ঈশ্বরীয় লীলা।
ভাবনীরে স্নান করি, দ্রব হয় শিলা॥
তুল্যরূপে দৃষ্ট হয়, ধন আর বন।
ভাবরসে মুগ্ধ করে, ভাবুকের মন॥
রসিক জনের আর, নাহি থাকে ক্ষুধা।
প্রতি পদে বর্ণে বর্ণে, কর্ণে যায় সুধা॥
জগতের মনোহর, ধন্য ভাই কবি।
ইচ্ছা হয় হৃদিপটে, লিখি তোর ছবি॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিলাতের টোরি ও হুইগ
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৮৮৫ সালে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় রচিত ও সংগৃহীত “ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের
জীবনচরিত ও কবিত্ব বিষয়ক প্রবন্ধ” গ্রন্থের পাঁচ খণ্ডে ঈশ্বর গুপ্তের কবিতার
সংগ্রহের ৫ম খণ্ডের বিবিধ বিষয়ক কবিতা।

কিছুমাত্র নাহি জানি, রাম রাম হরি।
কারে বলে রেডিকেল, কারে বলে টোরি॥
হুইগ কাহারে বলে, কেবা, তাহা জানে।
হুইগের অর্থ কভু, শুনি নাই কাণে॥
টোরি আর হুইগের, যে হন্‌ প্রধান।
আমাদের পক্ষে ভাই, সকল সমান॥
গুণে করি গুণগান, দোষে দোষ গাই।
শুধু সুবিচার চাই, শুধু সুবিচার চাই॥
আমাদের মনে আর, অন্য ভাব নাই।
.        সুধু সুবিচার চাই॥
.        ___________________

নিতান্ত অধীন দীন, এদেশের লোক।
শক্তিহীন অতি ক্ষীণ, সদা মনে শোক॥
রাজোর মঙ্গল হেতু, ব্যাকুল সকল।
প্রতিক্ষণ প্রীতিক্ষণ, রাজার কুশল॥
চাতকের ভাব যথা, জলদের প্রতি।
সেরূপ রাজার ভাব, আমাদের প্রীতি॥
যাহাতে দেশের সুখ, চিন্তা করি তাই।
শুধু সুবিচার চাই, শুধু সুবিচার চাই॥
আমাদের মনে আর, অন্য ভাব নাই॥
.        শুধু সুবিচার চাই॥
.        ___________________

চারিদিকে যুদ্ধের অনলরাশি জলে।
নির্ব্বাণ করহ বিভু, সন্ধিরূপ জলে॥
রণরঙ্গে প্রাণী নাশ, বিষাদের হেতু।
বিবাদ-সাগরে বান্ধ, ঐক্যরূপ সেতু॥
সন্ধিযোগে দান কর, শান্তিগুণ রস।
পৃথিবীর লোক যত, প্রেমে হবে বশ॥
প্রশংসা পুষ্পের গন্ধ, যাবে সব ঠাঁই।
শুধু সুবিচার চাই, শুধু সুবিচার চাই॥
আমাদের মনে আর, অন্য ভাব নাই ॥
.        শুধু সুবিচার চাই॥
.        ___________________

পরিবর্ত্ত কর সব, নিয়মের দোষ।
যাহাতে হইবে বৃদ্ধি, প্রজার সম্তোষ॥
জন্ম কর্ম্ম ধর্ম্ম রীতি, জাতি আর দেশ।
কোন রূপ কোন পক্ষে, নাহি থাকে দ্বেষ॥
নির্ম্মল নয়নে কর, কৃপাদৃষ্টি দান।
একভাবে ভাব মনে, সকল সমান॥
মাঙ্গলিক সব কার্য্য, স্নেহ যেন পাই।
শুধু সুবিচার চাই, শুধু সুবিচার চাই,
আমাদের মনে আর, অন্য ভাব নাই।
.        শুধু সুবিচার চাই॥
.        ___________________

দুর্জ্জন তস্কর ভয়ে, ভীত লোক সব।
চারিদিকে উঠিয়াছে, হাহাকার রব॥
ধনীরূপে খ্যাতাপন্ন, জমীদার যারা।
নীলামের শক্ত দায়ে, মারা যায় তারা॥
শমনের সহোদর, নীলকর যত।
ধনে প্রাণে প্রজাদের, দুখ দেয় কত॥
অত্যাচার দেশে যেন, নাহি পায় ঠাঁই।
শুধু সুবিচার চাই, শুধু সুবিচার চাই॥
আমাদের মনে আর, অন্য ভাব নাই।
.        শুধু সুবিচার চাই॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ডুয়েল যুদ্ধ
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১৯ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারা বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “ঈশ্বরগুপ্তের গ্রন্থাবলী (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে)” এর “মানস-মোহন” অধ্যায়
থেকে নেওয়া।

বিলাতী সভ্যতা তোরে বলিহারি যাই।
এমন অপূর্ব্ব রীতি আর কোথা নাই।
হাসি-খুসি, রঙ্গ-রস অশেষ প্রকার।
ক্ষণপরে সেই ভাব নাহি থাকে আর॥
নিজ গুণ ল’য়ে সদা বিশেষ বড়াই।
কথায় কথায় হয় ডুয়েল লড়াই॥
মারিতে মরিতে পটু ভাব ভয়ঙ্কর।
কিছুমাত্র দয়া নাই প্রাণের উপর॥
প্রথমে প্রথম গুণে ধরা দেখে শরা।
একাকী পঞ্চম নয় ছয়খানি ভরা॥
তিন কাণা আগে কিন্তু পঞ্জুড়ির জোর।
ছকুড়ি ফেলিয়ে শেষে বাজী করে ভোর॥
পথে রথে গুতাগুঁতি জুতাজুতি হয়।
স্বভাবের ধর্ম্ম সেটা দোষ বড় নয়॥
এ কেমন দোষ বল এ কেমন দোষ।
সাপের স্বধর্ম্ম বটে নাছি ছাড়ে ফোঁস॥
প্রথমেতে মাতামাতি কথার কৌশলে।
হাতাহাতি লাথালাথি বিচারের স্থলে॥
ভিতর বাহিরে লাল কিছু নয় কালো।
লালে লালে লাল করে শোভা পায় ভালো॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঠোঁটকাটা
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১৯ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারা বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “ঈশ্বরগুপ্তের গ্রন্থাবলী (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে)” এর “সামাজিক ও ব্যঙ্গ”
অধ্যায় থেকে নেওয়া।

ভদ্রকুলে জন্ম লই শুদ্র নই নিজে।
যবনের সম সদা জ্ঞান করি দ্বিজে॥
ভদ্র কর্ম কারে কহে কিছু নাহি জানি।
ধর্ম্মাধর্ম্ম পুণ্য পাপ কিছু নাহি মানি॥
যেখানেতে বাস করি নিজ আড্ডা গেড়ে।
লজ্জা ভয়ে লজ্জা যায় সেই দেশ ছেড়ে॥
বিচার না করি কভু মান অপমান।
সমাদর অনাদর সকল সমান॥
পিপে শুদ্ধ পার ক'রে শুষে খাই রম।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে আমি কম॥
.        বাবা কিসে আমি কম্‌?
বাজে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌ বাজে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌।
এই দেখ বাজে বাবা ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্॥

ক্ষণমাত্র বিবাদ কলহ নাহি ছাড়ি।
করিয়াছি কারাগার শ্বশুরের বাড়ী॥
ইয়ারের ভাবে যদি তুষ্ট রহে দেল।
তুল্যরূপে জ্ঞান করি স্বর্গ আর জেল॥
কিছুকাল সাঁচাভাবে খাঁচায় রহিয়া।
জাহির করিব গুণ বাহির হইয়া॥
আমার প্রতাপে ধরা হইবে অস্থির।
দেখা যাবে বীর হয় কত বড় বীর॥
প্রকাশিব নিজ বিদ্যা মেরে এক দম।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে আমি কম?
.        বাবা কিসে আমি কম?
বাজে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌ বাজে ঝম্‌ ঝম্ ঝম্‌।
এই দেখ বাজে বাবা ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌॥

বয়স বাড়িছে যত পাকিতেছে কেশ।
ততই ধারণ করি নটবর বেশ॥
গোডিম ভাঙ্গেনি যবে উঠে নাই গোঁপ।
তখন করেছি আমি পিতৃ-পিও লোপ॥
শালগ্রাম ফেলে দিয়া বেশ্যা আনি ঘরে।
ভার্য্যা তারে রেঁধে দিয়া পদসেবা করে॥
চক্ষে দেখে চুপ মেরে কাষ্ঠ হন বাবা।
গো টু হেল ওল্ড ফক্স ড্যাম ড্যাম হাবা॥
আমার বুদ্ধির কেউ নাহি পায় ফম্‌।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে আমি কম?
.        বাবা কিসে আমি কম?
বাজে ঝম্ ঝম্‌ ঝাম্‌ বাজে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌।
এই দেখ বাজে বাবা ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্॥

একে তো মোহনমূর্ত্তি মুখে মিষ্ট মধু।
দম দিয়া বার করি কত কুলবধূ॥
দেশে দেশে মারিয়াছি বাহাদুরী ঢাক।
পরযাত্রা ভঙ্গ করি কেটে নিজ নাক॥
তটম্থ সকল লোক দেখে মম ক্রিয়া।
গ্রামের ভিতরে চলি মধ্যভাগ দিয়া॥
লাগে লাগে লাগে ফের লাগে লাগে লাগে।
শ্বশুরের বাড়ী থেকে ফিরে আসি আগে॥
কত মিত্র ধরে মিত্র সব হবে গম।
লাঠালাহি কাটাকাটি কিসে আমি কম?
.        বাবা কিসে আমি কম?
বাজে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌ বাজে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌
এই দেখ বাজে বাবা ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কানকাটা
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
১৯১৯ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারা বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে
প্রকাশিত “ঈশ্বরগুপ্তের গ্রন্থাবলী (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে)” এর “সামাজিক ও ব্যঙ্গ”
অধ্যায় থেকে নেওয়া।

বীরভাবে স্থিরচিত্ত নৃত্য করে বীর।
প্রেমভরে যুগল নয়নে ঝরে নীর॥
বীরা সনে করে বীর মহিমা প্রকাশ।
টল টল ঢল ঢল খল খল হাস॥
হেরিয়া ভক্তের ভঙ্গি ভয়ে কাঁপে যম।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে তুমি কম?
.        বাবা কিসে তুমি কম?
ফাইট লড়েগা ফের কম্‌ কম্ কম্।
.        বাবা কম্‌ কম্ কম্॥

জারি ক'রে দিলে তুমি যত পরিচয়।
সে দফাতে কোন অংশে আমি কম নয়॥
কত শত হাতী ঘোড়া গেল রসাতল।
ল্যাজ নেড়ে বলে ভ্যাড়া দেখ মোর বল!
আমার নিকটে তুই নাহি পাস্‌ ফম্‌।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে তুমি কম?
.        বাবা কিসে তুমি কম?
ফাইট লড়েগা ফের কম্‌ কম্‌ কম্‌।
.        বাবা কম্‌ কম্ কম্॥

বাহাদুরি দেখালাম এক চালি চেলে।
আমি আছি ঠিক ধ’সে তুই গেলি জেলে॥
উপশক্তি-প্রসাদেতে উপশক্তি ধরি।
শক্তরূপে রক্ত খেয়ে নাশ করি অরি॥
বিপ্রের রুধির ভাবি ব্রাণ্ডী আর রম।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে তুমি কম?
.        বাবা কিসে তুমি কম?
ফাইট লড়েগা ফের কম্‌ কম্‌ কম্‌।
.        বাবা কম্‌ কম্‌ কম্‌॥

হাসাইলি সব লোক ডুবাইলি নাম।
জীবন বৃথায় তার বামা যারে বাম॥
নিরুপমা মনোরমা গুণধামা বামা।
হৃদয়ে বিরাজ করে তুল্য কেবা আমা?
জয় শব্দে বাজে ভেরী ভম্‌ ভম্‌ ভম্‌।
লাঠালাঠি কাটাকাটি কিসে তুমি কম?
.        বাবা কিসে তুমি কম।
ফাইট লড়েগা ফের কম্‌ কম্‌ কম্‌।
.        বাবা কম্‌ কম্‌ কম্॥

.          ****************          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর