কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তর গান ও কবিতা |
কৈলাস-সংবাদ শুনে, মরি হে পরানে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। আগমনি ॥ সুরটমল্লার - আড়াঠেকা॥ কৈলাস-সংবাদ শুনে, মরি হে পরানে। কী করো হে গিরিবর, যাও যাও এসো জেনে। সুখে রাখিতে সংসার, উমা প্রতি দিয়ে ভার, সার করি যোগাচার, শিব নাকি আছেন শ্মশানে। যোগাচারী হেরে হরে, সকলেতে যোগ করে, শিবের বৈভব হরে লয়ে গেছে স্থানে স্থানে ; (ওই দেখো) শশী গগনমণ্ডলে, সুরধুনী ধরাতলে, ফণীগণ গেছে পাতালে, অনল নিবিড় বনে। উমা আমার রাজার মেয়ে, পাগলিনি অভিমানে, সেজে বিপরীত সাজ, বিরাজে ত্যজিয়ে লাজ, কী শুনি দারুণ কাজ, মাতিয়াছে সুধাপানে॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
কে রে বামা, বারিদ-বরনি, তরুণী, ভালে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। ॥ বেহাগ - একতালা॥ কে রে বামা, বারিদ-বরনি, তরুণী, ভালে ধরেছে তরণি, কাহার ঘরনি, আসিয়ে ধরণি, করিছে দনুজ জয়। হেরো হে ভূপ, কী অপরূপ, অনুরূপ নাহি স্বরূপ, মদন-নিধন-করণ-কারণ, চরণ শরণ লয়॥ বামা হাসিছে ভাসিছে, লাজ না বাসিছে, হুহুংকার রবে বিপক্ষ নাশিছে গ্রাসিছে বারণ হয়॥ বামা, টলিছে ঢলিছে, লাবণ্য গলিছে, সঘনে বলিছে, গগনে চলিছে, কোপেতে জ্বলিছে, দনুজ দলিছে, ছলিছে ভুবনময়॥ কে রে ললিত রসনা, বিকট দশনা, করিয়ে ঘোষণা, প্রকাশে বাসনা, হয়ে শবাসনা, আসবে মগনা রয়॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
বলো গিরি এ দেহে, কি প্রাণ রহে আর কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। ॥ বেহাগ - আড়াঠেকা॥ বলো গিরি এ দেহে, কি প্রাণ রহে আর মঙ্গলার না পেয়ে, মঙ্গল সমাচার॥ দিবানিশি শোকে সারা, না হেরিয়া প্রাণতারা। বৃথা এই আঁখিতারা, সব অন্ধকার। খেদে ভেদ হয় মর্ম, মিছে করি গৃহে কর্ম, মিছে এ সংসার-ধর্ম, সকলই অসার॥ তুমি তো অচল পতি, বলো কী হইবে গতি, ভিক্ষা করে ভগবতী, কুমারী আমার। বাঁচি বলো কার বলে, দুখানলে মন জ্বলে, ডুবিল জলধি-জলে, প্রাণের কুমার॥ ত্রিজগতে নাহি অন্যে, একমাত্র সেই কন্যে, না ভাব তাহার জন্যে তুমি একবার॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ওহে গিরি, কেমন কেমন করে প্রাণ কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। ॥ খাম্বাজ - আড়া॥ ওহে গিরি, কেমন কেমন করে প্রাণ। এমন মেয়ে, কারে দিয়ে হয়েছ পাষাণ॥ ননির পুতলি তারা, রবিকরে হয় সারা। নিয়ত নয়নে ধারা, মলিন বয়ান। ঘরেতে সতিনি - জ্বালা, সদা করে ঝালাপালা, হয়ে উমা রাজবালা, কীসে পাবে ত্রাণ॥ শিরে সুরতরঙ্গিণী, হয়ে শিব-সোহাগিনি, করি কলকল ধ্বনি, করে অপমান। সারাদিন ঘরে ঘরে, ভোলানাথ ভিক্ষা করে, যথা কালে খায় হলে, দিবা অবসান॥ তাহে কি উদর ভরে, পেটের জ্বালায় মরে, সন্ধ্যাকালে বসে করে সিদ্ধিরস পান। ভালো মন্দ নাহি চায়, সুখ দুখ ঠেলে পায়, ধুতুরার ফল খায়, অমৃত সমান॥ শ্রীফল পাইলে হায়, আর তারে কেবা পায়, মহানন্দে নাচে গায়, বাজায়ে বিষাণ। ভৈরব ভৈরবী পেয়ে, ফেরে সদা হেসে গেয়ে, আছে কি না ছেলে মেয়ে, রাখে না সন্ধান॥ নাহি মানে ধর্মাধর্ম, নাহি করে কোনো কর্ম, নিজ ভাবে নিজ-মর্ম, নিজে করে গান॥ লোকে বলে মহাযোগী, অথচ বিষয়ভোগী, সমভাবে যোগভোগ, করে সমাধান॥ বসন ভূষণ ধন, করিয়াছি আয়োজন, করো করো নৃপধন, কৈলাসে প্রয়াণ। দুর্গানামে যাবে ভয়, তাহে কি বিপদ হয়, আনো আনো হিমালয়, ঈশানী ঈশান॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
জনক-ভবনে যাবে, ভাবনা কী তার কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। ॥ ভৈরবী - আড়া॥ জনক-ভবনে যাবে, ভাবনা কী তার। আমি তব সঙ্গে যাব, কেন ভাবো আর॥ আহা, আহা, মরি মরি, বদন বিরস করি, প্রাণাধিকে প্রাণেশ্বরি, কেঁদো নাকো আর। হৃদয়েশি অহরহ, আমার হৃদয়ে রহো, নিদয়-হৃদয় কহো, কী দোষ আমার। যখন যে অনুমতি, কর তুমি ভগবতি, কখনো কি করি আমি, অন্যথা তাহার॥ তোমার বিচিত্র মায়া, বুঝে উঠা ভার। মায়া, মাযা প্রকাশিতে, জন্ম নিলে অবনীতে, কে তোমার মাতা-পিতে, কন্যা তুমি কার॥ ইচ্ছাময়ী নাম ধর, যাহা ইচ্ছা তাই কর, তোমার মহিমা জানে, হেন সাধ্য কার। প্রাণ-প্রিয়ে যাবে যথা, সঙ্গে সঙ্গে যাব তথা, ক্ষণমাত্র সঙ্গ ছাড়া, হব না তোমার॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ত্বরায় উঠো রে ও ভাই প্রাণের বংশীধর কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। কবির গান ত্বরায় উঠো রে ও ভাই প্রাণের বংশীধর। গোষ্ঠেতে যাবি যদি বংশী ধরো॥ একবার চেয়ে দেখ্ নাই রজনি, মুদিল কুমুদিনী, নীলমণি, প্রভাতে কুহুস্বরে, গান করে পিকবরে, গগনে প্রভা করে প্রভাকর॥ নিশি সুপ্রভাতে রাখালগণ, ওই নন্দালয় ; হয়ে উপস্থিত, শ্রীদাম সুললিত, বচনে ডেকে কৃষ্ণ কয়। গোপাল উঠোরে - জাগিল গোকুল, লয়ে যাই গো-কুল, আর কেন ভাই নিদ্রাকুল। পূর্বদিক ওই প্রকাশিত, পশু পক্ষী উল্লসিত, পতঙ্গকুল হরষিত, বিকশিত ফুল। তরু পল্লবে নিরখি, করে ডাকাডাকি, সব পাখি, হল অবনী আলোময় কী মনোহর। নলিনীর দলে দলে মধুকর। গোপাল ভাই রে, গোষ্ঠে যাবি আয়, সময় বয়ে যায় নিশির শিশির ওই শুকায় ; আমরা যত ব্রজগোপাল, গো-পাল লয়ে এলেম গোপাল, প্রাণের গোপাল বিনে গো-পাল, গোষ্টে নাহি যায়। আমরা সব গোপাল চেয়ে রই, গোপাল গোপাল রে গোপাল কই! কই রে কই--- চেয়ে দেখো ভাই অস্ত যায় ওই শশধর॥ গোষ্ঠে কখন যাবি, কখন যাবি, বেণু বাজাবি? কখন গাভি লয়ে রে ভাই, বেণুস্বরে গান গাবি! ভাই রে, করে শয়ন, মুদে নয়ন, কতক্ষণ আর ঘুমাবি। ক্রমে বেলা হল উঠোরে কানুভাই। সুবর্ণ বরন, দিনকর কিরণ, তরুপল্লবে দেখতে পাই। কানাই ভাই রে, ব্রজেতে, নিশি প্রভাতে, প্রতি বনে বনেতে তরুলতায়, ওই দেদীপ্যমান, পতঙ্গকুল দোদুল্যামান, পক্ষী সকল উড্ডীয়মান ওই গগনপথে। হল গোকুলে জনরব, করছে মা মা রব শিশু সব, কর্ণে শুনতে কি পাসনে এ সব গিরিধর॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ভানু উদয়ে, নন্দালয়ে, শ্রীদাম যায় কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। ভানু উদয়ে, নন্দালয়ে, শ্রীদাম যায় ; বলে উঠো রে গোপাল, ত্বরায় লয়ে গো-পাল, ভাই গোপাল, গোষ্টে যাবি আয়। তাই শুনে নিদ্রাভঙ্গে, কয় নীলমণি, সাজিয়ে দে মা নন্দরানি, উদয় হয় ভানু --- করে দাও বেণু --- নন্দরানি মোহন সাজে, সাজিয়ে দিলেন রাখালসাজে, ব্রজের মদনমোহন সাজে, নব নীলতনু। সাজায়ে শীঘ্রমতি, শিশুমতিকে ; কহিছে যশোমতী কাতরে। ধরে ধরো শ্রীদাম, আমি তোর করে, সঁপে দিলাম মাখনচোরে॥ দেখিস দেখিস রে গিরিধরে, যেন না গিরি ধরে, আর যেন অনল খায় না ব্রজপুরে --- কহিতে জীবন জ্বলে, আর যেন যায় না জলে, জল অনল অবোধ ছেলের বোধ নাই রে॥ ভাবিলে ভয়ে অঙ্গ শিহরে কার ছেলে অনল কোথায় আহার করে। কালভুজঙ্গের ফণা ধরে। ধরে গোবর্ধন --- অবোধ কৃষ্ণধন ; বোধ বোধহীন আমার গোপাল, ওরে, চরাতে কি জানে গো-পাল? করিস তোরা দ্বাদশ গোপাল, গোপালকে যতন। গোপাল গেলে গোষ্ঠে, জীবন যায় কষ্টে, তিলেক না হেরে প্রাণে মরি রে॥ কেমন গোপাল সাজে, গোপাল সাজে, গো-পাল মাঝে, বিদায় দিই বা কী করে? পাষাণে বাঁধিয়ে জীবন, বিদায় দিই জীবনের জীবন, দেখিস শ্রীদাম, রাখিস জীবন, জীবন তোর করে ; কালো রতনে গহন বনে, যাস নিয়ে তায় ; দুর্জয় ভানুর তাতে, ছত্র ধরিস তাতে, তাতে না তাতে যেন কায়। বাপ শ্রীদাম! অঞ্চলেতে ক্ষীর ননি, বেঁধে দিলাম জাদুমণি! ক্ষুধা হলে পর --- দিয়োরে তৎপর --- প্রাণ গোপাল ভুলো না রে! ওরে গোপালের নাই তুলনা রে! মনে কিছু তুলো না রে! ভেবো না রে পর। আমার সর্বস্ব ধন, কালো রতন রে! সাধনে এ ধন ধরি জঠরে॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
সখি! এ দানী কে ও যমুনায় কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। সখি! এ দানী কে ও যমুনায়॥ প্রাণ সই রে, এমন দেখি নাই --- দানীর শ্রীমুখসরোজে, মুরলী গরজে, গরজে ডাকে আবার শ্রীরাধায়॥ এদানি এ দানী সই, কে গো ওই, আহা মরে যাই ; অপরূপ রূপ অনূপ, এরূপ স্বরূপ দেখি নাই। নটবর রূপ ধরায় ধরা ভার ; ক্ষণেক হাসে ভাষে নাশে অন্ধকার। মরি কী রঙ্গ। ত্রিভঙ্গ বয়স তরঙ্গ, অনঙ্গ অঙ্গ হেরে মোহ যায়। নারি বুঝিতে এ দানীর অভিপ্রায়। দানীর দারুণ ভাব দেখে কাঁদে প্রাণ ; আমায় ছলে ছলে, প্রেমকথা বলে বলে, আবার বলে রাধে দেহো দান। হল অধৈর্য মন প্রাণ, কী ধন আর দিব দান, দেহ দান দেহো দানীর রাঙা পায়॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ওহে কৃষ্ণ মধুকর হে, আর কেঁদো না ফুলে ফুলে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। ওহে কৃষ্ণ মধুকর হে, আর কেঁদো না ফুলে ফুলে! তুমি যেমন বেড়াও ফুলে ফুলে, তেমনই দায় হে ঘটল গোকুলে ; কেঁদো না রাধা বলে --- সে রস রঙ্গস্থলে, যাও চলে, বঁধু বনে যথা বসেছিলে, নূতন ফুলে কুঞ্জে শ্রীরাধার ধরে পদে, পদে পদে রসময় ; হয়ে অপমান তায়, কেঁদে শ্যাম যায়, রাজপথে প্রভাত সময়। দেখে তখন বৃন্দে কয় অমনই, বলেছিলাম তখনই, রাই ধনি মানে উচাটন --- কৃষ্ণধন, শুনলে না সে নিবারণ --- কুঞ্জে গেলে হাসতে হাসতে প্রেমসাগরে ভাসতে ভাসতে আবার বঁধু কাঁদতে কাঁদতে, এলে কী কারণ। বুঝি পায় পায় পায় হে বঁধু অনুপায়, কী উপায় হে --- ফুলে বসবে কী, বিচ্ছেদের ঘা দেছ মূলে! ভেসো না হে বঁধু অকূলে। ওহে কৃষ্ণ! একি প্রেমের সন্নিপাত! কোথায় গিয়ে পাতলে পাতলে পাত? মান নিপাত, চক্ষে অশ্রুপাত, কী উৎপাত শিরে যেন উল্কাপাত ; রাধাপন্ম ত্যজে হেলায়, হেলায় গিয়ে বসলে হেলায়, এখন কেন প্রভাত বেলায়, কাঁদতে এলে নাথ। মরি হায়! হায়! হায়! হায়! হে! একী হল দায় --- প্রেম দায় হে! দেখে শ্যাম! কান্না পায় সব নারীর কুলে॥ বধু, শুনলে না দুঃখিনীর কথা কুঞ্জে যেতে যেতে, বলেছিলাম ওহে বঁধু! রাইপদ্মে বাড়ন্ত মধু, ওহে মধুকর! গিয়ে কী অপমান, রইল না মান, হাসলে নারী জেতে। তুমি নাকি রসিক নাগর, রসের সাগর, ভাবের সাগর কৃষ্ণধন! গুণের সাগর শ্যাম হে, প্রেমসাগর হে, ভবসাগরে কর তারণ। ওহে কৃষ্ণ, পড়ে, মানের সাগরে, এই ব্রজনগরে, নাগর হে! কেঁদে বেড়াও শ্যাম! গুণধাম, বলে রাধা রাধা নাম --- সজ্জা দেখি ছিন্নভিন্ন, অঙ্গে রাধার পদচিহ্ন, কৃষ্ণ, হলে কৃষ্ণবর্ণ, কষ্ট অবিশ্রাম। বঁধু, যাও যাও, যাও যাও হে বঁধু, এ সময় ; রসময় হে, দেখো অসময় সুধা দিলে কেউ না ভুলে॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
কৃষ্ণ, দেখে তোমার এ দুর্দশা কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী দ্বারা সংগৃহীত ও সম্পাদিত, ২২৭জন গীতিকারের ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর গান” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ, ২০০০) থেকে নেওয়া। কৃষ্ণ, দেখে তোমার এ দুর্দশা, ভগ্র দশা, প্রাণ দয় ; এখন সে ভাব নাই হে, সে রস নাই হে, রাস বিরস হে রসময়। ওহে কৃষ্ণ, ছিল প্রেম সুধাময়, আপনি কল্পে বিষময়, অসময় যাও হে বংশীধর, বলব কী তা গুণাকর --- জোর দিতে কি পারে পান্না ভগ্ন হলে পর, এ যে নয় তো নয় হে, কারো সাধ্য নয়, দয়াময় হে কান্না, তুমি অসাধ্য প্রেম ভেঙেছো কেন ভ্রমে। কাঁদলে এখন কী হবে নাথ, ঘটল দশা কপাল ক্রমে॥ আগে ছিল তোমার রাধার সাধা, সে রাধা হে শ্রীঅঙ্গের আধা ; সে রসের নাগরালি, গিয়েছে বনমালি! তাই বলি তোমার কালি হল চন্দ্রাবলী ; সাধের প্রেমে এ কী দায় হে, বৃন্দাবন ধামে॥ শ্যাম হে, ব্রজে কী দায়ে রাইপ্রেম দায়। অমনই কৃষ্ণপ্রেম দায়, এ কী দায় হে গোকুলে, সৃষ্টিছাড়া এ কী সৃষ্টি, প্রেমে হল অনাবৃষ্টি, ঘটল চন্দ্রাবলীর দৃষ্টি, তোমার কপালে। বিচ্ছেদ হয় ওহে বঁধু, এমন নয় সৃষ্টিময় হে। বেঁচে থাকি তো দেখব আরো কত ক্রমে ক্রমে॥ হয় হে ভাবলে ভাবনা বৃদ্ধি, ভাবছো কেন হরি, দশা মন্দ হলে পরে, লোকে তীর্থ যাত্রা করে, তাই বলি হে শ্যাম, মেখে ভস্মরাশি, যাও হে কাশী, কুঞ্জ পরিহরি। ওহে, প্রিয়ে যায় বিবাস করে, তার কী ঘরে প্রয়োজন। হল কি গ্রহেতে নিগ্রহ হে, অকালেতে লাগিল গ্রহণ। শ্যাম হে, এখন যোগী হয়ে তীর্থে যাও, প্রেমে জলাঞ্জলি দাও, ক্ষমা দাও হে কালোশশি, শ্যামশশি, সাজো নবীন সন্ন্যাসী--- রমণীর মান কেন বাড়াও, আপনি সাধ পরকে সাধাও ; কেন হে আব কেঁদে কাঁদাও, চলে যাও কাশী। এখন জয় জয় জয় দাও হে বঁধু, চন্দ্রার জয় ; রসময় হে! --- মিছে কাজ কী আর বিচ্ছেদজ্বালার পরিশ্রমে॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |